[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

অতঃপর কী বাংলাদেশের স্বাধীনতাই অবৈধ ঘোষণা হবে?

 


-প্রফেসর আবদুল মান্নান

লেখার শুরুতেই বলে নেই আমার এই লেখা কোন গোমূর্খ অথবা কোন অর্বাচীনকে জ্ঞান দান করার জন্য নয় বরং আমার সীমিত জ্ঞানকে একটু সমৃদ্ধ করার যৎসামান্য প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে । তার উপর নতুন প্রজন্মকে নিজ দেশের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা শিক্ষা দিতে না পারলে অভিভাবক হিসেবে আমরা নিজেদের পবিত্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো বলে মনে করি। আর যারা সিদ্ধান্তই নিয়েছে মূর্খ হতে আরো মূর্খ হবো তাদের কোন ধরণের জ্ঞান দানের চেষ্টাই সম্পূর্ণ পন্ডশ্রম বলে মনে হয় । লন্ডনে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় একজন তারেক জিয়া যার পিতা এই দেশের প্রথম সামরিক শাসক আর যার মা এই দেশের তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসবিদের। মাঝে তিনি লন্ডনে কিছু হুক্কা হুয়া পার্টির সদস্যদের এক সাথে জড়ো করেন এবং তার গবেষণা লব্দ নতুন নতুন তত্ত্ব বাজারজাত করেন । তিনি বর্তমানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ অবৈধ ছিল এবং তার পিতা সেই অবৈধ সরকারের একজন অবৈধ কর্মচারী ছিলেন এবং পরবর্তীকালে তার পিতা ও মাতা সেই অবৈধ দেশটির অবৈধ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছিলেন তা প্রমাণ করার জন্য গবেষণা করছেন । এর পর আসবে বাংলাদেশ নামে এই দেশটির সকল বৈধ সন্তানই যে অবৈধ সেই গবেষণার ফল । এটি শুধু সময়ের ব্যাপার । গবেষণা করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং সেই অর্থের যোগান পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই দিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের ধারণা কারণ বর্তমানে এই নতুন ইতিহাসবিদ যে সকল তত্ত্ব ও তথ্য হাজির করছেন তা ১৯৭১ সন হতে পাকিস্তান সরকার আর তার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বলার বহু চেষ্টা করছে কিন্তু নাবুঝ বাঙালি তা গ্রহণ করতে রাজি হন নি । তাই তারা তাদের সেই অসমাপ্ত কাজকে এই নাবুঝ বাঙালির কাছে পৌঁছানোর জন্য একজন সাবালক এবং নতুন প্রজন্মের সবজান্তা ‘জ্ঞানী’ গবেষককে বেছে নিয়েছে ।
তারেক রহমান নামক এই নব্য ইতিহাসবিদ ও গবেষক গত ২৫ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের দিন তার গবেষণা লব্দ ফল প্রকাশ করে বলেছিলেন এত দিন বাংলার মানুষ আর বিশ্বের জনগণ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে শেখ মুজিবকে জানতেন তা সম্পূর্ণ ভুল । আসলে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন তার আব্বা হুজুর । আর তার দলের ওয়েবসাইটে যে আছে এই আব্বা হুজুর বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট তাও ভুল কারণ যারা এই কাজটি করেছে তারা একেবারেই নালায়েক নাদান । তার এই সব কথা শুনে দেশে এবং বিদেশে থাকা তার অনুসারীরা একযোগে হুক্কা হুয়া করে উঠলেন । এই সম্পর্কে ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা আর লেখালেখি হয়েছে । হুক্কা হুয়া পার্টিকে এখন নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই বিষয়ে যেন তারা আর কোন কথা না বলেন । কিন্তু বাঙালি কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না । সুতরাং এখনো এই বিষয়ে পার্টির পন্ডিতজনেরা সরব আছেন ।
ঠিক যখন এই পন্ডিতজনেরা পূর্বের বয়ানের ব্যাখ্যা দিতে দিতে ক্লান্ত ঠিক তখনই এই নব্য ইতিহাসবিদ তারা দ্বিতীয় ফতোয়াটি ছাড়লেন । বললেন শেখ মুজিব বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ! এ এক মহা আবিষ্কার । আগামীতে তিনি তার এই মহা আবিষ্কারের জন্য বড়মাপের কোন জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনিতও হতে পারেন । তার মাকে সম্প্রতি তার দল হতে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে । পুরস্কার নেয়ার সময় তিনি জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় তার স্বামী একাধিকবার তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাদের সাথে যান নি কারণ তিনি পাকিস্তানি সেনা নিবাসের আরাম আয়াস ছেড়ে ভারতে যাওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না । যারা তাকে ভারতে নিয়ে যেতে এসেছিলেন সম্প্রতি তাদের একজনের সাক্ষাৎকার নেয়ার আমার সুযোগ হয়েছে । পরে কোন এক সময় জানানোর চেষ্টা করবো তাদের সাথে সেই সন্ধ্যায় কেমন আচরণ করা হয়েছিল ।
১৯৭১ সালে ১০ই এপ্রিল প্রবাসি মুজিব নগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র জারি করে যা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত । এই ঘোষণা পত্রের বলেই বাংলাদেশের প্রথম সরকার ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী নয় মাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন । সেই সরকারের অধীনে আমাদের নব্য ইতিহাসবিদের আব্বা হুজুর প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন । আমাদের নব্য ইতিহাসবিদ সম্প্রতি লন্ডনে তার অনুগতদের নসিহত করেছেন যে শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান নি, চাইলে ৭ই মার্চের পর দিন তিনি মন্ত্রী সভা গঠন করতেন । এই বিষয়ে ইতোমধ্যে বহু লেখালেখি হয়েছে । তারপরও এই স্বঘোষিত পন্ডিতকে একটু তার বাল্যকালে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই । একাত্তরের পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দিয়ে যখন সংসদ অধিবেশন মুলতবি করেন তখন সারা পূর্ব বাংলার শাসনভার বস্তুত পক্ষে বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে যায় । ১৫ই মার্চ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন এবং অনুরোধ করেন দেশের প্রয়োজনে তিনি যেন বাংলাদেশের শাসনভার নিজ হাতে গ্রহণ করেন । এই দিন তিনি এক ঘোষণায় বলেন ’বাংলাদেশের সাড়ে সাতকোটি মানুষের কল্যাণের জন্যই তাঁকে এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে ।’ তিনি আরো বলেন ‘এই শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা । জনগণ যেন তা রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকে ।...আমি জনগণকে যে কোন ত্যাগের জন্য এবং সম্ভাব্য সব কিছু নিয়ে যে কোন শক্তির মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই।’ (দৈনিক পূর্বদেশ, ১৫ই মার্চ, ১৯৭১) । বঙ্গবন্ধু দেশের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য ৩৬টি বিধি জারী করেন । (দৈনিক পাকিস্তান, ১৫ই ও ১৬ই মার্চ, ১৯৭১)। বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করতে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তান হতে উড়ে এসেছিলেন তেহরিকই ইস্তেকলালের চেয়্যারমেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আসগার খান । তিনি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন এবং একজন দূরদর্শী নেতা ছিলেন । তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে ১১ মার্চ করাচিতে সাংবাদিকদের বলেন ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দ্রুত ক্ষীয়মাণ সম্পর্কের শেষ সংযোগ হচ্ছে শেখ মুজিব ।’ দৈনিক পূর্বদেশ, ১২মার্চ, ১৯৭১ ) এখন পর্যন্ত কোন মেজর কিন্তু বাংলার রাজনীতির দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন নি ।
বৃটিশ লেখক ডম মোরিয়াস নির্বাচনের পূর্বেই পূর্ব বাংলায় এসেছিলেন । তিনি তার এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন If the proposals of Sheikh Mujib form the part of the new Pakistan constitution and are transmuted into law, they will constitute the denial of the concept of total national solidarity. But this will be realistic, and will prove the basis on which a viable country would rise from the ruins of Jinnah’s original ideal. It is despair, ironically, which has driven Pakistan to face reality.’ (Dom Moreas, The Tempest Within. New Delhi. Vikas Publication. 1971. P.96)
 
