প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

কেন এই দেশ ধ্বংসের রাজনীতি?
@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

সেলিম একটি এবড়ানো থেবড়ানো লক্কড় ঝক্কর মার্কা লেগুনা নামক আট সীটের হিউম্যান হলার চালায় । বয়স পঁয়ত্রিশ । অপুষ্টির কারণে কুড়ি-পঁচিশ মনে হয় । সেলিমের তিন আর সাত বছরের দুটি বাচ্চাও আছে । সাথে আছে তার স্ত্রী, মা আর দুfবোন । অনেকটা দিনে আনে দিনে খায় । সোমবার রাতে সেলিম তার লক্কড় ঝক্কর বাহনটি নিয়ে যাত্রীর খোঁজে বের হয়েছিল । আরো দুfএকটা ট্রিপ না মারলে তার যানটি কেনার জন্য ধারের টাকা দিয়ে বাকি যা থাকবে তাতে তার স্ত্রী হাসি আখতার চুলায় ভাত চড়াতে পারবেন না । খালি লেগুনাটা নিয়ে কমলাপুর আসলে দুfজন যাত্রীবেশী দূর্র্র্বৃত্ত পথ আটকে দাঁড়ায় । কিছু বুঝার আগেই তারা সেলিমের সামনের কাঁচের আয়নাটা ভেঙ্গে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় । তারপর সেলিমের আর্ত চিৎকার । সামনের দোকানদার কোন রকমে সেলিমের শরীরে লাগানো আগুন নেভাতে নেভাতে সেলিমের দেহের ৩৫ শতাংশ পুড়ে শেষ । মঙ্গলবারের ইংরেজী দৈনিক eঢাকা ট্রিবিউনe এর প্রথম পৃষ্ঠায় আগুনে ঝলসানো সেলিমের একটি ভয়াবহ ছবি ছেপেছে । লিখেছে সেলিমের সন্তানরাও এখন তাদের পিতাকে আর চিনতে পারছে না । এই নারকীয় সন্ত্রাস বেগম জিয়া আর তার মিত্রদের ডাকা আন্দোলনের নামে সৃষ্ট ভয়াবহ সন্ত্রাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ । দেশে প্রতিদিন অসংখ্য সেলিমের আর্ত চিৎকারে বাতাস ভারী হচ্ছে । দেশের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও তথাকথিত সামাজিক পরগাছা সুশীল বা নাগরিক সমাজের নেতা-নেত্রীদের কানে সেলিমদের আর্ত চিৎকার কখনো পৌঁছায় না কারণ তারা বর্তমানে বেগম জিয়ার মানবাধিকার নিয়ে চরম ব্যস্ত । মঙ্গলবারের আর একটি প্রথমসারির বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরাজি দৈনিক ডেইলি ষ্টার তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদে লিখেছে বেগম জিয়ার দেশ বিধ্বংসী eআন্দোলনf শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথম ৮ দিনে দেশে ১৩ জন সেলিমের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, কম পক্ষে ৬৭৬ জন নিরীহ মানুষ গুরুতর আহত হয়ে তাদের অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন । আগুনে পুড়ে ভষ্মীভূত হয়েছে ১৪৫ টি যানবাহন আর চার দফায় রেল লাইন তুলে ফেলা হয়েছে আর এর ফলে লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেন । একই দিনের দৈনিক প্রথম আলো খবর দিচ্ছে যাত্রী পরিবহণ খাতে ক্ষতি দৈনিক ৪৮ কোটি টাকা । বিজেএমইএ বলছে বেগম জিয়ার ডাকা অবরোধের কারণে তাদের দৈনিক সাত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয় । সব মিলে দেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ । বেগম জিয়া এই দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছেন কারণ তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ সহ অসাংবিধানিক উপায়ে একটি তথাকথিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চান ।
দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের অগাষ্ট মাস হতে শুরু করে নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী পর্যন্ত বেগম জিয়া একই নকশায় একটি দেশ বিধ্বংসী আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন । সেই আন্দোলন আরো বেশী ভয়াবহ ছিল । তখন ১৪৮ জনকে হত্যা করা হয় যার মধ্যে ৫৬ জন ছিল গাড়ীর চালক ও হেল্পার । এদের বেশীর ভাগই পেট্রোল বোমার শিকার । সেই যাত্রায় দূর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্য । বাদ যায়নি নির্বাচনের দিন কর্তব্য পালনরত প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতিবন্ধী শিশু, কাভার্ড ভ্যানে ঘুমন্ত বালক, অফিস ফেরত নারী আর হাসপাতাল ফেরত মুমূর্ষ রোগী । পোড়ানো হয়েছিল