|
প্রাচ্যের রানী এখন গরীবের ভেনিস
প্রফেসর আবদুল মান্নান
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ১৯৪৮ সনের মার্চ মাসে
চট্টগ্রামে এসেছিলেন । কথিত আছে তিনি চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যে এতই মোহিত
হয়েছিলেন যে চট্টগ্রামকে তিনি প্রাচ্যের রানী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন । সেই
প্রাচীনকাল থেকে অনেক পরিব্রাজক, সুফি সাধক, বণিক এমন কী জলদস্যুরাও
চট্টগ্রামে এসে এই শহরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়ে এই শহরেই
তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । এটি আমার জন্ম
আর বেড়ে উঠার শহর, আমার কৈশোর আর যৌবনের শহর । এই শহরে আমার নাড়ি পোঁতা আছে
। উপরওয়ালা চাইলে এই শহরেই হতে পারে আমার শেষ ঠিকানা । এই শহরকে ঘিরে আমার
গর্বের অন্ত নেই । বিদেশ থেকে কোন বন্ধু বান্ধব এলে তাদেরকে অনুরোধ করি
অবশ্যই আমার শহর না দেখে যাবেন না । সেটি অন্য আর এক চট্টগ্রাম, যা এখন
অনেকটা কফিন বন্দি । কেমন করে হলো এই শহরের এমন হাল আর এর জন্য দায়ীই বা
কারা?
গত ক’দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আমার সেই চির চেনা শহর । অনেকে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে এই ডুবন্ত শহরের নাম দিয়েছে ভেনিস । আমি বলি গরীবের ভেনিস
কারণ সত্যিকারের ভেনিস নগরী একটি পানির উপর ভাসমান শহর কিন্তু সেই শহরে যে
পানির উপর দিয়ে বিশেষ ধরণের নৌকা চলে সেই পানি ষ্ফটিকের মতো স্বচ্ছ । সেই
নৌকাকে বলা হয় গন্ডোলা । যারা এই গন্ডোলাতে করে যাত্রী বহন করে তারা এই
কাজটি বংশ পরম্পরায় করে আসছে । অন্যরা করলে বলে নকল গন্ডোলা । এমন ব্যবস্থা
প্যারিস আর আমস্টার্ডামেও দেখেছি । কিন্তু বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের যে
সড়কগুলিতে বুক পর্যন্ত পানি সেই পানি ভয়াবহ নোংরা এবং সড়কের পানি সড়কে
সীমাবদ্ধ থাকে নি, তা মানুষের বাড়িঘর দোকান পাট, লোকালয় আর ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে । জনজীবনকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্থ করেছে । এক
কথায় ক’দিনের ভারী বর্ষা একটি সচল শহরকে সম্পূর্ণভাবে অচল করে দিয়েছে । অথচ
এই চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং প্রধান
বন্দর নগরী হলেও এটি দিন দিন এখন সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত
হচ্ছে। এই চট্টগ্রাম বন্দরই দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন । সব সরকারের আমলেই
এই জেলা হতে ডজন ডজন মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু অন্যান্য জেলার তুলনায় এই শহরের
উন্নতি হয়েছে যৎ সামান্য । একবার এই বিষয়ে আমি সরকারের একজন বড় মাপের
উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি পুরো বিষয়টিকে হালকা ভাবে নিয়ে উত্তরে
বললেন, কেন উত্তর বঙ্গের জেলা গুলির তুলনায় চট্টগ্রামকেতো অনেক বেশী বরাদ্দ
দেয়া হয় । তিনি বুঝতে চাইলেন না চট্টগ্রাম বা ঢাকার সাথে অন্যান্য কোন
জেলার তুলনা করা বড় ধরণের নির্বুদ্ধিতা । এমনটি চলতে থাকলে একদিন এই
চট্টগ্রামকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না । বিশ্বের
অনেক প্রাচীন শহরই কোন না কোন সময় পরিত্যক্ত হয়েছে ।
এই যে শহর চট্টগ্রামের এমন করুণ দশা তার জন্য কাকে দায়ী করা যাবে ? গত কয়েক
দিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় সকলেই এই
অবস্থার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে একক
ভাবে দায়ী করেছেন । এটি অস্বীকার করা যাবে না সাম্প্রতিক কালে বৃষ্টির কারণে
যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তার সিংহভাগ দায় দায়িত্ব মেয়র মঞ্জুরের । ২০১০
সালের নির্বাচনে মঞ্জু আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী তিন বারের
নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন তাঁর নিজের
যোগ্যতার কারণে নয় বরং মহিউদ্দিন চৌধুরীর কিছু কৌশলগত ভুলের কারণে । একজন
মেয়র হিসেবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার কোন উপায় নেই ।
মঞ্জু ছিলেন তাঁর একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের শিষ্য এবং ওয়ার্ড কমিশনার। মঞ্জুরের
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে। এক-এগারর পর
মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে তিনি এই মঞ্জুকেই মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে
গিয়েছিলেন । পরবর্তীকালে দু’জনের মাঝখানে নানা ছোটখাট বিষয় নিয়ে দূরত্ব
