[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

নতুন প্রজন্মের দুই তরুনের বাংলাদেশে ভাবনা

 

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের দুই তরুণের কিছু বক্তব্য বিবৃতিকে ঘিরে দেশের রাজনীতি বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে । এই দুই তরুণকে দেশের সকল মানুষই চেনেন । একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র স্বনামে খ্যাত তারেক জিয়া আর অন্যজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় । তারেক জিয়ার পিতা জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক ছিলেন যিনি পরবর্তীকালে দেশের রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন । ১৯৮১ সনে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন । তাঁর স্ত্রী বেগম জিয়া স্বামীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারের গৃহিনী ছাড়া তার আর কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না । পরে বেগম জিয়া তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন । অন্যদিকে শেখ হাসিনা ছাত্রী জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন । সজীব ওয়াজেদ জয়ের পিতা ডঃ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন এদেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরমানু বিজ্ঞানী যিনি ছাত্র জীবনে ছাত্র লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তী জীবনে নিজের পেশায় মনোনিবেশ করেছেন এবং তাঁর মেধা ও জ্ঞানের স্বাক্ষর রেখেছেন । তবে জয়ের নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের এক অমর কীর্তিমান পুরুষ যিনি বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে ইতিহাসে চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবেন । হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি ১৯৭৫ সনের ১৫ই অগাষ্ট এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন । ভাগ্যক্রমে তাঁর দুই কন্যা দেশের বাইরে থাকাতে সে নৃশংস হত্যাকা-ের রাতে বেঁচে গিয়েছিলেন । জয়ের জন্ম একাত্তরের ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের এক স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার কেবিনে । তখন তিনি ও তাঁর মা, ছোট বোন রেহানা ও ভাই রাসেল পাকিস্তানী সেনাদের হাতে বন্দী জীবন যাপন করছিলেন । অন্য দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছেন । পিতা বঙ্গবন্ধু সুদূর পাকিস্তানের সাহিওয়াল কারাগারে মৃত্যুর দিনক্ষণ গুনছেন । বেগম মুজিবের নিয়মিত তাঁর কন্যাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না । মাঝে মাঝে এই শূন্যতাটুকু পূরণ করতেন বেগম সুফিয়া কামাল এবং বিশিষ্ট লেখক ও কবি সিকান্দার আবু জাফরের স্ত্রী মিসেস নার্গীস জাফর । সে দিক থেকে বেগম জিয়া অনেক বেশী ভাগ্যবতি । তারেক জিয়ার জন্মের সময় যেহেতু তাঁর স্বামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন সেহেতু তারেক জিয়ার জন্ম নিশ্চয় কোন এক আধুনিক সামরিক হাসপাতালে । ১৯৮১ সনে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত তিনি বাধ্যতামূলক ভাবে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন যার একটি উল্লেখযোগ্য সময় ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লীতে। শেখ হাসিনার এই প্রবাস জীবন মোটেও আয়াসি ছিল না । তারপরও তিনি তাঁর একমাত্র ছেলে জয় এবং মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলকে ঠিক সময়ে পড়ালেখার হাতেখড়ি দিয়ে একজন সত্যিকারের মায়ের ভূমিকা পালন করেছিলেন । পরবর্তীকালে তাঁর দুই সন্তানই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠেছেন । অন্যদিকে বেগম জিয়ার দুই পুত্র তারেক জিয়া আর তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো একাত্তরের পুরো সময় দেশের ভিতরেই ছিলেন । বেগম জিয়া ১৯৭১ সালে একাধিকবার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে যান নি কারণ সম্ভবত তাঁর কাছে সেনা নিবাসের আরাম আয়েশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়াটা তেমন একটা পছন্দসই কাজ মনে হয় নি । তাঁর দুই পুত্র লেখাপড়ায় খুব বেশী অগ্রসর হন নি । জিয়ার মৃত্যুর পর বেগম জিয়া যেন তার নাবালক পুত্রদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য