[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

মিশরে ক্ষমতার পালাবদল আর বাংলাদেশের বাস্তবতা

 

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান

ঠিক দু’বছর আগে এক তীব্র গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ফেরাউন নীল নদ আর পিরামিডের দেশ মিশরে ত্রিশ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ট স্বৈরশাসক হুসনী মুবারক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন । প্রথম দিকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন মিশরের তরুণ সমাজ এবং তারপর তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন মিসরের সাধারণ জনগণ । রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তাহরির স্কয়ারে আন্দোলনকারীদের বিরামহীন অবস্থানের সংবাদ ওয়াশিংটন পৌঁছালে শুরুর দিকে ওবামা প্রশাসন বার বার বলে আসছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অব্যাহত রাখার জন্য মোবারকের ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন । যুক্তরাষ্ট্র মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের কাছে স্বৈরশাসকরা খুবই প্রিয় । এর বড় উদাহরণ ইরানের রেজা শাহ, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো, পাকিস্তানের আইউব খান, ইয়াহিয়া খান, পারভেজ মোশারফ, চিলির পিনোচেট, হাইতির পাপা ডক, বাংলাদেশের জিয়া ও এরশাদ প্রমূখরা । এরা বিভিন্ন সময়ে মার্কিন প্রশাসনের কাছে অসম্ভব রকমের সমাদৃত ছিলেন । বর্তমান বিশ্বে সৌদি আরবের বাদশাহ অথবা আরব দেশগুলির শেখরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে বেশ সমাদৃত । একটি দেশে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র থাকলে সেই দেশে অযাচিত প্রভাব বিস্তার অথবা সম্পদের উপর নাযায়েজ ভাগ বসানো তেমন একটা সহজ হয় না সুতরাং সম্পদশালী দেশে স্বৈরশাসন পাশ্চাত্যের দেশগুলির কাছে বেশ সমাদৃত হয়ে থাকে ।
মিশরের রাজনৈতিক উন্নয়নের ধারা আলোচনা করতে হলে অবশ্যই সেখানে মুসলীম ব্রাদারহুডের প্রসঙ্গ এসে যাবে । কয়েক হাজার বছরের পুরানো মিসরীয় সভ্যতার লালন ক্ষেত্র মিশর, রোম, ওসমানিয় শাসন, পারস্য, ফরাসি, বৃটেন প্রভৃতি দেশের অধীনে শতাব্দী পর শতাব্দী শাসিত হয়েছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সেই সময়ে এই অঞ্চলে মিশরের মতো এতো সমৃদ্ধশালী দেশ আর দ্বিতীয়টা ছিল না । কোন দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলে অথবা দেশটির অবস্থান যদি কৌশলগত দিক হতে গুরুত্বপূর্ণ হয় তা হলে সেই দেশটির উপর অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলির শেণ দৃষ্টি পরার যথেষ্ট কারণ থাকে । অনেকটা গরীবের বউ সকলের ভাবীর মতো দশা আর কী । কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয় একটি সময় এসে কোন কোনভাবে সেই দেশটির জনগণ সার্বিক বিষয়ে সচেতন হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় । জন্ম নেয় বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠন যেমন ভারতবর্ষে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অথবা বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস । এদের কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত শোষনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে আবার অনেকে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় (আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া অথবা এঙ্গোলা।) মিশরে এই উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯২৮ সনে হাসান আল বান্নার গঠন করেছিলেন ইখওয়ান আল মুসলেমিন যেটি সাধারণ মানুষের কাছে মুসলীম ব্রাদারহুড নামে পরিচিত । এর আগ পর্যন্ত মিশর বৃটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল । তীব্র গণঅসন্তোষের মুখে বৃটেন ১৯২২ সালে এক তরফা ভাবে মিশরকে স্বাধীন করে দেয় কিন্তু মিশরে কোন ধরণের সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি না থাকাতে ক্ষমতাসীন হয় মিশরীয় সেনা