[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

গণতন্ত্রকে টেকসই করার জন্য ৫ তারিখের নির্বাচনটি অপরিহার্য ছিল

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলা তর্ক বিতর্ক, চায়ের কাপের ঝড় ৫ জানুয়ারির পর কিছুটা হলেও স্থিমিত হওয়ার কথা । ৫ই জানুয়ারি এই বহুল আলোচিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি হচ্ছে । এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা একটি গুজবের শহরে পরিণত হয়েছে । সে দিন আমার এক সহকর্মী ঠাট্টা করে বললেন ‘স্যার একটা গুজব শুনবেন?’ বলি শোনান । তিনি বলেন ‘গুজবটি হচ্ছে আর একটি এক এগার নাকি অত্যাসন্ন এবং তা একই দিন হবে ।’ তাকে বলি গুজবে কান দেবেন না । পরদিন তার কছে জানতে চাই ‘আছে নাকি আর কোন গুজব?’ জবাবে তিনি জানান এক এগার নাকি এগিয়ে এনে শুক্রবার করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে । সহকর্মীকে যারা এই গুজবটি সরবরাহ করেছে তারা নাকি বলেছে শুক্রবার শুভ কাজের জন্য ভাল দিন । তিনি আরো জানালেন যারা এই সব গুজবের উৎস তাদের একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার অথবা পিছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে আর সেই অতীত অভিজ্ঞতাকে এবারও তারা কাজে লাগাতে চান । সহকর্মী আরো জানান এই সব গুজবে কান দেয়ার কোন কারণ নেই তবে এই কাজে যারা সিদ্ধহস্ত তাদেরকে দেশের মানুষ সুশীল সমাজ হিসেবে চেনে এবং এরা বিদেশী অর্থে দেশে এমন কোন অপকর্ম নেই যে করতে পারে না । বন্ধুবর ডঃ মুনতাসীর মামুন যথার্থ ভাবে এদের নামকরণ করেছে সুশীল বাটপার । তবে এটি ঠিক যে ঢাকায় গুজবের কারখানা বর্তমানে এত ওভারটাইম কাজ করার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে ।
অনেকের হয়তো মনে আছে ২০০৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ও অনান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে ঠিক তখন গুলশানের একটি অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারে বিদেশী কয়েকটি রাষ্ট্রের অর্থায়নে একত্রিত হয়েছিলেন দেশের কিছু সম্মানিত সুশীল ব্যক্তি, আপতঃ দৃষ্টিতে একটি আকর্ষনীয় ব্যানার ’যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন ’ নামে । তাদের দাবি ছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলকে দেশের প্রত্যেকটি আসনে একজন ‘যোগ্য’ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে । এতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয় । সাংবাদিকরা একজন বড়মাপের সুশীলকে প্রশ্ন করলেন যদি কোন দল কোন আসনে এমন ‘যোগ্য’ প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয় তা হলে আপনাদের কৌশল কী হবে ? তিনি দ্রুত উত্তর দিলেন তেমন অবস্থাতে আমরাই সেই নির্বাচনী এলাকায় ‘যোগ্য’ প্রার্থী দেব । আর একজন বড় মাপের সুশীল একই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন তাদের দায়িত্ব ’যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন‘ করা কোন এলাকায় প্রার্থী দেয়া নয় । আগেরজন যা বলেছেন ওটি নাকি তার ব্যক্তিগত মত । তারপরতো এল এক এগার । সেই সুশীলদের অনেকেই ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকারের সাথে জুটলেন । কেউ কেউ বিদেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে গেলেন । অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা গেলেন জেলে । সুশীলরা কখনো কারাগারে যান না, সেটি আইউব খানের