সৃষ্টি হয় এবং সেই দূরত্ব সৃষ্টিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছের অনেক মানুষ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । পরবর্তীকালে মহিউদ্দিন চৌধুরী কারাগার হতে
মুক্ত হওয়ার পর কাছের এই মানুষগুলিই তাঁকে বিপথে নিয়ে যায় এবং তাঁর পরাজয়টা
নিশ্চিত করে যা মহিউদ্দিন চৌধুরী বুঝতে পারেন নি । সেই মানুষগুলি সামনের
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে চৌধুরীর চারপাশে জুটে গেছেন । সেই
নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী শ্লোগান তুললেন তিনি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে
সিঙ্গাপুর বানাবেন । আমি একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছিলাম চট্টগ্রামের মানুষ
চট্টগ্রাম হিসেবেই দেখতে চান, সিঙ্গাপুর হিসেবে নয় । বিএনপি নিজে কোন
প্রার্থী না দিয়ে বিদ্রোহি প্রার্থী ওয়ার্ড কমিশনার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে
সমর্থন দিলো এবং তাঁকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব দেয়া হলো বিএনপি নেতা
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে । নির্বাচনের কয়েক
দিন আগে চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায় । তখন
মঞ্জু শিবির নতুন শ্লোগান তুলে ‘পানির নীচে মুরাদপুর, কেমনে হবে সিঙ্গাপুর
।’ সেই নির্বাচনে মঞ্জু মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এক লক্ষ ভোটে পরাজিত করেন ।
চট্টগ্রাম শহরের ভোটাররা অভিমান করে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে শিক্ষা দিতে গিয়ে
নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছিল । আর মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেকে যে
অপ্রতিরোধ্য মনে করেছিলেন ভোটাররাই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক
নির্বাচনে কখনো ভোটারদের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখা উচিৎ নয় । ধারণা করা হচ্ছে
আগামী নির্বাচনে চৌধুরী পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন । কিন্তু তিনি যদি
তাঁর আগের বারের ভুলগুলি সংশোধন না করেন তা হলে সামনের বারের ফলাফলও যে
সুখের হবে তা নিশ্চিত করে বলা সহজ নয় ।
অনেকে মনে করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকলে পরিস্থিতি বর্তমানের মতো এত
ভয়াবহ হতো না । এই পর্যবেক্ষণ মোটেও ঠিক নয় । মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ও
জলাবদ্ধতা হয়েছে এবং যতদিন পর্যন্ত স্থানীয় জনগণ এই জলাবদ্ধতায় তাদের দায়
স্বীকার না করবেন ততদিন পর্যন্ত পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে । তবে এটাও সত্য
মহিউদ্দিন চৌধুরী জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা করতেন, সফল হতেন কিনা তা নিয়ে
বিতর্ক করা যেতে পারে । আর মঞ্জুর বেলায় বলা যায় এই ব্যাপারে তিনি কোন
দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে হয় না । চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার প্রধান
কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর ভূমি দস্যুদের সরকারি খাস জমি সহ গরীব জনগণের
ভূমি দখল করে হাউজিং এর নামে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক প্রবাহে
বাধা সৃষ্টি । বড় উদাহরণ পাঁচলাইশের চালিদাতলী অথবা ষোল শহর দুই নম্বর গেইট
এলাকা । অথবা চট্টগ্রাম মহানগরের প্রান্ত সীমা এলাকা চৌধুরী হাট । এই সব
এলাকায় ভ’মি দস্যুরা হাউজিংএর প্লট বরাদ্দের নামে দেয়াল দিয়ে স্বাভাবিক পানি
নিষ্কাষন বন্ধ করে দিয়েছে । হাউজিং এর নামে পাহাড় কেটে ইতোমধ্যেই
চট্টগ্রামকে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে । চট্টগ্রামে ৬৪টি খাল আছে যার মধ্যে
১৭টি সিটি কর্পোরশেনের আওতাধীন যার দৈর্ঘ প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার। এই সব খাল
দিয়ে একসময় শহরের পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়তো। সেই সব খাল এখন স্থানিয়
বাসিন্দাদের আগ্রাসনের কারণে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে । এক সময় আমার নানা
বাড়ীর পিছন দিয়ে চাক্তাই খাল বয়ে যেতো । সেই খালে আকিয়াব হতে বড় বড় বজরা
নৌকা এসে নোঙর ফেলতো । কিন্তু সেই খালের এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই । মোট কথা
বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের সব ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং তা করেছে এই
শহরের বাসিন্দারা, সম্মিলিত ভাবে । জলাবদ্ধতার দায় তারা এড়াবেন কী করে?
