প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের হিসাব নিকাশ

 


প্রফেসর আবদুল মান্নান

ভারতের বিজেপি সরকারের নতুন বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাহাত্তর ঘন্টার বাংলাদেশে ঝটিকা সফর শেষে গত ২৭ তারিখ নিজ দেশে ফিরে গেছেন । যদিও বলা হচ্ছে এটি ছিল তিন দিনের সফর বাস্তবে তা ছিল এক দিনের কর্ম সফর । ২৫ তারিখ রাতে তিনি আসেন, পরদিন তাঁর পূর্ব নির্ধারিত সকল আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম সারেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন, একটি সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন । ২৭ তারিখ তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের সাথে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখান হতে তিনি সরাসরি বিমান বন্দরে চলে যান । এদিন সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথে প্রাতঃরাশ করেন । ঠিক পূর্ব নির্ধারিত না থাকলেও তিনি চল্লিশ মিনিটের জন্য বেগম জিয়ার সাথে তাঁর হোটেল কক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন । ভারতের সব সরকারের বিদেশ মন্ত্রী কোন না কোন সময় বাংলাদেশ সফরে এসেছেন কিন্তু সুষমা স্বরাজকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ধরণের হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল অন্য কারো বেলায় তা তেমন একটা দেখা যায় নি । সুষমা চলে যাওয়ার পরও তাঁকে নিয়ে কথাবার্তা এখনো শেষ হয় নি, হয়তো চলবে আরো কয়েক দিন । ভারতের বিদেশ মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে কার কি হলো তা নিশ্চিত ভাবে আঁচ করা না গেলেও তার এই আসা যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের স্থবির রাজনীতিতে কিছুটা হলেও প্রাণ সঞ্চার হয়েছে । প্রথমে সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা বলতে পারছেন ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসিন হওয়ার পর যারা ধরে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আয়ু বোধ হয় শেষ হয়ে আসছে তাদের সুষমা একটি বার্তা দিয়ে গেলেন ভারতের বিদেশ নীতি কোন একটি বিশেষ দলের ক্ষমতায় থাকা না থাকার উপর নির্ভর করে না, তা নির্ভর করে ভারতের স্বার্থের উপর । সে দেশে সরকার বদল হলে রাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন হয় না যদি না তা রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি হয় । বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ভারতের সাথে সম্পর্ক কখনো খারপ ছিল না কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট ভারতকে যে ভাবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল তা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় কারণ তা দিলে নিশ্চিতভাবে চারিদিকে গেল গেল রব উঠবে ।
সুষমার বাংলাদেশ সফর আরো একটি কারণে সরকারি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর যারা নিত্যদিন বলছিল এই নির্বাচন আর সরকার দুটোই অবৈধ তারা দেখল ইতোপূর্বে শেখ হাসিনার সফল জাপান ও চীন সফরের পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে এই বার্তা দিয়ে গেলেন বাংলাদেশের যে মহলটি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে হররোজ তর্ক করে তারা বুঝতে পারছে যতই এই নির্বাচন নিয়ে তর্ক করি না কেন তা বিশ্ব মহলে তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না কারণ নির্বাচনটি সাংবিধানিক ভাবেই হয়েছিল । ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা লিখেছে সুষমা বেগম জিয়াকে এই বার্তা দিয়ে গেছেন যে তারা ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে কোন কথা বলবেন না, এটা বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার । অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো মনে করে বিএনপিকে নিয়ে সরকারের আর একটি মধ্যবর্তি নির্বাচন করা উচিৎ তবে তা তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না কারণ বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে কোণঠাসা হয়ে পরছে যার অন্যতম কারণ তাদের হঠকারি মধ্যপ্রাচ্য নীতি । জাতি সংঘ-বুশ-ওবামা-ডিক চেনি-কন্ডালিৎসা রাইস-হিলারি ক্লিন্টন-কলিনপাওয়েল-ডন রাম্সফিল্ড-টনি ব্লেয়ারের চরম হঠকারি ও ভ্রান্ত নীতির কারণে ইরাক এখন খন্ড বিখন্ড হওয়ার দ্বার প্রান্তে । এখন এই অমার্জনীয় অপরাধের কারণে যে সব কুশীলবরা দায়ী তারা একে অন্যের উপর দায় চাপাতে ব্যস্ত । গত তিন দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেখানেই হাত দিয়েছে সেখানেই ব্যর্থ হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমন একটা ব্যতিক্রম ছিল না । যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত চেয়েছিল যে কোন ভাবে তথাকথিত অসাবিংদানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় বসাতে যাতে বাংলাদেশ দ্রুত আর একটি আফগানিস্তান বা ইরাক হয়ে উঠতে পারে । তেমনটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হয়তো বাংলাদেশেও আফগানিস্তান-ইরাকের মতো ট্যাংকের পিঠে করে গণতন্ত্র রপ্তানি করার সম্ভনা ছিল। সে সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাওয়াতে তারা নাখোশতো হবেই । রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে নিল যুক্তরাষ্ট্র দু’একটি হুঙ্কার ছেড়ে এখন চুপ । তাদের একান্ত মিত্র দেশ থাইল্যান্ডে যখন একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনা বাহিনী ক্ষমতা দখল করলো তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘কাজটি ভাল হয়নি’ বলেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে । অনেকের ধারণা গত তিন দশকের যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও ভ্রান্ত পররাষ্ট্র নীতির কারণে দেশটি এখন অনেকটা কাগুজে বাঘে পরিণত হচ্ছে । বাংলাদেশ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে তেমনটি আশা করা যায় না । তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চীন ভারত উভয়ই চাইছে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরের উপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে । সেটি করতে হলে উভয় দেশেরই বাংলাদেশের সহায়তা প্রয়োজন যা হয়ত যুক্তরাষ্ট্র্র খুব একট পছন্দ করবে না । এই অঞ্চলের উপর রাশিয়ার দৃষ্টিও আছে । শেখ হাসিনার সরকার এই তিনটি দেশের সাথেই ইতোমধ্যে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে । এটি তাঁর কূটনৈতিক সাফল্য । বলা যেতে পারে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন সাইড লাইনে বসা আছে । তারা মনে করে সরকারে আওয়ামী লীগ না থাকলে তাদের জন্য ভাল । ইতোমধ্যে তারা পদ্মাসেতু, গ্রামীণ ব্যাংক, জিএসপি নিয়ে বেশ কিছু গেম খেলার চেষ্টা করেছে যাতে তারা তেমন একটা সুবিধা করতে পারে নি । অনেকে মনে করেন ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বিএনপি অংশ গ্রহণ না করার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধন ছিল । তারা বুঝতে পারেনি শেখ হাসিনা এত বড় ঝুঁকি নিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতার কারণে এই নির্বাচনটি করে ফেলবেন । নির্বাচনটি হয়ে যাওয়াতে অনেকেরই মন খারাপ । তবে এটাও ঠিক যুক্তরাষ্ট্র খুব সহজে যে বাংলাদেশে একটি মধ্যবর্তি নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের হাল ছেড়ে দেবে তা মনে করার কোন কারণ নেই ।
