[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

আর ক’জন মনিরের লাশ পরলে দেশে শান্তি ফিরবে?

 

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান


সাভারের অদূরে গাজীপুরেরর কালিয়াকৈরের বড়কাঞ্চনাপুর গ্রামের মনির হোসেন। কতইবা হবে তার বয়স ? পরিবার বলে তের । অপুষ্টির কারণে মনে হতে পারে আরো কম । একেবারে একজন শিশু । এবার প্রাথমিক স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিত । ভ্যানগাড়ী চালক বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ঢাকা দেখতে যাবে । মনিরকে তার ভ্যানগাড়ীতে করে বাবা রমজান আলী গত সোমবার নিয়ে এসেছিল প্রাণহীন ও নির্দয় শহর ঢাকা দেখাতে । ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছার আগেই হরতালের নামে বিরোধী দলের ডাকা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তখন শুরু হয়ে গেছে । গাড়ীটা গাজীপুর চৌরাস্তার পাশে পার্ক করতে হলো রমজানকে । মনির তখন গাড়ীর ভিতর ঘুমাচ্ছে । ততক্ষণে বিরোধী দলের বর্গীরা পথে নেমে পরেছে যারা তাদের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে যানবাহন রাস্তায় বের করবে তাদের যানবাহনে এবং চালক বা যাত্রীদের গায়ে আগুন দিতে । তাদেরকে বলা হয়েছে এরকম ভাবে দেশের মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার না করলে সামনের নির্বাচনে তাদের নেত্রী বেগম জিয়ার ক্ষমতায় যাওয়া সহজ হবে না । নেত্রীর খায়েস বলে কথা । অতএব ঘুমন্ত মনিরের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিতে তাদের হাত কাঁপলো না একটুও । ঘুমন্ত মনির তাদের ষাট ঘন্টা সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রথম শিকার । ৯৫ ভাগ দগ্ধ শরীর নিয়েও বাঁচতে চেয়েছিল মনির । শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মনিরকে বৃহষ্পতিবার না ফেরার দেশে ফিরে যেতে হয়েছে । মনিরের পরিবারতো বটেই দেশে এবং দেশের বাইরে কোটি কোটি বিবেকবান মানুষ মনিরের ঘাতক এবং তাদের নির্দেশ দাতাদের নিশ্চিতভাবে অভিশাপ দিচ্ছে । শরীরে আগুন দেয়ার পর দগ্ধ অবস্থায় বসা মনিরের একটি জীবন্ত মর্মান্তিক ছবি দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে । সেই ছবি দেখে কোন বিবেকবান মানুষ যদি ব্যথিত হয়ে এই ঘাতক এবং তাদের দোসরদের অভিশাপ না দেয় তা হলে বুঝতে হবে মানুষের মনুষত্ববোধ সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়েছে । বিরোধী দল নেত্রীকে ক্ষমতায় বসাতে একজন মনিরতো জীবন দিল হাসপাতালে আরো পাঁচজন মনির জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে প্রাণপন লড়াই করছে ।
বিরোধী দলীয় নেত্রী ষাট ঘন্টার হরতাল আহ্বান করেছিলেন । হরতাল তিনি আহ্বান করতেই পারেন । কারণ হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার বলে এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা মনে করেন । তবে ইদানিং হরতালের নামে যা হয় তা কোন অবস্থাতেই আর হরতাল বলা যাবে না । সহজ সরল ভাষায় তা হচ্ছে সন্ত্রাসের একটি কদর্য রূপ এবং যারা এই হরতাল ডাকেন তারা পূর্বেই ঘোষণা দিয়ে রাখেন তাদের এই হরতালে লাশ পরবে । এই যেমন গত ২৫ তারিখ সোহরোওয়ার্দি উদ্যানের ১৮ দলের নামে জামায়াতের জনসভায় বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সাদেক হোসেন খোকা ঘোষণা করে রেখেছিলেন আগের হরতালে সারা দেশে বিশটি লাশ পরেছিল সামনেরটায় (সদ্য সমাপ্ত) ৪০ টি পরতে পারে । এমন আগাম ঘোষণা দিয়ে নরহত্যা আর কোন সভ্য দেশে হয় বলে জানা নেই । বাংলাদেশে হয় কারণ এই দেশে সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেয়া বিএনপি নামক একটি দল আছে এবং সেই দলটির দোসর এবং প্রধান অর্থ যোগানদাতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামী । জামায়াতের আবার একটি ট্রেনিংপ্রাপ্ত ঘাতক বাহিনী আছে । নাম তাদের ছাত্র শিবির । পুড়িয়ে পিটিয়ে যে কোন উপায়ে মানুষ মারার প্রশিক্ষণ তাদের আছে । এই লেখা যখন লিখছি তখন পত্রিকা মারফত জানা গেল সোমবার হতে বেগম জিয়া নতুন রাউন্ডের নরহত্যা শুরু করবেন । বাহাত্তর ঘন্টা ফের হরতাল ডাকা হয়েছে । এবার কত মনিরকে প্রাণ দিতে হবে তা একমাত্র উপরওয়ালা জানেন ।
