প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা নিয়ে অর্থনীতির সহজ পাঠ

 


প্রফেসর আবদুল মান্নান

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত করার কঠিন কাজটি বাংলাদেশ সরকার বেশ সাফল্যের সাথেই আন্তর্জাতক সলিসি আদালতের মাধ্যম সমাধা করেছে । দুটি পাশাপাশি দেশের মধ্যে স্থল ও জলসীমা নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয় । স্থল সীমা নিয়ে বিরোধ অনেক পুরানো । আগেরকার দিনে তা নিষ্পত্তি হতো যুদ্ধের ময়দানে কিন্তু বর্তমান কালে যে সব দেশের মধ্যে এই বিরোধ আছে তা তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তির পথ খুঁজে । সম্ভবত কিছুটা ব্যতিক্রম ভারত আর পাকিস্তান । দু’দেশের মধ্যে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমে হিমালয় পর্বতমালার সিচিয়ানে বরফ ঢাকা মানুষের বসবাসের অযোগ্য অঞ্চল নিয়ে বিরোধ বেশ পুরানো । মাঝে মধ্যে দু’দেশই সেই পর্বত শৃঙ্গে গিয়ে তুমুল লড়াইও করেছে কিন্তু সমস্যাটির কোন ফয়সালা হয় নি । রেকর্ড বলে এত উপরে দুনিয়ার কোথাও নাকি আর সীমানা বিরোধ মীমাংসা করার জন্য যুদ্ধ হয় নি । ভারত পাকিস্তান বলে কথা । ভারতের সাথে হিমাচল প্রদেশের সীমানা নিয়ে চীনের সাথেও বিরোধ আছে তবে তারা মাঝে মধ্যে এই বিষয়ে দু’এক কথা বললেও কখনো যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করে নি । ১৯৬২ সনে দু’দেশ একবার উত্তর সীমান্তের বিরোধ নিয়ে যুদ্ধ করেছিল এবং সেই যুদ্ধে ভারত চীনের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিল । এখন আর এই সব বিষয় নিয়ে এমন যুদ্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ দুই দেশই এখন শুধু অর্থনৈতিক পরাশক্তিই নয় পারমানবিক শক্তিরও অধিকারী ।
যখন হতে মানুষ বুঝতে পারলো স্থলের চেয়ে জলের মূল্য কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশী তখন বিভিন্ন দেশ তাদের জলরাশির উপর নজর দেয়া শুরু করে । মনে রাখা ভাল পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর একভাগ স্থল । স্থল ভাগে যত প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার চেয়ে হাজার গুণ সম্পদ জলের উপর আর তলায় আছে । স্থল ভাগের সম্পদ মানুষ কয়েক হাজার বছর ধরে উজাড় করছে আর তার তুলনায় জলের সম্পদ তুলনামূলক ভাবে এখনো অনেকটা সুরক্ষিত আছে কারণ এই সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করতে হলে যে উন্নত মানের জ্ঞান, সক্ষমতা আর দক্ষতার প্রয়োজন তা বাংলাদেশেরতো নয়ই, অনেক দেশেরই নেই । নৌ পথে এশিয় অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য বঙ্গোপসাগরের ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল হতে । প্রথম খৃষ্টাব্দে কোন এক গ্রিক প-িত রচনা করেছিলেন এক অসাধারণ দালিলিক গ্রন্থ ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিত্রিয়ান সি’ । সেই গ্রন্থে তিনি বর্ণনা করেছেন কী করে গ্রীক বণিকদের জাহাজ লোহিত সাগর দিয়ে আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর হয়ে পূর্ব ভারতে বাণিজ্য করতে যেত । আরব আর রোমান বণিকরাও পরবর্তীকালে এই পথ ব্যবহার করে শুধু ভারত বা পূর্ব ভারতের সাথে বাণিজ্য করে নি তাদের বাণিজ্যের সীমানা বিস্তৃত ছিল সুদূর চীন পর্যন্ত । এমন কথা প্রথম খৃষ্টাব্দে মিশরীয় অংকশাস্ত্র আর ভূগোলবিদ টলেমিও বর্ণনা করে গেছেন তাঁর গ্রন্থে। এক সময় সন্দীপের কারিগররা রোমান সম্রাটের জন্য যুদ্ধ জাহাজও তৈরী করতো । সেটি ছিল বাংলার স্বর্ণযুগ । ইউরোপীয় হার্মাদরা এই অঞ্চল লুঠ করার জন্য তখনো এসে পৌঁছায় নি । সে আমলে বিশ্বে দু’টি অর্থনৈতিক পরাশক্তি ছিল । একটি ভারতবর্ষ আর অন্যটি চীন । বাণিজ্য হতো এক মুখী, পূর্ব হতে পশ্চিম । এই পুরো অঞ্চলটাকে বিভিন্ন ইউরোপীয় শাসকরা তাদের উপনিবেশ বানিয়ে দীর্ঘ তিনশত বছরেরও বেশী সময় ধরে শাসন আর শোষণ করে নারিকেলেরে ছোবড়া বানিয়ে দিয়েছে । গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই এশিয় মহাদেশের অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে বটে কিন্তু তারা অর্থনৈতিক ভাবে তেমন উন্নতি করতে পারেনি যার অন্যতম কারণ সুশাসন আর দক্ষ জনশক্তির অভাব । তার উপর ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সহ এশিয়ার অনেক দেশই হয় সামরিক স্বৈরশাসক অথবা ভোগ বিলাস প্রিয় রাজতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে । এর ফলে এই সব দেশ মানব সম্পদ উন্নয়নে দারুণ ভাবে পিছিয়ে পরেছে ।
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বের অনেক ডাকসাইটে অর্থনীতিবিদ একবাক্যে বলেছেন এই দেশ বাঁচলে যে কোন দেশই বাঁচবে । বাংলাদেশ শুধু বাঁচেই নি এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে দেখা দিয়েছে । আশা করা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং সুশাসন আর মানব সম্পদ উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক ইউরোপীয় দেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে । বাংলাদেশের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রাপ্ত জমির পরিমাণ যা বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশের তুলনায় একেবারেই নগণ্য । এক কোটির উপর জনসংখ্যা আছে এমন দেশের তালিকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বিশ্বে সব চেয়ে বেশী মানুষ বাস করে বাংলাদেশে যার সংখ্যা ১০৩৪ জন । আর আমাদের পরে আছে তাইওয়ান যেখানে ৬৪৬ জন মানুষ এক বর্গ কিলোমিটার এলাকার বসিন্দা । আর নগরায়নের ফলে চাষাবাদ জমি কমছে ভয়াবহ ভাবে, প্রতিবছর এক ভাগ করে । বর্তমানে মাথাপিছু এই জমির পরিমাণ ০.০৫ হেক্টর যেখানে পাকিস্তানে ০.১২, ভারতে ০.১৩ আর মায়ানমারে তা ০.২১. তারপরও আমাদের কৃষকরা তাদের জমিতে ১৯৭২ সালের তুলনায় তিনগুণ খাদ্য উৎপাদন করে এবং বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে চাল উৎপাদনকারি দেশগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করে আছে । কিন্তু জমির উপর দ্রুত নির্ভরশীলতা না কমালে আগামী দিনে আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারুণ ভাবে ব্যাহত হবে । সুতরাং এখন আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে জলের দিকে এবং মিয়ানমার আর ভারতের সাথে আমাদের সমুদ্র সীমার একটা শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হওয়ার ফলে সেই অপার সম্ভাবনার দ্বারটা খুলে গিয়েছে । অবশ্য এই সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাওয়াটা অনেকের পছন্দ নয় । দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি অনেক সময় নিজেদের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের উপর স্থান দিতে পারে নি যদিও তারা সব সময় বলে থাকে দলের চেয়ে দেশ বড় । বাস্তবে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশের চেয়ে ব্যক্তি ও দল বড় এই চিন্তাধারায় বিশ্বাস বেশীর ভাগ রাজনৈতিক দলের । এর ফলে প্রায়শঃ দেখা যায় একটি সরকারের আমলে দেশের কোন ভাল অর্জনে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করে । বাংলাদেশ যখন মায়ানমারের সাথে দীর্ঘ দিনের সমুদ্র সীমা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমাধান করলো তখন সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রথমে সরকারকে অভিনন্দন জানালেও কিছু দিন না যেতেই সেই সমর্থন প্রকাশ্যে প্রত্যাহার করলো । বর্তমানে যখন ভারতের সাথে এই সমুদ্র সীমা চিহ্নিত করণে একই ভাবে সরকার সফল হলো তখন বিএনপি এই বলে বিষয়টাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করলো যে এই সমুদ্র সীমা সমস্যা সমাধান হওয়ার ফলে ভারত বঙ্গোপসাগরের সম্পূর্ণ জলরাশির উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে । তবে তা কি ভাবে হয়েছে সেই ব্যাখ্যা তাদের কাছে নেই । দ্বিতীয়ত তারা বললো আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের ফলে বাংলাদেশ তালপট্টি নামের দ্বীপটির মালিকানা হারিয়েছে । এই দক্ষিণ তালপট্টি নামক দ্বীপটি ১৯৭০ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণী ঝড়ের ফলে হঠাৎ করে সমুদ্রের জলরাশির নীচ হতে হাড়িয়া ভাঙ্গা নদীর মোহনায় জেগে উঠে । আন্তর্জাতিক জলসীমা আইনের ধারা বলে এমন কোন নদীর মোহনায় দ্বীপের অস্তিত্বের সৃষ্টি হলে সেই নদীর মূল স্রোত দ্বীপের যে দিক দিয়ে প্রবাহিত হয় তার পার্শে¦র দেশ সেই দ্বীপের মালিকানা দাবি করতে পারে । সেই