পাঁচ হাজার বাস আর ভাঙচুর আর আগুন দেয়া হয়েছিল দশ হাজার অন্যান্য যানবাহনে । সে বারের দাবি ছিল অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের । তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন যেহেতু সাংবিধানিক ভাবে তা সম্ভব নয় সেহেতু তিনি নির্বাচনকালিন একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালিন সরকার গঠন করবেন এবং সেখানে বিএনপি সহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারি সব দলের প্রতিনিধি থাকবে, আর বিএনপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ তাদের ইচ্ছামতো একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে পারে । সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতার কারণেই ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এই ব্যবস্থায় এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হলে পরবর্তিকালে সুবিধাজনক সময়ে আর একটি মধ্যবর্তি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারে । শেখ হাসিনার সেই প্রস্তাবও বেগম জিয়া ফিরিয়ে দেন অথবা তিনি ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন কারণ এখন বিএনপিfর রাজনীতি যত না বাংলাদেশ হতে নিয়ন্ত্রিত হয় তা চেয়ে বেশী নিয়ন্ত্রিত হয় লন্ডন হতে । ইদানিং বিভিন্ন সুধীজনরা টিভি টক-শো অথবা তাদের লেখালেখিতে বলেন শেখ হাসিনাতো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলেন তা হলে তিনি কেন একটি মধ্যবর্তি নির্বাচন দিচ্ছেন না ? তারা ভুলে যান শেখ হাসিনা কোন প্রেক্ষাপটে এমন একটি নির্বাচনের কথা বলেছিলেন । তাঁর আহ্বান অনুযায়ী বেগম জিয়াতো সেই নির্বাচনে অংশ নেন নি সুতরাং তাতো আর নিয়ম রক্ষার নির্বাচন থাকলো না । সেই নির্বাচনতো পাঁচ বছরের জন্য একটি সংসদ নির্বাচিত করেছে । সরকার প্রয়োজন মনে করলে মধ্যবর্তি নির্বাচন দিতেই পারে তবে তাতো হতে হবে সংবিধানের আওতায় ।
অনেকে প্রায়শঃ দুfদলের মধ্যে সংলাপের কথা বলেন । কিন্তু কথা হচ্ছে যে দলটি বর্তমানে সন্ত্রাস নির্ভর হয়ে পরেছে তাদের সাথে কী ভাবে সংলাপ হবে ? কfদিন আগে প্যারিসের একটি স্যাটাইয়ার ধর্মী পত্রিকায় হযরত মুহাম্মদকে (দঃ) নিয়ে একটি কার্টুন ছাপা হওয়ার কারণে জঙ্গিবাদিরা সেই পত্রিকার অফিসে ঢুকে বারজন সাংবাদিক হত্যা করলো । কেউ কিন্তু এই জঙ্গিদের সাথে সংলাপে বসার কথা বলে নি । দুfদিন পর ফরাসী পুলিস সেই জঙ্গিদের দুfজনকে গুলি করে হত্যা করে কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন ফ্রান্সে আইনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেয়ার আইন নেই । বিশ্বের কোন একটি মানবাধিকার সংস্থা এই ধরণের হত্যাকান্ডের নিন্দা করে নি । এর একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স টিভিতে একজন বিচারক, জুডসে জেনিন বেশ খোলা মেলা ও জোড়ালো ভাবে বললেন এমন সন্ত্রাসীদের একমাত্র বিচার তাদের হত্যা করা । আফ্রিকার ভয়ংকর জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী বোকো হারাম কfদিন আগে এক রাতে নাইজেরিয়ায় দুfহাজার শিশু ও মহিলাকে হত্যা করলো । তাদের সাথেতো কেউ সংলাপের কথা বলেন না । আল কায়দা প্রধান বিন লাদেনকে মার্কিন সেনারা হত্যা করে তার লাশ পর্যন্ত আরব সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে । তার সাথেতো কেউ সংলাপের কথা বলেন নি । সন্ত্রাসীদের সাথে তো কোন সংলাপ হতে পারে না । এটি ঠিক বিএনপিকে এই সব জঙ্গিদের সাথে এখনো তুলনা করা যাবে না । কিন্তু তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী জামায়াত-শিবির একটি ভয়ানক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । বর্তমানে দেশে যে ভয়াবহ সন্ত্রাস চলছে তার সিংহভাগই এই সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দ্বারা সৃষ্ট । মঙ্গলবার রাতে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলশানে সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হলেন । তার গাড়ি পুড়লো । এর কfদিন আগে বেগম জিয়ার আর এক উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিনের গাড়ীতে দূর্বৃত্তরা আগুন দিল । দুfটি ঘটনাই নিন্দনীয় । বেগম জিয়াও নিন্দা জানিয়েছেন এবং সাথে চব্বিশ ঘন্টার হরতালও দিয়েছেন । কিন্তু তাঁর ডাকা অবরোধের সময় সন্ত্রাসিরা মন্ত্রীর বাসভবনে বোমা মেরেছে, বিদেশী দূতাবাসে ককটেল ছুঁড়েছে, সেলিমদের নিত্যতিন পুড়িয়ে কাবাব বানাচ্ছে তিন্তু এই সব কর্মকান্ডের জন্য তিনি বা তার দল কখনোতো দুfকথা বলেন নি । আসলে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পরলেই এমনটি হওয়া বিচিত্র নয় । এই সব সন্ত্রাসীরা মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছে বেগম জিয়ার আন্দোলন বা অবরোধের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টির হুকুমের কারণে । তিনি এই সবের দায় এড়াতে পারেন না । তবে আবারো প্রশ্ন এই হুকুম কী লন্ডন হতে এসেছে নাকি তার উৎপত্তি এই ঢাকায় ? হয়তো এখন বেগম জিয়ার নীতি নির্ধারকরা ভাবছেন তাদের এই দফার আন্দোলনও মাঠে মারা যাচ্ছে । সুতরাং এই তথাকথিত আন্দোলনে কিছুটা রক্ত সঞ্চালন করার জন্য নিজেদের দুfএকজনের ক্ষতি করলে মন্দ হয় না । অনেকে বলেন পাকিস্তানে আসিফ আলি জারদারি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তার স্ত্রী বেনজির ভূট্টোকে হত্যা করেছিলেন । তা হলে বাংলাদেশেও কী এমন কোন ষড়যন্ত্র দানা বাঁধছে? রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে নতুন কিছু নয় । ক্ষমতার লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয় ।
আসলে দেশে এই যে রক্তক্ষরণ এবং ধ্বংসের মচ্ছব চলছে তা কী বেগম জিয়ার ভাষায় eগণতন্ত্রf উদ্ধারের জন্য ? তা মনে হওয়ার কোন কারণ নেই । এটি এখন অনেকটা পরিষ্কার বেগম জিয়া এবং তার দল এই মচ্ছবে মেতেছেন দূর্নীতির দায়ে তিনি ও তার জেষ্ঠ্য সন্তান তারিক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য । তা করার জন্য তাঁর ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন । জামায়াতের এজেন্ডা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সাজাপ্রাপ্ত তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসির রজ্জু হতে বাঁচানো । অনেকেই বলেন এই ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে । প্রথমে সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে । তারপর বিএনপি যদি ঘোষণা দেয় জনগণের জানমালের ক্ষতি হয় এমন কোন কর্মসূচী তারা আর দেবে না তা হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা অবশ্যই বলা যেতে পারে । ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি যে একটি আত্মঘাতী ভুল করেছে তা তারা নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছে । সেই নির্বাচনে গেলে নিশ্চিত ভাবে তারা ভাল করতো । এখন সময় এসেছে বিএনপিfর এটি অনুধাবন করা দেশ ধ্বংসের রাজনীতি কখনো ভাল ফল বয়ে আনে না । রাজনীতি দেশের মানুষের জন্য আর দেশটি কোন একটি দল বা গোষ্ঠীর নয় । আওয়ামী লীগ বা বিএনপিfরও নয় । দেশ ষোল কোটি জনগণের । সুতরাং সকল পক্ষেরই উচিৎ দেশের মঙ্গল হয় তেমন রাজনীতি করা । দেশের মানুষ আর একজন সেলিমেরও আর্ত চিৎকার শুনতে চায় না ।
সম্প্রতি বিএনপিfর স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সাপ্তাহিক eএই সময়f এ দেয়া তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন eচেয়ারপারসন বেগম জিয়ার আশপাশে মীর জাফর নেতাদের কারণে বিএনপি রাজনীতির মাঠে সফল হতে পারছেন নাf । সত্য কথা বলার জন্য দুলুকে ধন্যবাদ । সময় হয়েছ দলে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলা । দেশে একাধিক ভাল রাজনৈতিক দল থাকলে তা দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রেও জন্য মঙ্গল । সময় থাকতে সকলের বোধদয় হোক ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]