প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

কূটনৈতিক সীমা অতিক্রম করা প্রত্যাশিত নয়

 


প্রফেসর আবদুল মান্নান

দুই দেশের মধ্যে দূত বা রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের রেওয়াজ অতি প্রাচীন । ইংরেজ রাজদূত স্যার টমাস রো রাজা প্রথম জর্জের আমলে তার দূত হয়ে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে এসেছিলেন ১৬১৫ সালে । উদ্দেশ্য ছিল প্রাচুর্যের দেশ ভারতবর্ষে বাণিজ্য করার অনুমতি । জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ দেখে রো অনেকটা হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন । তার ধারণা ছিল না একজন সম্রাট এত শানসওকত আর জেল্লার মধ্যে বাস করতে পারেন । তারও অনেক আগে সেই খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৪ শতকে ভারতে প্রথম ইউরোপীয় রাজদূত হয়ে এসেছিলেন গ্রীসের সম্রাট সেলুকাসের পক্ষে মেগাসতিনিস । বলা হয় তিনিই ভারতবর্ষে প্রথম বিদেশী রাজদূত । সেলুকাস বীর আলেকন্ডারের একজন জেনারেল ছিলেন । পরে সেলুকাস নিজেও একটি সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । মেগাসতিনিস পাটালিপূত্র, বর্তমানে পাটনায় তার ডেরা স্থাপন করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করে গ্রীক ভাষায় সেই আমলে রচনা করেছিলেন ‘ইন্ডিকা’ নামের এক অসামান্য গ্রন্থ । দূতদের প্রধান কাজ দুটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য আর সম্প্রতি সৃষ্টি করে তাকে আরো মজবুত করা । কিন্তু সব সময় যে দূতরা সম্পূর্ণ সেই কাজে নিয়োজিত থাকেন তা নয় । অনেক সময় দেখা যায় একজন দূত নিজ দেশের হয়ে তার দায়িত্ব নিয়োজিত দেশে (হোষ্ট কান্ট্রি) গোয়েন্দাগিরী করেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় তথ্যও পাচার করেন । কখনো কখনো আবার নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সেই দেশের রাজনীতিতে অযাচিতভাবে নাক গলান বা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। ১৯৬৩ সালে ঞযব টমষু অসবৎরপধহ নামে হলিউডে নির্মিত ও প্রখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো অভিনীত একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল । ব্রান্ডো একটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রদূত । নাম বলা না হলেও বুঝা যায় দেশটি থাইল্যান্ড। সেই ছবিতে দেখা যায় ব্রান্ডো দেশটির একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্য আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলির সাথে গোপনে কী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আর ইন্ধন যোগাচ্ছেন। এমনতর অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হলে অথবা কর্তব্য পালনরত দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করলে সেই দেশ যে কোন রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসের কর্মকর্তাকে বহিষ্কার অথবা অবাঞ্চিত ঘোষণা করতে পারে । ষাটের দশকের ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র এই কাজটি পাল্লা দিয়ে করতো । ২০০০ সালে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার কারণে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার ইরফান রাজাকে বাংলাদেশে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছিল । তিনি নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন । এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য সকল মহল শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছিল ।
বাংলাদেশের সাথে বর্তমানে ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও সব দেশে আমাদের দূত নেই অথবা সব দেশ সমান ভাবে বাংলাদেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণও নয় । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপান, ইইউ, বৃটেন, কানাডা, কোরিয়া, সার্কভূক্ত দেশ সমূহ, সৌদি আরব সহ মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, মালয়েশিয়া প্রমূখ দেশ সমূহ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সব দেশের সাথে বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও অভিন্ন স্বার্থ জড়িত আছে । এই দেশগুলির অনেকগুলিই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও উন্নয়ন অংশিদার । সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, কোরিয়া সহ অনেক দেশেই বাংলাদেশের প্রায় আশি লক্ষ মানুষ কাজ করে । আবার অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশও কূটনৈতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই তিনটি পরাশক্তিই ভারত মহাসাগরের উপর নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে সব সময় মরিয়া হয়ে আছে । অবস্থানগত কারণে সেই সব দেশের কাছে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । চীন বাংলাদেশের অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছে । ইইউ দেশগুলি বাংলাদেশের তৈরী পোষাকের সিংহভাগ আমদানি করে । যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তবে একটা কথা মনে রাখা ভাল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে যতসামান্য উন্নয়ন সহযোগিতা দেয় তার চেয়ে বাংলাদেশ হতে তৈরী পোষাক হতে শুরু করে অন্যান্য সকল পণ্যের উপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করে নিয়ে যায় তার অনেকগুণ বেশী । তারপরও তাদের সাথে বাংলাদেশ সব সময় ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে কারণ জাতি সংঘ হতে শুরু করে সব আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাদের মোড়লিপনা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশী । সে জন্য সে দেশ হতে বাংলাদেশে কে রাষ্ট্রদূত হয়ে আসলেন আর কে সেখানে গেলেন তা বিশেষ ভাবে সকলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ।
বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল সেই ১৯৭২ সালেই যদিও একাত্তর সালে নিক্সন প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় পাকিস্তানকেই জোড়াল সমর্থন করেছিল । অন্যদিকে সে দেশের জনগণ ছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে । অনেকে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, যিনি পরে পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন সেই হেনরি কিসিঞ্জারের কারণে । ১৯৭২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিক্সন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ আমলা হেরম্যান এলিটসকে বাংলাদেশে সে দেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেন তবে এলিটস সেই দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান । পদটি ১৯৭৪ সন পর্যন্ত খালি ছিল এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তরা দৈনন্দিন কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন । তখন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ছিল দিলখুশা বাণিজ্যিক এলাকার আদমজি কোর্টে । ১৯৭৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডেবিড ইউজিন বোষ্টার বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন কিন্তু পরবর্তিকালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার প্রেক্ষাপটে তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পরেন । হত্যাকারিদের কেউ কেউ বোষ্টারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলে এখন তা প্রমাণিত । ১৫ই আগষ্ট রাষ্ট্রদূতদের মাঝে একমাত্র তার গাড়ীকেই ঢাকার রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায় । বাংলাদেশে যারাই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হয়ে এসেছেন তারা সকলেই সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা । তবে এদের অনেকেই তাদের নিয়মিত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন । নিকট অতীতে ২০০৬ সালে প্যাট্রিসিয়া বিউটিনিস অনেক চেষ্টা করেছিলেন বিএনপি’র সাজানো ছকে আওয়ামী লীগকে টেনে এনে নবম সংসদ নির্বাচন করাতে । তিনি এই কাজ সফল করার জন্য দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন । ব্যর্থ হয়ে তিনি একটি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্থ ইরাকে চলে যান । রাষ্ট্রদূত মেরি এ্যান পিটার্স মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাংলাদেশের ইমামদের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে নসিহত করতে যেতেন । সকলের পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা তাঁর মেয়াদ শেষ করে কয়েকদিন পর দেশে ফিরে যাবেন । সাধারণ মানুষের কাছে তিনি যত দৃশ্যমান সম্ভবত অন্য কোন রাষ্ট্রদূত এত দৃশ্যমান ছিলেন না । কোন অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সাধারণত না করেন না । হোক না সেটা কারো গায়ে হলুদ অথবা একটি পোলট্রি ফার্ম উদ্বোধন । ১৯৯৮ সন হতে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন । চষে বেড়িয়েছেন সারা বাংলাদেশ । দেশের মানুষের নাড়ি বুঝতে পারেন । সময় মতো অবস্থান পরিবর্তন করতে দেরী করেন না । শুভেচ্ছা কার্ডে রিক্সা চালক ড্যান মোজেনার ছবি ছাপিয়ে সকলকে বেশ তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন । দশম সংসদ নির্বাচনটি বিএনপি’র দাবি অনুযায়ী অসাংবিধানিক উপায়ে করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে বেশ সমালোচিত হয়েছেন । সংবিধান রক্ষায় শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তার সেই চেষ্টা বিফলে যায় । অনেকে তাকে নাম দিয়েছিলেন বিএনপি’র ওয়ার্কিং কমিটির অঘোষিত সদস্য । বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারে মোজেনার ভূমিকা খুব স্বচ্ছ নয় । কিছুদিন আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তার অভিযোগ ছিল তাকে এখনো প্রধানমন্ত্রী একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন নি । এখন দিয়েছেন কি না জানি না । তবে বিদায়ী সাক্ষাৎকারটি যাতে হয় আশা করি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সে দিকে খেয়াল রাখবেন ।