বিচারপতি আবদুস সাত্তার সরকার তাদের জন্য মাসে পঁচিশ হাজার টাকার একটি মাসোহারার ব্যবস্থা করেছিলেন । কিন্তু তা তেমন কাজে লেগেছে বলে জানা যায় না । সজীব ওয়াজেদ জয় আর তার বোন পুতুল ভারতে পড়ালেখা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বেশ উঁচু মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে শেষ করে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত । জয় তার সর্বশেষ ডিগ্রীটি করেন বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলের দি এস ইন্সটিটিউট ফর ডেমোক্রেটিক গর্ভানেন্স এ- ইনোভেশন (ঐধৎাধৎফ কবহহবফু ঝপযড়ড়ষ: অংয ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ উবসড়পৎধঃরপ এড়াবৎহধহপব ধহফ ওহহড়াধঃরড়হ) হতে । এর আগে তিনি একজন সফল তথ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্বাক্ষর রেখেছেন । পুতুল অটিষ্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ।
২০০৮ সালের জুন মাসে প্রথম বার আমার সাথে জয়ের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দেখা ও কথা হয় । এক সাথে আমরা রাতের ডিনারও সারি । ঠিক আগের দিন তার মা শেখ হাসিনা দীর্ঘ কারা ভোগের পর কানের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ছেলে জয়ের বাসায় উঠেছেন । সেদিন আমরা দেশের রাজনীতি নিয়ে তেমন কথা না বললেও কথার ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি এসে যায় । কথায় বলে বাঙালি রাজনীতিকে সহজেই তার রক্তের সাথে মিশে যেতে দেয় । কুশল বিনিময় এবং তার মা শেখ হাসিনার খোঁজ খবর নেয়ার পর এ কথা সে কথা আলোচনা হয় । শেষে অবধারিত ভাবে উঠে আসে বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি । জয় দেশে না থাকলেও মনে হলো দেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতির বেশ খোঁজ খবর রাখেন । বলেন এত সম্ভাবনার একটি দেশ তার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে পারছে না শুধু অসুস্থ রাজনীতির কারণে । জয় আশা করেন সুস্থ রাজনৈতিক সংষ্কৃতি বাংলাদেশে চর্চা হলে একদিন বাংলাদেশও উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসবে । বলি তার জন্য তার মতো তরুণদের দেশের রাজনীতির হাল ধরতে হবে এবং পুরানো বস্তা পঁচা ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতিকে বিদায় করে জনগণ কেন্দ্রিক রাজনীতিতে দেশকে ফিরিয়ে নিতে হবে যেমনটি তার নানা করেছিলেন । এরপর জয় একাধিকবার দেশে এসেেেছন । তিনি তার মা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন । মা’র ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করেছেন । বর্তমান সরকারের পরম শত্রুও স্বীকার করবেন এই সরকারের আমলে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি মিনি বিপ্লব ঘটে গেছে । এতে নিশ্চিত ভাবে জয়ের একটা সক্রিয় অবদান রয়েছে ।
জয় সপ্তাহ দু‘এক আগে বাংলাদেশে এসেছেন এবং ঘোষণা করেছেন তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন । যারা চায় বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে টিকে থাকুক তারা জয়ের আগমনকে স্বাগতম জানিয়েছেন তবে সাথে সাথে এই শংকাও প্রকাশ করেছেন যেভাবে কিছু চাটুকার আর স্বার্থান্বেষী মহল আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধানকে ঘিরে ফেলেছেন সেখানে জয় কতটুকু কী করতে পারবেন তা নিয়ে । তবে মানুষ আশাবাদী যেহেতুৃ জয় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন তরুণ সেহেতু একটু বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিয়ে তিনি যদি সাহসের সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হন তাহলে আওয়ামী লীগ সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভাল করতেই পারে । এখনো দেশের সচেতন মানুষ মনে করে একতাবদ্ধ আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য । সকলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির কথা বলেন । এর সাথে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে হিসাবে নিলে দেখা যাবে এই সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের পিছনে সব চেয়ে বড় কারণ ছিল দলের ভিতরে অন্তর্দ্বন্ধ এবং চরম অনৈক্য । সুতরাং জয় যদি কোন এক যাদুমন্ত্র বলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন তা হলে তিনি সম্প্রতি যুবলীগের