প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর (পর্ব-২৩)

 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 

আজ প্রায় ৭ মাস পরে ছোট মাসী তনিমা বেড়াতে এসেছে, হাতে তার সম্পাদিত পত্রিকা 'নারী কথা'। সে কোন এক এনজিতে চাকুরী করে। বনিবনা না হওয়ায় স্বামী তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে কোলকাতা। তার এক ছেলে,নাম শুভ। সে তার অল্প শিক্ষিত বড় বোন শেফালীর সাথে কথা বলছে- দিদি, তুমি একটু ভেবে দেখ। শুভ এর পরিচয় হবে আমার নামে অথচ স্কুলে ভর্তি করাতে হলো ওর বাবার নাম দিয়ে। ওই বদমাসটা শুভর জন্মদাতা কিন্তু বাবা নয়। সে এ সন্তানের কোন দায়িত্ব পালন করে নাই। হেড মাষ্টার শুভকে জিজ্ঞাসা করল ওর আর বদমাসটার নাম। ভুলেও মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করল না। উপরন্ত আমি আমার নামে ভর্তি করাতে বললে, মাষ্টার বলে ভর্তি করতে হলে পিতার নাম অবশ্যই দিতে হবে। আপনি অভিভাবক হিসাবে নাম লেখাতে পারেন। বদমাসটা হল মূখ্য আর আমি হলাম গৌণ।

ঠিক এমনি মূহুর্তে কালীর বাবা দুপুরের ভাত খেতে আসছে। তিনি শ্যালিকাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন সমস্ত সাংসারিক ও অফিস সংক্রান্ত খবর। সাথে এটাও বললেন, বিয়ে-টিয়ের চিন্তা করছে কিনা?

জামাই বাবু, আমি বিয়ে বসলে শুভর কি হবে? আপনারা তো ২/৪ টা বিয়ে করতে পারেন।২/৪ জন স্ত্রীকে একসাথে নিয়ে ঘর করতে পারেন। কিন্তু আমরা..

--থাক থাক, যুক্তি কথা শুনাতে হবে না। ভাত খেয়েছে ?

---না, আপনি খান। আমরা দু'বোন পরে খাব।

শিক্ষিতা মহিলা, কথা স্পষ্ট, কোন জড়তা নেই । সে আধুনিক ও যুক্তিবাদী। বিকালে সে তুলসী, শেফালী ও কালীকে শুনালেন 'নূরজাহানের বিভৎস্য কাহিনী'। হাতের পত্রিকা থেকে শূনালেন মাদারীপুরে স্কুলছাত্রী অপহৃতা, লজ্জা বাজেয়াপ্ত, বার্মার সুকির বিদ্রোহ, কেতকী কুশারী ডাইসনের খবর। সাথে এ খবরটিও শুনালেন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার জন্য মহিলাদের প্রতি আহবান করেছেন এবং নারী শিক্ষা বিকাশের লক্ষ্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে।

কালী সাথে সাথেই বলল, কালো আর সাদা নিয়ে দেশে মিটিং- ফিটিং হয় না কেন?

শেফালী বলল, তনিমা এই মেয়ে নিয়ে আর পারি না। কত সম্ভন্ধ আসল, কোথাও কিছু হচ্ছে না। ওর বাবা আমার উপর রাগ দেখায়। কালো তো হয়েছে ওর বাবার জন্যই।

হঠাৎ জয় দৌড়ে এসে তুলসীকে বলছে, ঠাকুমা, মোহন ভাই দীপা দিদির মুখে এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। সবাই চিৎকার করে উঠে।

তুলসী বলে উঠে, বলিস কি!

হ্যাঁ, ঠাকুমা, দিদির মুখ পুড়ে গেছে। সবাই ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।



