প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

বিজেপি’র বিজয় নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাবনা

 


-প্রফেসর আবদুল মান্নান

শুক্রবার ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাজধানী দিল্লি সহ ভারতের বেশীর ভাগ শহর এখন হিন্দুত্ববাদি বিজেপির গেরুয়া বসনধারি নেতাকর্মীদের দখলে । ২১ মে গুজরাটের বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদার মোদী, এক সময়ের রেল ষ্টেশনে চা ফেরিওয়ালা, দিল্লির মসনদে বসবেন । তিনি তার প্রায় চল্লিশ বছর আগে পরিত্যাগ করা স্ত্রী যশোধাবেনকেও ঘরে তুলবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন । সকল জল্পনা কল্পনা পিছনে ফেলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৩৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছে এবং মোদির দল একাই দখল করেছে ২৮২টি । অর্থাৎ বিজেপি সরকার গঠন করার জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে। সরকার গঠন করতে হলে প্রয়োজন ২৭২ আসন । এই নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৪৪টি আসন । প্রথম বারের মতো তাদের আসানে সংখ্যা দুই অংকের ঘরে । বিরোধী দলের নেতৃত্বও আর তাদের হাতে থাকবে না । তা হতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৫৪টি আসন । পশ্চিম বঙ্গে তৃণমূল দখল করে নিয়েছে ৪২টির মধ্যে ৩৪টি । একদা শক্তিশালী বামফ্রন্টকে বহুকষ্টে দু’টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে । ধরে নেয়া যায় বামফ্রন্টের সূর্য সম্ভবত পশ্চিম বঙ্গে চিরদিনের জন্য অস্তগামী । আম আদমী পার্টির হঠাৎ গজিয়ে উঠা নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরাজিত হয়েছেন। সোনিয়া গান্ধী উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলি আর রাহুল গান্ধী আমেথি হতে বিজয়ী হয়েছেন । ভারতীয় মিডিয়া, ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা আর জরিপকারী সংস্থাগুলির অনেকেই এই ফলাফল আশা করেনি । মোদীর বিজয়ে বাংলাদেশ হতে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া আর তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য ভারতের জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন । শেখ হাসিনার অভিনন্দন জ্ঞাপন অনেকটা রাষ্ট্রাচারের কারনে । জামায়াতও অভিনন্দন জানাতে ভুলে নি । বিএনপি-জামায়াতের অভিন্দনের প্রধান কারণ এই নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেছে । আর কে না জানে কংগ্রেস আওয়ামী লীগের বন্ধু । অনেক দিন ধরেই তারা বলে আসছে নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের খবর আছে । তাদের ধারণা বিজেপি ভারতের মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করবেন এর ফলে তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর শোধ তুলতে পারবেন । বেগম জিয়ার অভিন্দন বার্তা ডঃ মনমোহন সিং এর আগেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে বেলা সাড়ে এগারটার মধ্যে সংবাদপত্র অফিসগুলিতে পাঠানো হয় । দিল্লিতে বিজেপি’র বিজয়ে বিএনপি আর জামায়াত উভয়ই উল্লশিত । শনিবার দলের কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে বলেছেন বিজেপি ভারতে সরকার গঠন করাতে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের সুবিধা হবে । রাজনীতিতে এমন দেওলিয়াপনা অভূতপূর্ব ।
মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই উৎকণ্ঠিত ছিল । ভারতের জনগণ সেই বিশ্বজনমতকে তোয়াক্কা না করে নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এটাই গণতন্ত্রের রীতি । হিটলার আর মুসোলিনিও গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন । জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র প্রথম দফায় সারা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার পর মার্কিন জনগণ তাঁকেই দ্বিতীয়বারের মতো তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছিল । দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বিশ্বের বাকি শান্তিটাও দূর করে দিয়েছিলেন ।
বিজেপি’র ভারতে সরকার গঠন করা নিয়ে বিশ্ব তেমন মাথা ঘামাতো না যদি না তারা পূর্বাহ্নে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করতেন । বিজেপি এর আগে একবার পূর্ণ মেয়াদে এবং একবার স্বল্প মেয়াদে (তের দিন) ক্ষমতায় ছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রীত্বের অধীনে । বাজপেয়ী পড়ালেখা জানা রুচিশীল ভদ্র মানুষ ছিলেন যা মোদীর বেলায় বলা যাবে না । মোদী একসময় চরম হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস’র সদস্য ছিলেন যাদের দর্শনই হচ্ছে ভারতে বসবাস করার একমাত্র অধিকার হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের । পরবর্তীকালে তারা তাদের সেই দর্শন একটু পরিবর্তন করে বলতে চাইলো ভারত হতে উৎসারিত যে সকল ধর্মাবলম্বি আছে তারাও ভারতে বসবাস করতে পারেন তবে ভারত মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের দেশ নয় । এরা সকলে এই দেশে বহিরাগত । ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ডাঃ মুনজি আর ডাঃ হেড্জওয়ার (Dr. B S. Moonje, Dr. Hedgewar) আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন । মুনজি ছিলেন বৃটিশ সেনা বাহিনীতে কর্মরত একজন ডাক্তার এবং রাজনীতি শুরু করেন কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে । তিনি ভারতের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন কিন্তু গান্ধীর অহিংস বাণী আর হিন্দু মুসলমানের ঐক্যের কট্টর বিরোধী ছিলেন । বিশ্বাস করতেন ভারতে হিন্দুরা ছাড়া আর সকলেই বহিরাগত । ১৯০৭ সালে গুজরাটের সুরাত শহরে কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে কট্টরপন্থি আর অহিংস পন্থিদের মাঝে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে চরম সংঘাত হয় এবং কংগ্রেস ভেঙ্গে যায় । কট্টর পন্থিদের নেতৃত্ব দেন লালা লাঝপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক আর বিপিন চন্দ্র পাল । তাদের বলা হতো লাল-বাল-পাল । ১৯৪৮ সনের আগ পর্যন্ত মুনজি কট্টর হিন্দুত্ববাদি হিন্দু মহাসভার সভাপতিও ছিলেন । মুনজি আরএসএর প্রবক্তা হলেও এটি ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত হেড্জওয়ারের নেতৃত্বে । মুনজি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি সফর করেন এবং ১৯৩১ সালে মার্চের ৩ তারিখ ইতালির ফ্যাসিবাদি নেতা বেনিটো মুসোলিনির সাথে সাক্ষাৎ করে ফ্যাসিবাদের ভূয়সী প্রসংসা করেন । আরএসএস’র সকল শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্ব শুধু ফ্যাসিবাদ নয় নাৎসিবাদেরও গোঁড়া সমর্থক ছিলেন । তারা বিশ্বাস করতেন দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে হলে মুসোলিনি আর হিটলারের মতো শাসক প্রয়োজন । এই শীর্ষ নেতাদের একজন ছিলেন ভিনায়ক দামোদার সাবারকার যিনি হিটলারের ইহুদি নিধনকে নিঃস্বার্থ ভাবে সমর্থন করতেন । ১৯৩৮ সনে যখন জার্মানিতে নাৎসিরা ইহুদি নিধনে মত্ত তখন সাবারকার বলেছিলেন যে ভারতীয় মুসলমানদের সাথেও তেমন আচরণ করা প্রয়োজন । তিনি এও বলতেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতো বটেই সকল সরকারি অফিস হতে ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসীদের বিতাড়িত করতে হবে । নেহেরুর তিনি কট্টর সমালোচক ছিলেন কারণ নেহেরু ফ্যাসিবাদ বা নাৎসিবাদ উভয়কেই ঘৃণা করতেন । গান্ধীর হত্যাকারি নাথুরাম গডসে আরএসএ’র একজন গোঁড়া সদস্য ছিলেন । আরএসএস এখনো নথুরাম গডসে দিবন পালন করে । গডসে তাদের কাছে একজন শহিদ ।