জমানা হতে দেখে আসছি । রাজনীতিবিদরাই জনগণের দাবি আদায়ে আন্দোলন করেন আবার তারাই জেলে যান । গত পঞ্চাশ বছরে এর কোন ব্যতিক্রম হতে দেখিনি । ২০০৭ সালে সুশীলদের প্রথম জন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীদের সহায়তায় একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, যাকে বলা হয় কিংস পার্টি । সে সময় এমন কিংস পার্টি আরো কয়েকটি গঠিত হয়েছিল । তবে কিছুদিনের মধ্যেই সেই সব কিংস পার্টির অকাল মৃত্যু হয়েছিল । এবারতো অন্তত একটি কিংস পার্টি আগাম হয়েই আছে এবং সেই পার্টির প্রার্থী মনোনয়নও ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে । তবে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে এই দলটি অংশ গ্রহণ করছে বলে শুনিনি । হতে পারে তারা সেই গুজবের এক এগারর জন্য অপেক্ষা করছে ।
বছর শেষে ২৮ ডিসেম্বর সেই একই সুশীলদের আর একটি পার্টি হয়েছিল গুলশানের আর একটি অভিজাত হোটেলে । এবার ব্যানার ‘সংকটে বাংলাদেশ : নাগরিক ভাবনা ।’ এবার কিন্তু ২০০৬ সালের মতো ভুঁইফোড় কোন সংগঠনের ব্যানারে এই সমাবেশ ডাকা হয় নি । ডাকা হয়েছে অতি পরিচিত দেশের চারটি নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে যার একটির আবার বাজারে বদনাম রয়েছে চরম মতলববাজ হিসেবে । সূত্রমতে এই সমাবেশটিও ডাকা হয়েছে বিদেশী কয়েকটি রাষ্ট্রের অর্থায়নে যারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াত জোটকে দেখতে চায় । এমনটি ঘটলে প্রয়োজনে বাংলাদেশে তারা গণতন্ত্র রফতানি করতে পারে যেমনটি তারা ইরাক, মিশর অথবা লিবিয়ায় করেছে। তবে এটি হয়তো সত্য যারা এই সমাবেশে হাজির ছিলেন তারা সমাবেশের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না । এদের মধ্যে অনেকেই আছেন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি । সেই সমাবেশের একটিই আহ্বান, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনটি যেন বন্ধ করা হয় এবং বিরোধী দলের সাথে সমঝোতা করে সকলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় । এনিয়ে একজন প্রতিথযশা বন্ধু সম্পাদক তার পত্রিকায় স্বনামে প্রথম পৃষ্টায় ইতোমধ্যে একাদিক সম্পাদকীয় লিখেছেন । তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যে দলটি সংবিধানই মানতে চায় না তাদের সাথে কী নিয়ে সমঝোতা হবে ? বিএনপি নামক এই দলটি তাদের মিত্রদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক বলে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি বাতিল করে দিয়েছে তার অধীনে নির্বাচন চায় । তার জন্য তারা গত দুই বছরে প্রায় দু'শর উপর নিরাপরাধ মানুষ হত্যা করেছে । বর্তমানে বাতিলকৃত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই ২০০৮ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই নির্বাচনে তাদের ধস নামানো পরাজয় হয়েছিল । ৩০০ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন মাত্র ৩২ জন প্রার্থী । সেই ৩২ জনও বিদায়ী সংসদে গত পাঁচ বছরে নব্বই ভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন । বিরোধী দলীয় নেত্রী উপস্থিত ছিলেন মাত্র দশ দিন । তাদের সাথে কী ভাবে সমঝোতা হবে তা কিন্তু সুশীলরা বলেন না । তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি আছেন যারা একেক সময় একেক ধরণের কথা বলে জনগণকে নিয়মিত বিভ্রান্ত করেন । যখন বিরোধী দল দেখল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের দাবি হালে পানি পাচ্ছে না তখন তারা বললেন প্রধানমন্ত্রীর পদ হতে শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে । এটিও একটি অসাংবিধানিক দাবি । সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠদলের নেতাকে কেন প্রধানমন্ত্রীর পদ হতে সরে যেতে হবে তা কিন্তু তারা পরিষ্কার করে বলেন না । সম্প্রতি ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি দাবি তুলেছে আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনের আগে ডঃ মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রীর পদ হতে পদত্যাগ করতে হবে । তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন তা হবে অসাংবিধানিক এবং তিনি বর্তমান লোকসভার মেয়াদ পূর্তি হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন । প্রধানমন্ত্রীর পদটি একটি প্রতিষ্ঠান, এটি কোন ব্যক্তি নয় । বাংলাদেশের এই সুশীলদের বক্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারি দলের কয়েকজন সমালোচনা করলে রাতের একটি টিভি টকশোতে একজন সুশীল প্রশ্ন করলেন দেশ সম্পর্কে তাদের কী কথা বলার কোন অধিকার নেই ? অবশ্যই আছে, কিন্তু কথা বলার নামে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোন অধিকার তাদের নিশ্চয় নেই । এই সব সুশীলদের অধিকাংশই কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসিরা যখন সাতক্ষীরা, সীতাকু- বা বাঁশখালিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর মন্দির মঠে হামলা করে বা অগ্নিসংযোগ করে অথবা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে নিরীহ ট্রাক ড্রাইভারকে হত্যা করে কিংবা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে তখন কিন্তু তেমন একটা উচ্চাবাচ্য করেন না । আর সমঝোতার কথা যদি বলি তাহলেতো বলতে হয় সরকার বিরোধী দলকে নির্বাচনকালিন সাংবিধানিক অন্তবর্তিকালিন সরকার ব্যবস্থায় অংশ নিতেতো কম ছাড় দেয় নি, এমন কী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের দিতে রাজি ছিল, বলেছে তারা যতগুলি মন্ত্রণালয় চায় সবই দেয়া হবে । এরপর দেয়ার আর থাকে রাষ্ট্রক্ষমতা যা পাওয়ার এক মাত্র বৈধ পন্থা হচ্ছে নির্বাচন যাতে তারা অংশ গ্রহণ করতে চায় না । সুশীলরা এখন বলছেন নির্বাচন ৯০ দিন পিছিয়ে দেয়া হোক । সেটি কী সাংবিধানিক ভাবে সম্ভব ? সম্ভব, তবে তার জন্য নির্বাচন কমিশনারের মতে দেশে একটি দৈব দূর্বিপাক হতে হবে (১২৩(৪)। একজন লিখেছেন প্রয়োজনে নবম সংসদের অধীবেশন পুনরায় ডেকে সংবিধান সংশোধন কারা হোক । তা হলেতো প্রত্যেকবার একটি দল বা জোট নির্বাচন নিয়ে অযৌক্তিক দবি তুলবে বা তামাশা করবে এবং একই ভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে । তাতো একটি মারাত্মক খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে ।
সুশীলদের বৈঠকের পরদিন বেগম জিয়ার পূর্ব ঘোষিত তথাকথিত ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ হওয়ার কথা ছিল । তার জন্য তিনি সারা দেশ হতে তার নেতা কর্মীদের ঢাকায় অবস্থিত নয়া পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন । তিনি তার আহ্বানে সরকারের প্রতি এই দাবি জানিয়েছেন যাতে এই সব নেতা কর্মীদের ঢাকা আসতে বাধা না দেয়া হয় । কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন নির্বিঘ্নে চলাচলা করার স্বাধীনতা সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত । আন্দোলনের নামে যখন দিনের পর দিন মাসের পর মাস