একটি ইফতার মাহফিলে যে বলেছেন তার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জিতবে তা বাস্তবে পরিণত হওয়া অসম্ভব কিছু নয় । জয়ের এই মন্তব্য শুনে ইতোমধ্যে বিএনপি শিবিওে হুলুস্তুল পরে গেছে । তারা গত দেড় বছর ধরে তাদের মিত্রদের নিয়ে আন্দোলন করে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে তাদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করতে হবে এ দাবি নিয়ে। তাদের বেশীর ভাগ নেতা-নেত্রীর কথাবার্তা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হয় তারা ইতোমধ্যে ক্ষমতায় এসে গিয়েছেন । কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এরই মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন তারা ক্ষমতায় এলে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে যারা সাজা প্রাপ্ত হবেন তাদের সব মামলা পর্যালোচনা করা হবে, অর্থাৎ মুক্তি দেয়া হবে । জয়ের মন্তব্য শুনে তারা এক বাক্যে বলে উঠলেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ যে ক্ষমতায় যাওয়ার সব পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করে রেখেছে তা জয়ের কথায় পরিস্কার । টিভি টকশো গুলিতে জয়ের মন্তব্য এখন আলোচনার একটি সরেষ বিষয় । জয়ের পক্ষে যারা, তারা বলেন এটাতো জয় বলতেই পারেন কারণ জয় একজন স্বীকৃত তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং দুনিয়া জোড়া নানা ধরনের জরিপের মডেল পাওয়া যায় যার কোন একটি ব্যবহার করে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব । জয় হয়তো তা করেছেন। কিন্তু বিপক্ষ শিবির তা মানতে নারাজ । তারা বলেন, রাখেন ওই সব জরিপ টরিপ, আসলে এটি একটি নীল নক্সার অংশ । তারা টিআইবি অথবা কোন একটি জাতীয় দৈনিকে জরিপের বিভ্রান্তিমূলক ফলাফল বিশ্বাস করতে প্রস্তুত কারণ তা তাদের চিন্তার সাথে মিলে যায় কিন্তু জয়ের কথা নয় । কিছু দিন আগে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে আলাপ হলো যিনি আরো গভীরে গিয়ে বিজ্ঞান সম্মতভাবে নির্বাচন নিয়ে জরিপ করেন । তিনি বললেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতবে তবে তিনটি শর্তে । প্রথমত, দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং উপলব্দি করতে হবে দল যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে কম পক্ষে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষকে দেশ ছাড়তে হবে কারণ তখন আসলে ক্ষমতায়তো বিএনপি আসবে না, আসবে জামায়াত এবং জামায়াত প্রথম তিন মাসে দেশে যে ভয়াবহ নৃশংস তা-ব চালাবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে না । এমন কথা আমি বিএনপি’র কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার মুখেও শুনেছি । এই বিষয়ে নাকি তাদের নেত্রীও চিন্তিত । দ্বিতীয়ত ক্ষমতায় ফিরতে হলে আওয়ামী লীগকে ন্যুনতম পক্ষে দেড়শত আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে । কাজটি সহজ না হলেও তা চোখ বুঝে শক্ত হাতে করতে হবে । এবং সর্বশেষ যে কাজটি করতে হবে তা হলো দলকে সাংগঠনিক ভাবে আরো শক্তিশালী করা । বাংলাদেশের রাজনীতিতে জয়ের আগমন নিশ্চয় একটি সুসংবাদ হতে পারে তাবে তাকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে । আগামী নির্বাচনে দলকে বিজয়ের পথে ধরে রাখতে হলে সঠিক রণনীতি প্রস্তুত করতে হবে । তবে জয়ের উচিৎ হবে হুট করে কোন কথা না বলে একটু ভেবে চিন্তে বলা এবং তার ব্যখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা । তা না হলে এতে অনেক সময় হিতে বিপরিত হতে পারে ।
অন্য দিকে বেগম জিয়ার তনয় তারেক জিয়া বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্ব হতে প্যারোলে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য প্রায় পাঁচ বছর লন্ডনে অবস্থান করছেন । তার বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা দেশে বিচারাধীন যার মধ্যে মানি ল-ারিং মামলা অন্যতম । এই মামলায় যুক্তরাষ্ট্র হতে বাংলাদেশে এসে এফবিআইয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন । দেশ ত্যাগের পূর্বে তারেক জিয়া প্রকাশ্যে মুচলেকা দিয়ে গেছেন তিনি আর রাজনীতি করবেন না । লন্ডনের যে এলাকায় তিনি থাকেন সেটি একটি বিলাসবহুল আবাসিক এলাকা । এক সময় বেনজির ভূট্টো আর পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোর্শারফও সেই এলাকায় থাকতেন । ।