প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

আপরাজেয় বাংলাদেশ আমার অহংকার
@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশেরই স্বাধীনতা অথবা জাতীয় দিবস আছে । বাংলাদেশে এই সব দিবসতো আছেই সাথে আছে একটি বিজয় দিবস যা অন্য কোন দেশের আছে বলে জানা নেই । এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমি ঘটনা এবং তার একান্ত নিজস্ব । যে কোন বিষয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হলে পরিশ্রম, ত্যাগ স্বীকার আর দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হয় । এই সবের সাথে বাংলাদেশের এই বিজয় ছিনিয়ে আনতে দেশের ত্রিশ লাখ মানুষকে নিজের জীবন উৎস্বর্গ করতে হয়েছে, তিন লাখেরও বেশী মা বোনকে নিজের ইজ্জত দিতে হয়েছে । এই বিজয়টা দেশের বিজয়, এই বিজয়টা দেশকে দখলদার পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের হাত হতে মুক্ত করার বিজয়, এই বিজয় দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিজয় । ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ এই বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তি উদযাপন করবে । বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও যখন দেশ এই বিজয় দিবস উদযাপন করবে তখন যে দলটির নেতৃত্বে দেশের মানুষ একাত্তরে দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে গিয়েছিল সেই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় । এই কয়েক বছর এটি অনেকটা বাংলাদেশের মানুষের বাড়তি পাওনা কারণ ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে ছিল। ১৭ বছর এfদেশকে অনির্বাচিত সরকার শাসন করেছে (৭৫ হতে ৯০ ও ২০০৬ হতে ২০০৮) । এই দীর্ঘ সময়ে নিয়ম মাফিক স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে ঠিক কিন্তু তাতে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিনের মূল অনুভূতি বা ষ্পিরিট উপস্থিত ছিল না ।
প্রতি বছর বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী হিসাব-নিকাশ করতে বসে যান কেমন আছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত বিধৌত আমাদের এই বাংলাদেশ ? সকলে নিজ নিজ অবস্থান হতে এর বিচার বিশ্লেষণ করে নিজেদের বক্তব্য উত্থাপন করেন । সরকারে যারা থাকেন তারা অনেক অর্জন দেখতে পাবেন । বিরোধী দলে যারা থাকেন তারা কম বেশী নিজেদের আমলের অর্জনগুলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন, বলবেন ক্ষমতায় আরো কিছুদিন থাকতে পারলে এই অর্জনটুকু আরো একটু বেশী হতো। ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের বাইরে আরো কিছু দল আছে যাদের আমি নাম দিয়েছি সুজন সখি পার্টি । তারা সব সময় জোর গলায় বলবেন কী অর্জন করতে পারতো বাংলাদেশ, কী অর্জন করেছে তা নয় । তাদের সাথে সুর মেলাবেন কিছু সুশীল ব্যক্তি আর মিডিয়া । ২০০৬ সালের কথা । তখন বিশ্বের বেশীর ভাগ শিল্পোন্নত দেশেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে বা শুরু হয়েছে । একজন বিজ্ঞ সুশীল একটি বেসরকারি টিভির রাতের একটি টকশোতে বললেন এই অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে তবে এই মন্দা বাংলাদেশে আসবে দেরীতে আর যাবে দেরীতে । সেই মন্দা বাংলাদেশকে তেমন একটা স্পর্শ করে না । দেশের বার্ষিক গড় আয় ৬ শতাংশের উপর । বাংলাদেশ ছাড়া এমন অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ধরে রাখতে পেরেছিল শুধু শ্রীলংকা । তারপর এলো এক-এগার । সেই বিশেষজ্ঞ ধর্ণা দিলেন সেনা ছাউনিতে ফখরুদ্দিন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার জন্য । জুটলো বিদেশে একটি দূতের চাকুরি । তাতেই তিনি বেশ উৎফুল্ল । তবে বাংলাদেশকে কেন সেইবারের মন্দা তেমন একটা ক্ষতি করতে পারে নি তা তিনি কখনো আর খুলে বলেন নি । এটি শুধু একটি ঘটনা যেখানে এই সব ব্যক্তিরা বাংলাদেশে সব সময় গ্লাসের অর্ধেকটা শুধু খালি দেখেন এবং নানা ফন্দি ফিকিরে ঘুরেন ।
