প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

জ্বলছে মানুষ পুড়ছে দেশ গর্জে ওঠো বাংলাদেশ
@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

সকালে সব কটা পত্রিকা হাতে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । আড়াই বছর বয়সের সাফির জামায়াত-বিএনপি জোটের দূর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কাতরাচ্ছে । সাফিরের বাবা মা উভয়ই চিকিৎসক । গত রোবরার রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষঢ়ায় তাদের পরিবহণ বাসে দূর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে বাসের দশজন আরোহী গুরুতর ভাবে অগ্নিদগ্ধ হয় যাদের মধ্যে সাফিরতো আছেই আরো আছে তার চিকিৎসক বাবা মা । এই মুহূর্তে সাফিরের চিকিৎসক বাবা মাও তাদের স্নেহের সন্তানের জন্য কিছু করতে পারছেন না । সন্তানের অবস্থা দেখে তারা উভয়ই হতবিহ্বল । সাফিরকে ঘিরে তাঁদের অনেক স্বপ্ন ছিল । হয়তোবা সব নিভে গেছে । শুধু একজন সাফিরের ছবি দেখেই দেশের মানুষ সকালে বাকরুদ্ধ হন না । প্রতিদিন আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপিfর সৃষ্ট ভয়াবহ সন্ত্রাসের কারণে অনেক সাফিরের জন্ম হচ্ছে । অনেক মা-বাবাই বাকরুদ্ধ হন । ফুটফুটে কিশোরী সাথী আক্তার আর যুথি আক্তার কলেজে ক্লাস করে বাসে তাদের বাসায় ফিরছিল । সংসদ ভবনের কাছে খেজুর বাগান এলাকায় তাদের বাস পৌঁছালে তাদের চলন্ত বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছুঁড়লে তারা দুজনই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে কাতরাচ্ছে ।

প্রতিদিন টেলিভিশন খুললেই চলমান সন্ত্রাস নিয়ে সকলে যার যার অবস্থান হতে কথা বলেন । একদল এই সন্ত্রাসকে যায়েজ করার চেষ্টা করেন এই বলে বর্তমানে বিরোধী দলের একটি আন্দোলন চলছে সুতরাং যারা এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন তাদেরতো কিছু অসুবিধা হতেই পারে! একটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলন করার অধিকার আছে কিন্তু তাই বলে তাদের আন্দোলনে সমর্থন আদায় করার জন্য পুড়িয়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধ, সাধারণ মানুষ, অন্তসত্ত্বা মহিলা, অথবা একজন দৃষ্টিহীন বৃদ্ধার একমাত্র কর্মক্ষম পুত্রটাকে একেবারে পুড়িয়ে মারতে হবে ? যার ডাকে দেশের বিরুদ্ধে এই নতুন উদ্যোমে যুদ্ধ সেই বেগম জিয়া হতে পারেন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী অথবা দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের প্রধান কিন্তু সব শেষে তার বড় পরিচয়তো তিনি দুই সন্তানের একজন জননী । তারও একজন কন্যা থাকতে পারতো । তিনি কী কখনো ভেবেছেন তার সন্তানরা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হলে তখন তার অনুভূতিটা কেমন হতো ? বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতার সন্তান পরিবার পরিজন আছেন । এদের বেশীর ভাগই তেমন কোন রাজনীতি করেন না । চলার পথে তাদের গাড়ীতে যদি অগ্নি সংযোগ করা হয় অথবা তাদের উপর কেউ যদি পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন হবে ? জানতে ইচ্ছা করে । এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের গাড়ীতে গুলি ছোঁড়া হলো । তিনি বেগম জিয়ার অফিস হতে ফিরছিলেন । এটি তার কাছের মানুষ ছাড়া অন্য লোকের পক্ষে তেমন জানা থাকার কথা না । আট থেকে দশজন দুর্বৃত্ত এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে । গাড়ীতে গুলি ছুঁড়লে রিয়াজ রহমানের দেহের উপরের অংশে লাগার কথা । ভাগ্যক্রমে কী ভাবে যেন তা নীচের অংশে লেগেছে । তিনি দ্রুত গাড়ী হতে বের হয়ে গড়িয়ে