[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

ভারতের নির্বাচন নিয়ে পদ্মা পাড়ের মানুষরা কী ভাবছেন?

 


-প্রফেসর আবদুল মান্নান

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে ষোড়শতম লোকসভা নির্বাচন এখন অনেকটা মাঝপথে । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সামনের মাসের ১২ তারিখ এই নির্বাচন শেষ হবে এবং ১৬ তারিখ তার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল জানা যাবে । এই নির্বাচনে প্রায় ৮৪ কোটি মানুষ ভোট দিতে পারবে যার মধ্যে ১০ কোটি প্রথমবার ভোটার । ৭ এপ্রিল নির্বাচন যখন শুরু হয়েছিল তখন এক ধরনের হিসাব নিকাশ ছিল আর দিন যতই যাচ্ছে সেই হিসাব নিকাশ কিছুটা হলেও ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে । শুরুতে সারা ভারত বর্ষে একটি নরেন্দ্র মোদি ঝড় লক্ষ্য করা গিয়েছিল । এক সময়ের রেল ষ্টেশনে চা বিক্রেতা মোদি গুজরাটের বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী । গুজরাট ভারতের একটি বর্ধিষ্ণু রাজ্য । মোদি ব্যবসায়ী আর শিল্পপতিদের কাছে খুব প্রিয় কারণ তিনি তাদের ব্যবসা করার জন্য পানির দরে জায়গা-জমি সহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেন । পশ্চিম বঙ্গে বাম ফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় তখন রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল টাটাকে একটি মোটর প্রস্তুতকারী কারখানা করতে সিঙ্গুরে জমি দেবে । বাদ সাধলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যনার্জী । এলাকার মানুষকে নিয়ে তিনি রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ এক তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললেন, বললেন জান দেবতো টাটাকে এক ইঞ্চি জমিও না । টাটা তার নির্মিতব্য কারখানা পরিত্যক্ত ঘোষণা করলো । মোদি বললেন গুজরাটের দরজা টাটার জন্য সব সময় খোলা । সেই কারখানা এখন গুজরাটে, টাটার স্বল্প মূল্যের ন্যানো গাড়ী বানায় । এক সময় পশ্চিম বঙ্গ শিল্পে পূঁজি বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষনিয় রাজ্য ছিল । এখন ২৯টি রাজ্য আর সাতটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গের অবস্থান একেবারে নীচে, দূবর্ল রাজ্যগুলির সাথে । সেই রাজ্যে বামফ্রন্ট তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল । এই সময়ে কৃষিতে যথেষ্ট উন্নতি হলেও পিছিয়ে পরেছে শিল্প খাতে ।
বিশ্বের সকলের দৃষ্টি এখন ভারতের দিকে । এর কারণ নানাবিধ । প্রথমে দেখা যাক কে হচ্ছেন ভারতের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী । কোন একটি দল হতে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে লোকসভায় ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে ২৭২ টিতে বিজয়ী হতে হবে অথবা অন্যদল হতে সমর্থন জোগাড় করতে হবে । নির্বাচন যখন শুরু হয় তখন অনেক বিশ্লেষক আর জরিপকারিদের ধারণা ছিল চরম দক্ষিণ পন্থি ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হবে এবং তা যদি হয় তখন গুজরাটের বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই হবেন ভারতের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী । অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ডঃ মনমোহন সিং হতে দিল্লির মসনদে একদম একজন চা বিক্রেতা । সম্ভবত এটাকেই বলে গণতন্ত্র । একবার বিহারের মূখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের কাছে সাংবাদিকরা ভারতে গণতন্ত্রের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরে লালু তার নিজস্ব ষ্টাইলে বলেন এই আমি লালু এক সময় মহিষের পিঠে চড়তাম এখন হেলিকপ্টারে চড়ি । এটাইতো ভারতের গণতন্ত্রের প্রকৃত সংজ্ঞা । একেবারে অকাট্য যুক্তি । ভারতে যেহেতু লোকসভার নির্বাচন এক দিনে হয় না সেহেতু যতই দিন যায় ততই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে । এই যেমন মোদি । এক সময় আর এস এস নামক হিন্দুত্ববাদি দলটির সদস্য ছিলেন । এই দলের মূল আদর্শ হলো ভারত হবে হিন্দুদের অন্য কারো