প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

৩রা নভেম্বর হত্যাকান্ড হতে আওয়ামী লীগ কী শিক্ষা নেবে?

@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

কারো কারো ধারণা হতে পারে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন হত্যাকান্ড । বাস্তবে মোটেও তা নয় । এর পিছনে ছিল একটি দীর্ঘ ষড়যন্ত্র, বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আর দেশী আর বিদেশী শক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ । এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া । এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আগে হতেই অবহিত ছিলেন তবে তার গভীরতা সম্পর্কে তাঁর ধারণাটা সঠিক ছিল না । তাঁকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের কেজিবি, ইন্দিরা গান্ধী নিজে এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা eরf হতে সময় মতো সাবধান করার চেষ্টা করা হয়েছিল তবে সেই সাবধান বাণীকে তিনি তেমন একটা গুরুত্ব দেন নি । তিনি বিশ্বাস করতেন না যখন পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করতে পারে নি তখন তাঁর নিজ দেশের মানুষ কেন তাঁকে হত্যা করবে ? তাঁর নিজ দেশের মানুষ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ধারণা সব সময় সঠিক ছিল না । বঙ্গবন্ধুর বড় দুর্বলতা ছিল তিনি সকলকে সহজে বিশ্বাস করতেন যেটি একজন শাসকের কখনো করা উচিৎ নয় । বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপার বেশ কয়েক মাস আগে ঘাতকরা সেনাবাহিনীর তৎকালিন উপপ্রধান জেনারেল জিয়াকে অবহিত করেন । একজন দায়িত্বশীল সেনা অফিসার হিসেবে জিয়ার উচিৎ ছিল এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তাঁর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো যা তিনি করেন নি । জিয়াকে বঙ্গবন্ধু তাঁর পুত্রবত স্নেহ করতেন । তার জন্য সেনাবাহিনীতে উপ-সেনা প্রধান পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল । বেগম জিয়াকে তিনি নিজের কন্যা হিসেবে গণ্য করতেন এবং তার ভাঙ্গা ঘর জোড় লাগিয়ে দিয়েছিলেন । বঙ্গবন্ধুর কন্যার মধ্যেও এই দুর্বলতাটি আছে বলে মনে হয় । অনেক সময় তাঁর কাছের মানুষরাই তাঁকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করছেন । কুমিল্লার বার্ডে মোশতাক, সাবেক আমলা ও বার্ডের মহাপরিচলাক মাহবুব উল চাষি, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও অন্যান্য ঘাতকরা দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছেন যা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেন নি অথবা তাঁকে বুঝতে দেয়া হয় নি । এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল কিন্তু তারা কখনো তা বঙ্গবন্ধুকে জানায় নি । বরং ১৫ই আগষ্টের ঘটনার সাথে তারাও নানা ভাবে জড়িয়ে পরেছিল । ১৫ আগষ্টের ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা সমূহও আগাম ধারণ দিতে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল ।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার করার পর ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর অতি আপনজন খোন্দকার মোশতাককে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন ঠিক কিন্তু মোশতাক ছিলেন একজন মেরুদন্ডহীন ব্যক্তি যিনি কখনো সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে সক্ষম হন নি। ১৫ই আগষ্ট হতে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তবে বাংলাদেশে কোন কার্যকর সরকার ছিল না । এই সময় ফারুক রশিদ গং চাইছিলেন মোশতাককে সামনে রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চাবি কাঠি তাদের হাতেই থাকুক আর চতুর মোশতাকের