@
@
@
@
@ |
@
প্রিয় দেশবাসী আস্সালা-মু-আলাইকুম.... !
@
প্রফেসর আবদুল মান্নান
সেনা প্রধানরা রেডিও টিভিতে গিয়ে দেশের মানুষকে সালাম জানানো পাকিস্তানের
ইতিহাসে নতুন ঘটনা নয় । যখনই সেনা বাহিনী মনে করেছে বেসামরিক সরকারের হাত
হতে তাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা উচিৎ তখনই তারা রেডিও টিভিতে গিয়ে একটি
নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়ে দেশের মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেন কী দূঃখজনক
পরিস্থিতিতে তারা দেশের শাসনভার গ্রহণ করছেন । বলেন ক্ষমতায় থাকা তাদের
উদ্দেশ্য নয় । দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে তারা নির্বাচিত
গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যাবেন । প্রথমে তারা ক্ষমতা
দখল করার জন্য দেশে একটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেন । তারপর শুরু হয় নানা
ধরণের হানাহানি । এরপর পরিস্থিতি বেসামরিক প্রশাসনের আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে
সেনা প্রধান অথবা তার কোন এক প্রতিনিধি দেশের মানুষকে সালাম জানানোর জন্য
প্রচার মাধ্যমে হাজির হন । পাকিস্তানে এই সংষ্কৃতিটা চালু করেছিলেন ১৯৫৮
সনের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা । ১৯৫৬
সনের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান বলবৎ হয়েছে । রাজনীতিবিদরা দেশে
একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা চালু করার প্রচেষ্টা করছেন । কিন্তু বৃটিশদের
ধাঁচে গড়ে উঠা সেনাবাহিনীর তা তেমন একট পছন্দ নয় কারণ সাংবিধানিক ভাবে
রাজনৈতিক সরাকার দ্বার দেশ পরিচালিত হলে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব খর্ব হবে ।
বেসামরিক সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে । এটি তাদের
একেবারেই অপছন্দ । ৭ই অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জা রেডিও মারফত দেশের মানুষকে
সালাম দিয়ে জানিয়ে দিলেন দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে, সংবিধান বাতিল করা
হয়েছে এবং জেনারেল আইউব খানকে সশস্ত্রবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে
। তখনো পাকিস্তানে টিভি চালু হয় নি । মির্জা প্রধানমন্ত্রী মালিক ফিরোজ খান
নুনকে বরখাস্ত করেন এবং পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দেন । বেসামরিক
প্রশাসনের বিরুদ্ধে সেনা বাহিনীর এই ষড়যন্ত্র মির্জা, আইউব খান, তিন বাহিনী
প্রধান ও কয়েকজন জেনানেল ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না । পাকিস্তানে প্রাসাদ
ষড়যন্ত্রে সে দেশের সেনা বাহিনী অবিচ্ছেদ্য অংশ । নুন ওই সন্ধ্যায় তার
মন্ত্রীসভা পূনর্গঠন করেছিলেন । সকালে ঘুম হতে উঠে দেখেন তিনি আর ক্ষমতায়
নেই । এর বিশ দিনের মাথায় ২৭ অক্টোবর আইউব খান মির্জাকে উৎখাত করে দেশের
মানুষকে সালাম জানান । মির্জাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং তিনি লন্ডনের
একটি হোটেলে ম্যানেজারের চাকুরি নিয়ে শেষ জীবন সেখানেই অতিবাহিত করেন ।
পরবর্তীকালে ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক, পারভেজ মোর্শারফ সকলে সে দেশের মানুষকে
সালাম জানিয়েছেন । স্বাধীন বাংলাদেশেও তাদের উত্তসূরী জেনারেল জিয়া আর
জেনারেল এরশাদ এই দেশের মানুষকে সালাম জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুৃ হত্যার সময়
জিয়া অবশ্য সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না । তিনি ছিলেন উপপ্রধান, যে পদটি
বঙ্গবন্ধু জিয়ার জন্য বিশেষ ভাবে সৃষ্টি করেছিলেন । বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময়
জেনারেল শফিউল্লাহ ছিলেন সেনা প্রধান । বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার
পর শফিউল্লাহকে মুশতাক অপসারণ করে জিয়াকে সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন ।
বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করার জন্য মুশতাক-জিয়া-ফারুক-রশিদ গং এক সাথে কাজ
