প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর (পর্ব-২৬)

 

 

 

শাশ্বত স্বপন

 


পরদিন সকাল বেলা চেয়ারম্যানের লাল ঘর থেকে পাশা সোজা কালীদের বাড়ী চলে এল। জামা-কাপড় সব গুছিয়ে উত্তর ঘরে এল। পাশের বাড়ীর ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পাশার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন তারা আগে কোনদিন তাকে দেখেনি।পাশা যেন একটি চিড়িয়া। কালীর মা পশ্চিম ঘরে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। পাশা ঠাকুমাকে বলছে, ঠাকুমা এসব কিছুর জন্য আপনি দায়ী। আমরা দু'জন পালিয়ে যেতে চেয়েছি, পারলাম না। আপনি চিৎকার করে যে ঘটনা সৃষ্টি করেছেন তার জন্য কালীর কত বড় ক্ষতি হল!

পাশা কাঁদছে। তুলসীকে সালাম করে কালীপদের কাছে গেল। মাথা নিচু করে বলল, মেসোমশাই আমার জন্য যে ক্ষতি হল সে ক্ষতি আমিই পূরণ করতে চাই। আমি কালীকে বিয়ে করতে চাই। ওকে নিয়ে চলে যেতে চাই অনেক দূর, ভেবে দেখেন। কালিপদ রেগে বলল, তুমি বাড়ী থেকে বের হও। ওকে কোলকাতা পাঠিয়ে দেব। কালই পাঠিয়ে দেব।

পাশা কাঁদতে কাঁদতে সালাম করল। শেফালীকে সালাম করতে গেলে শেফালী সরে যায়। অনিতা জয়, অভি ওরা পাশাকে দেখে মা, ঠাকুমার আড়ালে চলে গেল। এখান থেকে চলে যেতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এখানে সে মা-বাবা ভাই-বোন পেয়েছিল। কিন্তু সম্পর্ক বেশীদিন টিকল না। আপন সন্তান যারা ভাবল তাদের ভিতরের আদরে ধর্মের এত বড় দেয়াল পাশা কল্পনাও করতে পারেনি। এরা চৌদ্দপুরুষের ধর্ম রক্ষার্থে এ যুগেও জীবন দিত পারে। এরা সমাজের কথা ভেবে অনেক সম্পর্ক বর্জনও করতে পারে। আসলে এতদিন যা হয়েছে সবই অভিনয়। সত্যিকারে কেউ তাকে আপন ভাবেনি। আজ পাশা ঘরের শত্রু বিভীষণ। একটা ভূলের জন্য সমস্ত ভালোবাসা দুধ থেকে ঘোল হয়ে গেল। হ্যাঁ, বড় প্রেম-অনেক বড় সত্য-কিন্তু একটু ভুল হলে গাড়ী যেমন ড্রেনে অথবা খাদে পড়ে প্রেমও তেমনি ড্রেনে হাবুডুবু খায় । পাশার পা চলছে না। নিজের হাতে রোপন করা নারিকেল চারাটা বেশ বড় হয়েছে। পাশা নারিকেল চারাটার দিকে তাকাল। মনে মনে বলল, এ বড় বিষাক্ত ভালোবাসা যা রঙধনুতে সাজানো ছিল। রোদ উঠাতে রঙধনু অদৃশ্য হল বিষাক্ত ভালোবাসাও প্রকাশিত হল। কালীকে কোথাও দেখা গেল না। কিন্ত ‍তার কানে বাজছে, পা-শা-, আমাকে নিয়ে যাও...।

যে ধর্ম পৃথিবীকে রক্ষা করে চলেছে, ভয় হয় একদিন সে ধর্ম বিষাক্ত রূপ ধারণ করে কিনা। দেশে দেশে খন্ড খন্ড যুদ্ধ যার সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ভাবে খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে, আসল কারণ ধর্ম প্রভাব । দূর থেকে গান ভেসে আসছে 'আমি চলে গেলে পাষাণের বুকে লিখা না আমার নাম...'। পাশা পশ্চিম দিকে হেঁটে চলেছে। তার হৃদয় হুঙ্কার দিয়ে উঠছে, আমি বারবার আসব--আমাকে আসতেই হবে। প্রকাশ করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সত্য কথাটি।যা আজ আমি পারলাম না--তা ভবিষ্যতে কেউ না কেউ তা পারবে।

