[প্রথমপাতা]
|
বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার...
প্রফেসর আবদুল মান্নান
একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীকে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গত মঙ্গলবার মৃত্যুদন্ডে প্রত্যাশিত ভাবে
দন্ডিত করেছেন এটি এখন আর কোন সংবাদ নয় কারণ সংবাদটি সঙ্গে সঙ্গেই দেশে এবং
দেশের বাইরে মুহূর্তের মধ্যে প্রচারিত হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কোন
সংবাদের জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না । এই সংবাদটির জন্য দেশে এবং দেশের
বাইরে লক্ষ লক্ষ বাঙালি দৈর্য সহকারে দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর অপেক্ষা করেছেন ।
যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমার অনেক পরিচিত
জন আগে হতেই আমাকে বলে রেখেছিল আমি যেন রায় হলেই তা সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে দেই । তা দিয়েছি । কয়েকজন রায়ের আগে প্রশ্ন
রেখেছিল রায়ে একাত্তরের এই ঘাতকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড হবে কী হবে না
সেই প্রসঙ্গে । তাদের অভয় দিয়ে বলেছি একাত্তরে সাকার কৃতকর্মের জন্য যদি
তার ফাঁসি না হয় তা হলে হিটলারকে মরনোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার দিতে হবে
। আজকে আমি সাকার মৃত্যুদন্ড নিয়ে লিখতে বসিনি । ঠিক করেছি কিছু পুরানো
কথায় ফিরে যেতে এই কারণে সাকাকে নিয়ে আজকে বিএনপি’র যে সকল নেতা নেত্রী
লাফালাফি সহ ট্রাইবুনালের বিচারপতি আর যারা তার বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন
আন্দোলন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যারা ক্রমাগত বিষোদগার করছেন সেই সব
ব্যক্তিরা যাতে ভবিষ্যতে আরো সংযত আচরণ করেন তার প্রত্যাশায় । এই ব্যাপারে
যে ভদ্রলোকের নাম প্রথমে করতে হয় তিনি হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট বার এর সাবেক
সভাপতি এবং বিএনপি সভানেত্রী বেগম জিয়ার উপদেষ্টা খোন্দকার মাহবুব হোসেন ।
বঙ্গবন্ধু সরকার যখন ১৯৭২ সালে দালাল আইন পাশ করে ৭৩টি ট্রাইবুনালে
পাকিস্তানি দালাল রাজাকার আলবদরদের বিচার শুরু করে তখন সেই সময় সরকার
পক্ষীয় অন্যতম প্রসিকিউটার ছিলেন এই খোন্দকার মাহবুব হোসেন । তাদেও চেষ্টায়
তিন হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং মৃত্যুদন্ড সহ ৭৫২ জনের সাজা হয় ।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জিয়া ক্ষমতা দখল করে ১৯৭৫ সালের ৩১ অগাষ্ট সেই দালাল
আইন বাতিল করেন এবং সকল সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জেল হতে মুক্ত করে দেন ।
এদের একজন শাহ আজিজ যাকে জিয়া পরবর্তিকালে তার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন;
আর মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে বানিয়েছিলেন সিনিয়র মন্ত্রী । সাকার রায় ঘোষণার
কিছু পর খোন্দকার মাহবুব হোসেন আর তার সতীর্থরা সুপ্রিম কোর্ট বার লাউঞ্জে
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে একত্রিত হয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে
সকলের প্রতি হুমকী দিয়ে বলেছেন বিচারের নামে এই ‘প্রহসনের’ সাথে যারা জড়িত
ছিলেন আগামীতে তারা ক্ষমতায় এলে তাদেরও বিচার করা হবে । সংবাদ সম্মেলনে
ব্যরিস্টার মওদুদকে দেখে মনে হয়েছে তার কোন নিকট জনের মৃত্যু হয়েছে । অবস্য