এখানে সপরিবারে এই দীর্ঘ সময় ধরে তার থাকা খাওয়ার খরচ কে যোগায় সেটি একটি বড় প্রশ্ন । সংবাদে প্রকাশ তিনি বৃটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন । তা না পেলে প্যারোলে থেকে তার পক্ষে সৌদি আরবে যাওয়া সম্ভব হতো না । সম্প্রতি তিনি লন্ডনে বিএনপির এক ইফতার মাহফিলে প্রায় এক ঘন্টা ধরে তার আগামী দিনের রাজনৈতিক দর্শন ব্যক্ত করেছেন । যথারীতি অনুষ্ঠানের আগে ও পরে তার দলের সমর্থকরা সেখানে মারপিট করেছে । সম্প্রতি তারা একই কাজ করেছে পবিত্র মদিনা শরীফে যেখানে বিএনপি প্রধান বেগম জিয়া ওমরা পালনের জন্য অবস্থান করছেন । সেখানে ইফতারের আগে তাঁর কর্মী বাহিনী রেওয়াজ অনুযায়ী মারপিট করলে সৌদি পুলিশ তিনজনকে (কোন কোন সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী সাতজন) গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ।
তারেক জিয়া তার ইফতার পূর্ব বক্তব্যে অনেক ভাল ভাল কথা বলেছেন । বলেছেন তিনি বিএনপিকে নতুন ধারার রাজনীতিতে আনতে চান । সকলকে অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাতে বলেছেন । ঈদের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে বলেছেন । প্যারোলে থেকে রাজনীতি করা আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ । তারেক জিয়া তা অনায়াসে করে যাচ্ছেন । এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা পরিস্কার নয় । তবে সমস্যা হচ্ছে ২০০১-০৬ সালের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের মানুষ দেশ পরিচালনায় তারেক জিয়া আর তার হাওয়া ভবনের ভূমিকা দেখেছেন । তারা দেখেছেন হাওয়া ভবন শুধু দেশে একটি সমান্তরাল সরকার ব্যবস্থাই কায়েম করেনি বরং এটি হয়ে উঠেছিল দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার একটি অন্যতম পরিকল্পনা কেন্দ্র । ২০০৪ সালের ২১ অগাষ্ট বঙ্গবন্ধু এভেন্যুতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা এই ভবনেই হয়েছিল বলে আদালতে এই মামলার আসামীরা স্বীকার করেছে । সাধারণ মানুষ বলতো এই হাওয়া ভবন হয়ে উঠেছিল দূর্নীতির আখড়া । দেশে থাকতে দেশের মানুষ তারেক জিয়ার পিছনে পিছনে সাইফুর রহমানের মতো বর্ষীয়ান ব্যক্তিদের দৌড়াতে দেখেছেন । অনেক সময় তার ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ সাধারণ মানুষকে হতবাক করেছে । সেই তারেক জিয়াকে বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় নেতারা বাংলাদেশের আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করছেন ।
তারেক জিয়া নতুর প্রজন্মের নেতা হবেন তাতে কোন অসুবিধা ছিল না । তবে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, পেরেছেন কী তিনি সে ভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে? তার সামনে সব চেয়ে বড় উদাহরণতো ছিল ভারতের রাহুল গান্ধী । রাহুল গান্ধীর সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুব বড় ধরণের পার্থক্য না থাকলেও একটি পার্থক্য আছে । আর সেটা হচ্ছে রাহুল তার দেশে থেকে জনমানুষের সাথে মিশে রাজনীতি করছেন । জয় যদি রাজনীতিতে আসতে চান তবে তাকে এই কাজটি এখনই শুরু করতে হবে । গণভবনের চার দেয়ালের মধ্যে থেকে তা সম্ভব নয় । আর তারেক জিয়া এদের দুজন থেকে যোজন যোজন দূরে । তিনি কিছুটা সময়ের আগেই রাজনীতিতে এসে অপরাজনীতির সর্বনাশা পথ পরিক্রম করেছেন । সম্প্রতি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম তাদের বিকল্প অফিস হিসেবে পরিচিত জাতীয় প্রেস ক্লাবে বলেছেন তারেক জিয়া দেশে ফিরলে আওয়ামী লীগ খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে । তা কেন হবে সেটা পরিস্কার নয় । আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পঁয়ষট্টি বছরের ইতিহাসে দলটিকে অনেকেই খড়ক’টোর মতো ভাসিয়ে দিতে চেয়েও সফল হন নি । তারেক জিয়া তা কেন পারবেন তা খুলে বললে ভাল হতো । দেশের মানুষকে এখন থেকেই ঠিক করতে হবে তারা আগামী দিনে কেমন বাংলাদেশে বাস করতে চান । ২০০১-০৬ সময়কার সেই ভয়াবহ দিনগুলির বাংলাদেশে নাকি একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নয়নশীল সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে ?

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জুলাই ৩০, ২০১৩

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