আমাদের নব্য ইতিহাসবিদ যে আবিষ্কার করেছেন শেখ মুজিব তার আব্বা হুজুরের আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি তাকে এবং তার অনুগতদের সম্ভব হলে এই বই গুলি পড়ে দেখার অনুরোধ করি : S.K. Chakrabarti: The Evolution of Politics in Bangladesh. 1947-78. New Delhi, Associated Publishing House, 1978, P. 208; Anthony Mascarenhas: The Rape of Bangladesh. Vikash Publication, New Delhi. Pp. 113-114; Probodoh Chandra: Bloodbath in Bangladesh. Adarsha Publication, New Delhi, 1971. P. 127; Siddiq Salik: Witness to Surrender: Oxford University Press, Karachi, 1977. P.71) be¨ নব্য ইতিহাসবিদ যখন লন্ডনেই থাকছেন সেহেতু বৃটিশ লাইব্রেরিতে গিয়ে এই সব বই এর খোঁজ করলে পেয়েও যেতে পারেন । এরপর তিনি যদি মনে করেন নালায়েক বাঙালিদের তিনি জ্ঞান দান করবেন তা হলে বাঙালির কিছু উপকার হলেও হতে পারে ।
গত ৯ তারিখ এই ‘পন্ডিত’ নব্য ইতিহাসবিদ লন্ডনে ঘোষণা করেছেন ‘শেখ মুজিব অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ।’ কারণ হিসেবে তিন তার সামনে বসা অনুগতদের তার গবেষণা লব্দ ফল প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন ‘১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপেক্ষা করে শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কারণ ঘোষণা পত্রে লেখা ছিল সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন ।’ পন্ডিতমশায় প্রশ্ন করেন ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিব কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন? তখনতো সংবিধান প্রণীত হয়নি ।’ আর যাই হোক বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহকর্মীরা তৃতীয় শ্রেণীর উজবুক আর গ-মূর্খ ছিলেন না । তাইতো বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । পরদিন ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের হেয়ার রোডের বাসায় মন্ত্রী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয় । সেই সভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা ছাড়াও ডঃ কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম প্রমূখরা উপস্থিত ছিলেন । মন্ত্রী পরিষদের সেই সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হবে । ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপতিকে দেয় ক্ষমতা বলে বঙ্গবন্ধু এই দিন বাংলাদেশের সাময়িক শাসনতন্ত্র অধ্যাদেশ জারি করেন । এই অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করেছিলেন বিচারপিত আবু সাঈদ চৌধুরী, ডঃ কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম । এই আদেশ সম্পর্কে সরকারী প্রেসনোটে বলা হয় :‘যেহেতু ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে স্বাধীনতা আদেশ ঘোষণার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থাবলী গ্রহণ করা হয়; এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণায় প্রেসিডেন্টকে সকল শ্বাসনকার্য পরিচালনা ও বিধানগত কর্তৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদত্ত হয়; এবং যেহেতু উক্ত ঘোষণা উল্লেখিত অন্যায় ও প্রতারণামূলক যুদ্ধের বর্তমানে অবসান ঘটেছে; এবং যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের সুস্পষ্ট আশা-আকাংক্ষা হল যে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়েছে; এবং যেহেতু উক্ত লক্ষ্য অনুসরণে উক্ত ব্যাপারে অবিলম্বে কতিপয় ব্যবস্থাবলী গ্রহণ প্রয়োজন হয়েছে-তাই বর্তমানে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখের স্বাধীনতা আদেশ ঘোষণা এবং সে ক্ষেত্রে তার একতিয়ারাধীন অপর সকল ক্ষমতা অনুসারে প্রেসিডেন্ট নিম্নলিখিত আদেশ প্রণয়ন ও জারি করেছেন : (সর্বমোট দশটি আদেশ জারি করা হয়েছিল ) উল্লেখযোগ্য আদেশগুলির মধ্যে ছিল (১) এ আদেশ ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ বলে অভিহিত