ব্যরিস্টার মওদুদ সাকার ঘনিষ্ট বন্ধু । ওই রাতে আমার সাথে জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরামের উঁচু পর্যায়ের এক নেতা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের
টক-শোতে অংশ নিয়েছিলেন । তার সাথে এটা আমার প্রথম পরিচয় । জাতীয়কাবাদী
আইনজীবী নেতা হলেও তাকে আমার বেশ ভদ্র মনে হয়েছে । অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে
তার কাছে খোন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে তিনি
কিছুটা বিব্রত বোধ করেন । অনুষ্ঠানের সময় সঞ্চালক একই প্রসঙ্গের অবতারণা
করলে তিনি পুরো বিষয়টা পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন এবং বলেন আসলে খোন্দকার
মাহবুব সাহেব মামলার সাথে সম্পৃক্ততা বলতে মামলার বাদি, সাক্ষী, আইনজীবী
প্রমূখদের বুঝিয়েছেন । তাকে বললাম আসলে তিনি ঠিক বলেন নি । খোন্দকার মাহবুব
বাংলাদেশের দশ কোটি মানুষ যারা দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর ধরে এই মামলা শুরু এবং
রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের কথা বলেছেন । তাকে এও বলেছি দশ কোটি মানুষ
এই বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছেন এটি বলার কারণ হচ্ছে এদেশের বাকি মানুষ
এখনো পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাস করেন এবং পারলে কালকেই বাড়ীতে পাকিস্তানি
ঝান্ডা উড়ান । বন্ধুবর ডঃ মুনতাসীর মামুনের ভাষায় এরাই হচ্ছেন অনিচ্ছুক
জাতি যারা চাননি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করুন । কয়েক বছর আগে সাকাচৌর
পুরান ঢাকার শশুর বাড়ীতে ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানি ঝান্ডা উড়ানো হয়েছিল এবং তার
প্রতিবাদে আদালতে একটি মামলাও হয়েছিল । বৃহষ্পতিবার মহান মুক্তিযুদ্ধের
স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জাতীয়তাবাদী দলের পাকিস্তানি ঘরানার
নেতৃবৃন্দ সাকাচৌর রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার উদ্দেশ্যে একত্রিত
হয়েছিলেন । সেই সভায় খোন্দকার মাহবুব হোসেন সহ এই ঘরানার আরো বেশ কিছু
নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছেন । তবে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন
আলাল সব শালীনতাকে পায়ে দলে তার বক্তব্যে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন আর কিছু দিন
পর যখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে না তখন দেশ চলবে বেগম জিয়া আর তারেক
জিয়ার নির্দেশে । তখন বর্তমান সরকারের কিছু মন্ত্রী এবং বিচারপতিদের
দিগম্বর করে রাস্তায় রাস্তায় তাড়া করা হবে এবং জনতার আদালতে তাদের বিচার
হবে । আমাদের সুশীল সমাজ এবং সুজন সখি পার্টির কেউ কেউ মধ্য রাতের টকশো এবং
পত্র পত্রিকায় বর্তমান সরকারের নেতা নেত্রী আর মন্ত্রী বর্গের বিরুদ্ধে
নিয়মিত তোপ দাগেন । এখন দেখার বিষয় সাকার রায়কে নিয়ে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ এই
যে লাগামহীন কথাবার্তা বলছেন সেই সম্পর্কে তারা কী বলেন ।
স্বাধীনতাত্তোর কালে সাকাচৌ রাজনীতিতে প্রথম পদার্পন করেন ১৯৭৯ সালে সংসদ
নির্বাচনে । সে বার তিনি চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া দুটি আসন হতে
মুসলীম লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সংখ্যালঘু এলাকায় তার
পিতার কায়দায় ত্রাস সৃষ্টি করে যথাক্রমে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল্লাহ আল
হারুন চৌধুরী (বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই) আর ওয়াকিল আহমেদ