বাহিনী । বান্না এই শূন্যতার সুযোগ নিতেই মূলত ব্রাদারহুড গঠন করেন । কিন্তু বান্না কখনো গণতন্ত্রের পুজারী ছিলেন না । তিনি মিশরকে একটি ধর্মভিত্তিক (ঃযবড়পৎধঃরপ) রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন দেখতেন অথচ মিশরের সেনা বাহিনী গড়ে উঠেছিল ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবধারায় যার ফলে তারা মিশরে দুই বছর আগ পর্যন্ত শুধু যে সুবিধা করতে পারে নি তাই নয় দল হিসেবেও নিষিদ্ধ ছিল । শুরু থেকেই ব্রাদারহুড তাদের মতাদর্শ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য সংঘাত আর সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয় এবং চেষ্টা করে দেশের তরুণ সমাজকে তাদের বিভ্রান্ত মন্ত্রে দিক্ষিত করতে যেমনটি বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াত শিবির করে থাকে । উল্লেখ্য জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মউদুদী হাসান আল বান্নার একজন গোঁড়া সমর্থক ছিলেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত জামায়াত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এই মতাদর্শ তরুণ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে গত বাষট্টি বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে । ভারত. ইন্দোনেশিয়া আর মালয়েশিয়াতেও তারা বিভিন্ন সময়ে এই চেষ্টা করেছে কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এই সব দেশে জামায়াত তেমন একটা সুবিধা করতে পারে নি । বর্তমানে অনেকটা একই মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলাম নামের আর একটি সংগঠন মাঠে নেমেছে ।
স্বৈরশাসকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা কখনো তাদের শাসনামলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটতে দেয় না ঠিক যেমনটি হয়েছে মিশরে । কিন্তু বান্না আর তার দল ব্রাদারহুড অনেকটা সরকারের অগোচরে তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করেছে, এবং তাদের অনুসারীদের সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনে অনুপ্রবেশ ঘটাতে সহায়তা দিয়েছে । তিন দশক ধরে তারা তাদের মতবাদ খুব সফলভাবে সুদান, লেবানন, সিরিয়া, উত্তর আফ্রিকা আর প্যালেস্টাইনে প্রচার ও প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছে । মিশর সরকার ব্রাদারহুডের কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করলে তারা ১৯৪৮ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ ফাহমি আল নুকরাশিকে হত্যা করে এবং ১৯৫৪ সালের ২৬ অক্টোবর সেই দেশের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের প্রবাদ পুরুষ জামাল আবদেল নাসেরের প্রান নাশের চেষ্ঠা করে । ১৯৮১ সনে নাসেরের উত্তরসূরী আনোয়ার সাদাত এক সেনা কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণের সময় কিছু কট্টরপন্থী সেনা সদস্যদের হাতে নিহত হলে এটি ধারণা করা হয়যে এই হত্যাকান্ডের সাথে ব্রাদারহুডের হাত ছিল । ব্রাদারহুডের দর্শনের মূল বিষয়ই হচ্ছে মুসলমান প্রধান দেশগুলির মধ্যযুগে ফেরত যাওয়া এবং নারীদের অবস্থান সব অবস্থাতেই ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা যেমনটি বাংলাদেশে জামায়াত বা হেফাজত চায় । ব্রাদারহুডের আর একধাপ নিম্নপর্যায়ের দর্শন হচ্ছে আল-কায়দার দর্শন এবং ইতোমধ্যে আল কায়দা নেতা মুহাম্মদ জাওয়াহিরি ঘোষণা করেছেন আল-কায়দা ক্ষমতাচ্যুত মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের সহায়তা করবে । মুবারক বিরোধী আন্দোলনের শুরুর দিকে ব্রাদারহুড দৃশ্যপটে ছিল না কারণ তারা এই আন্দোলনের সফলতা সম্পর্কে খুব নিশ্চিত হতে পারে নি । যখন তারা দেখেছে আন্দোলন গতি পাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র মুবারকের প্রতি তাদের সমর্থন দ্রুত প্রত্যাহার করছে তখন আর সময় ব্যয় না করে ব্রাদারহুড মাঠে নেমে পরে । অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারা আর কী ।
