প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত আপনার বিজয়ও আপনার


আবদুল মান্নান
 


 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই লেখাটি লিখছি বাংলাদেশে হতে হাজার মাইল দূর ফিনল্যান্ডের ইবাস্কুলা শহরের একটি হোটেলের কক্ষে বসে । পেশাগত কাজে ক’দিন হয় এখানে এসেছি । এখন এখানে শরৎকাল আসি আসি করছে । দিনের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । রাতে তা ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে । অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ হতে বরফ পরা শুরু হবে বলে অনেকের ধারণা । তখন এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে যায় । দিনের তাপমাত্রাও মাইনাস ত্রিশ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে । তবে বর্তমান সময়ে এই দেশের আবহাওয়া অসাধারণ সুন্দর । এখনো পাতা ঝরা শুরু হয় নি । আজ সারাদিন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এখানকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে । সকলের কাছে বলার চেষ্টা করেছি আপনার সরকারের সময় শিক্ষা খাতের অগ্রগতির কথা । তারা বেশ প্রশংসাই করলো, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় আপনার আমলে যে বিপ্লব ঘটেছে তা শুনে । তবে মনটা পরে ছিল দেশে কারণ যখন দেশ ছাড়ি তখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন কমিশন জনিত ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে ছিল । একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবার এই বেতন কমিশনের প্রধান ডঃ ফরাসউদ্দিনকে শিক্ষকদের শত্রু ঘোষণা করেছেন, যা কখনো তিনি ছিলেন বলে মনে হয় না । এই ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তার সাথে আলাপ করলে তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন তার কমিশন বেতনের ষোলটি কাঠামো বা ধাপ সুপারিশ করেছিলেন । তারা কে কোন ধাপে থাকবেন তা বলেন নি কারণ তা তাদের টার্মস অফ রেফারেন্স ছিল না । পরে সচিব কমিটি তার উপর আরো চার ধাপ যোগ করে পুরো বিষয়টাকে জটিল করে তুলেছেন এবং শিক্ষকদের আপনার বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছেন যার কোন প্রয়োজন ছিল না । বিদেশে আসার পর থেকে আমার সুহৃদরা আমাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ বিরক্ত হয়ে বলার চেষ্টা করেছেন আমি কেন বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখছিনা বা বলছিনা । তাদের শুধু এটাই বলেছি আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই এই সব সমস্যা সমাধানের শেষ ভরসা । তাঁর উপর সকলকে ভরষা রাখতে হবে । কারণ অতীতে দেখা গেছে কোন একটি সংকট কালে যখন আপনার কাছের মানুষগুলো হতবিহ্বল হয়ে যান তখন সকলেই আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকেন । এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না । আজ স্থানীয় সময় বেলা চারটার কিছু পর হোটেলে ফিরে সামাজিক যোগাযগো মাধ্যমে দুটি সংবাদ পড়ে বেশ আনন্দিত ও স্বস্তি পেলাম । প্রথম সংবাদটি ছিল জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আপনার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আপনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ পুরষ্কারে ভূষিত করা । আপনার এই অর্জনে বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয় গর্বিত । এই পুরষ্কার পাওয়ার জন্য আপনাকে টুপি খোলা অভিনন্দন ।