তালুকদারকে (আঃলী) পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । পরবর্তীকালে সাকা
রাঙ্গুনিয়া আসনটি রেখে তার নিজ এলাকা রাউজানের আসনটি ছেড়ে দেন এবং তার ভাই
গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধূরীকে সেই আসন হতে মুসলীম লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন
দেন । বিএনপি‘র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া তার প্রার্থী হিসেবে এই আসনে
মনোনীত করেন জহিরুদ্দিন খানকে । নির্বাচনের দিন জিয়া আর তার দল ত্রাস কাকে
বলে তা সাকা আর তার ভাইকে শিখিয়ে দিয়ে বেলা বারটার আগেই এলাকা ছাড়া করেন ।
দুই ভাই দুপুর নাগাদ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এসে ভেঁউ ভেঁউ করে কান্নাকাটি
করে জিয়াকে হিটলারের সাথে তুলনা করে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেন এবং বলেন
এর জবাব তারা খুব সত্তর দেবেন । এর কয়েক বছর পর সাকা আর তার ভাই লেজ গুটিয়ে
এনডিপি, জাতীয় পার্টি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন । মির্জা ফখরুল তাঁর জ্ঞাতি ভাই
সাকা সম্পর্কে যখন কথা বলেন অথবা খোন্দকার মাহবুব, মওদুদ আর আলালরা যখন
সাকার রায় নিয়ে কটাক্ষ করেন তখন তারা কী এই সব বিষয় সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন
? এই যে বেগম জিয়াকে তালাক দেয়া বিবির সাথে তুলনা করেছিলেন অথবা তাদের
আগামী দিনের কথিত নেতা তারেক জিয়াকে মিঃ টেন পার্সেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত
করেন তা কী এই কাগুজে বাঘদের মনে থাকে? অথবা মনে কী থাকে সাদেক হোসেন খোকা
আর তার দাঁড়ি সম্পর্কে সাকার উক্তি ? ব্যক্তিগত ভাবে আমি খোকার কোন ভক্ত নই
। তবে খোকাকে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধা করি । সাকাকে যখন বেগম
জিয়া সম্পর্কে উক্তির কারণে দল হতে বহিষ্কার করা হলো তখন কেউ কেউ তাকে আবার
দলে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তদবির শুরু করেন কিন্তু খোকা তার বিরোধিতা করলে তা
তখন আটকে যায় । তা শুনে খোকা সম্পর্কে সাকার মন্তব্য ‘আমার পরিবার এবং আমি
যখন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হই তখন খোকা বাবুরা লুঙ্গিতে মালকোচা মেরে
পুরান ঢাকায় বর্ষা কালে রাস্তায় কই মাছ ধরতেন ।’ সাকা আরো বলেন ‘ডাকাতি
করতে গিয়ে পুলিশের গুলি লেগে খোকার গালে জখম হলে তিনি তা ঢাকতে দাঁড়ি রাখা
শুরু করেন ।’ মনে কী পড়ে মির্জা ভাইদের এই সব কথা ? মজার বিষয় হচ্ছে
বৃহষ্পতিবারে তথাকিথত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেছেন এই সাদেক হোসেন খোকা
। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম ।
২০০০ সালের ঘটনা । বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের এক কর্মী নিটলকে
চট্টগ্রামের সাকার গুডস হিলস্থ সেই অভিশপ্ত বাড়ীর গেটে গুলি করে হত্যা করা
হয় । সেই রাতে সাকাকে তার বাসভবন হতে গ্রেফতার করা হয় । কিন্তু তার ভাগ্য
ভাল চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার ওসি তাকে পকেটমার আর পতিতার দালালদের সাথে
থানা হাজতে না রেখে নিজ কক্ষে সারা রাত বসিয়ে রাখেন । এই প্রথম বার সাকার
থানা যাত্রা । সেবার সাকা সারা রাত থানায় কেঁদেছিলেন । পরদিন তিনি আদালত
হতে জামিন নিয়ে বাড়ী ফিরেন । তবে সেই মামলার কী হলো তা আর কখনো জানা যায় নি
। এর আগেও তিনি একাধিকবার তার গাড়ীতে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ধরা পরেন ।
