|
||||||||||||||||||
|
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিকল্প নেই
সরকারের মন্ত্রীসভায় যে ক’জন মন্ত্রী তাদের কর্তব্যপালনে অক্লান্ত পরিশ্রম
করেন তাদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন, এই ব্যাপারে খুব
বেশী মানুষের দ্বিমত থাকার কথা নয় । আবার যারা তাদের কর্তব্য পালন করেন
তারা নিয়মিত নানা বিতর্কের সম্মূখীন হন শিক্ষামন্ত্রীও তার ব্যতিক্রম নন ।
বর্তমান সরকারের সব চেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে প্রাথমিক হতে বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার । প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার ৯৭ ভাগ শিশুকে স্কুলে
আনতে পেরেছে । তবে ঝরে পড়ার সংখ্যাও কম নয় । প্রতিবছর বছরের প্রথম দিন ৩০
কোটির উপর পাঠ্যবই বিনা মূল্যে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে
দেয়ার মতো এই বিশাল কাজটি তাঁর মন্ত্রনালয় বেশ সুচারু ভাবে করে । এটি এক
বিশ্ব রেকর্ড । এতে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রনালয়, অভিভাবক আর
শিক্ষাবিদদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন । শিক্ষামন্ত্রীর সাদাসিধে ও নির্মোহ জীবন
যাপন দেখে অনেকে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় তাঁর মতো আরো কিছু
সদস্য থাকলে সরকারের পক্ষে অনেক বিতর্ক ও অস্বস্তি এড়ানো সম্ভব হতো । সেই
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কী না মুখোমুখী হলেন একাধিক অস্বস্তিকর
পরিস্থিতির । প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বাজেটে শিক্ষা খাতে প্রয়োজনের চেয়ে
অপ্রতুল বরাদ্দ ও তার সাথে অর্থমন্ত্রীর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে হৃদয়
বিদারক মন্তব্য । অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের
অর্থনীতি নানা আন্তর্জাতিক বৈরি পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যেও অসামান্য সফলতা
দেখাতে সক্ষম হয়েছে । বাজেট পাশ করার সময় তিনি বলেছেন সময় হয়েছে আমাদের লাফ
দেয়ার । তাঁর পরিকল্পনায় ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রত্যাশার
আগেই বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেল । এর
চেয়ে বড় অর্জন এই মুহূর্তে আর কিছু হতে পারে না । এর আগে বাংলাদেশ একটি
খাদ্য ঘাটতির দেশ হতে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে
সংসদে বাজেট পাশের সময় দেয়া অর্থমন্ত্রী তাঁর সমাপনী বক্তৃতায় বলেন
‘(উচ্চশাধ্যমিক) শিক্ষা আমাদের প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) নয়’ তখন
শিক্ষামন্ত্রী তো বটেই শিক্ষার সাথে যারা জড়িত তাদের মনটা ভেঙ্গে যায়।
তারপর অনেকটা বেহুঁস হওয়ার পালা যখন তিনি অনেকটা করুণা বিতরণের মতো
শিক্ষামন্ত্রনালয়কে গত বছরের তুলনায় মাত্র ৫৫ কোটি বেশী বরাদ্দ দেন যেখানে
কোন কোন মন্ত্রনালয়কে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি বরাদ্দ
দিয়েছেন যদিও এই সব মন্ত্রনালয়ের অনেকেই তাদের আগের বছরে দেয়া বরাদ্দের
পুরোটা খরচ করতে পারে নি । অথচ শিক্ষামন্ত্রনালয় তার বরাদ্দের সবটুকুই
ব্যবহার করতে পেরেছে । আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যেখানে শিক্ষা খাতে গত বছর
জিডিপি’র ২.২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সেটি এ’বছর ২ শতাংশে নেমে এসেছে ।
আন্তর্জাতিক ভাবে মান হচ্ছে শিক্ষার ক্ষেত্রে জিডিপি’র কম পক্ষে ৫ শতাংশ
বরাদ্দ রাখা । শিক্ষামন্ত্রী অনেকটা তাঁর মনের দুঃখেই তাঁর সংসদ বক্তৃতায়
বলেছেন বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ দেয়া হয় তা এই অঞ্চলেতো বটেই
আফ্রিকার অনেক দেশ হতে কম। যেখানে বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশের
তালিকায় প্রবেশ করেছে সেখানে এমনটি ঘটা নিতান্তই অপ্রত্যাশিত । আর একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সরকার প্রতিবছর নতুন নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনুমোদন দিচ্ছে সেগুলির পরিচালনার জন্য যেমন প্রয়োজন উন্নয়ন বাজেট তেমন
প্রয়োজন পৌনঃপুনিক বাজেট । কোথা হতে আসবে এই বাড়তি অর্থ? বা এ’বছর না
চাইতেও যে অনেক কলেজে উচ্চ-মাধ্যমিক শ্রেনীতে বাড়–িত ছাত্র ভর্তি করাতে
হচ্ছে তার জন্য প্রয়োজনিয় অর্থ কোথায় পাওয়া যাবে? আশার কথা ক’দিন আগে
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা
চূড়ান্তকরণপূর্ব এক মত বিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন এই অর্থ
বছরে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি তার ব্যবস্থা করবেন
। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল ঘোষণা । সপ্তম পঞ্চম বার্ষিকীর অন্যতম ফোকাস
হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন । শিক্ষার উন্নয়ন ব্যতিরেকে মানব সম্পদ উন্নয়ন
অসম্ভব । আমরা যদি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উত্তরণ ঘটিয়ে নিজেদের মধ্যম
আয়ের দেশে উন্নীত করতে পারি তা হলে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলিতে
শুধু গৃহপরিচারিকা পাঠানোর কথা চিন্তা না করে শুধু মধ্যপ্রাচ্যে কেন ইউরোপ
আমেরিকায়ও দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারি, এতে দেশের মর্যাদা বাড়বে। বিদেশে
গৃহপরিচারিকা পাঠানোতে কোন বাহাদুরি নেই বরং গ্লানি আছে । এই সবের সাথে এখন
যোগ হয়েছে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার
ক্ষেত্রে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী আর অভিভাকদের
ডিজিটাল যন্ত্রণা আর ভোগান্তি। ‘কারিগরিনির্ভর‘ বা ডিজিটাল প্রযুক্তি
ব্যবহার করে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি ‘স্মার্ট অ্যাডমিশন সিষ্টেম’
প্রবর্তন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত । তবে তা করতে গিয়ে যে
ধরনের লেজেগোবরে অবস্থা ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর কলেজ
কর্তৃপক্ষের অভাবনীয় হয়রানি আর ভোগান্তি ঘটলো তা কোন ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়
। এটি ঘটার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ব্যাপারে আমাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আগাম
ধারণা না থাকা । এটি ঠিক সরকার আমাদের দৈন্দিন কাজে কর্মে ও সরকারি
প্রশাসনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে । তবে এটিও মনে রাখতে
হবে এক বা দু’প্রজন্ম আগেও এদেশের মানুষ গরুর গাড়ীতে চড়তো, পায়ে জুতা আর
গায়ে কাপড় ছিল না । তাদের রাতারাতি তথ্যপ্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করতে বলা
বাস্তব সম্মত নয় । আমাদের দেশে এখনো বেশীর ভাগ মানুষের কাছে ডিজিটাল
প্রযুক্তি ব্যবহারের অর্থ শুধু মোবাইল ফোন ব্যবহার, মোবাইলের মাধ্যমে
টাকাকড়ি লেনদেন আর বেশীর ভাগ শহুরে ছেলে মেয়েদের মধ্যে তা ফেইসবুক করার
মধ্যেই সীমাবদ্ধ । গ্রামাঞ্চলে অনেকের কাছে এই প্রযুক্তি সহজলভ্য নয় অথবা
প্রযুক্তির সাথে মানুষ পরিচিতও নয় । দেশে এই প্রযুক্তি যারা নিয়ন্ত্রণ করে
অথবা যাদের সহায়তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে তারা মারাত্মক ভাবে হয়
অদক্ষ অথবা তাদের ক্ষমতার ঘাটতি আছে । যেমন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানি
অথবা ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদানকরি সকল প্রতিষ্ঠান তাদেও ব্যবসার জন্য এই
প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল । দূর্ভাগ্য হলেও সত্যযে বাংলাদেশের এই সেবা
দানকারি প্রতিষ্ঠানগুলির একটাও গ্রাহক হয়রানি ছাড়া সেবা দিতে পারে না ।
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ |