[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

বাড়ীর পাশের হাঁড়ির খবর

 


-প্রফেসর আবদুল মান্নান

দুটি দেশ একেবারে আমাদের বাড়ীর পাশে । ভারত আর মায়ানমার । দুটি দেশের সাথেই বাংলাদেশ সীমান্তের ভাগাভাগি আছে । ভারতের সাথে বেশী মায়ানমারের সাথে কম। বাপ-দাদারা বৃটিশ আমলে ভাগ্য ফেরাতে বার্মায় যেতেন । দেশটিকে সকলে চিনতো বার্মামুল্লুক হিসেবে । ধারণা ছিলি রাস্তায় ঘোরা ফেরা করলেই সোনা মেলে । মায়ানমারের আগের নাম বার্মা । তামাম বিশ্বে দেশটি কিন্তু বার্মা নামেই পরিচিত । অনেক দেশতো এখনো নতুর নাম স্বীকারই করে নেয় নি । ভারতের খবর বাংলাদেশের মানুষ যত ব্যাপক ভাবে রাখে বার্মার বেলায় তার ছিটেফোঁটাও না । বর্তমানে ভারতে যাওয়ার ভিসার জন্য এক লক্ষ আশি হাজার মানুষ অপেক্ষায় আছে । বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় ভিসা অফিস দিনে তিন হাজার ভিসা প্রার্থীকে ভিসা দিতে পারে । এই তিন হাজারকে ভিসা দেয়া শেষ হলে আর তিন হাজার আবেদন জমা হয় । ওই তিন হাজার ফর্ম অনলাইনে জমা দিতে অর্ধ মিনিটের কম সময় লাগে ।এই সব ঘটে সূর্য উঠার আগেই । ভারতে প্রতিদিন বিভিন্ন বিমান সংস্থার কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট আছে । টিকেট পাওয়া অনেক সময় কষ্টকর । এর পর আছে ডজন খানেক অধুনিক বাস আর সপ্তাহে উভয় দিক হতে তিন দিন ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা । বার্মায় সরাসরি যেতে হলে একমাত্র বাহন আমাদের বাংলাদেশ বিমান । তাও সপ্তাহে দু’দিন । প্রায়শঃ অর্ধেকটা খালি যায় । বহির্বিশ্ব হতে সামরিক জান্তা দ্বারা প্রায় অর্ধশত বৎসর ব্যাপী বিচ্ছিন্ন প্রায় দেশটি দীর্ঘদিন অনেকটা বন্ধু বিহীন ছিল । ২০১১ সাল হতে সামরিক জান্তা একটু একটু করে হলেও বার্মাকে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে । তারা ঘোষণা করেছে ২০১৫ সালে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন হবে কিন্তু তার আগে সংবিধানে কিছু বিষয় সংযোজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে কখনো সেই দেশে সামরিক জান্তার আধিপত্য খর্ব না হয় । সম্প্রতি আমার বার্মা সফর কালে অনেকের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে ২০১৫ সালের নির্বাচনটি আদৌ হবে কী না তা নিয়ে অনেকের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মায়ানমারের সামরিক জান্তা আর যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে । বর্তমান নির্বাচন বিধি আর প্রস্তাবিত সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় সুচি নির্বাচনেই অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না ।
বাংলাদেশে বার্মার নাম মানুষ জানে রোহিঙ্গা মুসলমান শরনার্থিদের কারণে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রায় চারশত বছর ধরে বাংলাদেশ সংলগ্ন আরাকান প্রদেশে বসবাস করে আসছে । ঐতিহাসিকরা একমত আরাকানের আদি মুসলমানরা আরব দেশ হতে এসেছিল । আরাকান প্রদেশটি ভৌগলিক ভাবে চট্টগ্রাম সমভূমির অংশ । প্রায় একশত বছরের বেশী সময় ধরে চট্টগ্রাম রোহিঙ্গা রাজবংশের অধীনে ছিল । প্রদেশটি বার্মা হতেও পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা প্রায় বিচ্ছিন্ন । সেই প্রদেশে যাওয়ার সহজতম উপায় হচ্ছে টেকনাফ দিয়ে নাফ নদী পার হয়ে । বার্মা দেশ হিসেবে মারাত্মক ভাবে সাম্প্রদায়িক । সেখানে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী না হলে সকলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক । একজনকে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হতে হলে তাকে কাগজে কলমে প্রমাণ করতে হবে তার পূর্ব পুরুষ ১৮২৩ সালের পূর্বে বার্মায় বসতি স্থাপন করেছিল । এটি প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব । আরাকানে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজ দেশেই প্রবাসি । তাদেরকে সরাসরি বলা হয় বাংলাদেশী উদ্বাস্তু । তাদের উচিৎ ‘নিজ’ দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে চলে যাওয়া । আরাকান প্রদেশের মুসলমান বা বাঙালি বিদ্বেষে সব চেয়ে এগিয়ে আছে সেখানকার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা । তাদের নেতৃত্বে আছেন উইরাথু নামের একজন তরুণ ভিক্ষু । যাকে টাইম ম্যাগাজিন নাম দিয়েছে সে দেশের ওসামা বিন লাদেন । তার কাজই হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ আর হিংসা ছড়িয়ে সেখানে ধাঙ্গা লাগিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদেও ভিটে মাটি হতে উচ্ছেদ করা । তাকে নিয়ে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৩ সালের ১ জুলাই সংখ্যায় একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে । বার্মা সরকার টাইম ম্যাগাজিনের সেই সংখ্যাটি সে দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ।