সুষমার বাংলাদেশ সফর নিয়ে যদিও একটা সাজ সাজ রব ছিল কিন্তু তাঁর এই সফরে বাংলাদেশের কোন কিছু প্রাপ্তি ঘটবে তা কারো চিন্তায় ছিল না । এটি ছিল অনেকটা সৌজন্য সফর এবং ভারতের নতুন সরকার সম্পর্কে তার প্রতিবেশীদের এই ধারণা দেয়া যে নির্বাচনের পূর্বে নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে যে একটা নেতিবাচক ধারণা ছিল তা দূর করা যা ইতোমধ্যে তারা করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে । সুষমার সফর ভারতের জন্যও প্রয়োজন ছিল কারণ প্রতিবেশীকে আস্থায় নিতে না পারলে ভারতের মতো এত বিশাল ও বহুমতের একটি দেশ শাসন করা সহজ নয় । ভারতের কাছে বাংলাদেশ তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ভারতের উত্তর-পশ্চিম কাশ্মীর সীমান্তে সমস্যা সেই সাতচল্লিশ পরবর্তি কাল হতে । সেই সমস্যা সহজে সমাধান হওয়ার নয় । উত্তর সীমান্তে কোন কোন অঞ্চলে চীনের সাথে সমস্যা আছে কিন্তু এই মুহুর্তে তেমন গুরুতর নয় এবং তা সংঘাতপূর্ণও নয় । তবে বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের উত্তর পূর্ব সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরে অস্থির । এই অঞ্চলে আসাম, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চলে ভারতের একাধিক সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ক্রিয়াশীল এবং তাদের সাথে মায়ানমারের কোন কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের সাথে সখ্যতাও আছে । তবে ভারতের জন্য সব চেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠে যখন এই সংগঠনগুলি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে তাদের কর্মকান্ড পরিচালিত করে এবং তাদের প্রত্যক্ষভাবে কোন কোন বাংলাদেশের সরকার সহায়তা করে যা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেখা গেছে । সে সময় তারা বাংলাদেশকে তাদের অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করেছে যার বড় প্রমাণ চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আর বগুড়ায় কয়েক লক্ষ রাউন্ড গুলি উদ্ধার । এই সবই হয়েছে সে সময়ের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে । সেই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন এই বিচ্ছিন্নতাবাদিরা আসলে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে এবং বাংলাদেশের উচিৎ তাদের সমর্থন করা যেভাবে ভারত বাংলাদেশকে একাত্তরে সহায়তা করেছে । এটাতো স্বীকার করতেই হবে ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর এই সব অপতৎপরতা বন্ধ হয়েছে । সুতরাং নতুন ভারত সরকারের বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার কোন বিকল্প নেই ।
ভারতের কাছে বাংলাদেশের পাওনা অনেক । আমরা ভারতের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত আমাদের সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চাই । তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির স্বাক্ষর হোক তা চাই । ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ভারতের সাথে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তি সংসদে অনুসমর্থন করেছে যা ভারত এই যাবত করতে ব্যর্থ হয়েছে । বাংলাদেশ সেই অবস্থার পরিসমাপ্তি চায় । সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ চাই । বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার অবসান চাই । এ যাবত বাংলাদেশ ভারতকে যে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদা খুব বেশী নয় । সদিচ্ছা থাকলে এই চাহিদা পূরণ মোটেও অসম্ভব নয় । সুষমা স্বরাজ তাঁর সফর কালে এই সব সমস্যা যে আছে তা স্বীকার করে অভয় দিয়ে বলেছেন মোদি সরকার এই সব সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক এবং তারা সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করবে । বাংলাদেশের মানুষ কথা নয় কাজ দেখতে চায় । ভারতের জন্য এই সব সমস্যা সমাধানের এটাই সর্বোৎকৃষ্ট সময় কারণ দীর্ঘ দিন পর কেন্দ্রে ভারত এত শক্তিশালী একটা সরকার পেয়েছে যে সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সমীহ করছে ।