মোজেনার স্থলাভিসিক্ত হবেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা মার্সিয়া ষ্টিফেন্স ব্লুম বেরনিক্যাট । তিনি বাংলাদেশে আসার আগেই বিভিন্ন মহলে তুমুল ভাবে সমালোচিত হচ্ছেন । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন মনে হচ্ছে বেরনিক্যাট একজন অপেশাদার এবং বেদবুদ্ধিহীন রাষ্ট্রদূত হবেন এবং বাংলাদেশকে তার মেয়াদকালে অনেক জ্বালাতন সহ্য করতে হবে । কেউ কেউ বলছেন মোজেনাতো এই দেশে এসেই বিএনপি’র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যের মতো আচরণ করেছেন কিন্তু এই মহিলা সেই কাজটি তার দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগেই শুরু করে দিয়েছেন । মার্সিয়া বেরনিক্যাট গত ১৭ই জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে সে দেশের সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির সামনে রেওয়াজ অনুযায়ী দু’পৃষ্টার একটি লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেছেন । কোন একজন ব্যক্তিকে অন্যদেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার পূর্বে রেওয়াজ অনুযায়ী এরকম বক্তব্য পেশ করার সে দেশে বাধ্যবাদকতা আছে । নিশ্চিত ভাবে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ । বেরনিক্যাট শুরুতে তার পরিবারের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন । বলেছেন তার দুই সন্তানই উপমহাদেশেরই সন্তান (hail from the sub-continent) । তাদের একজনের নাম সুমিত ও দ্বিতীয়জন সুনিল । এরপর বেরনিক্যাট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কিছু উদাহরণ তুলে ধরে অনেকটা হঠাৎ করেই রানা প্লাজা আর তাজরিন গার্মেন্টস’এর দূর্ঘটনা প্রসঙ্গে চলে যান । তিনি আরো বলেন তাকে নিয়োগ করা হলে তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কাজ করবেন । এই সব কূটনৈতিকদের কাজ নয় । তার এই সব বক্তব্যে নিশ্চিতভাবে অপেশাদারিত্বের সুষ্পষ্ট ছাপ রয়েছে । তিনি শুরুই করেছেন একটি নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে । শুরুটা ইতিবাচক বক্তব্য দিয়ে করে পরে পুরো পরিস্থিতিকে আরো কী ভাবে উন্নতি করা যায় তা উল্লেখ করলে বিষয়টা আরো গ্রহণযোগ্য হতো।
বেরনিক্যাট ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কিছুটা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন । তিনি বলেছেন ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক দলগুলির উচিৎ একটি অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে আরো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা ।’ তাঁর এই বক্তব্যে বুঝা গেল তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে যে পাঠ নিয়েছেন তা সম্পূর্ণ নয় এবং তিনি সম্পূর্ণ কিছু ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন এবং এখানে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনের পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন । সোজা কথায় তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই বাংলাদেশে আসছেন । এটি ১৯৬১ সনের ভিয়েনা কনভেনশনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন । সেই কনভেনশনে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ আছে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত তার কর্মস্থলের রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবেন এবং সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না । বাংলাদেশের নির্বাচন এদেশের সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং তার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে, যা বিএনপি দাবি করছিল, তাতো রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল হতো । সংবিধানের ধারা অনুযায়ী নির্বাচন ঘোষিত হয়েছিল এবং তৎকালিন সরকার অনেক ছাড় দিয়ে বিএনপিকে সেই নির্বাচনে আনার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু বিএনপি সে নির্বাচনে না এসে সারা দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জানমালের প্রভূত ক্ষতি করে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করে এবং শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তা ভেস্তে যায় । নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন । সেই নির্বাচনে কারা আসলো আর আসলো না সেটি সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্ত । কেউ না আসলে তাকে জোর করে সেই নির্বাচনে আনা সম্ভব নয় ।
যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সেই দেশে ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যে ভয়াবহ জালিয়তির আশ্রয় নিয়ে বুশ জুনিয়রকে নির্বাচিত করা হয়েছিল তা সে দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে । বেরনিক্যাট হয়তো সেই ঘটনা ভুলে গিয়ে থাকবেন । সেই নির্বাচনে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল উচ্চ-আদালত, সঠিক অর্থে ভোটাররা নন । পরে দেখা গেছে ওই নির্বাচনে প্রকৃত পক্ষে জয়ী হয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী আল-গোর। বাংলাদেশে তেমনটি হলে নিশ্চিত ভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত । ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে একজন উচ্চ আদালতে একটি রীট দায়ের করেছিলেন যা আদালত খারিজ করে দিয়েছে । বাংলাদেশ খুবই অতিথি পরায়ণ দেশ । মার্সিয়া ষ্টিফেন্স ব্লুম বেরনিক্যাটকে এদেশের মানুষ নিশ্চয় স্বাগতম জানাবেন এবং এও আশা করবেন তিনি যেন তার কূটনৈতিক সীমা অতিক্রম না করেন । তার উচিৎ হবে এদেশে এসে প্রথমে সংসদ নির্বাচনের অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কি প্রেক্ষাপটে বাতিল হলো সে ব্যাপারে দেয়া উচ্চ আদালতের রায়টি মনোযোগ সহকারে পড়ে নেয়া । প্রত্যাশা করবো বাংলাদেশে বেরনিক্যাটের আচরণ একজন পেশাদার কূটনৈতিকের মতো হবে। 

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। জুলাই ২৬, ২০১৪ ।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]