প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

@

দেশের মানুষ দুর্বল সরকার দেখতে দেখতে চায় না
@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

বাংলাদেশে বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্ট সন্ত্রাসের ভয়াবহ মাত্রা দেখে আমার অনেক দেশী ও বিদেশী বন্ধু ফোন করে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন । তাদের মতে সরকারের বিএনপি-জামায়াত তোষণ নীতি দেশকে আজ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে । তারা আরো মনে করেন সরকারের এই বিএনপি-জামায়াত তোষণকে তাদের লালিত নেতৃবৃন্দ ও দূর্বৃত্তরা সরকারের দূর্বলতা হিসেবে ধরে নিয়েছে এবং যতই দিন যাচ্ছে তাদের হিংস্রতার রূপ ও ধরণ পাল্টে যাচ্ছে । একই সাথে তারা ছাত্রলীগ নামক কিছু দূর্বৃত্তদের ব্যাপারেও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে যেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসএসসি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে সেখানে ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে আর কিছু দূর্বৃত্ত টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত থেকে নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে ব্যস্থ রয়েছে । এই সব কোন বিষয়েই আমার বন্ধুদের সাথে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই ।
বেগম জিয়া আহুত আন্দোলনের নামে দেশব্যাপি যে জীবনহরণকারি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড গত ৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল তা শুক্রবার ৩২তম দিন পার করেছে । এই ৩২ দিনে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের যাদের মধ্যে জামায়াত-বিএনপিfর সন্ত্রাসীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের । এই নৃশংসতার সর্বশেষ ভয়াবহ ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে গত শুক্রবার রাতে গাইবান্ধায় যখন দূবৃর্ত্তরা একটি চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা মেরে শিশু সহ ৬ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, আর মারাত্মক ভবে জখম করে ৩৫ জনকে । একই রাতে বরিশালে ট্রাকচলাক সহ পেট্রোলবোমায় নিহত হয়েছেন তিনজন । যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ভারত সহ অনেক দেশ ও সংগঠন এই সব হত্যাকান্ডের নিন্দা জানালেও দেশের অনেক সুশীল সমাজের সদস্য, মিডিয়া আর মানবাধিকার সংগঠন এইসব নৃশংসতাকে কোন প্রকারের নিন্দা জানানো দূরে থাক তারা বরং এই নৃশংসতাকে বলে রাজনৈতিক আন্দোলন আর তা বন্ধ হতে পারে একমাত্র দুই নেত্রীর সংলাপের মাধ্যমে । eঅধিকারf নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন গুনে বলে দেয় বাংলাদেশে প্রতি দুই দিনে একজন নিরাপরাধ মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয় কিন্তু জামায়াত-বিএনপিfর সন্ত্রাসীরা কfজন মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করলো তার হিসাব দেয়ার তারা প্রয়োজন মনে করে না । যারা সংলাপ সংলাপ বলে প্রতিদিন চিৎকার করেন তারা এটি উপলব্দি করেন না কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথেতো সংলাপ হতে পারে না । এই যাবৎ কোথাও কখনো হয় নি । তাই যদি হতো তা হলে আইএস, বোকো হারাম, আল-কায়দা, তালেবান, লস্করই তৈয়বার মতো জঙ্গিদের সাথেতো সকলকে নিয়মিত সংলাপ করতে হতো । এই জঙ্গিদের দমন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা করে, বিমান হতে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে আর জর্ডানের একজন পাইলটকে যখন আইএস পুড়িয়ে হত্যা করে জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ দুfঘন্টার মধ্যে হুকুম দেয় আইএস এর মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুজন সন্ত্রাসির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে, যাদের একজন আবার মহিলা ছিল । তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি একেবারে চুপচাপ । এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইট্স ওয়াচও কিন্তু তখন নীরব দশর্কের ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশের বেলায় শুধু তাদের যত লম্ফঝম্প । পাকিস্তানের পেশাওয়ারে জঙ্গিদের হাতে ১৪৫ জন স্কুল ছাত্র নিহত হলে নেওয়াজ শরিফ তাৎক্ষণিক হুকুম দেয় যে সকল মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি কারাগারে আছে দ্রুততম সময়ে তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে । প্রতিদিন কমপক্ষে দশজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হচ্ছে । আরো ৫০০ জন লাইনে আছে । সম্প্রতি নেওয়াজ শরিফ দ্রুত সামারিক আদলেত জঙ্গিদের সাজা দেয়ার একটি ধারা সংবিধানে অন্তভর্fক্ত করেছেন । বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেওয়াজ শরিফের চেয়ে রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশী শক্তিশালী । তাঁর কাছেতো দেশের মানুষ জামায়াত-বিএনপিfর জঙ্গিদের ব্যাপারে আরো বেশী কঠোর অবস্থান আশা করতেই পারে । দেশের সাধারণ মানুষ এতই বিরক্ত যে এখন তাদের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন পেট্রোল বোমা মারতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের যে সকল দুর্বৃত্ত জনতার হাতে ধরা পরে গণপিটুনির শিকার হচ্ছে তাদের পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে যেন তাদেরও পেট্রোলের আগুনে পোড়ানো হয় । এটি নিঃসন্দেহে একটি সমর্থনযোগ্য পরামর্শ হতে পারে না কিন্তু সাধারণ মানুষের ধৈর্য্যেরওতো একটা সীমা আছে । সেই সীমার বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তখন অনেকের জন্যই তা বিপদের কারণ হতে পারে ।
পলাতক অবস্থান হতে ভিডিও অথবা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির সংষ্কৃতিটা চালু করেছিল ভারতের নকশালরা । পরবর্তিকালে একই আদলে তা করা শুরু করে আল-কায়দার ওসামা বিন লাদেন ।এগুলির সব গুলিই আ-ারগ্রাউন্ড দল । বাংলাদেশে এই অপকর্মটির অভিষেক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিfর যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনের হাত ধরে । তখন তাকে বলা হতো বিএনপিfর বিন লাদেন । সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত আর এক যুগ্ম মহাসচিব রুহুল রিজভি এই ভfমিকায় ছিলেন। তাকে আটক করার পর সালাহউদ্দিন আহমদ আবার এই কাজটি শুরু করেছেন । বেগম জিয়ার নামে আবার তার দপ্তর কাম রেসিডেন্স হতে এখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়াও শুরু হয়েছে । বিএনপি বর্তমানে অনেকটা একটি আ-ারগ্রাউন্ড দলে পরিণত হচ্ছে । সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন সরকার কেন সকল অপশক্তি দমনের জন্য তাদের হাতে থাকা সব গুলি অস্ত্র ব্যবহার করছে না ? যারা এইসব চরম দেশ বিনাশী কর্মকান্ডগুলি করছে তাদের পিছনেতো কোন জনসম্পৃক্ততা নেই । সরকার ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের ধারা মনে করিয়ে দিয়েছে পেট্রোল বোমা ছুঁড়লে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড । সাধারণ মানুষ এর প্রয়োগ দেখতে চায় । আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপি দেশে যে চরম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছে তা কঠোর হস্তে দমন না করলে মানুষ তাকে সরকারের দূর্বলতা বলে মনে করবে । বাস্তবে সরকারতো কোন অবস্থাতেই দূর্বল নয় । কfদিন আগে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য মারা গেলেন । কোন মিডিয়াকে তা নিয়ে আহাজারি করতে শুনি না । কিন্তু যখন পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে পালানোর সময় শিবির-ছাত্রদলের দুজন দূবৃর্ত্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হলো তখন এক শ্রেণীর মিডিয়া রীতিমতো গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করলো ওরা দুfজন শিবির আর ছাত্রদলের কর্মী ছিল না এবং তারা নাশকতার সাথে জড়িত ছিল তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি । পুলিশকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে জনগণের জান মালের হেফাজত করার জন্য, তা দিয়ে একতারা বাজানোর জন্য নয় । তারা যদি কখনো মনে করে জনগণের জানমাল নিরাপত্তার হুমকীর সম্মূখীন তা হলে সেই অস্ত্র ব্যবহার করা তাদের আইনি দায়িত্ব । একই ভাবে যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র আছে তারা যদি তাদের সাথে সেই অস্ত্র বহণ করেন আর কখনো দেখে তাদের জীবন অথবা সম্পদ নিরাপত্তার হুমকির সম্মূখীন হচ্ছে তা হলে তা তিনি আইনগত ভাবে ব্যবহার করতে পারেন । গাড়ী পোড়ানো আর পেট্রোল বোমা মারা অব্যাহত থাকলে বৈধ অস্ত্রধারিরা তাদের অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় বের হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । জিমি কার্টার যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তখন একবার ইউনিয়ন ভূক্ত ট্রাক ড্রাইভাররা তাদের বেশ কিছু দাবি দাওয়া পূরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরার উপক্রম হলো । ইউনিয়ন বহির্ভূত ট্রাক ড্রাইভাররা সিদ্ধান্ত নিল তারা তাদের ট্রাক চালাবে । শুরুতে তারা ধর্মঘটি ড্রাইভারদের দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা দাবি জানালো তাদের বৈধ অস্ত্র বহন করার সুযোগ দেয়া হোক । কার্টার এই প্রসঙ্গে একটি নির্বাহী আদেশ দিলেন এবং দেখা গেল ইউনিয়ন বহির্ভূত ড্রাইভাররা তাদের পাশে একে-৪৭ রাইফেল রেখে দিব্যি ট্রাক চালাচ্ছে । এক সপ্তাহের মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার । সরকারকে কখনো কখনো জনস্বার্থে তার শক্তি ও সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হয় । জঙ্গিদের হাত সরকারের হাত হতে লম্বা হতে পারে না ।
কোন কোন তামাদি রাজনীতিবিদ প্রায়শঃ বলে থাকেন শেখ হাসিনা যদি শান্তি বাহিনীর সাথে সংলাপ করতে পরেন তা হলে বিএনপিfর সাথে সংলাপে বসতে দোষ কোথায় ? কথাটা ঠিক । কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শান্তিবাহিনী একটি ঘোষিত বিচ্ছিন্নতাবাদি জঙ্গি সংগঠন ছিল এবং কোন সন্ত্রাসি কর্ম করলে তার দায় দায়িত্ব শিকার করতো । বিএনপি যদি ঘোষণা দেয় তারাও শান্তি বাহিনীর অনুরূপ সংগঠন তাহলে সরকার চাইলে তাদের সাথে সংলাপ করতে পারে । তারা বলুক তাদের এই সব চলমান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের সাথে একিভূত করার জন্য । তা হলেতো অনেক সমস্যাই চুকে যায় । কিন্তু বিএনপি নেত্রীতো বলেন তাদের eআন্দালনf শান্তিপূর্ণ ! বিএনপি আর তাদের মিত্ররা বলছে তাদের এই fআন্দোলনf গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের জন্য । এই গুলি শ্রেফ ধাপ্পাবাজি । তাদের প্রধান উদ্দেশ্য বেগম জিয়া আর তারেক রহমানকে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলা হতে বাঁচানো । আর জামায়াতের উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত তাদের বারজন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করা । কোন এক যাদুমন্ত্র বলে যদি আজ বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বনে যান তা হলে তিনি পর দিন এই দুটি কাজই প্রথম করবেন । তাদের গণতন্ত্রের নমুনা দেশের মানুষ তাদের পূর্বের দুfমেয়াদে দেখেছে । জনগনের কাছে বড় প্রশ্ন সরকার এখনো কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছেনা ? অনেকের মতে বিএনপি বর্তমানে জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের দলকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে হয়ত এক সময় এই দলটিও একটি নিষিদ্ধ সংগঠরে রূপান্তরিত হবে । সব শেষে সরকারের কাছে একমাত্র দাবি যে কোন মূল্যে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করুন । অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভর জয় অবশ্যম্ভাবী । সরকারকে বুঝতে হবে বিএনপি নিজেই নিজের সমাধি রচনা করেছে । এর জন্য মূলতঃ মাতা পূত্রই দায়ী । দলে বেশ কিছু বিবেকবান মানুষ আছেন । অসৎ সঙ্গে তাদেরও সর্বনাশ হয়ে গেছে ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]