রাস্তা পার হলেন । দুর্বৃত্তরা ইচ্ছা করলে তার আরও বড় ক্ষতিও করতে পারতো । করে নি । পুরো ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় । পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে । এই হামলার রহস্য উন্মোচন হওয়া উচিৎ । রিয়াজ রহমান পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের একজন জাঁদরেল অফিসার ছিলেন । ছিলেন একাত্তরে দিল্লি হাইকমিশনে কর্মরত । একাত্তরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানি দূতাবাসের বাঙালি অফিসাররা পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছেন । ১৯৭১ সালের ৩০ জুন গোপনে তিনি দিল্লি ছেড়ে করাচি চলে গেলেন । পরদিন পাকিস্তানের প্রত্যেকটি সংবাদপত্রে প্রথম পৃষ্টায় এই সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয় । একজন eদেশ প্রেমিকf পাকিস্তানি অফিসার কীভাবে eদেশদ্রোহীদেরf কব্জা হতে কৌশলে নিজ দেশে ফিরে এসেছেন । বিশ্বাস করতেন ২৫-২৬ মার্চের রাতে বাংলাদেশে দুfহাজারের বেশী মানুষকে পাকিস্তান সেনা বাহিনী হত্যা করে নি । বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) এর সাবেক মহাপরিচালক জেনারেল খলিলুর রহমান তার একাত্তরের স্মৃতি গ্রন্থে এই সব ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন । বঙ্গবন্ধুর বদান্যতায় পাকিস্তান হতে ফিরে এসে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন । অবসরে যাওয়ার পর বিএনপিfর রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পরেন । তারপরও তার উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার চাই। কোথা হতে তারা এসেছিল ? কী বা তাদের উদ্দেশ্য ? ক্ষমতার লড়াইয়ে কেউই অপরিহার্য নয় । বেগম জিয়া তার দপ্তরে এখনো অবস্থান করছেন বলে তা চিন্তার কারণ । বাদশাহ আওরঙ্গজেব দিল্লির মসনদ দখল করার জন্য তার ভাইদের হত্যা করে তাঁর পিতা বাদশাহ শাহজাহানকে আগ্রার দূর্গে ৮ বছর বন্দী করে রেখেছিলেন । শাহজাহানের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা জাহানারা দাবি করেছিলেন যেন তাঁর পিতাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় । আওরঙ্গজেব তা নাকোচ করে দিয়েছিলেন এবং শাহজাহানকে নৌপথে যমুনা নদী দিয়ে এনে তাজমহলে অনৈকটা গোপনে দাফন করা হয় । পাকিস্তানের বেনজির ভূট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারিতো তার স্ত্রীকেই ক্ষমতার জন্য হত্যা করেছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন । ক্ষমতার লোভ যখন মুখ্য হয়ে উঠে তখন চোখের সামনে সব কিছুই গৌণ হয়ে পরে । বেগম জিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা হয়তো এই মুহূর্তে কল্পনা করা সম্ভব নয় ।
দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার এবারের যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল eগণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পূনরুদ্ধারেরf নামে গত ৫ জানুয়ারি । এদিন তারা সমাবেশও ডেকেছিল । সরকার আগে হতেই ঘোষণা দিয়েছিল তারা এই দিনটি সংবিধান রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করবে । একই দিনে দুটি বিপরীত মুখি এজেন্ডা নিয়ে দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল সমাবেশ আহ্বান করলে সংঘাতের সম্ভাবনা থেকেই যায় । পুলিশ প্রশাসন এদিন ঢাকায় সকল ধরণের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে । অনেকে বলেন এদিন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল । কথাটা ঠিক নয় । পুলিশ প্রশাসন তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে । বেগম জিয়া যেন ওই দিন কোন সমাবেশ করার চেষ্টা করে কোন ধরণের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য তারা তার অফিসের সামনে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে । তিনি ৫ তারিখ বের হয়ে ঘোষণা দেন অবরোধ চলছে, চলবে । অথচ তখন কোন অবরোধ কর্মসূচীই ছিলনা । তার জেষ্ঠ্য সন্তান তারেক রহমান লন্ডন হতে বার্তা পাঠিয়েছেন ঢাকাকে সারা দেশ হতে বিচ্ছিন্ন করতে হবে । প্রত্যেক এলাকাকে অন্য এলাকা হতে আলাদা কওে ফেলতে হবে । শান্তিপূর্ণ উপায়ে এমন একটি কান্ড করা সম্ভব নয় । একমাত্র ভরসা জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র শিবির । তাদের অনেকেই নিয়মিত আফগানিস্তান যান প্রশিক্ষণ নিতে । পূর্ব ভারতের জঙ্গিগোষ্ঠির সাথে তাদের যোগাযোগ এখন ওপেন সিক্রেট । বেগম জিয়া আর তারেক রহমান দেশে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সকল প্রকারের নাশকতা করার হুকুম দিয়ে তাদের মাঠে ছেড়ে দিলেন । এখন এই নাশকতার মূল্য দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ যাদের মধ্যে শিশু সাফিরও রয়েছে । বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন যাদের মধ্যে সাধারণ যাত্রী ১১ জন আর পরিবহন শ্রমিক ১১ জন । তাদের সাথে ৭ জন আছে রাজনৈতিক কর্মী । ৩১ জনের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ১৫ জন । যানবাহন পুড়েছে ৫৭৫টি আর ভাঙচুর করা হয়েছে ৩৭৯৫ টি । চার দফা রেলে নাশকতা চালানো হয়েছে । শিবিরের উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘাতকরা বর্তমানে রাজধানীতে অবস্থান নিয়েছে বলে সংবাদ পত্র খবর দিচ্ছে ।

বেগম জিয়ার অফিস হতে সকল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে তুলে নেয়া হয়েছে । তিনি ইচ্ছা করলে বাড়ি যেতে পারেন। ধনুর্ভাঙ্গা পণ করেছেন তিনি তার দফতরেই থাকবেন। এটি তার ইচ্ছা । সাধারণত আদি কমিউনিষ্টরা এমন ধারার জীবনযাপন করতেন । তিনি সাংবাদিকদের ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাড়ি ফিরবেন না । তার দাবি বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ সংসদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে । মুস্কিল হচ্ছে তা সাংবিধানিক ভাবে সম্ভব নয় । ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে শেখ হাসিনা আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন eআসুন আমরা সব দল মিলে একটি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে অন্তবর্তিকালিন সরকার গঠন করি । তা করলে সংবিধানের বাধ্যবাদকতা রক্ষা হবে এবং প্রয়োজনে আর একটি সংসদ নির্বাচন করা যাবে ।f বেগম জিয়া শেখ হাসিনার সেই আহ্বানে পাত্তাতো দিলেনই না উল্টো বললেন তারা নির্বাচনেতো যাবেনই না, এই নির্বাচনকে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করবেন । তার সেই কর্মসূচীতে ১৪৮ জন মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন । ধ্বংস হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ । বেগম জিয়া নির্বাচনে না আসাতে শেখ হাসিনার সেই বক্তব্যের আর কোন যৌক্তিকতাতো নেই । অনেকে টিভি টকশো আর তাদের লেখালেখিতে বলেন শেখ হাসিনার সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতার নির্বাচনতো হলো তাহলে এখন একটি মধ্যবর্তি নির্বাচন দিতে বাঁধা কোথায় ? শেখ হাসিনার ঘোষণাতো শর্ত যুক্ত ছিল । যদি বেগম জিয়া নির্বাচনে আসেন । তিনিতো আসেন নি । সুতরাং যারা টিভিতে বলেন অথবা লেখেন তারা খন্ডিত বক্তব্য তুলে ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন । নির্বাচন কখন হবে তা সরকারের