মুবারকের ত্রিশ বছরের শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা হয়ে পরেছিল অত্যন্ত নাজুক । মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি সব কিছুই ছিল লাগামহীন । মানবাধিকারের রেকর্ড ছিল একেবারে তলানিতে আর প্রচারমাধ্যম ছিল সম্পূর্ণ ভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে । এক কথায় মিশর হয়ে উঠেছিল একটি আদর্শ পুলিশি রাষ্ট্র । আর তার পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র কারণ মিশরের সাথে ইসরাইলের একটি সুসম্পর্ক ছিল সেই আনোয়ার সাদাতের আমল হতে । তীব্র গণআন্দোলনের মুখে মুবারকের পতন হলে ক্ষমতায় আসে ফিল্ড মার্শাল তানতাউই’র নেতৃত্বে মিশরের সেনা বাহিনী । প্রায় ষোল মাস পর যখন সেনা বাহিনী দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন ঘোষণা করে তখন দেখা যায় সে দেশে ব্রাদারহুড ছাড়া আর কোন সংগঠিত রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই । কিন্তু তখন পর্যন্ত মিশরে ব্রাদারহুড একটি নিষিদ্ধ সংগঠন । চতুর ব্রাদারহুড দ্রুত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে ‘ফ্রীডম এন্ড জাস্টিস পার্টি’ নামের একটি দলের জন্ম দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে । তারা জনগণকে এই ওয়াদা দেয় তারা ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করবে । ২০১১ সালের নভেম্বর ও ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্রাদারহুড সংখ্যাগরিষ্ট আসনে বিজয়ী হয় । এর কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন । ব্রাদারহুড জনগণকে একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভ্রান্ত করে । সেই নির্বাচনে ব্রাদারহুডের প্রার্থী মুহাম্মদ মুরসি হুসনি মুবারকের প্রধান মন্ত্রী আহম্মদ শাফিকে পরাজিত করে ৩০ জুন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ক্ষমতায় অধিষ্ট হয়েই মুরসি প্রথমে সেনা প্রধান তানতাউই সহ অনেক সেনা কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠান । সেনা প্রধান করেন তার একান্ত আস্থাভাজন ৫৮ বছর বয়সী, যুক্তরাষ্ট্রে পড়া লেখা করা আবদেল ফাতাহ আল সিসিকে ।
হুসনী মুবারকের পতন আর ব্রাদারহুডের উত্থানের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলে । বেগম জিয়া আর তার আঠারো দলের শরিকরা তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে বর্তমান সরকারকে তাহরির স্কয়ার আন্দোলন, মুবারকের পতন এবং মুরসির উত্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন সময় থাকতে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন না দিলে তার অবস্থাও মুবারকের মতো হবে । কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ রূপে ভুল ছিল কারণ মিশর আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এক নয় । বেগম জিয়াতো এক পর্যায়ে বাংলাদেশেও তাহরির স্কয়ার আন্দোলনের মতো আন্দোলন সূত্রপাতের হুমকীও দেন । তবে সব চেয়ে উল্লাসিত হয় জামায়াত শিবির । তারা মনে করে বাংলাদেশে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
মুরসি এবং তার দল ক্ষমতায় এসে দেশটিকে আবার মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চাইল । তারা আবার জনগণের বাক্স্বাধীনতা রূদ্ধ করতে চেষ্টা চালাল । রাষ্ট্রীয় টিভিতে অনেক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দিল । তাদের অনেক নীতি নির্ধারকরা মত দিলেন মহিলাদের আবার অন্তঃপুরে পাঠিয়ে দিতে হবে, সেখানেই তাদের স্থান । কয়েক সপ্তাহ আগে কয়েকজন মত দিলেন আফগানিস্তানে যদি তালেবানরা হাজার বছরের পুরানো বৌদ্ধ মূর্তি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে তাহলে মিশরের পিরামিড অথবা ষ্ফিন্কস গুড়িয়ে দিতে বাঁধা কোথায়, ঠিক যেমনটি বাংলাদেশের জামায়াত আর হেফাজত অপরাজেয় বাংলা গুড়িয়ে দিতে চায় । পিছনে পরে রইলো নির্বাচনের পূর্বে ব্রাদারহুডের দেয়া সকল প্রতিশ্রুতি । দেশের অবস্থা মুবারকের আমলের চেয়ে আরো খারাপের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে । বাড়তে থাকে বেকারত্ব আর