ঘটনা সত্য। মোহন এরপরও দীপার কাছ থেকে ভালোবাসার সাড়া না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। হাসপাতালে দীপা এখন বিভৎস্য চেহারার সাথে যুদ্ধ করছে। পুলিশ সুলতান, মোহন ও আরো শিষ্যকে ধরেছে,জেলেও ঢুকিয়েছে। পত্রিকার পাতায় দীপার ছবি ছেপেছে। এ রকম ঘটনা ঠিক দেশে ঘটেই চলেছে। কালী এতদিন পত্রিকা পড়ে এসিডের এই বিষাক্ত গুণটি সম্পর্কে শুনেছে, দেখেনি। আজ হাসপাতালে গিয়ে দীপাকে দেখে বুঝল গুলির চেয়ে এসিড ভয়াবহ। গুলিতে মানুষ হয় মৃত আর এসিডে হয় জীবস্মৃত। মৃত্যুর চেয়ে জীবন্মৃত হয়ে থাকা অনেক কষ্টের। এই কষ্ট পিতার কাঁধে পুত্রের লাশের এর সমান বৈ কম নয়। কালী গুলির চেয়ে নারীর জন্য এসিডকেই বেশী মারাত্মক মনে করে। মনে করাও উচিত। এই যে কালী তার কাছেই 'প্রেম, ভালোবাসা আর বিয়ে' ধরা দিতে চায় না আর দীপার চেহেরা দেখলে ভয়ে দেহ কাঁপে--তার জীবনে এই তিনটি শব্দ কল্পনাও করাও কঠিন। পরীক্ষায় এসিডের ধর্ম লিখতে গিয়ে কালী 'নারীত্বের উপর এসিডের প্রভাব মারাত্মক। ইহা যে কোন নারীকে জীবন্মৃত করে ফেলতে পারে' --এসব লিখায় পারুল আপা ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিল। আজ কালী ভাবে পারুল আপা যদি দীপাকে দেখে তবে নিশ্চয় তার লেখাটির কথা স্মরণ করবে।

কালী এখন পেপার পড়া ছেড়ে দিয়েছে। এসব পড়তে তার ভাল লাগে না। তনিমা নারী আন্দোলনের নারী সৈনিক। কালী ভাবে, কিছুই হবে না, যা চলছে-চলবে। দিন দিন নারীর উপর লাঞ্ছনার নতুন নতুন মাত্রা যোগ হবে। সুলতান পরোক্ষভাবে সাহায্য করায় তাকে কিছুতেই দোষী প্রমান করা গেল না। নেতাদের শক্তির বলে সে ছাড়া পেয়ে গেল। গলায় ফুলের মালা নিয়ে সে গ্রামে ঘুড়ে বেড়াল। শিষ্যরাও ছাড়া পেয়েছে । শোনা যাচ্ছে মোহনও ছাড়া পেয়ে যাবে। কালীর কাছে এসব জানা শুনা খবর । এরকমই হয়। নারীর মুখে এসিড ছুরে মারার পর কার ফাঁসি হয়েছে--এরকম কোন খবর সে শুনেনি। আসামীদের ধরে কি শাস্তিই বা দেয় তা আর পত্রিকায় উঠে না--কেউ জানতেও পারে না। পত্রিকায় কাজ ছবি ছাপান, আসামিদের সাহসীকতা তুলে ধরা আর প্রশাসনের পাছায় লাথি মেরে কথা বলা। আর ধর্ষনের ক্ষেত্রে নারীর ছবি ছাপিয়ে সমাজকে দেখায় সে অসতি এবং যারা অসতী করল তাদের বিচার করুন। কালীর কাছে মনে হয় এদের ধরে ধরে ফাঁসী দেওয়া উচিত। তবে এ অপরাধের ব্যাপারে হবু আসামীরা সতর্ক থাকবে।

কালী দিন দিন তনিমার মত যুক্তিবাদী হয়ে যাচ্ছে। মা তাকে লক্ষ্মীপূজাটুকু সাড়তে বললে সে বলে উঠে, কি হবে লক্ষ্মী পূজা করে? আমি সুন্দরী হতে পারব ? যৌতুক বাজেয়াপ্ত হবে ? নারী নির্যাতন বন্ধ হবে ? মা বলছে,কিরে তুই এমন হয়েছিস কেন? তনিমার মত কথা বলিস।

কালী মাঝে মাঝেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তখন কোন কথাই তার পেটে থাকে না। যা বলা উচিত নয় তাও সে বলে। এ পৃথিবীর, স্বর্গের, নরকের-সব কিছুর উপর রাগ তার। আগে লক্ষ্মীরে পূজা দিতে গিয়ে বলত, 'দেবী তুমি আমারে ফর্সা করে দাও । কতদিন ধরে তোমার পূজা দিচ্ছি, তুমি আমাদের ধন-সম্পদও দিচ্ছ না, আমাকে ফর্সাও করছ না'। মায়ের আর ঠাকুমার চাপে তাকে দু'বেলা পূজা দিতে হয়। সে এখন পূজা দেয় পূজা দিতে হয় বলে। এখন সে দেবীর কাছে কিছুই চায় না। সে ভাবে একটা ছবিকে, একটা মাটির তৈরী নির্বাক নারীকে পূজা করলে যদি ধনসম্পদ, টাকা পয়সা পাওয়া যেত তবে তো বাবা অনেক টাকার মালিক হত, বস্তামার্কা যৌতুক দিয়ে তাকে বিয়েও দিতে পারত। তাহলে তার তথা তাদের জীবনে এত বিড়ম্বনা নেমে আসত না। (চলবে)

 


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