অং সান সুচি সেদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি জেনারেল অং সানের কন্যা । এক ইংরেজকে বিয়ে করে দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে সুখে শান্তিতে বিলেতে বসবাস করতেন । অসুস্থ মাকে দেখতে রেঙ্গুন এসেছিলেন ১৯৮৮ সনে । সেই সময় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু করলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে সাধারন জনগণ। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল আন্দোলনে একক ভাবে নেতৃত্ব দেয়ার মতো তেমন কেউ নেই । তখন খবর পাওয়া গেল জেনারেল অং সানের কন্যা রেঙ্গুনে অবস্থান করছেন । সকলে ছুঠলেন তার কাছে । তিনি কিছুতেই রাজি নন রাজনীতিতে আসতে । সকলে মিলে তাঁকে তার বাবার দোহায় দিলেন । সুচির মন গললো । নেতৃত্ব হাতে তুলে নিলেন । এক পর্যায়ে তাঁকে গৃবন্দী করা হলো । বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় একুশ বছর সেই অবস্থাতেই ছিলেন । সেখানে বসেই পেলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার । বলা হলো তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন । গড়ে তুলেছিলেন তার নিজের দল ‘ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’ । ১৯৯০ সালের সাধারণ নির্বাচনে দল জয়ীও হয়েছিল । কিন্তু সামরিক জান্তা ক্ষমতা ছাড়বেন কেন ? বাতিল হলো সেই নির্বাচনের ফলাফল । সামরিক বাহিনী বললো ‘আমরা থাকতে কে বার্মা শাসন করে?’ অনেকটা একাত্তরের বাংলাদেশ । সুচি এখন মুক্ত। একটি এনজিও পরিচালনা করেন । সংসদের নিম্নকক্ষে তিনি এখন বিরোধী দলের নেতা। অনেকটা জান্তার কৃপায় । যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বে তাঁর বেশ কদর । দেশের নির্যাতিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পক্ষে কোন কথা বলেন না পাছে সামরিক জান্তা অসন্তুষ্ট হয় । যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে কোন উপায়ে বার্মাকে নিজেদের বলয়ে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে । কাজটি তত সহজ নয় কারণ বার্মা আর চীন হরিহর আত্মা । ২০১১ সালে বার্মা কিছুটা উন্মুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র বেশ বড় রকমের সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল । শুনেই বার্মার অর্থ মন্ত্রী টিভিতে দেয়া এক ভাষণে বলেন ‘যুক্তরাষ্ট্র কি আমাদের বানর মনে করেছে যে বাদাম ছিটালেই আমরা তাদের দিকে ছুটে যাব ?’ মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিয়ে সুচিকে কোন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা সযত্নে এড়িয়ে যান অথবা একটা দায়সারা গোছের উত্তর দেন । সুচির কাছে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের চেয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ । আরেকবার প্রমাণিত হলো নোবেল শান্তি পুরস্কারটি আরো একবার ভুল হাতে দেয়া হয়েছে । সম্ভত পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল এই ধরণের পূরস্কারকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে সেই কারণেই তাঁর মূল পূরস্কারের তালিকায় সেটি তিনি রাখেন নি ।
বার্মায় ১৩৫টি নৃতাত্বিক জাতি গোষ্ঠী আছে । এদের মধ্যে এগারটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলনের সাথে জড়িত । তার মধ্যে কিন্তু রোহিঙ্গাদের নাম নেই । রোহিঙ্গারা সাধারণত খুব গরীব এবং শান্তি প্রিয় এবং বর্তমান বিশ্বে সব চেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠি । বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে যে জঙ্গি ট্রেনিং হয় সেই জঙ্গিরা কিন্তু আরাকান বা বার্মায় গিয়ে যুদ্ধ করে না এবং তাদের মধ্যে কোন রেহিঙ্গাও নেই বলে জানা গেছে । তাদের অধিকাংশ বাংলাদেশি এবং জামায়াতের রিক্রুট । কিছু ইন্দোনেশিয়ার সুলেভেষি