হরতাল আর অবরোধ ডেকে বেগম জিয়ার আর জামায়াতের সৈনিকরা জন জীবনকে বির্পযস্থ করে তোলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, জনগনের অবাধ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন তখন জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের কী হয় ? এমন অভিযাত্রার অভিজ্ঞতাতো ঢাকাবাসী গত ৫ মে অর্জন করেছে যখন বিএনপি’র নতুন মিত্র হেফাজত এই অভিযাত্রার নামে দেশের রাজধানী ঢাকা দখল করে তাতে এক নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল । বাস্তব কারণেই সরকার ২৯ তারিখের বেগম জিয়ার ডাকা অভিযাত্রা হতে দেয় নি । জান মালের নিরাপত্তা দেয়া যে কোন সরকারের দায়িত্ব । বেগম জিয়াও তার গুলশানস্থ বাসভবন হতে পূর্ব নির্ধারিত সকাল সাড়ে দশটায় বের হন নি । তিনি হয়তো অপেক্ষা করেছিলেন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আসবে তাদের নিয়ে বের হবেন । তারা যখন এলেন না তখন তিনি বাড়ীর কয়েকজন কাজের লোক আর ব্যক্তিগত ষ্টাফ নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রায় আধঘন্টা ধরে বেসামাল সব উক্তি করলেন যা শুনে উপস্থিত সকলে এবং দেশের মানুষ তা টিভিতে দেখে এবং পরদিন পত্রিকায় পড়ে রীতিমত স্তম্ভিত ।
তিনি উত্তেজিত অবস্থায় অনেকটা ক্রোধান্বিতা হয়ে প্রথমে ঝাল ঝাড়লেন প্রজাতন্ত্রের কর্মী, মহিলা পুলিশদের উপর । তাদেরকে ‘গোপালী; সম্বোধন করে বললেন তিনি গোপালগঞ্জের নাম চিরদিনের জন্য মুছে দেবেন । গোপালগঞ্জের উপর তার এই ক্রোধের কারণ সম্ভবত এই গোপালগঞ্জেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং এখানেই তিনি সমাহিত হয়েছেন । বঙ্গবন্ধু বলতেন তাঁর দুই নয় তিন কন্যা । বেগম জিয়াকে তিনি কন্যাসম স্নেহ করতেন । একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী বাংলাদেশ দখল করার পর দেশের সকল নগর বন্দর, হাটবাজার, সড়ক ইত্যাদি যেগুলির নাম যুগ যুগ ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নামে রয়েছে তারা তার নাম বদল শুরু করেছিল । গোপালগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল ‘নবিগঞ্জ’ । বেগম জিয়া হয়তো সেই পূর্বাস্থায় ফিরে যেতে চেয়েছেন । তিনি বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার প্রসঙ্গ এনে বলেছেন এই হত্যাকা-ের সাথে প্রধানমন্ত্রী জড়িত ছিলেন । তিনি প্রশ্ন করেন কোথায় ছিলেন সেদিন শেখ হাসিনা ? সকলে জানে সে দিন শেখ হাসিনা গণভবনেই ছিলেন । যেটি জনগণ জানে না সেটা হলো বেগম জিয়া সেদিন কোথায় ছিলেন । বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হওয়ার আগ মুহুর্তে অজ্ঞাত স্থানের উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর সেনা নিবাসের বাসভবন ত্যাগ করেন । বেগম জিয়ার এদিনের বক্তব্য ছিল সেনা বাহিনীর প্রতি চরম উস্কানি মূলক যা তিনি এর আগেও করেছেন । তিনি এও বলেছেন এখন নাকি যারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্বে আছেন তাদের বাংলাদেশী মনে হয় না । এর ক’দিন পর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা একটি টিভি টকশোতে একই ধরণের মন্ত্যব্য করেন । তাঁরা পক্ষান্তরে বুঝাতে চেয়েছেন এরা সকলে ভারত হতে আগত । বঙ্গবন্ধু সরকার যখন রক্ষী বাহিনী গঠন করে তখন প্রতিপক্ষরা বলতেন এই রক্ষী বাহিনীতে বেশীর ভাগই ভারতীয় সেনা বাহিনীর সদস্যকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে । অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর রক্ষী বাহিনীর সকলকে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে আত্মীকরণ করা হয় । ১৯৫২ সনে যখন ভাষা আন্দোলন তুঙ্গে তখন মুসলীম লীগের মূখপত্র দৈনিক ‘মর্ণিং নিউজ’ সংবাদ ছাপলো ঢাকার রাস্তা নাকি ওপার থেকে ধূতী পরা লোকজন এসে ভরে গেছে । এই সব বক্তব্য দেয়া হয় আসলে দেশে একটি সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার জন্য । আর এক সময়তো অনেক বনেদি মুসলমানও ধূতী পড়তো । বেগম জিয়া ভারতের সিকিম রাজ্যের কথাও তুলেছেন । প্রশ্ন করেছেন আপনারা কী সিকিমের লেন্দুপ দর্জির কথা ভুলে গেছেন ? সিকিম যখন ভারতের ১৯৭৫ সালে সাথে একিভূত হয় তখন দর্জি সিকিম জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ছিলেন এবং পরবর্তিকালে সিকিমের প্রথম মূখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন । বেগম জিয়া সরাসরি শেখ হাসিনাকে লেন্দুপ দর্জির সাথে তুলনা করে এটা বুঝাতে চেয়েছেন বাংলাদেশকে সিকিমের মতো ভারত দখল করে নেবে । এই কথা বলে তিনি নিজেকে একজন খাঁটি ভারত বিরোধী বলে পুনরায় তুলে ধরার চেষ্টা করেন । তিনি তার ‘দেশ বাঁচাও’ শ্লোগানের পক্ষে যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করছিলেন । সিকিম প্রসঙ্গটি টেনে তিনি এক প্রকার শঠতার আশ্রয় নিয়েছিলেন । বাংলাদেশ কোন সিকিম নয় । বেগম জিয়া ৫ মে’র হেফাজতের ঢাকা দখলের বিষয়টা উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চান সে দিন ক’জন আলেম আর এতিমদের হত্যা করেছিলেন ? এটি ছিল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের প্রতি চরম উস্কানি মূলক বক্তব্য । হেফাজত আজ পর্যন্ত ওই রাতে তাদের কোন সদস্য পুলিশি এ্যাকশনের কারণে মতিঝিলে নিহত হয়েছেন তার প্রমাণ দিতে পারে নি । সিকিম প্রসঙ্গ আনার কারণে এটি পরিষ্কার যে তিনি তার নির্ধারিত সমাবেশে যে বক্তৃতাটি দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন তা তার স্মৃতি হতে উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যান্যদের সামনে বলেছেন । যে বা যারা তাঁকে এই বক্তৃতাটি লিখে দিয়েছিলেন তারা একটি অপরিনামদর্শী কাজ করেছিলেন । এই সব অসংলগ্ন বক্তব্যে নিশ্চিতভাবে তাঁর ইমেজের ক্ষতি হয়েছে ।
সমঝোতা সমঝোতা করে গত কয়েকদিন কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা বেশ দৌঁড়ঝাঁপ করছেন । ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারেক জিয়া আর বেগম জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মোবিন চৌধুরীর একটি কথিত টেপ ফাঁস হয়ে গেছে । যা শুনলে মনে হবে তারেক জিয়া সুদূর ল-নে বসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রের নানা কলকাটি নাড়ছেন । সুতরাং এই সবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য ৫ তারিখের নির্বাচনটি অপরিহার্য ছিল । এটি সত্য হয়তো এই নির্বাচনটি একটি আদর্শ নির্বাচন যেমনটি হওয়ার কথা ঠিক তেমনটি হচ্ছে না । তবে দেশের সংবিধান অনুযায়ী এর বিকল্পই বা কী ছিল ? বিএনপিকে এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এই যাত্রায় তারা নিজেদের ভুলে দশম সংসদ নির্বাচনের ট্রেন ফেল করেছে । তার পিছনে দৌঁড়ানো শক্তিক্ষয় ছাড়া আর কিছু নয় । বরং বুদ্ধির কাজ হবে পরবর্তী ট্রেনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করা ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জানুয়ারি ৪, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]