দ্বিতীয় সংবাদটি ছিল সোমবার আপনার কেবিনেট সভার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর আরোপিত ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা । বিষয়টি কেবিনেট সভার বিচার্য বিষয় না হলেও এই বিষয়ে আপনি ও অর্থমন্ত্রী আগের দিন কথা বলেছেন । কেবিনেট সভার পর প্রত্যাশিত সং!বাদটি এনবিআর ঘোষণা করেছে । এই বিষয়টি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ও এই ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য তাদের সড়ক অবরোধ ও তার ফলে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম ভাবে বিঘিœত হওয়া ছিল টক আব দি টাউন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে । প্রথম দিন বাড্ডা থানার পুলিশ রামপুরা এলাকায় অবরোধকারীদের উপর রাবার বুলেট ও সাটার গান দিয়ে গুলি চালালে দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইষ্ট-ওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাশফিকুর রহমান বেশ গুরুতর ভাবে আহত হন। মাশফিক সড়ক হতে ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে সামনের সড়কে গিয়েছিল । মাশফিক আমার সরাসরি ছাত্র । ফোনে তার সাথে আলাপ করে জানলাম তার শরীরে ছড়্ড়া গুলির আটটি পিলেট লেগেছে যা তার শরীরে আজীবন থাকবে এবং এক সময় তা তাকে বেশ ভোগাবে । পুলিশ এত উত্তেজিত অবস্থায় থাকলেতো তাদের পেশাদারিত্ব নিয়ে মানুষের মনে শংকা থেকে যাবে এবং তারা নিজেরা সংকট তৈরী করবে । রামপুরের ঘটনা পুরো বিষয়টাকে উসকে দেয় এবং তার ফায়দা লুটার চেষ্টা করে আপনার প্রতিপক্ষ । আমার আগের একটি লেখায় বলেছি এই মুহূর্তে আপনার সামনে রাস্তার বিরোধী দলের তেমন কোন চ্যালেঞ্জ নেই । বলেছিলাম চ্যালেঞ্জ যা হবে তা ভিতর হতেই তৈরী হবে আপনাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য । ক’দিনের ঘটনা প্রমাণিত হলো আমার মতো অনেকেরই আশংকা সত্য প্রমাণিত হওয়া শুরু হয়েছে । আপানার মন্ত্রী সভায় যে’কজন সজ্জন ও সৎ মন্ত্রী আছেন তার মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিঃসন্দেহে একজন । কিন্তু তিনি মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলেন বা কাজ করেন যা আপনার সরকারকে অবস্য বিব্রত করে । আপনি অর্থমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেন এটি সকলে জানেন । সেই কারণেই তার কাছ হতে মানুষ আরো বাস্তবমূখী ও সংযত আচরণ আশা করেন । শিক্ষার উপর ভ্যাট বিশ্বে কোথাও চালু নেই । বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলি এমনিতে সরকারকে পনের শতাংশ আয়কর দেয় । তারা সকল সেবা বাণিজ্যিক মূল্যে ক্রয় করে । এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে আবার সার্টিফিকেট ব্যবসা করছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে বলে যেমন অভিযোগ আছে আবার অন্যদিকে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে গুনগত মানের দিক দিয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই । বিশ্বের কোন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ভাগ করা হয় না । জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান ধারণ ও জ্ঞান বিতরণের ব্যবস্থা যে বিদ্যালয়ে আছে সেটি দাবি করতে পারে তারা এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় । অন্যান্য পুরানো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এই দাবি করতে পারে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৯৪ পার হলো। আর বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সতো সবে মাত্র তেইশ পার হলো । যে গুলি ভাল করছে তাদের আরো কিছু সময়তো দিতে হবে । যুক্তরাষ্ট্রের সকল সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত । নিশ্চয় সকলে লক্ষ্য করেছেন সপ্তাহ খানেক ধরে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল তারা কোথাও একটি ঢিলও ছোড়েনি বা একটা রিক্সাও ভাঙচুর করে নি । এদের কাছ হতে অন্যদের শেখার অনেক কিছু যে আছে তা সাধারণ জনগণ নিশ্চয় স্বীকার করবেন ।