১৯৭২ সনের ১০ জানুয়ারী স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সূদুর লন্ডন হয়ে দিল্লিতে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করে । বিমান ঢাকার আকাশে চক্কর মারছে কারণ বৃটিশ রাজকীয় বিমানের বৈমানিক বুঝতে পারছেন না তিনি বিমান কোথায় এবং কী ভাবে অবতরণ করাবেন কারণ তখন বিমান বন্দর এলাকা লক্ষ জনতার পদভারে মুখরিত । মহনায়ক দেশে ফিরছেন । তাঁকে দেখার এই বিরল সুযোগ কী আর হাত ছাড়া করা যায়? বঙ্গবন্ধু বিমানের সীটে বসে মাথা নীচু আর চোখ বন্ধ করে চিন্তায় মগ্ন । তাঁর সফর সঙ্গীদের একজন ছিলেন ফারুক চৌধুরী যিনি পরবর্তি কালে পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন । পরবর্তি কালে তিনি লিখেছেন eবঙ্গবন্ধুকে বলি নীচে তাকিয়ে দেখুন । তিনি জানলার বাইরে তাকিয়ে বিমান বন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) এত বিপুল জনসমাগম দেখে শুধু একটি বাক্য উচ্চারণ করেন । এতো মানুষকে খাওয়াবো কীf ? বঙ্গবন্ধু একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশে ফিরেছিলেন । বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নেমে একটি অভূতপূর্ব সংবর্ধনা পেয়েছিলেন এবং সোহরোওয়ার্দি উদ্যানে একটি বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন । এর সবগুলিই ছিল বাঙালির চিরায়ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ কিন্তু দেশ পূনর্গঠনে আবেগ খুব বেশী কাজ করে না । সেখানে প্রয়োজন বাস্তবতার নিরীখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা । সেটি বঙ্গবন্ধু ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন । কোন সময়ক্ষেপন না করে তিনি পরদিন ১১ই জানুয়ারী অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ জারি করেছিলেন ও রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মন্ত্রীসভায় ব্যাপক রদবদল করেন । বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণের মধ্যে একটি বড়গুণ ছিল তিনি ঠিক বুঝতে পারতেন কাকে দিয়ে কী কাজ হবে । বাংলাদেশের পূনর্গঠন পর্যায়ে একটি বড় সমস্যা ছিল সরকার পরিচালনা করার জন্য দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বড় অভাব । অখন্ড পাকিস্তানের তেইশ বছরে বাঙালি কখনো পাকিস্তানের প্রশাসনে প্রবেশ করার তেমন একটা সুযোগ পায়নি । একাত্তরে সারা পাকিস্তানে পূর্ণ সচিব ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন । বেসামরিক প্রশাসনের ৮৪ ভাগ দখলে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের । সেনাবাহিনীর মাত্র ৫ ভাগ সদস্য আসতো পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশে) হতে । সে সময় পাঞ্জাব ছাড়া পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশও এমন বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র ছিল অনেকটা সম্পূর্ণভাবে পাঞ্জাবীদের নিয়ন্ত্রণে। আমলাতন্ত্রের যতই সমালোচনা করা হোক আমলা ছাড়াতো প্রশাসন চলবেনা । এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি বঙ্গবন্ধু সমাধান করেছিলেন যে স্বল্পসংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি আমলা বা দক্ষ প্রশাসক জীবিত ও কর্মক্ষম ছিলেন তাদের কাজে লাগিয়ে । বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝেছিলেন দেশ পূনর্গঠনের জন্য সঠিক পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই । ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিশ দিনের মাথায় তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশন । উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী (বঙ্গবন্ধু) আর ডেপুটি চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ডঃ নুরুল ইসলামকে (পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায়) । সদস্য করা হয়েছিল ডঃ রেহমান সোবহান, ডঃ মোশররফ হোসেন আর ডঃ আনিসুর রহমানকে । এরা সকলে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফার অর্থনৈতিক বিষয়গুলি প্রণয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছিলেন । বঙ্গবন্ধুর সময় যে কfটি মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে তাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যোগ্যতা, দক্ষতা আর দেশ প্রেমকে । ১৯৭৩ সনে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস যুক্তরাষ্ট্র হতে ফিরে পরিকল্পনা কমিশনে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন । কিছুদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি নিয়ে চলে যান ।