উপর নির্ভর করে । স্বাভাবিক নিয়মে তা ২০১৯ সালে হওয়ার কথা । বেগম জিয়া ও তার দল নিয়মিত অভিযোগ করেন সরকার তাদের নিয়মতান্ত্রিক ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছে না । কিন্তু বাস্তবতা হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুরো এক বছর ২০ দলীয় জোট সভা-সমাবেশ সহ সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড অবাধে পরিচালনা করেছে । ২০ দলীয় জোটের বড় দল হিসেবে বছর জুড়ে শুধুমাত্র বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন সমূহ এককভাবে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচী (গড়ে প্রতিমাসে নয়টি) পালন করেছে । জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন ব্যানারে সমাবেশ করেছে । এই একবছরে বেগম জিয়া ঢাকা সহ সারাদেশে ১২টি মহাসমাবেশে এবং পেশাজীবী ও অন্যান্য সংগঠনের ৪টি বৃহৎ সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন । শান্তি শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে এই কারণে প্রশাসন চারটি সভার অনুমতি দেয় নি অথবা বাতিল করেছে । একবছরে বেগম জিয়ার আর কত সুযোগ প্রয়োজন ? বেগম জিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন দেশে যে এখন ভয়াবহ সন্ত্রাস চলছে তা নাকি সরকার করছে । দেশের মানুষকে এত বোকা ভাবা দূঃখজনক । বুধবার ঢাকায় দুই বোমা কারখানার খোঁজ পেয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । একটির মালিক ছাত্র শিবির অন্যটি ছাত্রদলের মালিকানাধীন । ছাত্রদলের কারখানায় বিষ্ফোরণ ঘটলে মূল কারিগর বাপ্পির কব্জির একাংশ উড়ে গেছে । আহত হয়েছে আরো তিনজন, যাদের একজন আবার শিশু । বৃহষ্পতিবার বাপ্পি মারা গেল । চট্টগ্রামের শিবিরের কারখানায়ও এমন কান্ড ঘটেছে । কী বলবেন বেগম জিয়া ?

১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি যখন বেগম জিয়া এক তরফা নির্বাচন করেছিলেন তখন বাংলাদেশের সব কটি রাজনৈতিক দল তা বর্জন করেছিল । এমন কী তাদের মিত্র জামায়াতও । অংশ নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি । দশম সংসদ নির্বাচনতো বিএনপি ছাড়া যারা বর্জন করেছে তাদের প্রায় সবগুলিই ওয়ানম্যান পার্টি, অনেকে বলেন হোন্ডা পার্টি । কর্ণেল অলি ছাড়া নির্বাচনে বাকিদের জামানত থাকবে তেমন কোন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না । আর এখন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তারা তো নির্বাচনই করতে পারবে না । গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন টান্দোলন সব বাজে কথা । আসলে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা হতে বাঁচানো কারণ এই মামলাটি বেগম জিয়ার জন্য খুবই দূর্বল । জামায়াতের যুদ্ধে সামিল হওয়ার কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল হতে তাদের নেতাদের বাঁচানো । কেউ কেউ বলেন বিএনপি একটি মধ্যবর্তি নির্বাচনে জিতলে দেশে এমন কী লঙ্কাকান্ড ঘটবে ? স্বাভাবিক নিয়মে কথাটি সত্য । কিন্তু তারা কী ভুলে গেছেন ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তি সময়ের কথা ? দেশে যে হাবিয়া দোজখ নেমে এসেছিল তা এত দ্রুত ভুলে গেলে কী ভাবে চলবে ? সেই ভয়ঙ্কর সময়ে দেশ হতে কয়েক হাজার মানুষ বিতাড়িত হয়েছিলেন। পূর্ণিমার কথা মনে না থাকলেতো পাপ হবে । ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়াতো উচিত নয় । শাহ এসএমএস কিবরিয়া অথবা আহসানউল্লাহ মাষ্টারের হত্যাকান্ড কী এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন ? দুfএকজন মিহি গলায় বলার চেষ্টা করছেন মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিএনপিeর যদি বিজয় ঘটে তা হলে তাদের পরবর্তি কর্মসূচী কী হবে তাতো তারা এখনো পরিষ্কার করে বলে নি । নাদান আর কাকে বলে । প্রথমে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলা উঠবে তারপর জামায়াতের সব নেতা মুক্ত হয়ে গাড়ীতে পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াবেন । দেশ অবার জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হবে । এখানে রাখ ঢাকের তো কিছু নেই । বেগম জিয়াতো ইতোমধ্যে বলেই দিয়েছেন এরা সকলে রাজনৈতিক বন্দী । আর একদল সুশীল আছেন । এরা তামাদি রাজনৈতিক নেতা । অনেকে আবার নিজ দলে পরিত্যক্ত, একেবারে এতিম । কেউ কেউ মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন । বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এদের কোন লাভ নেই । নির্বাচনে দাঁড়ালে জামানত বাঁচানো অসম্ভব । লাভ একটাই । শেখ হাসিনাকে ফেলে দেয়া গেল । এদের কেউ কেউ আবার দেশে ও বিদেশে সার্বক্ষণিক গুজব ছড়াতে ব্যস্ত। শেখ হাসিনা সরকার পড়ে গেলো বলে। তাহলে কে আসছে ক্ষমতায় ? তৃতীয় শক্তি আর কী । খুলে বলেন না সেনা বাহিনী । বৃটেনের হাউস অব কমন্স তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে বেগম জিয়াও তাই চান, তবে তা এখন আর সম্ভব নয় । বাংলাদেশের সেনা বাহিনীকে এত বোকা ভাবার কোন কারণতো খুঁজে পাই না । আর একদলের আশা দেশে আর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে । তাতে উপদেষ্টা হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল । কেউ কেউ ত্রি-পিস স্যুটও নাকি বানাতে দিয়েছেন । ঠিক করে রেখেছেন বঙ্গভবনে যাওয়ার সময় নিজ স্ত্রী কোন শাড়িটা পরবেন । এমন সব পরিকল্পনা চলছে । একজন সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য একটি টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দলটির নব্বই ভাগ নেতা কর্মী নাকি সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য প্রস্তুত । শেখ হাসিনা এই সব অর্বাচীনদের কেন যে রাস্তা হতে তুলে এনে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন আল্লাহ্ মালুম ।
যুদ্ধের ময়দানে কমান্ডাররা কমান্ড পোষ্টে অবস্থান করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন । বেগম জিয়া সম্ভবত এই যাত্রায় দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছেন তা তিনি আরো কিছুদিন তার গুলশানস্থ অফিস থেকে পরিচালনা করবেন । আরো অনেক সাফিরকে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে । দেশ আর জনগণ গোল্লায় যাক বেগম জিয়ার ক্ষমতা চাই । তার দল এবং জোটের নতুন শ্লোগান হোক eচলুন আমরা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত বিধৌত বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাইf । এমন অবস্থা হতে যদি পরিত্রাণ পেতে হয় তা হলে দেশের মানুষকেই গর্জে উঠতে হবে, যেমনটি ১৯৭১fএ উঠেছিল । দেশে এখন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে । এতে পরাজিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই । এই সবের মধ্যে দুটি ভাল খবর । বিএনপিfর স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল (অবঃ) বার্ণ ইউনিটে গিয়েছিলেন । অবস্থা দেখে বেদনাহত হয়েছেন । সম্ভবত এটি তাঁর মানবিক গুণ । তাঁকে ধন্যবাদ । বেগম জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার মাহবুব বৃহষ্পতিবার eযদি কিন্তুf বলে শান্তির কথা বলেছেন । তবুও ভাল । আল্লাহ্ বেগম জিয়াকে হেদায়াত করুক।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]