পরিকল্পনা ছিল এই ঘাতক সেনা অফিসারদের সামনে রেখে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে । অনেকটা ইঁদুর বিড়াল খেলার মতো । অন্যদিকে সেনা নিবাসে একদল সেনা অফিসারের নিয়ন্ত্রণে নানা ধরণের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল অন্য দিকে বঙ্গভবনে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাককে সামনে রেখে ঘাতকরা পর্দার অন্তরালে অন্য আর এক খেলায় লিপ্ত হয়েছিল । সেনা নিবাসে কর্ণেল সাফায়াত জামিল (৪৬তম ইনফেন্টারি ব্রিগেড) ছিলেন সম্ভবত একমাত্র অফিসার যিনি মেরুদন্ড সোজা করে বলতে পেরেছিলেন eমোশতাক আমার প্রেসিডেন্ট নন । প্রথম সুযোগেই আমি তাকে ক্ষমতা হতে উৎখাত করবোf । আর এই সবের বাইরে সেনাবাহিনী হতে বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল তাহের কোন সঠিক প্রস্তুতি আর পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া একজন রোমান্টিক বিপ্লবী সাজার চেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন । তাঁর ধারণা ছিল বাংলাদেশে একটি প্রচলিত সেনা বাহিনীর পরিবর্তে চীনা সেনা বাহিনীর আদলে একটি গণবাহিনী থাকবে এবং সেখানে সৈনিক আর অফিসারের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না । এই দর্শনে বিশ্বাস করে তিনি যোগ দিয়েছিলেন জাসদের রাজনীতিতে । সেনা নিবাসে তিনি সৈনিকদের মাঝে উস্কানি মূলক প্রচারপত্রও বিলি করেছিলেন ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রেফতারের আগে মোশতাক এদেরকে তার সরকারে যোগদানের আহ্বান জানান । এরই মধ্যে তিনি যে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট যে সরকার গঠন করেছিলেন তারা প্রায় সকলে ইতোপূর্বে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন । এদের কেউ কেউ বন্দুকের নলের মাথায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও বেশীর ভাগই নিয়েছিলেন স্বেচ্ছায় । কিন্তু মুজিব নগর সরকারের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা মোশতাকের মন্ত্রী সভায় যোগ দিতে অস্বীকার করেন । এই সবের বাইরে সেনা বাহিনীর সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোর্শারফ চাইছিলেন সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে পরা সেনা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে । সমস্যা হচ্ছে এই কর্মকা-ের সাথে যারাই জড়িত ছিলেন তারা সকলেই কম বেশী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত থাকলেও তাদের রাজনীতি অথবা একটি পরিপূর্ণ সেনাবাহিনী কী ভাবে পরিচালিত হয় সেই সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত ধারণার ঘাটতি ছিল । মুক্তিযুদ্ধও পর বঙ্গবন্ধুন বদণ্যতায় এরা সকলে রাতারাতি কয়েক ধাপ পদোন্নতি পেয়ে উপরে উঠে গিয়েছিলেন, যা নিয়মিত সেনাবাহনীতে সম্ভব ছিল না । তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল । এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রকৃত অর্থেই ধূর্ত ছিলেন জিয়া । পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করতে তিনি ছিলেন তুলনাহীন । বঙ্গভবন-ফারুক-রশিদ-সেনানিবাস-খালেদ মোর্শারফ-তাহের, আর সব কিছু ছাড়িয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকা দেশ । যদিও খালেদ মোর্শারফের অভিপ্রায় ছিল সেনা বাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা তার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি পাল্টা ক্যু ঘটিয়ে নিজে সেনা প্রধান হওয়া । উচ্চাভিলাষী জিয়ার অভিপ্রায় তিনি সকলকে টেক্কা দিয়ে সময় মতো রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ দায়িত্ব হাতিয়ে নেয়া। কিন্তু চালাক জিয়া তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে অন্যদের তেমন একটা বুঝতে দেন নি । আর মোশতাক-ফারুক-রশিদ গং এর পরিকল্পনা ছিল আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া । তা যদি সম্ভব না হয় তা হলে একদিন তাদের অপকর্মের জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে । সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ একাত্তরের একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে তাঁর ভূমিকা ছিল চরম হতাশা ব্যাঞ্জক । ঠিক একই অবস্থা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন আমাদের সেনা প্রধান জেনারেল ওসমানির । তিনি বাকশালে যোগ না দিয়ে সংসদ হতে পদত্যাগ করেন । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা হয়েছিলেন । কিন্তু ওসমানি খুনি মেজরদের দমন করতে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন ।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ দেশে একটি সম্পূর্ণ দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । ঢাকার অনেক কেন্দ্রে নানামুখী কর্মকান্ড কিন্তু কারো কাছে পরিস্কার নয় আসলে কী হতে যাচ্ছে । ২রা নভেম্বর দিবাগত রাতে খালেদ মোর্শারফ প্রথম চালটা চালেন । তিনি তার অধিনস্তে থাকা পদাতিক বাহিনীটিকে ব্যবহার শুরু করেন পাল্টা কূfর মাধ্যমে । সাথে ছিলেন কর্ণেল জামিল ও কর্ণেল হায়দার। এতে কর্ণেল রশিদ বিচলিত হয়ে খালেদ মোর্শারফকে টেলিফোন করেন । সাংবাদিক এন্থনি মাসকেরিনহাস তার সাড়া জাগানো গ্রন্থ eবাংলাদেশ-এ লিগেসি অব ব্লাডfএ এই বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন এক পর্যায়ে খালেদ মোর্শারফকে রশিদ টেলিফোন করে তার কাছে জানতে চান সেনানিবাসে কী হচ্ছে ? খালেদ মোর্শারফ রশিদকে সরাসরি বলেন eআমরা তোমাদের উদ্দেশ্যে আসছি । সময় থাকতে তোমরা সমঝোতা করে আমাদের সাথে চলে আসতে পারোf । রশিদ খালেদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন এবং টেলিফোন রেখে দেন । ফারুক-রশিদের নিয়ন্ত্রনে ছিল শুধু কয়েকটি ট্যাংক । পদাতিক বাহিনী আর বিমান বাহিনীর সমর্থন ছাড়া শুধু ট্যাংক দিয়ে কোন যুদ্ধে জয় লাভ করা দূরুহ । ট্যাংকের নানা সীমাবদ্ধতা আছে । পদাতিক বা বিমান বাহিনী কোনটাই ফারুক রশিদের নিয়ন্ত্রনে ছিল না । খালেদ মোর্শরয় পদাতিক বাহিনী নিয়ে পাল্টা অভিযানের কথা জানতে পেরে বঙ্গভবনে অবস্থানরত খোন্দকার মোশতাক ও ফারুক রশিদ বেশ ঘাবড়ে যান ।
৩রা নভেম্বর ভোর চারটার সময় বঙ্গভবনে ডিআইজি প্রিজন হতে একটি ফোন আসে । ফোনটি রশিদ রিসিভ করে এবং এক পর্যায়ে তা খোন্দকার মোশতাকের হাতে দেয় । মোশতাক ফোনে শুধু eহাঁf eহাঁf বলতে থাকেন । এই সব কথা রশিদ মাসকেরিনহাসকে একটি সাক্ষাৎকারে বললেও তিনি ঘটনার অর্ধেকটা বলেছিলেন । বাস্তবে দুfমাস আগে ফারুক আর রশিদ ষড়যন্ত্র করেন যে কোনো কারণে মোশতাক নিহত হলে অথবা কোন প্রকারের পাল্টা ক্যূ সংগঠিত হলে তারা কারাগারে বন্দি আওয়ামী লীগের চারজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামরুজ্জামানেক খতম করে দেবেন । এর ফলে আওয়ামী লীগ আর কখনো ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না । বঙ্গভবনে যখন ডিআইজি প্রিজন ফোন করেছিলেন তখন নায়েক রিসালদার মুসলেহউদ্দিন কারাগারে হাজির হয়েছিল এক দল ঘাতক বাহিনী নিয়ে এই চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করতে । কারাগারে যে কোন সময় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ । তারা কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলেন তাদের কাছে রাষ্ট্রপতির অনুমতি আছে । ডিআইজি প্রিজন এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শুনতে ফোন করেছিলেন । ৩ তারিখ ভোর বেলায় ঘাতকরা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে রক্ষিত চার জাতীয় নেতাকে নির্মম ভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিল । যখন এই সব ঘটনা ঘটছিল তখন খালেদ মোর্শারফ পাল্টা অভ্যূত্থান শেষ করে এনেছেন । কিন্তু তিনি যে কাজটি তিনি করতে পারতেন তা হচ্ছে রেডিও আর টিভিতে গিয়ে একটি ভাষণ দিয়ে জনগণকে তার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারতেন যা তিনি করার প্রয়োজন অনুভব করেন নি। তিনি ব্যস্ত হয়ে পরেন সেনা প্রধান হতে এবং মেজর জেনারেলের র‌্যাংক ব্যাজ পরতে। কিন্তু এটি ছিল চরম বোকামি । ঘাতকদের হাতে নিজের জীবন দিয়ে এই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও তার সঙ্গিরা তার প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ।
বঙ্গবন্ধু অথবা চার জাতীয় নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নিঃশেষ হয়ে যায় নি কারণ এই দলটির শিকড় অনেক গভীরে প্রতিথ । দীর্ঘ একুশ বছর পর এই দলকে অনেকটা নজিরবিহীন ভাবে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । তবে ১৫ই অগাষ্টের ঘটনা অথবা কারাগারে চারজাতীয় নেতাকে হত্যার একশত ভাগ লাভ ঘরে তুলেছিলেন জিয়া । তিনি জানতেন কোন সময় কোন চালটি দিতে হবে । ৭ই নভেম্বর যখন কর্ণেল তাহেরের ডাকে সেনানিবাসে সাধারণ সৈনিকরা বিদ্রোহ করে জিয়াকে বন্দি করে তখন জিয়া তাহেরের কাছেই তাঁকে বঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন । তাহের ও জিয়া ভাল বন্ধু ছিলেন । তাহের জিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন । আশা করেছিলেন জিয়া তার সাথে তার সেই তথাকথিত বিপ্লবে সামিল হবেন । জিয়া সেই মর্মে কথাও দিয়েছিলেন । কিন্তু পরবর্তি ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া অত বোকা নন যে তাহেরের কথা মতো তার বিপ্লবে সামিল হবেন । তিনি ছাড়া পেয়ে প্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হচ্ছে সেনা বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অজুহাতে তাঁর মুক্তিদাতা তাহেরকে গ্রেফতার করে একটি সাজানো বিচারে মৃত্যুদ- দেয়া । সব শেষে জিয়াই বাংলাদেশে প্রথমে সামিরক শাসক ও পরে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন । জিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ দখল করে ঘাতকদের বিদেশী দূতাবাসে চাকুরি দেন । ১৯৭৭ সালে জিয়া মাহবুব উল আলম চাষিকে স্বাধীনতা পুরুষ্কারে ভুষিত করেন ।
আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চহ্ন করার আকাক্সক্ষা এখনো শেষ হয়ে যায় নি । এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার । ২১ অগাষ্টের গ্রেনেড হামালার পর তাঁর বেঁচে যাওয়াটা ছিল অলৌকিক । এখনতো তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে ঘাতকরা তাদের কর্মস্থল স্থানান্তর করেছে সীমান্তের ওপারে । তবে জীবন মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে । তবে শেখ হাসিনা আগামী দিনের আওয়ামী লীগ যাদের হাতে দিয়ে যাবেন তাদের অবস্থাতো খুবই নাজুক । বিশেষ করে ছাত্রলীগ নামধারীরা দলের যে সর্বনাশ করছে সেটিকে যদি নির্মোহ ভাবে চিন্তা করা হয় তা হলে পঁচাত্তরের ঘাতকরা আওয়ামী লীগের যত ক্ষতি করেছে তার চেয়ে এই ছাত্রলীগ নামধারীরা কী কম করছে? আর কোন কোন যায়গায় তাদের অপকর্মে ব্যবহার করেছ দলেরই কিছু অপরিনামদর্শি নেতা । শেখ হাসিনার সময় হয়েছে নির্মোহ ভাবে পূরো পরিস্থিতির একটি সার্বিক মূল্যায়ন করে শুধু আগামী দিনের বাংলাদেশ নয় আগামী দিনের আওয়ামী লীগেরও একটি রোড ম্যাপ তৈরী করা । ৩রা নভেম্বরের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । অক্টোবর ৩১, ২০১৪

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]