বিকাল বেলা। কালীদের বাড়ী স্তব্ধ। জয় তার ছোট বোনদের নিয়ে কালীর শিয়রে বসে আছে। গতকাল থেকে কালী বারবার অজ্ঞান হয়ে যায়। এলাকার মানুষের ধারণা কালীর গর্ভে হয়তো বাচ্চা আছে। কালীপদ সিদ্ধান্তে অটল,আগামীকালই ওকে কোলকাতা মামার কাছে পাঠিয়ে দেবে। পাড়াপড়শীরা সবাই একে একে এ বাড়ীর উঠান দিয়ে হেঁটে যায় আর বর্তমান পরিবেশ দেখে যায়। কেউ কালীকেও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে যায়। গুজব ছড়াচ্ছে কালীর পেট টপ বারিন্দা হয়ে গেছে। কালী শুয়ে শুয়ে ভাবছে তার বিষাক্ত কামনা তার ভালবাসা ধ্বংশ করল। তার কারণেই পাশাকে বাড়ি ছাড়তে হল। পাশা আর আসবে না। তার জীবনে কোনদিন পাশা আসবে না।

মেঘভরা আকাশ, সূর্য ডুবেছে , সন্ধ্যা নেমেছে। লাল আভায় শুধু পশ্চিম আকাশ রক্তাক্ত। সমস্ত আকাশ জুড়ে খন্ড খন্ড মেঘের ইতস্তত: বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু কিছু মেঘ খন্ড একসাথে মিলে যায়। কালী বারান্দায় বসে মেঘ পর্যবেক্ষণ করছে। যেন সে যক্ষের প্রেয়সীর মত অপেক্ষায় বসে আছে। চোখে স্মৃতির ভেলা ভেসে যায় মেঘ খন্ডের মাঝে সে পাশাকে দেখতে পায়। অন্য এক মেঘ খন্ডে সে নিজেকে দেখতে পায়।দুই মেঘখন্ড দ্রুত বেগে উত্তর গোলার্ধে যাচ্ছে। হঠাৎ কালীর শরীর ঠান্ডা হয়ে এল। কালী ভয় পেল। অন্ধকার নেমে আসছে। ঘন ঘোর আঁধার। এটা কি মাস? কালীর তো মনে নেই। কুনো ব্যাঙ আর ঝিঝি পোকারা আপন মনে ডাকতে শুরু করেছে। রাত গভীর হতে গভীর হচ্ছে। কালীর সেদিকে খেযাল নেই। মা-বাবা, ঠাকুমা সারাদিন বকেছে, এখনও বকছে। কালীর তাতে ভ্রুক্ষেপও নেই। টু-টু-টু-স্বরে অলক্ষ্মী পাখি ডেকেই চলেছে। মাঝে মাঝে বাদুরের পাখা ঝাপটানি শুনা যাচ্ছে। দূরে শিয়ালরা পাক্কাহুয়া হুয়া রবে ডেকে চলেছে। রাত প্রায় একটা। এ বাড়ীর সবাই সারাদিনের ক্লান্তির পর অচেতন হয়ে ঘুমাচ্ছে। কালী ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছে। উঠানে কারো যেন পা পড়ল। একজন, দুইজন, তিনজন..নয় জন। আঠারো জোড়া পায়ের চাপে উঠোন যেন কাঁপছে। মুখোস পড়া ওরা ৯ জন। কারো হাতে চাকু, কারো হাতে পিস্তল। ওরা বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করল সবাই ঘুমিয়েছে কিনা। বাদুর পাখির পাখা ঝাপটানি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দূরে কারো বাড়ীর শিকারী কুকুর ঘেউ করে মাঝে মাঝে শব্দ করে উঠে। অলক্ষ্মী পাখি এখনও টু-টু-টু স্বরে ডেকে চলেছে। । সাড়া বাড়ী স্তব্ধ। কেউ জেগে নেই। তিনজন উত্তর ঘরের বেড়া কাটতে শুরু করল। তারপর... চলবে।

 


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

..........[লেখক আর্কাইভ]