সাম্প্রতিক সংবাদ

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

সরকারের জন্য এখন কঠিন সময়

 


-প্রফেসর আবদুল মান্নান

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন নিঃসন্দেহে সরকার তথা আওয়ামী লীগকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে । যে সাত জন খুন হলো তাদের মধ্যে দু’জন ড্রাইভার আর একজন আইনজীবী । বলতে গেলে এদের তেমন কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না । বাকি পাঁচজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত । খুনের উদ্দেশ্য বা মোটিভ এখন পর্যন্ত জানা না গেলেও অনুমান করা যায় তা ছিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে । যতদূর জানা গেছে এই হত্যাকান্ডের মূল টার্গেট ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। বলা হচ্ছে হত্যাকান্ডের মূল হোতা নূর হোসেন যে নিজেও কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর । অভিযোগ উঠেছে এই নৃশংস হত্যাকান্ডে র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল এবং তাদেরকে নূর হোসেন এই কাজের জন্য ছয় কোটি টাকা দিয়েছে । এই অভিযোগ নজরুল ইসলামের শ্বশুরের । তিনি এর আগে এই টাকার অংক এক কোটি ও তিন কোটি বলেছিলেন । নূর হোসেন ১৯৮৫ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ইকবাল গ্রুপের ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন । ১৯৮৮ সালের দিকে শিমরাইলে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা দায়মুদ্দিনের হাত ধরেই নূর হোসেন হেলপার হিসেবে যোগ দিয়েছিল ইকবাল গ্রুপে । পরে ড্রাইভিং শিখে একই গ্রুপে ড্রাইভারের চাকরি করেছেন নূর হোসেন । ১৯৮৯ সালে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন । ১৯৯১ সনের সাধারণ নির্বাচনে নূর হোসেন বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিনের ক্যাডার হিসেবে কাজ করেন । গড়ে তুলেন এক সন্ত্রাসী বাহিনী । এরপর হতে নূর হোসেন এলাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রন শুরু করেন । ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন এলাকার একজন গডফাদার । ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নূর হোসেন দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের আশ্রয়ে চলে যান । সাথে নেন এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মাকসুদ ও সারোয়ারকে । এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রকট দ্বন্ধ সৃষ্টি হয় এককালের জেলা ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামের সাথে । জানা যায় তাকে একাধিকবার নূর হোসেন নজরুলকে হত্যা করার হুমকী দেয় যার ফলে নজরুল ইসলাম অনেকটা এলাকা ছাড়া হয়ে পড়েন । নজরুল ইসলামের সাথে শামীম ওসমানেরও সখ্যতা ছিল । নূর হোসেন ও অন্যান্য অভিযুক্তরা এখনো পলাতক ।
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনকে কেন্দ্র করে নিঃসন্দেহে সব দিক হতেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ । ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর বিএনপি ও তাদের পোষা সুশীল সমাজ অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পরেছিল । কিছুদিন আগে ওই সুশীলদের একজন আমাকে বললেন মনেতো হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত বিহীন নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ টিকেই গেল । সেই সুশীল আজীবন বাম ঘরাণার বিপ্লবী এবং এখনো মনে করেন বাংলাদেশে যদি বিপ্লব সম্ভব হয় তা একমাত্র হতে পারে বিএনপি-জামায়াতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় । তার মতে বাংলাদেশে যত অপকর্ম হয়েছে তার একমাত্র দায় দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে । এই সুশীলদের একজন নারায়ণগঞ্জ ঘুরে এসে বললেন জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে খুব দ্রুত আওয়ামী লীগ কোন একটি বড় ধরণের কাজ করবে, তা হতে পারে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত কাউকে ফাঁসিতে ঝুলনোর মতো ঘটনা । তিনি মনে করেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের বিচার হচ্ছে তা এক প্রকার প্রহসন । বেশ কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ইদানিং তিনি আবার মধ্য রাতের টকশোতে সক্রিয় হয়েছেন । আর একজন সাবেক বিপ্লবী মনে করেন সরকার যে তদন্ত কমিটি করেছেন তা একটি আইওয়াশ । তার নিজের আবার একটি ওয়ানম্যান পার্টি আছে। টিভি চ্যানেল গুলিতে তিনি বেশ সমাদৃত । ৫ তারিখের নির্বাচনের আগে তিনি তার ওয়ানম্যাান পার্টি হতে নির্বাচন করার জন্য বেশ কয়েক জনকে মনোনয়নও দিয়েছিলেন কিন্তু তার এখনকার রাজনৈতিক পথনির্দেশক বেগম জিয়া নির্বাচনে না যাওয়াতে তিনি আর সেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন নি । নারায়ণগঞ্জের ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদে অনেক সুশীল রাস্তায় নেমেছেন মানববন্ধন করে তার প্রতিবাদ করতে । সুজন-সখি পার্টি নিত্যদিন গোল টেবিল বৈঠক করছেন । কিন্তু এই সুশীলদের অনেককেই জানুয়ারি ৫ তারিখের নির্বাচনের আগে জামায়াত-শিবির-বিএনপি মিলে দেশের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তার প্রতিবাদ করতে মাঠে নামতে দেখা যায় নি বরং তারা মিডিয়াতে ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের এই যুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে সুশীলদের ক্লাবে নাম লেখাতে হলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা । তারপর চলে যেতে হবে বিএনপি’র বিকল্প দপ্তর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবং সেখানে বিএনপি’র অসংখ্য ব্যানারের কোন একটা টাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আবার কষে দু’কথা বলতে হবে । তারপর কিল্লে ফতে । যে কেউ হয়ে যেতে পারেন এলিট সুশীল ক্লাবের একজন সদস্য । আর এইসব কাজে নিয়মিত ইন্ধন যোগাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এবং তার অঙ্গসংগঠনের কিছু অপরিনামদর্শি হাইব্রিড সদস্য । আওয়ামী লীগ সরকারে না থাকলে এদের অনেককেই হারিক্যান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা আর কিছু না হোক বিএনপিকে নতুন জীবন দিয়েছে । এই প্রথমবার বেগম জিয়া আওয়ামী লীগের কর্মীদের হত্যাকান্ডে আন্দোলনের ডাক দিলেন এবং প্রেস ক্লাবে গিয়ে আধ ঘন্টার অনশন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করলেন । ঘোষণা করলেন এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে তিনি নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সভা করবেন । অবশ্য প্রশাসন হতে তার অনুমতি মিলে নি । তারপর বেগম জিয়াকে এই সব কর্মসূচীর জন্য ধন্যবাদতো দিতেই হয় । বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ নেতা এম কে আনোয়ার । ১৯৬৯ সনে ঢাকার ডিসি ছিলেন । তখন বাংলাদেশে তীব্র আইযূব বিরোদধী গনআন্দোলন চলছে । ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আমাদের মিছিলে গুলি চললো । শহীদ হলেন আসাদ । সেই আমলে গুলি করার নির্দেশ দিতে পারতেন একমাত্র ডিসি । আইয়ূব খান ৩০৩ জন আমলাকে চাকুরীচ্যুত করেছিলেন । তার মধ্যে এম কে আনোয়ারও একজন । দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু সরকার এম কে আনোয়র সহ বাঙালি আমলাদের চাকুরীতে পূনর্বহাল করেছিলেন । ১৯৯০ সনে এরশাদের পতন হলে এম কে আনোয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিতে গিয়েছিলেন । তাকে বলা হয়েছিল আগে যোগ দিন, দলের জন্য কাজ করুন তারপর মনোনয়নের কথা চিন্তা করা যাবে । এত ধৈর্য্য কী আর থাকে ? ছুঠলেন তিনি বেগম জিয়ার দরবারে । তখন বিএনপি’র তিনশত আসনে মনোনয়ন দেয়ার মতো প্রার্থী নেই । লুফে নিলেন বেগম জিয়া এম কে আনোয়ারকে । তিনি শুক্রবার বর্তমান সরকারের পতনের আগাম বার্তা দিয়ে জানিয়ে দিলেন এই পতন খুবই করুণ হবে । গত ৪ তারিখ বেগম জিয়া জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলের ‘গণঅনশন’ কর্মসূচীতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বললেন ‘দেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে ।’ হাঁ অন্যান্য অনেক দেশের মতো দেশে প্রতিদিন খুনখারাবী হচ্ছে তাতেতো কোন সন্দেহ নেই কিন্তু এখনো এই রেকর্ড বেগম জিয়ার শাসনামলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে নি । আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে বিএনপি’র শাসন আমলের প্রথম চার বছরে ১২৫৯ জন অপহরণ, গুম ও খুনের শিকার হয়েছিলেন (দৈনিক প্রথম আলো ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৪) আর আওয়ামী লীগের চার বছরের, ২০১০ হতে ২০১৪ পর্যন্ত সেই সংখ্যা ২৬৮ । এই সংখ্যায় নারায়ণগঞ্জ ধরা হয় নি । এই ২৬৮ জনের মধ্যে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে । ফিরে এসেছেন ২৪ জন আর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৮৭ জন (দৈনিক প্রথম আলো, ১৮ই মার্চ, ২০১৪) । দুই আমলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে পূর্ববর্তী আমলে এই সব গুম, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সরকার নির্লিপ্ত থেকেছে যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কম দেখা গেছে যদিও সব ক্ষেত্রে যে সব কিছুর সমাধান হয়েছে তা নয় । নিহত সাগর-রুনি দম্পতির সন্তান এখনো তার বাবা মার জন্য অপেক্ষা করে যেমনি ভাবে অপেক্ষা করে ইলিয়াস আলীর পরিবার তার ফেরত আসার জন্য ।
নারায়ণগঞ্জ হত্যাকান্ডের পর সরকার অন্ততঃ চেষ্টা করেছে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে । সেখানকার জেলা প্রশাসন হতে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সকল সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে । র‌্যাবের যে তিন জন সদস্যের বিরুদ্ধে এই নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে যা অনেকটা নজীরবিহীন । পুরো ঘটনা তদন্ত করার জন্য একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন এই তদন্ত কমিটিতে যেন র‌্যাবের কাউকে রাখা না হয় । এই ব্যাপারে সরকার দৃষ্টি দেবেন বলে সকলে আশা করে । প্রয়োজনে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা যেতে পারে । বলা হচ্ছে তিনজন অভিযুক্তের মধ্যে একজন প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর জামাতা । সেই মন্ত্রী বলেছেন ওই ঘটনার সাথে তার পরিবারের কোন সদস্য জড়িত নয় । এটি তদন্তের ব্যাপার । অভিযোগ যদি সত্য হয় তা হলেতো সরকারকে আরো বেশী যতœ সহকারে এই তদন্ত কার্য পরিচালনা করতে হবে । মনে রাখা ভাল দেশ এবং দলের মঙ্গলের জন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপরিহার্য নয় । যেই মন্ত্রীর কথা বলা হয়েছে পূর্বে তার পরিবারের কোন কোন সদস্যের জন্য দলকে বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়েছে ।
সরকার কতদূর ওয়াকিবহাল আছেন জানি না তবে এটি সত্য হয়তো বিএনপি ও তার মিত্ররা ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে না গিয়ে যে ঐতিহাসিক ভুল করেছে তা এখন বুঝতে পারছে । এখন তারা ছুতো খুঁজছে কী ভাবে বর্তমান সরকারকে পদে পদে বেকায়দায় ফেলে তাদের দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অপদস্থ করা যায় । আর দূঃখের বিষয় হচ্ছে তাদের এই কর্মে রসদ যোগাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠন সমূহের কিছু নেতা কর্মী । নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভি তার উৎকৃষ্ট প্রমান । ওয়াকিবহাল সূত্র জানাচ্ছে সরকারের আগামী দিন গুলি কঠিন করে তোলার জন্য একটি প্রভাবশালী এনজিও’র তত্ত্বাবধানে একটি বড় তহবিল গঠন করা হয়েছে যা সরকাওে নানা ভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্য ব্যয় করা হবে । এই অর্থ কথা বলা শুরু করবে যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দায়ে অভিযুক্তদের রায় ঘোষণা করা হবে । এরমধ্যে শুরু হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে নানা প্রকারের অপপ্রচার । সরকার ঘোষণা করেছেন শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে । ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কয়েকটি মৌলবাদি সংগঠনের পক্ষ হতে অপপ্রচার শুরু হয়ে গেছে । একটি প্রচার পত্রে বলা হয়েছে ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশে কোন শরাবখোর ও বদচরিত্র ব্যক্তির নামে বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না । হেফাজতের পক্ষ হতে আওয়ামী লীগকে তাদের মিত্র ঘোষণা এক ধরণের অশনি সংকেত । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক সে দিন এক টিভি টকশোতে বললেন এরপর বুদ্ধিজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা বা গুম করা হবে । কেউ কেউ নিজেরা নিরুদ্দেশ হয়ে গুমের খবর ছড়িয়ে দিতে পারেন । এটি সব চেয়ে সহজ । পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৪ সনে । শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানি ও হোসেন শহীদ সোহরোওয়ার্দির যুক্তফ্রন্ট বনাম নুরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ সেই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্ধী। পাকিস্তান সৃষ্টিতে মুসলীম লীগের অবদানের ফলে দলটিকে অপ্রতিদ্বন্ধী হিসেবে দেখা হতো । সেই নির্বাচনে মুসলীম লীগের শোচনীয় পরাজয় হয় । মোট ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট পেয়েছিল ২২২ টি আর যুক্তফ্রন্ট ৯টি । ৩ রা এপ্রিল শেরে বাংলা এক ফজলুল হকের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয় । কিন্তু মুসলিম লীগ কখনো সেই পরাজয়কে মেনে নেয় নি । ষড়যন্ত্র শুরু হয় নারায়ণগঞ্জের আদমজী পাটকল এলাকায় বাঙালি অবাঙালি দাঙ্গা দিয়ে । তারপর তা ছড়িয়ে দেয়া হয় খুলনা ও চট্টগ্রামে । এই দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকার ৩০ মে শেরে বাংলার মন্ত্রী সভাকে বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় জরুরী অবস্থা জারি করে এদেশে গভর্নরের শাসন জারি করে। এমন একটি ষড়যন্ত্র ২০১৪ সালেও যে চলবে না তার নিশ্চয়তা কী ? সেবার যুক্তফ্রন্টকে বাঁচাতে কেউ আসে নি এবারও তেমনটি ঘটলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে কেউ আসবে না । বাঁচাতে পারে দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা যাদের অনেকেই এখন মৌসুমী আওয়ামী লীগারদের কারণে অনেকটা নির্লিপ্ত ও কোনঠাসা। এদের আবার একটিভ করতে হলে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার কোন বিকল্প নেই যার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না ।
শেষ কথা হচ্ছে দেশের মানুষ নারায়ণগঞ্জ ট্রাজেডির একটা গ্রহণযোগ্য সমাপ্তি দেখতে চায় । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন এই ব্যাপারে তাঁর অবস্থান হচ্ছে জিরো টলারেন্স । এদেশের মানুষ এখনো মনে করেন শেখ হাসিনা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের শেষ বাতিঘর । তাঁর অবর্তমানে কী হবে তা বলা মুস্কিল । মানুষ প্রত্যাশা করে দোষী ব্যক্তি যেই হোক তারা যেন কোন অবস্থাতেই ছাড়া না পায় । সরকারের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর হাতে নেই । তা করতে না পারলে দেশ আবার চুয়ান্ন’র দিকে ফিরে যেতে বেশী সময় লাগবে না । শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেয়ার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে চাই না । শুধু এটাই প্রত্যাশা তিনি পুরো বিষয়টার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক তিনি দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করবেন । অনেকে বলছেন র‌্যাব বিলুপ্তির কথা । তা কোন সমাধান হতে পারে না । তাহলে তো বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সেনা বাহিনীকেই বিলুপ্ত করে দিতে হতো । পুলিশ বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ । তাই বলেতো পুলিশকে বিলুপ্তির কথা বলতে পারি না । সব দেশেই র‌্যাবের অনুরূপ সস্ত্রাস দমনের জন্য এলিট ফোর্স আছে । জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাব অনেক প্রশংসনিয় কাজ করেছে । তাদের কয়েকজন সদস্যের কারণে পুরো র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা কোন সমাধান নয় । প্রয়োজনে এই এলিট বাহিনীকে আরো জবাবদিহিতা মূলক করতে তার আইন পরিবর্তন করে তাকে সংষ্কার করতে হবে । আর কাদের র‌্যাবে পাঠানো হচ্ছে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকা বাঞ্চনিয় । কেবল কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন হলেই যেন তাকে এই বাহিনীতে পাঠানো না হয় । তা যদি হয় তা হলে আগামীতে অন্যকোন স্থানে ঘটতে পারে আর একটি নারায়ণগঞ্জ ট্রাজেডি ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । মে ১০, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]