পূর্বে বলেছি মোদী যৌবনকালে আরএসএস’র একজন সদস্য ছিলেন । দায়িত্ব ছিল প্রচারকের । স্কুলে স্কুলে গিয়ে আরএসএর’র মতাদর্শ প্রচার করা এবং দলের সদস্য সংগ্রহ করা ছিল তার দায়িত্ব ঠিক যেমনটি বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথীরা করে । আরএসএস’র রাজনৈতিক ফ্রন্ট ছিল ভারতীয় জনসংঘ যা পরবর্তীকালে বিজেপিতে রূপান্তরিত করা হয় শ্রেফ তাদের বদনামী ঘুছানোর জন্য । গান্ধী-নেহেরু-আজাদের ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল ভারতবর্ষে এই রকম একটি কট্টর ভাবধারার রাজনৈতিক মতাদর্শকে ধারণ করে খুব বেশী দূর যাওয়া যাবে না বলে তারা ধরে নিয়েছিলেন । এর ফল হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে সরকার গঠন করার সুযোগ । এখন বড় প্রশ্ন মোদীর সরকার কতটুকু বাজপেয়ীর সরকারের মতো আচরণ করতে পারবে ? ইতোমধ্যে সরকার গঠনের আগেই আরএসএস বাবরী মসজীদের জায়গায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে বসেছে । আর মোদীর নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে অবশ্যই রামমন্দির বানাবেন । এর আগে ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মুসলমানের মৃত্যু হয়েছিল । এই দাঙ্গার জন্য সকলে মোদীকে দায়ি করলেও ভারতের আদালত মোদীকে অব্যাহতি দিয়েছেন কিন্তু সাধারণ জনগণ এতে সন্তুষ্ট নন । মোদী তার নির্বাচনী প্রচারে যেখানে সম্ভব সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করেছেন । এর ফল মোদী সরকার গঠন করলে ভারতের ২৮ কোটি মুসলমান চরম আতঙ্কের মধ্যে পরে যাবে । তারপরও অনেকে স্থানে মুসলমানরা মোদীকে সমর্থন দিয়েছেন । মোদী পশ্চিম বঙ্গে নির্বাচনী প্রচারনায় এসে বার বার উস্কানিমুলক বক্তব্য দিয়ে বলেছেন ১৬ মে তারিখের পর তাঁর ভাষায় বাংলাদেশ হতে আসা সকল ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ বাংলাদেশে চলে যেতে হবে, তবে যারা সংখ্যালঘু তারা থাকতে পারবেন । এর পরপরই আসামে বংশপরাম্পরে বসবাসকারি মুসলমানদের উপর বোড়ো সন্ত্রাসীরা আক্রমন চালিয়ে প্রায় ৪০জনকে হত্যা করে যার অর্ধেক হচ্ছে শিশু ।
কেমন হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদার মোদী ? এমন প্রশ্ন ভারতের প্রতিবেশীদেরতো বটেই সারা গণতান্ত্রিক বিশ্বের কারণ ভারত এখন একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি । আগামী বিশ বছরে তার অবস্থান চীনের পর দ্বিতীয় হতে পারে । দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হওয়ার জন্য । ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার পর যুক্তরাষ্ট্র মোদীকে সে দেশে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল । নির্বাচনের আগে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল গুজরাট গিয়ে মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন । যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে মোদীর যুক্তরাষ্ট্র যেতে অসুবিধা হবে না । ইতোমদ্যে ওবামা মোদীকে যুক্তরাষ্ট্র সফওে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । মোদী বলেছেন পাকিস্তান ও চীনের সাথে তিনি কঠোর হবেন । চীনের সাথে অরুণাচল সীমান্ত বিরোধ ভারতের বহু পুরানো । কোন কারণ ছাড়া তিনি চীনকে নসিহত করেছেন ‘অরুণাচলের কথা ভুলে যান, শক্তিতে কুলাবে না’ । ভারতের সব সরকারই কাশ্মীর সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজার চেষ্টা করেছেন । অনেকের প্রশ্ন মোদী কি সেই পথে হাঁটবেন ? তিনি যদি তাঁর পূর্বের আরএসএস’র দর্শনের প্রতি অনুগত থাকেন তা হলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হতে