বিভিন্ন সুশীল সমাজ, সুজন সখি পার্টীর সদস্যরা আর এক শ্রেণীর মিডিয়া বেগম জিয়ার কাছে এই সংবাদ পৌঁছে দিয়েছে যে সামনের বার আপনার ক্ষমতায় যাওয়া অবধারিত সুতরাং বর্তমান সরকারকে পরাজিত করতে যা যা করার সব কিছুই করে যান আমরা আপনার পিছনে আছি । কিছুদিন আগে এমনি এক হরতালের সময় পুরানো ঢাকায় বিশ্বজিৎ নামের দর্জি দোকানের একজন কিশোর কর্মচারী হরতাল বিরোধীদের আক্রমনে নির্মম ভাবে মারা গেল । স্বাভাবিক কারণেই চারিদিকে হৈচৈ পরে গেল । বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতো সুযোগ পেলেই তার ফুটেজ দেখায় । বিভিন্ন সূত্রে পরে জানা গিয়েছে ঐদিনের ঘটনার পিছনে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কোন কোন সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল কারণ তাদের হরতালের কিছু এক্সক্লুসিভ ফুটেজ দরকার ছিল । সেটি অন্য প্রসঙ্গ । মিডিয়াতো বটেই নানাজনে আঙ্গুল তুলে জানিয়ে দিল ঐ বিশ্বজিতকে হরতাল বিরোধী ছাত্রলীগের পিকেটাররা হত্যা করেছে । এই এক বিশ্বজিতকে হত্যার পর কত বিশ্বজিতকে রাজনীতির ক্ষমতার খেলায় বলি হতে হলো তার হিসাব মেলানো এখন কঠিন হয়ে পরেছে । কিন্তু মিডিয়া বলি আর সুশীল সমাজ বলি সে সব নিয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য কেউ করে না যেমনটি বিশ্বজিতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কারণ এই সব ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । এদের কাছে আওয়ামী লীগ বলি আর শেখ হাসিনা সকলেই দেশের শত্রু । আর ক’টা দিন সবুর করলে বেগম জিয়া জাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন বলে ইতোমধ্যে চতুর্দিকে চাউড় হয়ে গেছে ।
মনিরদের হত্যাকান্ডের দায় বিএনপি-জামায়াত জোট নিতে নারাজ । বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এটি সরকারের কাজ । শিশু মনিরের হত্যাকান্ডের সূত্রপাত কিন্তু প্রকাশ্য দিনের বেলায় গাজীপুর চৌরাস্তায় হাজার হাজার মানুষের সামনেই কোন রাখঢাক না করেই হয়েছিল । কারা এই কাজের সাথে জড়িত ছিল তা লুকানোর কোন উপায় নেই । তাদের কারো করো নামও প্রকাশিত হয়েছে । কিন্তু মির্জা সাহেব তা মানবেন কেন ? তার নেত্রীকেতো যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যেতেই হবে । ক‘দিন আগে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল । তাতে বলেছিলাম হরতালের নামে চারিদিকে এইযে সংঘাত এবং জানমালের ক্ষতি তার দায়িত্বতো বিরোধী দলকেই নিতে হবে । কারণ হরতাল মানে মানুষ মারার লাইসেন্স নয় । বলতে পারেন হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার । কিন্তু তা মানতে বাধ্য করা নিশ্চয় গণতান্ত্রিক অধিকার নয় । তার একদিন পরেই বেগম জিয়ার একজন শীর্ষ পর্যায়ের উপদেষ্টা একই পত্রিকায় তার প্রতিবাদ করে বললেন কোন আক্কেলে আমি এই সব নৈরাজ্যের জন্য তার বিরোধী দলকে দায়ী করি? এই উপদেষ্টা একজন সাবেক আমলা । পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইউব খান তাকে খুব পছন্দ করতেন । একটি তমগা বা খেতাবও দিয়েছিলেন । মুক্তিযুদ্ধ শেষে বায়না ধরলেন তিনি তার সাবেক প্রভূ প্রদত্ত খেতাবটি ব্যবহার করবেন । এতে তার সহকর্মীরা বেশ ক্ষুব্দ হলেন । শেষ পর্যন্ত তা করা হতে তিনি বিরত থাকলেন । বৃটেনে বাংলাদেশের দূতাবাসে ইকোনমিক্স মিনিষ্টারের পদ খালি হলো । বঙ্গবন্ধুর কাছে হাত কচলে বললেন ওই পদটিতে তাকে পদায়ন করতে । বঙ্গবন্ধু বললেন চিন্তা করে দেখবেন । অনেক দেন দরবারের পর তিনি বৃটেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকোনমিক্স মিনিষ্টারের পদে যোগ দিলেন । অবসরের পর তিনি বর্তমানে বেগম জিয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা । পনেরই আগষ্ট তিনি আর সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ (মাগুরা উপনির্বাচন খ্যাত) বেগম জিয়ার তৃতীয় জন্মদিনের কেক কাটার জন্য মধ্য রাতে ছুঠে যান । মনিরের নৃশংস হত্যাকা-ের পর তার কাছে জানতে ইচ্ছা করে এই হত্যাকা-ের জন্য তিনি কাকে দায়ী করবেন ?