করেছেন যা এখন প্রমানিত সত্য । ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেলে চার জাতীয়
নেতাকে হত্যার পর মুশতাককে উৎখাত করা হয় এবং বিচারপতি সায়েমকে সাক্ষীগোপাল
রাষ্ট্রপতি বানিয়ে পিছন হত জিয়া দেশ শাসন শুরু করেন । ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল
সায়েমকে সরিয়ে জিয়া দেশবাসীকে সালাম জানান । ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে জিয়া এক
সামরিক অভ্যূত্থানে নিহত হলে সাংবিধানিক ভাবে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি
সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব বুঝে নেন । ১৫ই নভেম্বর বিচারপতি সাত্তার
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডঃ কামাল হোসেনকে পরাজিত করে নতুন রাষ্ট্রপতি
নির্বাচিত হন । ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি
সাত্তারকে সরিয়ে দেশবাসীকে সালাম জানান ।
সেনাবাহিনীর কেউ প্রচার মাধ্যমে এসে দেশবাসীকে সালাম জানানোর একটাই
উদ্দেশ্য আর সেটা হচ্ছে তিনি দেশের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন কারণ
eব্লাডি সিভিলিয়ানরাf দেশ পরিচালনায় অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছেন তা ঘোষণা করা।
বাস্তবে দেখা গেছে পাকিস্তান হোক আর বাংলাদেশ অথবা অন্য যে কোন দেশে যখন
সেনা বাহিনী বেসমারিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছে তখন দেশটি এক
সর্বনাশা পথের দিকে যাত্রা শুরু করেছে । আর দেখা যায় সেনাবাহিনীকে এই
সুযোগটা করে দেন সাধারণত সেই দেশটির কোন কোন রাজনৈতিক দল, বেসামরিক সরকার
আর কিছু ষড়যন্ত্রকারীর সিন্ডিকেট । অনেক সময় মদদ আসে অন্য দেশ হতে ।
ঐতিহাসিকভাবে এই ব্যাপারে সব সময় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র । এক সময় সালাম দানকারিরা সোভিয়েত ইউনিয়নেরও সহায়তা ও সমর্থন
মিলতো । অবশ্য বর্তমানে সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটেছে আর এই সময়ের
রুশ সরকারের সেই সব দিকে তেমন একটা নজরও নেই ।
পাকিস্তানে ২০১৩ সালের মে মাসে একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নওয়াজ
শরিফের মুসলীম লীগ সরকার গঠন করেছিল । সেই নির্বাচনটি আবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল
একটি eদল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরf অধীনে । পূর্বের আসিফ আলি
জারদারির পিপল্স পার্টির সরকার পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো তাদের
পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিল । ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রধানত
তিনটি দল বা জোট অংশগ্রহণ করে । নওয়াজের মুসলিম লীগ, জারদারির পিপল্স পার্টি
বা পিপিপি আর ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই জোটভুক্ত
জামায়াতে ইসলামি ও উগ্র জঙ্গিবাদি সংগঠন মাজলিস ওয়াহাদাত-ই-মুসলিমীন
পাকিস্তান, সংক্ষেপে এমডাব্লিউএ । নির্বাচনের আগে আল-কায়দা আর তালেবান
সংগঠন গুলি ঘোষণা করে পিপিপি ইসলামের দুষমন এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের
প্রতিহত করতে হবে । নির্বাচনের আগে পিপিপিfর প্রার্থী সহ তাদের একাধিক কর্মী
তালেবানদের হামলায় নিহত হন । তারা আরো ঘোষণা করে ইমরান খানের পক্ষে তাদের
সমর্থন নিরঙ্কুশ থাকবে । অক্সফোর্ড শিক্ষিত, একধা বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার
ইমরান খান বর্তমানে প্রয়োজনে তালেবানদের মূখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন
করেন । ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৩৪২ আসনে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের দলকে শুধু
৩৫টি আসন পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় । খাইবার পাখতুন খোওয়ার প্রাদেশিক পরিষদে
উগ্র মৌলবাদিদের সমর্থন নিয়ে পিটিআই সরকার গঠন করে আর কেন্দ্রে সরকার গঠন