দ্বীপ হতেও আসে । এরা মূলত বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির অথবা ভাড়ায় অন্যদের হয়ে যুদ্ধ করে । প্রয়োজনে তারা আফগানিস্তান, ফিলিপিনস্, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করে । আর আরাকানে রোহিঙ্গারা সরকারি সেনা নিয়ন্ত্রিত ঘেরা দেয়া ক্যাম্পে থাকে । বাচ্চা জন্ম হলে রোহিঙ্গারা মুসলমান নাম রাখতে পারে না । রাখতে হয় একটি বৌদ্ধ নাম । বার্মা সহ এই অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘ দিন লেখা লেখি করেন সুইডিশ বংশোদ্ভূত সাংবাদিক বারটিল লিন্টনার । তার সাথে রেঙ্গুনে বসে অনেক অজানা কথা জানা গেল । ২৯ মার্চ হতে বার্মায় আদম শুমারি শুরু হয়েছে । চলবে এপ্রিলের ১০ তারিখ পর্যন্ত । গণনাকারিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কোন বাড়ির কেউ যদি নিজেকে রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে তাকে নিবন্ধিত করা হবে না । যদি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দেয় তা হলে বিবেচনা করা হবে। বাঙালী হিসেবে নিবন্ধিত হতে তারা অস্বীকার করেছে । এ’নিয়ে সংঘাতও হতে পারে । রোহিঙ্গারা এমনিতেই কোন রকমের নাগরিক সুবিধা পায় না । এই শুমারির পর দেশটিতে জাতিগত বিভাজন আরো প্রকট হবে । ইতোমধ্যে আদম শুমারিকে কেন্দ্র করে উগ্র বৌদ্ধরা রাখাইন প্রদেশে (আরাকানের নতুন নাম) আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির উপর হামলা চালিয়েছে । জাতিসংঘ প্রায় ৫০ জন কর্মীকে সেখান হতে সরিয়ে নিয়েছে অথচ এই আদম শুমারি হচ্ছে জাতি সংঘের অর্থায়নে । মেডসিন সানস ফ্রন্টিয়ারকে আরাকান হতে বহিষ্কার করা হয়েছে । তাদের অপরাধ তারা এক সন্তান সম্ভবা মুসলমান গর্ভবতী মাকে বিনা অনুমতিতে তাদের ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিল । রোহিঙ্গাদের বিয়ে সন্তান প্রসব সব কিছুতেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হয় । অভিযোগ আছে অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর । যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের মিত্র দেশসমূহ বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশ গুলিকে নিয়মিতভাবে গণতন্ত্রের সবক দেয় আর সব কিছুতেই নাক গলায় । তাতে কাজ না হলে যুদ্ধ জাহাজ আর ট্যাঙ্কের পিটে সেখানে গণতন্ত্র রপ্তানি করে । কিন্তু বার্মার ব্যাপারে এ’সব দেশ একেবারে নিশ্চুপ ।
কয়েক দিন আগে ঢাকা হতে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি চমৎকার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল । প্রবন্ধে আরাকান প্রদেশের জন্য আপাতঃ দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও একটি বাস্তব মুখী প্রস্তাব করা হয়েছিল । বলা হয়েছে যেহেতু এই প্রদেশটি বার্মা হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এখানে কয়েকশত বছর ধরে বসবাসরত রোহিঙ্গারা নিজ দেশে পরবাসি এবং তারা সব সময় নির্যাতিত হচ্ছে তার একটি সুদূর প্রসারী সমাধান হতে পারে এখানে একটি গণভোটের আয়োজন করা এবং সেই গণভোটে যদি সংখ্যা গরিষ্ঠ স্থানিয় অধিবাসিরা চায় তাহলে আরাকান প্রদেশকে চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া । এতে বার্মার সরকার বেশ ক্ষুব্দ হয়ে রেঙ্গুনে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে ডেকে পাঠায় এবং এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে । বাংলাদেশের দূত সেই দেশের সরকারকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীন সুতরাং এই ব্যাপারে সরকারের কিছু করার নেই । বার্মায় স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের জন্য যে কত মানুষকে জেলে যেতে হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া মুস্কিল । বার্মা একটি অপার সম্ভাবনার দেশ । দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে সে দেশে দীর্ঘ দিনের সামরিক স্বৈরশাসন । একটি স্বাভাবিক দেশের কাতারে উঠে আসার একটি সম্ভাবনা দেশটিতে দেখা দেবে ২০১৫ সালে । দেখার বিষয় তারা সেই সুযোগটা গ্রহণ করবে নাকি ষাটের দশকের একটি দেশ হিসেবে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকবে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । বর্তমানে শিক্ষক, ইউল্যাব, ঢাকা । এপ্রিল ১, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]