তবে সব সময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার কারণে তিনি ছাড়া পেয়ে যান । বাংলাদেশে
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস আর মারিয়ার্টি সাকাকে একজন গডফদাদের সাথে
তুলনা করে ওয়াশংটনে তার বার্তা পাটিয়েছিলেন বলে উইকিলক্স প্রকাশ করেছিল ।
তবে এবার সেই পুরানো বাংলা প্রবাদ ‘বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার
ঘুঘু তোমার বধিব প্রাণ’ সত্য হলো । তার জন্য বর্তমান সরকার, বিশেষ করে শেখ
হাসিনা সহ এই মামলার সাথে সরকার পক্ষে যারাই সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সকলের
কাছে জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে আর ইতিহাস তাদের মনে রাখবে ।
অনেকে বলে থাকেন সাকাচৌ তাঁর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর (ফকা চৌধুরী) মতো
বেয়াদব হয়েছেন । বাস্তবে ফকা চৌধুরী বাগাড়ম্বর সর্বস্ব একজন রাজনৈতিক নেতা
ছিলেন । তিনি অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন ঠিক কিন্তু সাকার মতো ক্লাউন
ছিলেন না অথবা সকলের সম্পর্কে এত অশালীন মন্তব্য অথবা স্থান কাল পাত্র ভুলে
সকলের সাথে চরম ঔদ্ধত্য পূর্ণ একজন নিম্ন শ্রেণী বেয়াদবের মতো আচরণও করতেন
না । তবে এটা ঠিক তার মুখে কোন লাগাম ছিল না। তবে সব বিষয়ে সাকার দম্ভোক্তি
সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল । ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে
আবদুল্লাহ আল নোমান মৎস ও পশু পালন মন্ত্রী হন । সেবার সাকাচৌ রাউজান এলাকা
হতে তার পুরানো কায়দায় এনডিপি হতে নির্বাচিত হয়েছিলেন । এনডিপি গঠিত হয়েছিল
মূলতঃ আনোয়ার জাহিদ ও সাকার প্রচেষ্টায় এবং সাথে নিয়েছিলেন সব ফ্রীডম
পার্টির লোকজন । সাকা পরবর্তী পুরো সময় জুড়ে আবদুল্লাহ আল নোমানকে পশু
মন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করতেন । পরে সাকা সদলবলে বিএনপিতে যোগ দিলে ফ্রীডম
পার্টির লোকজনও তার সাথে বিএনপিতে মিশে যায় । আওয়ামী লীগের এবিএম মহিউদ্দিন
চৌধুরী আর আবদুল্লাহ আল নোমান দুজনের বাড়ীই সাকার এলাকা রাউজানে । বলা যেতে
পারে দুজনেরই একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক অতীত আছে । নিজ এলাকায় থেকে জাতীয়
রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সাকা আর তার পরিবারের ত্রাসের কারণে
রাউজান ছেড়ে তারা দু’জনই শহরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন । ফকার পিতা
আবদুল জব্বার চৌধুরী পুলিসে চাকুরী করতেন । পরিচিত ছিলেন আবদুল জব্বার
দারোগা হিসেবে । তার সাথে রাজনীতির তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না । তার বিরুদ্ধে
এলাকার মানুষের কোন অভিযোগও নেই । ফকা চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন শুরু কোলকাতায়
একজন ছাত্র নেতা হিসেবে । তার সাথে তরুণ শেখ মুজিবের ভাল সম্পর্ক ছিল এবং
দুজনই মুসলীম ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’
তার সাথে ফকার সম্পর্কের কথা অকপটে বলে গিয়েছেন । দেশবিভাগ পরবর্তীকালে
দুজন ভিন্ন ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও তাদের ব্যক্তিগত বা
পারিবারিক সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয় নি । ফকা চৌধুরী পরিবার একসময় চট্টগ্রাম
শহরের সার্সন রোড এলাকায় বাস করত । দেশ বিভাগ পূর্বকালে চট্টগ্রাম
ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির বিপুল পরিমাণের তামার তার চুরি যায় এবং পুলিশ
তা ফকার গুদাম হতে উদ্ধার করে । তার চুরির অভিযোগে ফকাকে পুলিশ আটক করলে