করে নওয়াজ শরীফের মুসলীম লীগ । ইমরান খান নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেন ।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলগুলিও বলে এই নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন
ঘটনা ছাড়া মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে ।
নির্বাচনের দেড় বছর পর হঠাৎ ইমরান খান আবিস্কার করেন ২০১৩ সালের নির্বাচনে
ব্যাপক কারচুপি করে নওয়াজ শরীফ তার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন । তার সাথে যোগ দেন
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক ডঃ তাহিরুল কাদির । কাদির নিজেকে একজন
ধর্মীয় গুরু হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন । পাকিস্তানের রাজনীতিতে কাদির
এক অদ্ভূত রহস্যময় চরিত্র । তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন কানাডায় । সেখানে
তার ভক্ত আছে অনেক । তাদেও কাছ হতে নজরানা হিসেবে প্রচুর অর্থ কামাই করেন
আর যখনই পাকিস্তানে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী শুরু হয় তখন তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি
টাকা নিয়ে পাকিস্তানে হাজির হন । সেখানে তার পাকিস্তান আওয়ামী তেহরীক নামের
একটি রাজনৈতিক দল আছে । কাদির যখন পাকিস্তানে আসেন তখন তার দল পূনরুজ্জীবিত
হয় । সেই কাদির এখন পাকিস্তানে । ইমরান কাদির মিলে তাদের নিজ নিজ অবস্থান
হতে দাবি তুলেছেন যেহেতু ২০১৩ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে সেহেতু নওয়াজ
শরীফকে পদত্যাগ করে জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দিতে হবে । ১৪ তারিখ ইমরান আর
কাদিরের সমর্থকরা পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা হতে লাহোরে জড়ো হয়ে রাজধানী
ইসলামাবাদের দিকে ট্রাক বাসে চড়ে পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করতে রওনা হন ।
তাদের এই অভিযাত্রার নামকরণ করা হয় eআজাদি মার্চf। কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক
গিয়ে তারা ইসলামাবাদের রেড জোন ঘেরাও করে । এই রেড জোনে পাকিস্তানের
পার্লামেন্ট ভবন ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন
ও স্থাপনা অবস্থিত । সেই দেশের উচ্চ আদালত সরকারকে নির্দেশ দিল রেড জোন খালি
করার ব্যবস্থা করতে । নওয়াজ শরীফ সরকার প্রথম দিকে অবস্থানকারীদের হঠাতে
তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করাতে সকলে মনে করে সরকারের অবস্থান দুর্বল ।
এখানে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের পার্থক্য । ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের
শাপলা চত্বর হতে সরকার যদি হেফাজতি তস্করদের শক্তহাতে দমন না করতো তা হলে
তা হতো সরকারের জন্য বড় ধরণের বিপদের কারণ । একই ভাবে ৫ জানুয়ারীর
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার যদি সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতো তাহলে
সেখানেও সরকারের দূর্বলতা প্রকাশ পেত । এই দুটি চ্যালেঞ্জ দৃঢ়ভাবে আর
বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার
প্রশংসা করতেই হয় ।
ইতোমধ্যে পিটিআইfর সংসদ সদস্যরা পার্লামেন্ট পদ হতে পদত্যাগ করেছেন যদিও
স্পিকার তা এখনো গ্রহণ করেন নি কারণ সদস্যরা নিজে উপস্থিত হয়ে তাদের
পদত্যাগ পত্র পেশ করেন নি । ব্যতিক্রম দলের প্রেসিডেন্ট জাভেদ হাসমি । তিনি
গত বুধবার সংসদ ও সিনেট সদস্যদের এক যৌথ সভায় তার পদত্যাগ পত্র পেশ করে এক
চমৎকার বক্তৃতা দেন । তিনি বলেন eআমি আমার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে জনগণের
কাছে ফিরে যাচ্ছি । কোন পিটিআই সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র পেশ করেন নি ।
নওয়াজকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে কিন্তু পাকিস্তান একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে
গড়ে উঠেনি । জনগণ (পাকিস্তানের) মুজিবুর রহমানকে (শেখ মুজিব) উপেক্ষা করতে
চেয়েছিল । তারা বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে । আমরা তাদের (বাঙালিদের)
কাছ হতে কী ভাবে ভাল হলাম ? বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশী
সমৃদ্ধশালী ।...ইমরান কথা দিয়ে কথা রাখেন নি। বলেছিলেন তিনি কখনো
পাকিস্তানের সংবিধানের বিরুদ্ধে যাবেন না ।f হাসমি আরো বলেন eবর্তমানে
পাকিস্তানে যে সংকট চলছে তা সেনাবাহিনীর লিখিত চিত্রনাট্য মাফিক হচ্ছেf। এই
যৌথ সভায় পার্লামেন্ট ও সিনেটের সকল সদস্য নওয়াজের সরকারের প্রতি তাদের
আস্থা প্রকাশ করে বলেন যে কোন মূল্যে তারা তাদের সংবিধান সমুন্নত রাখবেন ।
সকলের কাছে এটি এখন অনেকটা পরিষ্কার যে ইমরান সেনা বাহিনী আর আইএসআইfর
পুতুল হিসেবে কাজ করছেন । এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নওয়াজ ক্ষমতার অপব্যবহারের
জন্য পারভেজ মোর্শারফের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন । একবার তার বিচার শুরু হলে
সেনা বাহিনীর অনেক রাগব বোয়াল ফেঁসে যেতে পারেন যার মধ্যে ধারণা করা হয় সেনা
বাহিনীর সাবেক প্রধান আশফাক কায়ানিও আছেন । কায়ানি এক সময় আইএসআই প্রধানের
দায়িত্ব পালন করেছেন । পাকিস্তানের সেনা বাহিনী তাদের পূর্বের উর্ধ্বতম
কর্মকর্তাদের প্রতি সব সময় অনুগত থাকেন । এই যাত্রাও তার ব্যতিক্রম হওয়ার
কথা নয় । বর্তমান সেনাপ্রধান রাহীল শরিফ ঘোষণা দিয়েছেন রাজনৈতিক সংকট
রাজনীতিবিদদেরই সমাধান করতে হবে । কিন্তু পাকিস্তানে ক্ষমতার লড়াইয়ে
সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করা চরম বোকামি ।
ইতোমধ্যে ইমরান খানের সার্কাস কিছুটা স্থিমিত হয়ে এসেছে । জনগণ রাস্তায়
অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে । এতে ইমরান কিছুটা
ক্ষুব্দ হলেও তার করার কিছু নেই । ইমরান ক্রিকেট আর রাজনীতির মধ্যে এখনো
তফাত বুঝতে পারেন নি । নওয়াজ হয়তো এই যাত্রায় বেঁচেও যেতে পারেন । তবে
খেলার এখানে শেষ নয় । খেলা চলবে । একদিন হয়তো শোনা যাবে e প্রিয় দেশবাসী
আস্সালা-মু-আলাইকুম..f । হতে পারে তা সময়ের ব্যাপার । তা যদি সত্যি সত্যি
হয় তা হলে আবারো প্রমাণিত হবে পাকিস্তান নামের এই মেকি রাষ্ট্রটি সৃষ্টির
৬৭ বছর পরেও গণতন্ত্র চর্চার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেনি । বাংলাদেশের মানুষের
বুঝা উচিৎ কেন একাত্তর সালে বাঙালি যুদ্ধে গিয়েছিল ।
শেষ করি এককালের পাকিস্তানের জাঁদরেল আমলা রোয়েদাদ খানের একটি বহুল পঠিত বই
হতে একটি উদ্বৃতি দিয়ে । ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত রোয়েদাদ খানের গ্রন্থ
ePakistan-A Dream Gone Sourf (পাকিস্তান-একটি স্বপ্ন যা টকে গেছে ) এ
লেখেন eবর্তমান পাকিস্তান তার স্বপ্ন হতে অনেক দূরে । দেশটির সৃষ্টির
পঞ্চাশ বছর পর পাকিস্তান এখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সন্ধান করছে । ১৯৪৭
সনের অগাষ্ট মাসে জিন্নাহর নেতৃত্বে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য
উপমহাদেশের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল । কিন্তু তারা তাদের সেই স্বপ্ন
বাস্তবায়ন হতে অনেক দূরে । পাকিস্তানের ছয়জন প্রেসিডেন্ট এই পরিস্থিতির
জন্য দায়ি । এরা হচ্ছেন আইউব খান, ইয়াহিয়া খান, জেড এ ভুট্টো, জিয়াউল হক,
গোলাম ইসহাক খান, ফারুখ লেঘারী । তারা সকলে জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
করেছেন (হুবহু অনুবাদ নয়)f । রোয়েদাদ খান এই এই ছয়জন প্রেসিডেন্টের পাঁচ
জনের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছেন । ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল ছয়জনের সাথেই ।
রোয়েদাদ খানের গ্রন্থ প্রকাশ হওয়ার পর সতের বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু
পাকিস্তান যেই অন্ধকারে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে । বাংলাদেশে যে সকল
পাকিস্তানি প্রেমীরা আছেন তারা তাদের সাধের পাকিস্তান হতে অনেক কিছুই শিখতে
পারেন ।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । সেপ্টম্বর ৬, ২০১৪
@
@
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
@
[প্রথমপাতা] |
@
@
@
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|