লাগামহীন হয়ে পরে দ্রব্যমূল্য । দেশটির অন্যতম বৈদেশিক অর্থ উপার্জনকারী পর্যটন শিল্প নিরাপত্তার অভাবে বস্তুত পক্ষে বন্ধ হয়ে পরে । এমত অবস্থায় যে তাহরির স্কয়ারের আন্দোলন মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করে মুরসিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠ করেছিল সেই একই আন্দোলন গত ৫ জুলাই মধ্যরাতে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করলো । ফিল্ড মার্শাল তানতাউই মুবারকের খুব আস্থাভাজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন । মুবারকের ক্ষমতাচ্যুতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । একই ভাবে জেনারেল সিসিও মুরসির খুব কাছের মানুষ ছিলেন । শেষ মুহুর্তে তিনি মুরসিকে খুব একটা সময় দিতে রাজি হন নি । পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভূট্টো বার জন সিনিয়র অফিসারকে ডিঙ্গিয়ে জিয়াউল হককে সেনা প্রধান করেছিলেন । জিয়া তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন । জেনারেল পারভেজ মোশারফও প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফের খুব আস্থাভাজন ছিলেন । কিন্তু শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মোশারফ বিন্দু মাত্র সময় ক্ষেপন করেন নি । জিয়াকে বঙ্গবন্ধু পূত্রবত স্নেহ করতেন । তার জন্য সেনা উপপ্রধানের একটি পদও সৃষ্টি করেছিলেন । পনেরই আগষ্টের কালো রাত্রির ঘটনায় জিয়ার ভূমিকা এখন প্রতিষ্ঠিত । ইতিহাস হতে এমন অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে যেখানে দেখা যাবে জনগণের শক্তির উপর নির্ভরশীল না হয়ে সেনা বাহিনীর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হলে বিপদ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে ।
মুরসি এখন সেনা বাহিনীর হাতে বন্দী । দেশটি সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলী আল মনসুর অনেকটা সাক্ষীগোপাল হয়ে এখন সরকার পরিচালনা করছে । পিছনে সেনা বাহিনী । কখন নির্বাচন হবে তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারে না। ইতোমধ্যে সেখানে মুরসিপন্থী আর বিরোধীদের মধ্যে সংঘাতে প্রায় শ’খানেক মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে । ব্রাদারহুডের সাথে এই অঞ্চলের অন্যান্য জঙ্গিবাদী সংগঠন গুলির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । এটি এখন পরিস্কার নীল নদের এই দেশটিতে মধ্যযুগীয় ধ্যানধারনার রাজনৈতিক মতাদর্শ অনেকটা অচল । এখানে সুষ্ঠু ও আধুনিক গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার রাজনৈতিক দলের জন্মের কোন বিকল্প নেই । মিশর, তুরস্ক, আলজেরিয়ার সেনা বাহিনী এখনো সেক্যুলার মতবাদে দীক্ষিত । তারা তাদের দেশ মধ্য যুগে ফিরে যাক তা চাইবে না । সে রকম একটা পরিস্থিতিতে বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে যেন মিশর আবার গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা করতে পারে । ওবামা প্রশাসন প্রথম দিকে মুরসির পতনে বেজায় ক্ষুব্দ ছিল । এখন বলছে তারা তেমন অখুশী নয় । তাদের এই দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন বিপদের কারণ হতে পারে । তাদের ঠিক করতে হবে তারা এই অঞ্চলে আর একটি ইরাক বা আফগানিস্তান চায় নাকি সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায় । মিশর অস্থিতিশীল হলে সম্পূর্ণ আরব অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে পরবে এবং শেষতক কারো জন্য তা মঙ্গলজনক হবে না । আর মিশরে ব্রাদারহুডের ক্ষমতায় আসার ফলে বাংলাদেশে যারা খুশিতে গদ গদ হয়েছিলেন তাদের বুঝতে হবে একবিংশ শতকের বিশ্বের মানুষ এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগে বাস করে এবং তারা তাদের পূর্বসুরীদের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন । গনতন্ত্রের বিকল্প আরো গণতন্ত্র, সেনা বা স্বৈরশাসন নয় ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। জুলাই ৬, ২০১৩

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