যুক্তিতে তালপট্টি দ্বীপটি কখনো বাংলাদেশের ছিল না । তার উপর এই দ্বীপটি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে ২০০৯ সালে সমুদ্রের নীচে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে । সুতরাং বর্তমানে এই দ্বীপের আর কোন অস্তিত্বই নেই । জাপানি গবেষক কিইসি তানাকা ২০০৯ হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনভেন্টরি অব কনফ্লিক্ট এন্ড এনভাইরনমেন্টের এক গবেষণা প্রকল্পের অধীনে একই ধরণের তথ্য উৎঘাটন করেন । পশ্চিম বঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ২০০৯ সালে সরেজমিনে এই এলাকায় গিয়ে এই রকম কোন দ্বীপের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি বলে মন্তব্য করেছে । বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কোন বামপন্থি দলও বাংলাদেশের এই অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেছে । এটিও এক ধরণের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ।
সমুদ্রে সীমা চিহ্নিতকরণ শেষ কথা নয় । মূল কথা হচ্ছে আমাদের এই সীমানাটিকে কী ভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারি । এই বিস্তীর্ণ জলরাশিতে আছে মৎস্য সম্পদ । তবে সঠিকভাবে জানিনা সেই সম্পদেও পরিমান কথ । আর আমাদের মাছ ধরার কাঠের নৌকা ৫০ নটিক্যাল মাইল আর যন্ত্র চালিত আধুনিক ট্রলার ১০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে গিয়ে মাছ ধরার সক্ষমতা নেই যদিও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অনুযায়ী তার তটরেখা হতে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্র সীমায় মৎস্য আহরণ করতে পারে । বাংলাদেশ না পারলেও থাইল্যান্ড ও ভারতের এই সক্ষমতা আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশী । এবং আমাদের সমুদ্র সীমা চিহ্নিত না থাকার কারণে তারা তাদেও সক্ষমতার সম্পূর্ণটা ব্যবহার করে সেই সম্পদকে ইচ্ছামতো উজাড় করেছে । প্রতিবছর এই সব দেশ বঙ্গোপসাগর হতে ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন মৎস্য সম্পদ আহরণ করে আর বাংলাদেশের সংগৃহীত পরিমাণ মাত্র ০.২৯ মেট্রিক টন । এ’ছাড়াও সমুদ্র তলদেশে আছে অবারিত তেল আর গ্যাস সম্পদ (হাইড্রোকার্বন) সহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ, আর আছে জলজ উদ্ভিদ সম্পদ । এ পর্যন্ত ভারত আর মায়ানমার বঙ্গোপসাগরে ২৭টি ব্লক সহ অন্যান্য ব্লকে আনুমানিক ১০৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট হাইড্রোকার্বনের সন্ধান পেয়েছে বলে যানা যায় যার মধ্যে ২২টি ব্লক আদালতের রায়ের কারণে বাংলাদেশের জলসীমায় পরেছে । বাংলাদেশের জলসীমায় যে পরিমাণের হাইড্রোকার্বনের অস্তিত্ব আছে এটি তার একটি অতি ক্ষুদ্র পরিমাণ বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা । বাংলাদেশের স্থল ভাগে এই যাবত যত পরিমাণের হাইড্রোকার্বনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার বেশীর ভাগই ইতোমধ্যে নিঃশেষিত হয়ে আসছে । আহরণ আর ব্যবহার বর্তমান হারে চলতে থাকলে হয়তো আর বিশ বছর পর এই যাবৎ আবিস্কৃত হাইড্রোকার্বন নিঃশেষ হয়ে যাবে । তারপর বাংলাদেশকে অবধারিতভাবে সমুদ্রের দিকে তাকাতে হবে । তবে সমস্যা হচ্ছে এই মুহূর্তে এই হাইড্রোকার্বন (তেল গ্যাস) বা খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান বা উৎপাদনের কোন সক্ষমতাই বাংলাদেশের নেই কারণ আমাদের কারিগরী জ্ঞানের প্রচ- অভাব । কোন দেশে যদি মাটির নীচে অথবা জলের নীচে অবারিত সম্পদ থেকেও থাকে আর তা অনুসন্ধান, উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য ভিন দেশের সহায়তার উপর নির্ভর করতে হয় তাহলে অবস্থা হবে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলির মতো । সৌদি আরবের আছে বেসুমার তেল সম্পদ কিন্তু তা কাজে লাগানোর জন্য সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলির তেল কোম্পানিগুলির উপর তাদের নির্ভর করতে হয় । এই কারণে এখনো সৌদি আরবের মতো দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলির কাতার হতে বের হয়ে আসতে পারে নি । কিছুটা ব্যতিক্রম ইরান । আয়াতুল্লাহ খোমেনির ইসলামি বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইরানের শাহ আর পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলি সে দেশের বিপুল পরিমাণের তেল আর গ্যাস সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত ছিল । অনেকে হয়তো জানেন না ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরান হতে ফেরিওয়ালারা দামি পাথর, ছুরি, চশমা সহ টুকটাক পণ্য ফেরি করতে বাংলাদেশে আসতো । ঢাকার নবাবপুর রোডের পার্শ্বে তারা টেবিলে দোকান পাট সাজিয়ে বেচা বিক্রি করতো । চট্টগ্রামের কেসি দে রোড এলাকা তাদের দখলে ছিল । ১৯৫১ সালে সে দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ইরানের তুদেহ পার্টি ঘোষণা করলো নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা সে দেশের তেল সম্পদ জাতীয়করণ করবে । নির্বাচনে তুদেহ পার্টি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে । ডঃ মোসাদ্দেগ সরকার গঠন করে এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁর সরকার ইরানের সকল তেল ক্ষেত্র জাতীয়করণ করে । কিন্তু ক্ষমতায় তিনি থাকতে পারেন নি বেশী দিন । বৃটেনের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ডঃ মোসাদ্দেগ সরকারকে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎখাত করে । উল্লেখ্য সে সময় ইরানের সকল তেল ক্ষেত্রের মালিক এঙ্গলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি । বর্তমানে ইরান তার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে আর বিদেশী কোম্পানির উপর নির্ভর করে না কারণ ইতোমধ্যে ইরান এই ক্ষেত্রের প্রয়োজন বিবেচনা করে যথেষ্ট সংখ্যক পেশাদার দক্ষ কারিগর আর প্রকৌশলী তৈরী করেছে । বাংলাদেশকেও এই ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে সঠিক পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে । ইতোমধ্যে সরকার চট্টগ্রামে একটি মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে । এ’রকম একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের সরকার (১৯৯৬-২০০১) নিয়েছিল । তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী এ এইচ কে সাদেক আমাকে দায়িত্ব দিলেন এমন একজন গবেষকের নাম প্রস্তাব করতে যাঁকে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া যায় । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স এন্ড ফিসারিজ ইনস্টিউটের সকল শিক্ষকের কাছে এমন একজন ব্যক্তির নাম আহ্বান করলে তারা সকলেই এক জনের নাম প্রস্তাব করলেন এবং তাঁকে সরকার এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিয়োগ দিলো । কিন্তু বাদ সাধলো স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নামধারী টাউট বাটপর। তাদের এক কথা ওই ব্যক্তি আওয়ামী লীগ করেন না । শেষ পর্যন্ত সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ ওখানেই মারা পরলো । আশা করি এইবার সরকার এমন কোন টাউট বাটপারের পাল্লায় পরবে না । শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে প্রয়োজন ফুরাবে না । গড়ে তুলতে হবে এমন আরো গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাইন্স এন্ড ফিসারিজ গবেষকদের দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ কিন্তু অপর্যাপ্ত বাজেটের কারণে এই ইনস্টিটিউট তাদের সেই প্রতিভা কাজে লাগাতে পারেন না । বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । তার জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা । বাড়িতে কাঁচা সম্পদ থাকলে সেই সম্পদেও উপর ডাকাতের দৃষ্টি পরে । নবরূপে আমাদের বঙ্গোপসাগরের সীমানার উপরও এমন ডাকাত হানা দিতে পারে । তাকে রক্ষা করার জন্য চাই একটি আধুনিক নৌবাহিনী আর কোস্ট গার্ড । তবে সব কিছুর উপর প্রয়োজন সরকারের নীতি নির্ধারকদের দূরদৃষ্টি । এই সব কিছুর সংমিশ্রনে বাংলাদেশ একবিংশ শতকে হয়ে উঠতে পারে সত্যিকার অর্থে এই অঞ্চলের একটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ । দেশের মানুষ সেই সময়ের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করবে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । বর্তমানে শিক্ষক ইউল্যাব। জুলাই ১৭, ২০১৪

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]