হবে; (৫) প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রী পরিষদ থাকবে ; (৬) প্রেসিডেন্ট তাঁর সকল কার্য পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ মোতাবেক কাজ করবেন; (৭) গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন প্রেসিডেন্ট গণপরিষদের এমন একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব অর্পণ করবেন । প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ মোতাবেক প্রেসিডেন্ট অপর সকল মন্ত্রী, স্টেট মন্ত্রী ও ডেপুটি মন্ত্রী নিয়োগ করবেন । বস্তুত পক্ষে এটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংবিধান (অস্থায়ি) ।
পরদিন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্র পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় । এতে প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধানরূপে মনোনিত হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধূরী । তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান বিচারপতি সায়েম । রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭২ সালের অস্থায়ী শাসনতান্ত্রিক আদেশ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতার অধিকারী হন । এই অধিকার বলে তিনি একই দিনে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তাঁকে নতুন সরকারের মন্ত্রী সভা গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান । এর পূর্বে প্রথম সরকারের মন্ত্রী সভার সকল সদস্য পদত্যাগ করেন । প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি এগারজন গণপরিষদ সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান । নব্য ইতিহাসবিদ আর পন্ডিত মশায়, কী ভাবে শেখ মুজিব বাংলাদেশের একজন বৈধ প্রধানমন্ত্রী হলেন তা কী আপনি বুঝতে পারলেন ? এরপরও না গেলে উত্তর বৃটেনে মাছ ধরতে যাওয়া অনেক মঙ্গলজনক এবং আনন্দদায়ক । অবশ্য আমার পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে তারও কোন কারণ নেই । একটা কাজ করা যেতে পারে। সম্প্রতি ডঃ কামাল হোসেনের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার নাম Bangladesh-Quest for Freedom and Justice.  সে বইয়ের নবম পরিচ্ছদের নাম The Making of the Constitution. মাছ ধরতে যাওয়ার আগে পড়ে নিতে পারেন ওই অংশটুকু ।
লন্ডনে অবস্থানরত নব্য ইতিহাসবিদ প্রশ্ন করেছেন ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে কেন বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন নি । এখনতো বলতেই হয় এই ধরণের প্রশ্ন একজন বেওকুফই করতে পারেন । কোন একজন ব্যক্তি আরেক দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলে তাকেই শুধু তেমন ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দেয়া হয় । বঙ্গবন্ধুতো কোন রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন না । তিনি পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী ছিলেন । সুতরাং তিনি ওই ধরনের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না । নব্য ইতিহাসবিদ বর্তমানে বৃটেনে সম্ভবত রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন । কখনো বাংলাদেশে তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে গেলে তিনি এমন একটি ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেন ।
সামনে ১৭ই এপ্রিল, মুজিবনগর দিবস । তার আগে লন্ডন হতে হয়তো কোন নতুন ফতোয়া আসবে যাতে বলা হবে বাংলাদেশের জন্ম ও স্বাধীনতাই অবৈধ । এই সব বাতচিত করার জন্যইতো আইএসআই এত অর্থ টাকা পয়সা খরচ করছে বলে মানুষের ধারণা । তবে তাদের সকল অর্থ জলে যেতে পারে কিন্তু এমন অনুগত তাবেদার তারা নাও পাওয়া যেতে পারে । শুনেছি বৃটেনে বাড়িতে একজন উন্মাদ থাকলে সেই বাড়ির ওয়েলাফেয়ার এলাউন্স বেড়ে যায় । এই ব্যপারে বন্ধু বান্ধবরা ভাল বলতে পারবেন ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । এপ্রিল ১২, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]