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার একজন সদস্য ছিলেন বিজ্ঞান, কারিগরি ও আনবিক শক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ডঃ মফিজ চৌধুরী । তিনি তাঁর গ্রন্থ eবঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভায়f বিবৃত করেছেন কতটুকু বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাদের উপর দেশ গঠনের এই গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন । তখন সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপর্যস্থ কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিয়েছিলেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা । সেই ব্যবস্থাকে আবার পুনঃস্থাপন করার জন্য খুঁজে খুঁজে আনতে হয়েছিল অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং শ্রমিকদের । বুকে এক অসাধারণ দেশপ্রেম নিয়ে তারা স্বল্পতম সময়ে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে পূনর্বহাল করেছিলেন । তখন সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল তিনশত মেগাওয়াটের কম । সেই বাংলাদেশ এখন আটহাজার হতে দশহাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের যোগান দিতে সক্ষম । বাংলাদেশে এখন ৬০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে । এই ৪৪ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশী হয়েছে ।
৪৪ বছর আগে যে বাংলাদেশ তার নবযাত্রা শুরু করেছিল তার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ । একাত্তরে পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ভাসমান মাইন (একধরণের শক্তিশালী বোমা) ফেলে সম্পূর্ণ অকেজো করে গিয়েছিল অথবা দেশের দুটি বৃহত্তম রেল সেতু, হার্ডিঞ্জ আর ভৈরব সম্পূর্ণ ধ্বংস করে গিয়েছিল যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সহজে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে । একটি শার্টের কাপড়ের জন্য (রিলিফ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিতে হয়েছে । সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি টেলিভিশনের জন্য সায়মন ড্রিং একাত্তর পরবর্তি বাংলাদেশের একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেন । ওই চিত্রটা দেখলে কিছুটা বোঝা যাবে কেমন ছিল সেদিনকার বাংলাদেশ । তখন বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা বিশ্লেষক বলেছিলেন এই নতুন দেশটির সার্বিক ভাবে যে করুণ অবস্থা সেটির টিকে থাকাটা হবে এক বিস্ময় । ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছিল eস্বাধীনতা অর্জন করলেও অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশকে সব সময় নির্ভর করতে হবে বিদেশি সাহায্যের উপরf । সেই প্রতিবেদনের রেশ ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ সম্পর্কে তার সেই বিখ্যাত উক্তিটি করে বলেছিলেন eইধহমষধফবংয রং ধ ইধংশবঃ ঈধংব, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি । তাদের যতই সাহায্য দেয়া হোক কোন কাজে আসবে নাf । বাংলাদেশ শুধু টিকে থাকেনি বর্তমানে এটি উন্নয়নশীল অপরাপর দেশগুলির জন্য এক মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত । আর বাংলাদেশ এখন কোন মাপেই আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয় । ১৯৭২ সালে বা তার পূর্বেকার সময় এfদেশ তার সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের দুই তৃতীয়াংশ উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল । বাকিটা আন্তর্জাতিক বাজার হতে সংগ্রহ করতে হতো অথবা খয়রাত হিসেবে অন্য দেশ হতে মিলতো । এখন বাংলাদেশ শুধু তার ১৬ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদনই করে না কয়েক সপ্তাহ আগে আমরা শ্রীলংকায় এক লাখ টন চাল রপ্তানি করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছি । চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে বর্তমানে চতুর্থ স্থান অধিকারী । এই দীর্ঘ চুয়াল্লিশ বছরে আমাদের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ । এই অভূতপূর্ব অর্জনের জন্য অনেকের অবদান আছে সত্য তবে সবচেয়ে বেশী অবদান দেশের প্রথম সরকারের, যে সরকার এই নতুন দেশটির বুনিয়াদ রচনা করেছিল । অবদান আছে বাংলার কৃষকের যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার জমিতে ফসল ফলায় । মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে চতুর্থ । বলতে গেলে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে একাত্তর পরবর্তিকালে এই বিপ্লব ঘটে গেছে । যে দেশ নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে পারে সেই দেশের চেয়ে সুখী দেশ অন্য কোন দেশ হতে পারে না । এখন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে নিশ্চয় বলতেন না eএতো মানুষকে খাওয়াবো কীf ?