জন্য এই দেশ নয় । মহাত্মা গান্ধিকে এরা শত্রু জ্ঞান করে । গান্ধির হত্যাকারি নাথুরাম গডসে এদের একজন বড় মাপের হিরো । বিজেপি আরএসএস’এর রাজনৈতিক সংগঠন । অনেকটা বাংলাদেশের ছাত্র শিবির-জামায়াত সম্পর্কের মতো । এমন সংগঠন ভারতে আরো আছে যেমন শিব সেনা, বজরং দল। যারা আরএসএস’এর সদস্য হবেন তারা কখনো বিয়ের পিড়িতে বসতে পারবে না । নরেন্দ্র কখনো বিয়ের পিড়িতে বসেন নি বলে ভারতের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে জেনে এসেছেন । অন্যদিকে যশোদা (Jashodaben) নামের গুজরাতের এক স্কুল শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন তার সাথে মোদির প্রায় পঁতাল্লিশ (১৯৬৮ সনে) বছর আগে বিয়ে হয়েছিল । মোদি এত দিন ধরে বলে এসেছেন সব বাজে কথা । এর আগে তিনি যখনই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন সব সময় নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে এসেছেন । হঠাৎ করে এই নির্বাচনে মোদি স্বীকার করলেন হ্যাঁ তিনি সেই মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন তবে সেই বিয়ে কয়েক সপ্তাহ টিকেছিল । যশোদা বলছেন এই সব মিথ্যা কথা । তারা এক সাথে কয়েক বছর ঘর করেছেন । হিন্দু শাস্ত্র মতে অগ্নিসাক্ষি করে বিয়ের মন্ত্র পাঠ করে বিয়ে করলে সেটাকে আর ছিন্ন করা যায় না । সুতরাং যশোদা এখনো মোদির বৈধ স্ত্রী । পতিভক্ত যশোদা নির্বাচনে স্বামীর কল্যাণ কামনা করতে খালি পায়ে এক কাপড়ে তীর্থে গেছেন । কংগ্রেস বিষয়টাকে লুফে নিয়ে বলেছে যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে পারে না সে কী ভাবে দিল্লির মসনদে বসার স্বপ্ন দেখে? মোদির বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড় অভিযোগ গুজরাটের ২০০২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা । এই দাঙ্গায় সরকারি হিসাব মতে এক হাজার মুসলমানের মৃত্যু হয়েছে । বেসরকারি হিসাব বলছে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশী । প্রায় আড়াইশত হিন্দুও এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে প্রান দিয়েছে । রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই দাঙ্গায় বিজেপি’র হাত ছিল । এর আগে ১৯৯০ সনে যখন উত্তর প্রদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করলো তখন দিল্লির মসনদে বিজেপি । সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা বন্ধে সেই সময়কার বাজপেই নেতৃত্বাধিন সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি । এখন জানা যাচ্ছে সেই ঘটনায় বিজেপি’র শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতার হাত ছিল । মোদি ইতোমধ্যে অসমে এসে বলে গিয়েছেন বাংলাদেশ হতে যত অবৈধ বসবাসকারি ভারতে আছে তাদের সকলকে ফেরত পাঠানো হবে কিন্তু কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে আসতে চাইলে তাদের গ্রহণ করা হবে । বিজেপি তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা করেছে নির্বাচনে জয়ী হলে আবার বাবরি মসজিদ স্থলে রাম মন্দির বানাবেন । এই সব কথাবার্তা মোটেও ভাল লক্ষণ নয় ।
এদিকে কংগ্রেসের বিপদও কম নয় । ভারতের রাজনীতিতে রাজিব তনয় রাহুল গান্ধীকে এখনো বাচ্চা হিসেবে দেখা হয় । এখনো অবিবাহিত বিধায় তরুনীদের কাছে তার এক ধরণের জনপ্রিয়তা রয়েছে । কিন্তু জনগনের কাছে তিনি নিজেকে তেমন একটা বড় মাপের নেতা হিসেবে তুলে ধরতে পারেন নি । এর আগে সব নির্বাচনে তিনি উত্তর প্রদেশের আমেতি নির্বাচনি এলাকা হতে বিজয়ী হয়েছেন । এবার তার বিজেপির প্রতিদ্বন্ধি এক কালের মডেল আর স্টার টিভির সিরিয়াল ‘কাবি সাসভি বহু তি’ খ্যাত অভিনেত্রী স্মৃতি ইরাণি । ভারতে রাজনীতিবিদদের চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সংষ্কৃতি জগতের লোকজন কম জনপ্রিয় নন । সেই কারণেই এবার রাজনৈতিক বাতাসের গতি বুঝে এমন অনেক সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিজেপি’র টিকেটে নির্বাচনে লড়ছেন । বলা হয় প্যারাস্যূট রাজনীতিবিদ । উপর হতে হঠাৎ নাজিল হওয়া । এখানে আদর্শের কোন বালাই নেই । এবারের নির্বাচনটি রাহুলের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে । অন্যদিকে ডঃ মনমোহন সিং’এর এক কালের গণমাধ্যম উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু তার সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘The Accidental Prime Minister’ কংগ্রেসকে চরম বেকায়দায় ফেলেছে । তিনি দীর্ঘদিন ডঃ মনমোহন সিং’এর সাথে কাজ করেছেন । তিনি তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থে লিখেছেন মনমোহন সিং ছিলেন একজন স্বাক্ষীগোপাল প্রধানমন্ত্রী । আসল ক্ষমতা ছিল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর হাতে । ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি । সাবেক কয়লা সচিব পি সি পারাখ লিখলেন আর এক স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘Crusader or Conspirator?’ এই মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে ১.৮৬ লক্ষ রূপির দূর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল । বরা হয়েছেএর সাথে কংগ্রেসের অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত ছিলেন । কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় নি । অনেকের মতে এত বড় মাপের দূর্নীতিকে সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশে মনমোহন সিং ধামাচাপা দিয়েছেন । পারাখের মতে এই ব্যাপারে মনমোহন সিং তাঁর দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন । বিশ্লেষকরা বলছেন এই সময় এই দু’জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা যারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাজ করেছেন এমন বই লিখে মারাত্মকভাবে আস্থাভঙ্গ করেছেন যা পেশাগত নৈতিকতার পরিপন্থি। ডঃ মনমোহন সিং বলেছেন এই বই দুটিতে যা লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি বা জামায়াতের মতো দলগুলি নির্বাচন আসলেই ভারত কার্ড ব্যবহার করে কারণ নানা কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির একটি বিরাট অংশ নিজেদের মধ্যে ভারত বিরোধীতা ধারণ করে । এর জন্য দায় দায়িত্ব অনেকাংশে ভারতকেই নিতে হবে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য । প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশী নানা কাজে ভারতে যায় । বছরে এই বাংলাদেশিরা কয়েক কোটি ডলার ভারতে ব্যয় করে । কয়েক হাজার ভারতীয় বাংলাদেশে বৈধভাবে কাজ করে । অবৈধ ভাবে কতজন কাজ করে তার কোন হিসাব নেই । বাংলাদেশ ভারতের জন্য বৈদেশিক রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থানে আছে । ভারতীয় টিভি সিরিয়াল আর সংগীত বাংলাদেশে অসম্ভব জনপ্রিয় । সচিন টেন্ডুলকার আর মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম জানে না তেমন কোন ক্রিকেট প্রেমীকে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না । ভারতের আইসিএল’এ বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি বিন মর্তুজা নিয়মিত খেলেন । তারপরও কেন এক শ্রেণির মানুষ ভারত সম্পর্কে এত নেতিবাচক ধরণা পোষণ করেন এবং কি ভাবে বিএনপি’র মতো রাজনৈতিক দলগুলি সহজে এই ভারত বিরোধীতা কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে তৎপর থাকে ! কারণ খুব বেশী নয় এবং অবশ্যই তা সংশোধন যোগ্য । প্রথমেই প্রসংগক্রমে আসে ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যা। বাংলাদেশের ৫৪টি নদীর উৎপত্তি ভারতে । বাংলাদেশ ভাটি অঞ্চলের দেশ । ভারত চাইলেই উজানে পানি বন্ধ অথবা নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের বিশাল কৃষি অর্থনীতির সর্বনাশ করতে পারে এবং এই কাজটি তারা সুযোগ পেলেই নিষ্ঠার সাথে করে যার উৎকৃষ্ট উদহারণ তিস্তার পানি বন্টন । বাংলাদেশ কখনো ভারত হতে তার যা প্রাপ্য নয় তা চায়নি । চেয়েছে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নদীর পানি বন্টন । দুই দেশের মধ্যে পানিবন্টন বিষয়ক সমস্যা কোন নতুন বিষয় নয় । সেই সাতচল্লিশের দেশ বিভাগ হতে চলে আসছে । তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তান এই সমস্যাগুলি ভারতের সাথে সমাধান করে নিলেও বাংলাদেশের সমস্যা গুলি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার সব সময় জিয়ে রেখেছে । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আর ইন্দিরা গান্ধী মিলে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ নদী গঙ্গার পানি বন্টনের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তি করেছিলেন । ১৯৯৬ সনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ভারতের সাথে গঙ্গা পানি বন্টনের জন্য ত্রিশ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয় যদিও প্রতি বছর বাংলাদেশ অভিযোগ করে আসেছে চুক্তি অনুযায়ি বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না । তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে দিল্লির সদ্বিচ্ছার অভাব ছিল না কিন্তু বাধ সাধলেন পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি । বিষয়টি একান্তভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও দিল্লি রাজনৈতিক কারণে অনেক সময় রাজ্য সরকারের মতামতকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশী প্রাধান্য দেয় যেটি এ ক্ষেত্রে হয়েছে । তিস্তার পানি সরবরাহ এখন প্রায় বন্ধ এবং নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন তারা সরকার গঠন করলে উজানে একাধিক লিঙ্ক ক্যানাল তৈরী করে এক তরফা পানি তুলে নেবে । এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশ অদূর ভবিষতে মরুভূমিতে পরিণত হবে । মমতা এতদিন বলে এসেছেন তিনি ছিট মহল বিনিময় করতে দেবেন না যদিও বিষয়টি ১৯৭৪ সনেই ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির মাধ্যমে সুরাহা হয়ে গেছে । ২০১০ সালে মনমোহন সিং আর শেখ হাসিনার মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি পুনরায় নতুন জীবন লাভ করে । বাংলাদেশ ১৯৭৪ সনেই তার সাংবিধানিক ভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি করে। ভারত তা করতে ব্যর্থ হয় । এবার ধারনা করা হয়েছিল তার একটি সমাধান হবে । আবার বাধ সাধলেন মমতা । সম্প্রতি তিনি আবার বলেছেন ছিটমহলের মানুষ যেভাবেই চায় সমাধান সে ভাবেই হবে । অনেকের মতে এটি মমতার এক ধরণের রাজনৈতিক চাল । এই ব্যাপারে মমতার জুড়ি মেলা ভার । সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা একটি নিয়মিত ঘটনা । দিল্লি তা বন্ধ করার নিয়মিত প্রতিশ্রুতি দিলেও হত্যাকান্ডের ঘটনা এখনো চলছে । এমন ছোট ছোট অনেক ঘটনা আছে যা এদেশের জনগনের একটি অংশকে ভারত বিরোধীতায় রসদ যোগায় । ভারতে আগামী দিনে কে বা কারা সরকার গঠন করবে তা সামনের মাসের ১৬ তারিখের পর বলা যাবে । সরকার যে বা যারাই গড়ুক সকলকে মনে রাখতে হবে দুটি পার্শ্ববর্তি দেশের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কে বজায় থাকলে সকলেরই লাভ । আর এটাও মনে রাখা ভাল বাংলাদেশ আর ভারতে মিলে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষ বাস করে । এই বিশাল জনগোষ্টিকে এক করতে পারলে সার্বিক ক্ষেত্রে দু’দেশই অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে । বদলে দিতে পারে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র । হয়ে উঠতে পারে একবিংশ শতকের অন্যতম পরাশক্তি । দুই বন্ধু দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্ভর করবে ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর কে বসছেন দিল্লির মসনদে তার উপর । এই মসনদের মালিক যদি হন নরেন্দ্র মোদি তাহলে তার চিন্তা ধারায় আনতে হবে আমুল পরিবর্তন । আর তা যদি না হয় ভারত হয়ে উঠতে পারে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র যা তাকে এই অঞ্চলের অনেক রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে । তাতে বারো আনা ক্ষতি ভারতের । নির্বাচন ভারতে হলেও তা নিয়ে চিন্তিত তার প্রতিবেশীরা ।


লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । এপ্রিল ১৭, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]