চট্টগ্রামে ওয়াসা নামক একটি সরকারি অযোগ্য আর চরম দূর্নতীগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান
আছে । এটির কাজ জনগনের চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহ করা ও
পয়ঃনিষ্কাষনের ব্যবস্থা করা । এর কোনটাই এই সংস্থা করতে পারেনি তার দীর্ঘ
অর্ধ শতাব্দিরও বেশী সময়ের ইতিহাসে । কোলকাতা শহরে ইংরেজরা আন্ডারগ্রাউন্ড
ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে গিয়েছিল প্রায় একশত বছর আগে । সেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা
এখনো চালু আছে যার ফলে বৃষ্টি হলেই এই শহর তলিয়ে যায় না । ক’দিন আগে দেখে
এলাম কোলকাতা বিমানবন্দর হতে শহরে প্রবেশের পুরানো সড়ক কাজি নজরুল ইসলাম
এভেন্যুর দুই পাশের খালকে ড্রেজিং করা হচ্ছে । এই খাল দিয়ে দক্ষিন কোলকাতার
পানি গঙ্গায় গিয়ে পড়ে । চট্টগ্রামে তার খালগুলিকে কখনো ড্রেজিং করার
ব্যবস্থা করা হয় নি । যা করা হয়েছে তা শ্রেফ নামকা ওয়াস্তে, অনেকটা ফটো
সেশন হয়েছে । শহরের আয়তন বৃদ্ধি হলে নতুন নতুন রাস্তা হয় কিন্তু তার সাথে
যে খালেরও প্রয়োজন হয় তা আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদরা কখনো চিন্তা করেন না ।
একজন মেয়র পরিবর্তন করলে কিছুই হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এই শহরের বাসিন্দারা
এটি উপলব্দি না করেন শহরকে কার্যকর ও সচল রাখা সকলের যৌথ দায়িত্ব কোন একজন
মেয়র বা প্রতিষ্ঠানের নয় । কাল যদি সিটি কর্পোরেশন বলে তারা আরএস আর বিএস
খতিয়ান দেখে সব খাল ও স্বাভাবিক জলাভূমি পুনরুদ্ধার করবে এবং কোন
জবরদখলকারি এই বিষয় নিয়ে আদালতের শরানাপন্ন হবেন না তাহলেই কিন্তু সমস্যার
অর্ধেকটা সমাধান হয়ে যায় । এই শহরের নব পর্যায়ের শ্রীহানি ঘটা শুরু হয় ১৯৯২
সনে যখন তৎকালিন মেয়র মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সার্কিট হাউজের সামনের
খোলামাঠে শিশু পার্ক করার অনুমতি দিয়েছিলেন । সম্প্রতি চট্টগ্রাম ক্লাবের
টেনিস কোর্টে একটি তারকা খচিত হোটেল নির্মান করা হয়েছে যার মালিক সেনা
বাহিনী । এই কাজটি মোটেও সুবিবেচনা প্রসূত ছিল না । হোটেল করার মতো
জায়গা-জমি চট্টগ্রাম শহরেই সেনা বাহিনীর অনেক আছে । মেয়র মঞ্জুর আলম মঞ্জু
প্রায়শঃ অভিযোগ করেন সরকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একাধিক প্রকল্প
আটকে রেখেছে । তা যদি সত্য হয় তা নিতান্তই অনভিপ্রেত এবং এর ফলে মহানগরের
সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়বে । তবে এই সব প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়রের
যোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন । সেই ঘাটতি পুরণ করা সম্ভব যদি মেয়র
কর্পোরেশনের বাইর থেকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি করেন
। মহিউদ্দিন চৌধুরি এমন একটা কমিটি করেছিলেন তবে সেই কমিটিকে তিনি সঠিকভাবে
কাজে লাগাতে পারেন নি । পারলে তাঁর সাফল্য কিছুটা হলেও নতুন মাত্রা পেত ।
১৯৯৫ সালে এই শহরকে বাঁচানোর জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পানা তৈরী করা হয়েছিল
। ওটির বাস্তবায়ন কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ । কেন এমটি হলো তার কোন ব্যাখ্যা
কারো কাছে নেই । সব শেষে একটা কথাই বলি কফিন বন্দি চট্টগ্রাম শহরকে বাঁচাতে
হলে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা । তা সম্ভব হলে বাঁচবে এই শহর। আর তা
না হলে সামনের বার পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে বাধ্য।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জুন ২৪, ২০১৪
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|