ব্যাংকের শূন্য ভল্ট নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু । কেউ বিদেশে গেলে পাসপোর্টে পাঁচ ডলার এন্ডোর্স করার অনুমোদন ছিল । বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার । পাসপোর্টে স্বাভাবিক নিয়মে পাঁচ হাজার ডলারের অনুমোদন নেয়া যায় । বাড়তি নিতে হলে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগে । বিদেশ হতে গত বছর প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ২২.৫ বিলিয়ন ডলার যা ৪৪ বছর আগে অকল্পনীয় ছিল । রপ্তানি করার মতো কিছু পরিমাণের চা আর পাটজাত পণ্য ছাড়া আর কিছু ছিল না এই বাংলাদেশের । আবার যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু দেশ কিউবাতে কয়েক শত বেল পাটের বস্তা রপ্তানি করাতে ১৯৭৪ সালে কিসিঞ্জারের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষের জন্ম দিয়েছিল । সেই দূর্ভিক্ষে কয়েক হাজার বঙ্গ সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল । তেতাল্লিশের বাংলার মনন্তরের জন্য ঐতিহাসিকরা বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে দায়ী করেন । সেই দূর্ভিক্ষে কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল । এটি ছিল এক ধরণের গণহত্যা । ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশের দূর্ভিক্ষের জন্য সহজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় । এটি এখন অনেকটা নিশ্চিত বাংলাদেশে আর কখনো দূর্ভিক্ষ হবে না । ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮২ কোটি টাকা । চলতি বছর এর পরিমান ছিল সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা । সামনের বছর সেই বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । এই বাজেটের সিংহভাগ আসে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে । আমাদের বাজেটে বিশ্বব্যাংকের মতো অর্থ লগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান আর দাতা সংস্থার অবদান এখন দশ শতাংশের কম । বিশ্বব্যাংকের ব্ল্যাক মেইলের স্বীকার না হয়ে বাংলাদেশ এখন নিজের অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ হাতে নিতে পারে ।
চুয়াল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ আর ২০১৪ সালের বাংলাদেশের মধ্যে এখন আকাশ পাতাল তফাৎ । দেশে আমাকে একটি জামা বানানোর রিলিফের কাপড়ের জন্য লাইন দিতে হয়েছিল সেই দেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোষাক রপ্তানিকারক দেশ । দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে এই খাত হতে । বাংলাদেশে এখন আর কেউ খালি গায়ে থাকে না । উত্তর বঙ্গে আর মঙ্গা হয় না । শীতের কাপড়ের অভাবে কেউ মারা যায় না । ঔষধ তৈরিতে এখন বাংলাদেশ শুধু স্বয়ং সম্পূর্ণই নয় প্রায় আশিটি দেশে আমাদের দেশের ঔষধ রপ্তানি হয় । যে দিন বাংলাদেশ পাকিস্তানে দুটি সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানি করলো তখন কার না গর্ব হয়েছে ?
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান শ্যাস ও অর্থনীতিবিদ জন ওfনিল অনুন্নত দেশগুলির উপর এক সমীক্ষা চালিয়ে বলেছে একবিংশ শতকে প্রথম ধাপে চারটি অর্থনৈতিক পরাশক্তির আবির্ভাব হবে । এগুলি হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন । এরপর আরো এগারটি দেশ তাদের পথ অনুসরণ করবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম । উল্লেখ্য এই এগারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র দেশ যার গায়ে এখনো স্বল্পোন্নত দেশের লেভেল লাগানো আছে । তেমন একটি দেশ এই এগারটি দেশের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে । এতে প্রমাণ হয় বাংলাদেশের সম্ভাবনা । বিশ্বব্যাংক তাদের ২০১৩ সালের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে eবাংলাদেশের উন্নয়ন একটি অমিমাংসিত বিস্ময়f। সুশিলরা স্বীকার না করলেও বাংলাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হবে বলে বিশ্বাস । বাংলাদেশের কাহিনী বিন্দু থেকে বৃত্ত হওয়ার কাহিনী । বাংলাদেশের উন্নয়নের এই ধারাকে ধরে রাখতে হলে চাই সঠিক ও যোগ্য লোককে রাষ্ট্রের সঠিক কাজে লাগানো এবং দেশকে দূর্নীতিমুক্ত করে সব সময় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে দেশ পরিচালনার ভার ন্যস্ত করার অঙ্গিকার করা যারা দেশ গঠনে নিম্ন বা মধ্যমেধার বদলে মেধা সম্পন্ন দক্ষ মানব সম্পদকে কাজে লাগাতে পারবে । সুজন সখি পার্টি আর সুশীলরা তাদের বাগাড়ম্বর করতেই থাকবে । তার মধ্যেই বাংলাদেশ তার পথ খুঁজে নেবে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪ ।

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]