অনেকের ধারণা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কেবল ধনির দুলালরা পড়ে । এই ধারণা সম্পূর্ণ ভূল । ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে বলতে পারি পড়–য়াদের দুই তৃতীয়াংশ মধ্যভিত্ত বা নি¤œ মধ্যভিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের অনেকেই কল সেন্টার, কফি শপ অথবা টিউশনি করে পড়া লেখার খরচ চালায় । বেশ ক’জন ছাত্রীকে জানি যারা বাড়ীতে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে । জমি বিক্রয় করে পড়া লেখার খরচ চালায় তেমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয় । আমার পূর্বের এক কর্মস্থলে একজন কাঠ মিস্ত্রির ছেলে পড়তো । তাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল । সে এখন একটি বড় প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনের চাকুরি করে । আর যারা উচ্চবিত্ত পরিবার হতে এসেছে তাদের অভিভাবকরাতো আয়কর দিচ্ছেন এবং সেই আয়করের একটা অংশ যাচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষার্থীরা অনেকটা বিনা পয়সায় পড়া লেখা করে । সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতো জনগনের অর্থেই চলে । বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন থাকতো আর সেশনজট মুক্ত রাখা যেত তা হলে দেশে একটিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন হতো না । উচ্চ শিক্ষার এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভাল মানের শিক্ষকের অভাব । এটি রাতারাতি পূরণ হওয়ার নয় । ফিনল্যান্ডে একজন আমলার বেতনের চেয়ে একজন স্কুল শিক্ষকের বেতন অনেক বেশী । এই দেশে এটি স্বীকৃত যে, ভাল শিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ভাল আমলাই শুধু নয় কোন পেশায় ভাল ও দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করা সম্ভব নয় । এমন বাস্তবতাকে বিশ্বের সকল উন্নয়নশীল দেশ স্বীকার করে নিয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশ কিছুটা তার ব্যতিক্রম ।
প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন ভ্যাট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই সব শিক্ষার্থীই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা অভিনন্দন জানিয়েছে । এরাইতো আগামী দিনে আপনার শক্তি । ঠিক একই ভাবে যে বেতন কাঠামো নিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করছে তাদের নেতা নেত্রীরা সকলেই আপনাকে ভালবাসে । এক এগারর পর এদের অনেকেই আপনার জন্য জান বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসেছিলেন, কেউ কেউ দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন । ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন জামায়াত-বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারা শুরু করলো তখন এই শিক্ষক ও ছাত্ররা কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে ক্লাসে গিয়েছেন । এই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাড়ীতে তস্কররা হাত বোমা ছুঁড়ে বেশ ক’জন শিক্ষককে গুরুতর ভাবে আহত করে । কিন্তু তাতে তারা দমে জান নি । কোন একটি গোষ্ঠীর অপরিণামদর্শী পরামর্শ শুনে আপনার এই কাছের মানুষ গুলিকে কেন আপনার কাছ হতে দূরে চলে যেতে বাধ্য করবেন ? এরাতো আপনারই লোক। তারাতো এমন কিছুই দাবি করেন নি যার যৌক্তিকতা নেই । তারা আপনাকে কতটুকু ভালবাসে তা আপনি কতটুকু জানেন তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয় তবে আমি জানি তারা আপনাকে কতটুকু ভালবাসেন । এখনো প্রয়োজনে তারাই আপনার জন্য এক-এগারর মতো আবার রাস্তায় নামবেন । তারা একজন শেখ হাসিনার জন্য শুধু রাস্তায় নামবেন না তারা বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য রাস্তায় নামবেন । এখনো ঢিমে তালে তাদের আন্দোলন চলছে । তারা ঘোষণা করেছেন ঈদের পর তারা আন্দোলন আরো বেগবান করবেন । তারা আপনার আহ্বানের অপেক্ষায় আছেন । ক’দিন পর আপনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন । তার আগে কী আপনার এই শুভার্থীদের সাথে তাদের দাবি দাওয়্ ানিয়ে একটু বসা যায় ? দেখুন না একটু চিন্তা করে । লাভতো আপনারই । তারাই হয়তো আপনার সাথে বৈঠক করে বলবেন এই না হলে বঙ্গবন্ধু কন্যা । আপনার মঙ্গল কামনা করি ।

লেখক: গবেষক ও বিশ্লেষক । সেপ্টম্বর ১৫, ২০১৫ । ইবাস্কুলা, ফিনল্যান্ড ।

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]