সুষমার সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপি কিছুটা হলেও একটু বেকায়দায় ছিল । ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশে যত বিদেশী ভিআইপি এসেছেন সকলেই বেগম জিয়ার সাথে তাঁর বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন এবং অনেকে অভয় দিয়ে বলেছেন একটু ধৈর্য্য ধরুন হারানো রাজ্য আবার ফিরে পাবেন । এই কাজকে সফল করার জন্য বেগম জিয়ার জৈষ্ঠ্য পুত্র তারেক রহমান লন্ডনে একটি বিকল্প বিএনপি অফিসও খুলেছেন । বেগম জিয়া নিয়মিত বিরতি দিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার জন্য জনগণকে রাস্তায় নেমে আসতে বলছেন । কিন্তু নাদান জনগণ তাঁর কথায় তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না । ভারতের লোক সভা নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলে বিএনপি একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছিল । সকলের আগে বেগম জিয়া মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন । তাঁদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নেত্রীদের কথা বার্তায় মনে হচ্ছিল নির্বাচনে বিজেপি নয় বিএনপি জিতেছে । তাঁরা আশা করেছিলেন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বেগম জিয়া আমন্ত্রিত হয়ে দিল্লি যাবেন । তেমন একটা খবরও রটিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং এও বলা হয়েছিল ঢাকা হতে বেগম জিয়া আর ল-ন হতে তারেক রহমান দিল্লির দরবারে হাজির হবেন । কিন্তু বাস্তবে আমন্ত্রণ পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তবে তাঁর পরিবর্তে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদের স্পিকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরী । এ সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান ছিলেন । বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবদার করলেন ঢাকা সফরের সময় সুষমা যেন বেগম জিয়ার বাসভবনে একটু পদধূলি দেন । কিন্তু তাতো সম্ভব নয় কারণ বেগম জিয়া এখন একটি দলের প্রধান ছাড়া অন্য কিছু নন । তিনিতো কোন প্রটোকলে পরেন না । আর ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা নিশ্চয় এটি ভুলে যান নি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জি ঢাকা সফরে এসেছিলেন তখন বেগম জিয়া তাঁর সাথে একটি পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাৎকার বাতিল করেছিলেন কারণ সে সময় তাঁর দলের মিত্র জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনের নামে রাস্তায় মানুষ পোড়াচ্ছিল আর জনগণের সম্পদে আগুন দিচ্ছিল । তিনি প্রণব মূখার্জির সাথে দেখা করতে গেলে তাদের কর্মসূচীতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এবার ঠিক হলো সুষমা স্বরাজ বেগম জিয়ার সাথে তাঁর হোটেল স্যুইটে কিছু সময়ের জন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন । তাই সই । সব ইগো, লজ্জা পিছনে ফেলে বেগম জিয়া ছুটলেন সুষমা স্বরাজের হোটেলে । সাথে নিলেন সুষমা আর তাঁর কন্যার জন্য পাঁচটি শাড়ী । ঠিক এমন কিছু উপহার প্রণব মূখার্জি নিয়ে এসেছিলেন বেগম জিয়ার জন্য দিল্লি হতে । সেটি তাঁর ভাগ্যে ছিল না । সুষমার সাথে দেখা হলো, চা পান হলো, বেগম জিয়া তার কাছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ‘না থাকার’ ব্যাপারে নালিশ করলেন । এই সাক্ষাৎকারের ভাল দিকটা হচ্ছে দেরীতে হলেও বেগম জিয়া বর্তমান সময়ে তাঁর অবস্থানটা বুঝতে পেরেছেন । বুঝতে পারেন নি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ আবদুল মঈন খান বা দলের অন্যান্যরা। ডঃ মঈন খান এখনো মনে করেন জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি বেগম জিয়া সে কারণেই বেগম জিয়ার সাথে সুষমা স্বরাজ বৈঠক করেছেন । বিএনপি নেতৃবৃন্দ এমন সব বালখিল্য সূলভ আচরণ আর বাগাড়ম্বর ছাড়তে পারলে তাদের ছত্রভঙ্গ দলের জন্য মঙ্গল হতো ।
সুষমা ২৭ তারিখ দিল্লি ফিরে গেছেন । তাঁর এই সংক্ষিপ্ত সফর খুলে দিতে পারে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সহ সম্ভাবনার অনেক নতুন দ্বার । তবে তা কতটুক হবে তা নির্ভর কওে অনেকটা ভারতের নতুন সরকারের আচরণের উপর ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জুলাই ১, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]