চট্টগ্রামে বেশ হৈচৈ পরে যায় । তার মামলা লড়তে কোলকাতা হতে আনা হয় হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে । তিনি ষ্টেশন রোডস্থ তৎকালিন বনেদি দীন হোটেলে (উববহ
ঐড়ঃবষ) উঠেন । হোটেল দীন ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আইউব
কাদেরীর পারিবারিক মালিকানাধীন । সোহরাওয়ার্দি সাহেব আদালতে তাকে সহায়তা
করার জন্য একজন স্থানীয় আইনজীবীর খোঁজ করছিলেন । তখন চট্টগ্রামে দুজন
ফৌজদারি মামলায় দক্ষ ও খ্যাতিমান আইনজীবী ছিলেন । একজন ইউএন সিদ্দিকী
অন্যজন বদরুল হক খান । কিন্তু ফকা চৌধুরীকে তারা দুজনের কেউ পছন্দ করতেন না
। তারা এই মামলায় সোহরাওয়ার্দি সাহেবকে সহায়তা করতে অস্বীকার করলেন । তবে
মামলার দিন সোহরাওয়ার্দির ব্যক্তিগত অনুরোধে ইউএন সিদ্দিকী তাকে সেই মামলায়
সহায়তা করেছিলেন । মামলার খরচ জুগিয়েছিলেন চট্টগ্রামের খ্যাতিমান মারওয়ারী
ব্যবসায়ী শুভকরণ রাজগারিয়া । দুই পরিবারের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল ।
রাজগারিয়া পরিবার বেগম জিয়ার প্রথম সরকারের আমলে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয় ।
সাকা তার পরিবার রাউজান, রাঙ্গুনিয়া আর গহিরা এলাকায় গত বিয়াল্লিশ বছরে এমন
ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হয়যে ট্রাইবুনালের রায়ে তার ফাঁসির হুকুম
হলেও এই সব এলাকার মানুষজন, বিশেষ করে সংখ্যা লঘু সস্প্রদায় এখনো সেখানে এক
অজানা আতঙ্কে ভুগছেন । সরকারের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যারা
সম্পৃক্ত তাদের উচিৎ সার্বক্ষণিক ভাবে তাদের সাথে থাকা । এলাকার মানুষ এই
মামলার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছেন । এখন তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব
সরকার আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনের । সাকা সব সময় হুঙ্কার দিয়ে
বলতেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে তার কিছু হলে চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ হতে
বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে । তার জন্য চট্টগ্রামের মানুষ দূরে থাক তার
পরিবারের ক’জন লোক কেঁদেছেন? রায়ের দিন দেখা গেছে আদালত প্রাঙ্গনে পরিবারের
সদস্যরা হাসি মুখে বেশ খোশ গল্পে মশগুল । আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আশিকুর
রহমান, সাবের হোসের চৌধুরী, ফজলে করিম চৌধুরী সকলে সাকার ঘনিষ্ট আত্মীয় ।
তার ছোট ভাই ছাড়া মামলা চলা কালে অথবা রায়ের দিন কেউই সাকার পাশে ছিলেন না
। সাকা ভুলে গিয়েছিলেন আইনের হাত অনেক দীর্ঘ । কেউ নিজেকে আইনের উর্দ্ধে
ভাবা উচিৎ নয় । আর বিএনপি’র লোকজন যারা সাকাকে নিয়ে লোক দেখানো প্রতিবাদ
সভা করছেন অথবা হুঙ্কার দিচ্ছেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতে পারেন যে
সাকা নামক একটি ক্যান্সার ব্যাধি হতে তাদের দল আইনের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছেন
। তারা ঘোষণা দিয়েছেন এই বার সাকা ন্যায় বিচার পাননি । আগামীতে ক্ষমতায়
গেলে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন । সাকার মতো একজন ঘাতককে ন্যায় বিচারের নামে
মুক্ত করতে আগামীতে জনগন মাহবুব-মওদুদ-মির্জা গংদের কতটুকু সমর্থন করবেন তা
ভবিষ্যতে দেখা যাবে ।
লেখক । সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । অক্টোবর ৫, ২০১৩
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|