পারে । ইতোমধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারার অধীনে কাশ্মীরের জনগন যে সুবিধা ভোগ করেন তা তিনি তুলে দেবেন । এই ধারা বলে বাইরের মানুষ কাশ্মীরে গিয়ে স্থায়িভাবে জমি কিনতে পারেন না । এই ব্যবস্থা তুলে দিতে হলে তাঁকে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে যা করার ক্ষমতা তাঁর দল রাখে । বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রধান সমস্যা তিনটি । প্রথমে অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যা । তারপর ছিট মহল বিনিময় বা স্থল সীমানা চুক্তি অনুমোদন যা বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে সমাধান করেছে কিন্তু ভারত তা করতে ব্যর্থ হয়েছে । উভয় সমস্যা সমাধানে বিদায়ী সরকার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তৃণমূল ও বিজেপি’র কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে । সীমান্তে বেসামরিক ব্যক্তিদের উপর গুলি বর্ষণ করে হত্যা বা অপহরণ বহুদিনের সমস্যা । ভারত অসংখ্যবার এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে । কিছুটা অগ্রগতি হলেও তা যথেষ্ট নয় । এই সব সমস্যা মোদী সরকার সমাধান করার জন্য কতটুকু আন্তরিক হবেন তা দেখার বিয়য় । ভারতের নীতি নির্ধারকরা অনেক সময় ভুলে যান কৌশলগত দিক হতে বাংলাদেশ ভারতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান সমস্যাগুলি দুর করলে ভারতেরই লাভ । বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ফলে ভারতের পূর্ব সীমান্ত এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী শান্ত । এখন বাংলাদেশে ভারতের জঙ্গিদের জন্য আনা দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পরে না । বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতারা সরকারি পৃষ্টপোষকতায় যে অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছিল তার এখন কোন অস্তিত্ব নেই । বাংলাদেশ হতে গড়ে প্রতিদিন ভারতে নানা কাজে তিনহাজার বাংলাদেশী ভ্রমণ করে । এই ভ্রমণকারীরা ভারতের অর্থনীতিতে কম অবদান রাখেন না । এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বৈধভাবে ভারতের পাঁচ লক্ষ মানুষ কাজ করে । অবৈধভাবে করে আরো দুই লক্ষ । বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের কাছ হতে ভারতে যে অর্থ আসে সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম । গতবছর এই অর্থের পরিমান ছিল ৪০৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের সমতূল্য না হতে পারে তবে যা আছে তা একেবারে অবজ্ঞা করার মতো নয়। সামাজিক সূচকে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে । ভারতের ষাট ভাগ মানুষ এখনো খোলা জায়গায় পায়খানা করে । এই সংখ্যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৫ ভাগের কম । মাতৃমৃত্যু, জন্মের সময় শিশু মৃত্যুর হার, প্রাইমারি শিক্ষার হার ইত্যাদিতে বাংলাদেশ ভারত হতে বেশ এগিয়ে আছে বলে অমর্ত্য সেনের মতো অর্থনীতিবিদ একাধিকবার বলেছেন । মোদীর সামনে এখন সুযোগ এসেছে এটি প্রমাণ করার তিনি আরএসএস’র মোদী নন তিনি আধুনিক ভারতবর্ষের মোদী যিনি গান্দী নেহেরু না হতে পারেন কিন্তু অটল বিহারী বাজপেয়ী তো হতে পারেন । আগামী দিন গুলিই বলবে ভারতীয় ভোটাররা একজন রামকে তাদের নেতা নির্বাচন করেছেন নাকি একজন রাবনকে । হন যদি তিনি রাবন তাহলে তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক ভাবে বদ হয়ে যেতে পারেন । একবিংশ শতকে ভারতকে রামরাজ্যে পরিণত করা ভারতের জনগনের জন্য কাল হয়ে দেখা দিতে পারে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। মে ১৮, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]