সুশীলদের একটি অংশ আছে যারা সুযোগ পেলেই বর্তমান সংকটের জন্য অকপটে দুই নেত্রীকে দায়ী করেন । বলেন এটি দুই নেত্রীর ক্ষমতার লড়াই । বাস্তবে কী তাই ? দেশের শীর্ষ আদালত যখন রায় দিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ কারণ এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী তখন সেই সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিল করা ছাড়া আর কী কোন বিকল্প ছিল ? বাতিল করার পূর্বে এই ব্যাপারে গঠিত বিশেষ কমিটি সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা করেছে । বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে । সকলে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিলেও বিএনপি সাড়া দেয় নি । সকলের সাথে আলোচনার পর সংবিধানে নির্বাচন বিষয়ক ১৯৭২ সনের সাংবিধানিক ধারাগুলি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে । এই ধারার অধীনে বেগম জিয়া ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন করেছেন । তার পূর্বে তাঁর স্বামী জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ নির্বাচন করেছেন । ১৯৯০ সনে এরশাদ পতনের পর সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে গণতন্ত্রের উত্তরণের পন্থা হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালিন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত সকল জোট ও দল এই মর্মে একমত হয়েছিল যে তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে । কিন্তু সেই নির্বাচনের পর বেগম জিয়ার সরকার এই মর্মে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি । তার কাছে পূর্বের ব্যবস্থাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল । বিরোধী তথা আওয়ামী লীগও বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন উচ্চাবাচ্য করেনি । তার একটা কারণ হতে পারে যে দীর্ঘ আন্দোলনের পর অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো তাকে বেগম জিয়া সঠিক ভাবে পরিচর্যা করবেন । কিন্তু এক মাগুরা উপনির্বাচনেই তিনি প্রমাণ করে দিলেন বিরোধী দলের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল । আসলে বেগম জিয়ার রাজনীতি সম্পূর্ণ ক্ষমতা কেন্দ্রিক । সুতরাং আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু হলো । শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন বেগম জিয়া ১৯৯৬ সনের পনেরই ফেব্রুয়ারীর একতরফা নির্বাচন করে একটি গোঁজামিল সর্বস্ব নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে । যেই সংসদে এই ব্যবস্থাটি সংবিধানে অন্তুর্ভূক্ত হলো সেই সংসদে বেগম জিয়ার বদৌলতে বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে নির্বাচিত হলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অবঃ) রশিদ । তারপরও বিরোধী দল সংশোধনী মেনে নিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছিল । কিন্তু আবার ২০০৬ সালে এসে বেগম জিয়া আর তার দল বিএনপি নানা ছলচাতুরী করে ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাইলে আবার বিপত্তি, আবার আন্দোলন এবং সব শেষে ২০০৭ সালে এক এগার । বেগম জিয়া যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থা রেখে নির্বাচনের বিষয়টি জনগণের উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে আজ দেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা হতো কী না সন্দেহ আছে ।
শেখ হাসিনা কী স্রেফ ক্ষমতার জন্য সংবিধানের আওতায় থেকে নির্বাচন করতে চান? হতে পারে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চান । এতে দোষের কিছু নেই কারণ সাংবিধানিক রাজনীতিতে সব দলই কম বেশী ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন । কেউ যেতে পারে কেউ পারে না । যেমন বাংলাদেশে বামপন্থী দলগুলি নির্বাচনের সময় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন । এদেশের বাম দলগুলি কোন বিপ্লবী দল নয় যে বিপ্লব করে ক্ষমতা দখল করবে । সুতরাং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং মাঝে মধ্যে দুই একটা আসনে বিজয়ীও হয় । আওয়ামী লীগ শুরু হতেই একটি নির্বাচন মুখি দল । যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে কিন্তু অতীতে একাধিকবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে । অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে এবং ক্ষমতায় গিয়েছে এবং জিয়ার মৃত্যুর পর যখনই বেগম জিয়ার হাতে দলের দায়িত্ব এসে পরেছে তখন হতেই বিএনপি’র একটা চেষ্টা ছিল কী ভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসা যায় । ব্যতিক্রম ছিল বিচারপতি সাত্তারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন । তখন দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছত্রভঙ্গ এবং সেই সময় সর্বদলীয় প্রার্থী হিসেবে ডঃ কামাল হোসেন বিচারপতি সাত্তারের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন । ডঃ কামাল হোসেন নিঃসন্দেহে একজন ভাল প্রার্থী ছিলেন কিন্তু তাঁর পিছনে শক্ত কোন সংগঠন ছিল না কারণ জিয়া যদিও নিজেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা দাবি করেন কিন্তু বাস্তবে তার শাসনামলে কোন রাজনৈতিক দলকে তিনি সংগঠিত হতে দেন নি বরং অনেক দলকে অর্থের বিনিময়ে তছনছ করে নিজের দলে আত্মিকরণ করে ফেলেছিলেন । একুশ বছর পর ১৯৯৬ সনে অনেক বাধা বিপত্তি আর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার সিংহভাগ কৃতিত্ব শেখ হাসিনার । শেখ হাসিনা এই বার নিয়ে দুই দফায় দশ বছর দেশ শাসন করছেন । তার পরম প্রতিপক্ষও স্বীকার করবেন প্রথম দফায় তার শাসনামলে যত উন্নতি হয়েছিল তার দ্বিতীয় দফায় তার মাত্রা বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে । সুতরাং তার সরকারের সাফল্যকে পুঁজি করে তিনি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাইতেই পারেন । কিন্তু এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে এর বাইরেও তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি সাংবিধ যা বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষাপটে করা হয়েছিল । এটিতো স্থায়ীভাবে চলতে পারে না । সংবিধান অনুযায়ী চলমান সরকারই নির্বাচনকালিন অন্তবর্তীকালিন সরকার হিসেবে কাজ করবে ঠিক অন্য দশটি দেশে যে ভাবে করে । সেখানেও শেখ হাসিনা ছাড় দিয়ে বলেছেন নির্বাচনের সময় একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করবেন । কিন্তু তাও বেগম জিয়া আর তার মিত্ররা কিছুতেই মানতে চান না । আবার তিনি বা তার দল পূর্বের অবস্থায়ও ফিরতেও চান না কারণ তিনি বলেই দিয়েছেন কোন অবস্থাতেই বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে পারবেন না । আবার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে একটি গণতান্ত্রিক দেশে এক মুহুর্তের জন্যও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না । তাহলে এখন এই পরিস্থিতি হতে উত্তরণের উপায় কী ? উপায় সংবিধানের মধ্যেই দেয়া আছে । নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচনকালিন সরকার গঠন যা বিরোধী দল মানতে চান না । তারা কোন কার্যকর বিকল্প পরিকল্পনা দিতেও এই যাবত ব্যর্থ হয়েছেন । নিয়মিত আন্দোলন আর গণঅভ্যূত্থানের হুমকি দিয়ে মানুষ মেরে চলেছেন কিন্তু তাতে জনগণের ভোগান্তি বৃদ্ধি ছাড়া কারো কোন লাভ হচ্ছে না । এই যে বাহাত্তর ঘন্টা হরতাল ঘোষনা করা হলো তাহলে কী আবার কয়েকজন মনিরের হত্যাকান্ড ঘটবে । সামনের নির্বাচনে কী মনিরদের লাশই বিরোধী দলের নির্বাচনী পুঁজি হবে ? এই প্রশ্নের জবাবতো বেগম জিয়া এবং তার মিত্রদের খুঁজতে হবে । শেখ হাসিনা নানা প্রতিকুলতার মাঝেও নির্বাচনকালিন সময়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন । নির্বাচনকালিন সময়ে সরকার প্রধান কে হবেন সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেন নি । প্রধানমন্ত্রী এমনও বলেছেন বিরোধী দল কী কী মন্ত্রণালয় চায় তাও তারা বলতে পারে । এর চেয়ে উদার প্রস্তাব আর কী হতে পারে ? বিরোধী দলের উচিত প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব আরো কী ভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে সংসদে কথা বলা । একটা কথা মনে রাখা ভাল, দেশটা কোন একটি দলের নয় । এটি ষোল কোটি জনগণের দেশ । দেশ ও জনগণের প্রতি সামান্য মমত্ববোধ থাকলে সকল মহলের উচিৎ হবে আর সম্পদের ক্ষতি করে বা লাশ না ঝরিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা । সময় কিন্তু দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । নভেম্বর ৯, ২০১৩

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]