|
নতুন ফমূর্লা নিয়ে
বেগম জিয়ার দরবারে হাজির
প্রফেসর আবদুল মান্নান
বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের নতুন সংস্করণ চলছে । এই সংস্করণ একান্তভাবে
জামায়াত-বিএনপি’র আবিষ্কার । অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাধারণ
মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে নির্মমভাবে কোন বাছ বিচার ছাড়া পুড়িয়ে মারা নতুন
সংষ্করণের বৈশিষ্ট্য। অবশ্য বেগম জিয়া হতে শুরু করে তাদের দলের নেতা পাতি
নেতা সকলে বলেন এই পেট্রোল বোমা নাকি সরকারি দল মারছে । আবার এও বলেন সরকার
যদি তাদের সব দাবি মেনে নেয় তাহলে পরদিন থেকেই এই সব সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে
যাবে । শুক্রবারের বেগম জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি একই কথা বললেন । আবার
এই সব নাশকতা চালাতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে তারা হয় জামায়াত-বিএনপি’র
সন্ত্রাসি অথবা ভাড়েটে দূর্বৃত্ত । মাঝে মধ্যে এই সব দূর্বৃত্তদের তালিকায়
কিছু সরকারি দলের ভাড়াটেও দেখা যায় । তবে তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য । তাদের
এই উন্মত্ততা হতে বাদ যাচ্ছে না আড়াই বছরের শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ।
নাহ এতে বেগম জিয়ার কোন অনুশোচনা হবে তা মনে করার কোন কারণ নেই । পেট্রোল
বোমায় এই পর্যন্ত কমপক্ষেতো একশ ত্রিশজন প্রাণ হারালো । তাতে
বিএনপি-জামায়াত, তাদের পোষা বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার তেমন কিছু আসে যায় না ।
তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের হিসাব করা নিয়ে ব্যস্ত। পেট্রোল বোমা মেরে
মানুষ হত্যা এটা তারা রাজনৈতিক অধিকার বলে মনে করে । বৈধ পথে ক্ষমতায় যেতে
বিএনপি’র সামনে একবার সুযোগ এসেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়
। সে সময় তারা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হতে বিরত থাকে কারণ তারা চাইছিল
একটি অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে যা দেশের
সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে বাতিল করে দিয়েছিল । এই রায়ের ফলে সংবিধান
সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পরে । সরকার বেগম সাজেদা চৌধুরির নেতৃত্বে একটি
সংবিধান সংশোধনী কমিটি করে দেয় এবং সেই কমিটি প্রায় আড়াই বছর কাজ করে । এই
আড়াই বছরে উপস্থিত হয়ে সংশোধনীতে প্রস্তাব পেশ করার জন্য বিএনপিকে বহুবার
তাগাদা দিলেও তা তারা তেমন আমলে নেয় নি । এরপর পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে গৃহীত
হলে সেখানেও বিএনপি-জামায়াত জোট অনুপস্থিত থাকে । তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা একাধিক বার চেষ্টা করেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি
নির্বাচনকালিন অন্তবর্তি সরকার গঠন করতে । ব্যক্তিগত ভাবে বেগম জিয়াকে তিনি
ফোন করেন কিন্তু বেগম জিয়ার কাছ হতে কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়াতো যায়ইনি বরং
তিনি শেখ হাসিনার সাথে অত্যন্ত রূঢ় ব্যবহার করেন । শেখ হাসিনা বলেন যেহেতু
একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা আছে সেহেতু তারা মিলে একটি নির্বাচন ৫
জানুয়ারি করবেন এবং পরবর্তিকালে প্রয়োজনে আরো একটি মধ্যবর্তীকালিন নির্বাচন
হতে পারে । বেগম জিয়া ঘোষণা করেন তিনি বা তার জোটের কোন শরিক দল ৫ই
জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণতো করবেনই না বরং তা প্রতিহত করবেন । সুতরাং
শেখ হাসিনার আর মধ্যবর্তীকালিন নির্বাচনের আহ্বানের কোন কার্যকারিতা আর
রইলো না । নির্বাচন প্রতিহতের নামে সেই সময় পেট্রোল বোমার অভিষেক । সেবার
মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় দুইশত । নির্বাচনের দিন স্কুল পুড়লো পাঁচশত ।
পিটিয়ে মারা হলো রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য আর
নির্বাচন কেন্দ্রে আসা ভোটারকে । নির্বাচনের পূর্বে অনেক বিদগ্ধজন এই বলে
বিএনপিকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন যে শেখ হাসিনার অধীনে
নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের পরাজয় অবধারিত। তাদের
কাছে তখন ‘গণতন্ত্রের’ প্রধান ও একমাত্র ‘ভিলেন’ একজন শেখ হাসিনা । আসতে
থাকে নানা ফর্মুলা শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কী ভাবে নির্বাচন করা যায় ? বেগম
জিয়া, যার প্রজ্ঞা সম্পর্কে কখনো আমার ধারণা খুব উঁচু ছিল না তিনি একটি
ফর্মূলা দিয়ে বসলেন । বললেন এর আগের দু’মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা
ছিলেন তাদের নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা সম্ভব তবে সেখানে বিচারপতি খায়রুল
হক থাকতে পারবেন না । এদের অনেকই ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা বয়সের
ভারে ন্যুজ্য । জামায়াত-বিএনপি ও তাদের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের সামনে তখন
বিচারপতি খায়রুল হক একজন জাতীয় বিশ্বাসঘাতক কারণ তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম
কোর্টের ফুল বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন । অথচ
সেই রায় ও তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যদি কেউ ধৈর্য ধরে পড়েন তাহলে বুঝতে
পারবেন সেই বেঞ্চ আর বিচারপতি খায়রুল হকের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা আর পান্ডিত্য
। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে যে ক’জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন
নিঃসন্দেহে বিচারপতি খায়রুল হক তাঁদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তি ।
বেগম জিয়ার ডাকে যখন দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছে না পেট্রোল বোমায়ও যখন তিনি
জনগণকে পরাস্ত করতে পারছেন না তখন তার বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজনকে তিনি মাঠে
নামিয়েছেন নতুন ফর্মূলা দিয়ে । এদের অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন । অনেকে বলেন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তারই
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু নাম বিভ্রাট আর কিছু মানুষের
ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এমাজউদ্দিনের স্থলে ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি হয়ে
গিয়েছিলেন । তবে সার্বিক বিচারে মেরুদন্ডহীন ইয়াজউদ্দিনের স্থলে অধ্যাপক
এমাজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি হলে খারাপ হতো না । অধ্যাপক এমাজউদ্দিন সম্প্রতি
বিএনপি’র একাধিক মঞ্চে বলেছেন দেশের চলমান সন্ত্রাস এড়াতে শেখ হাসিনার
অধীনেই সংসদ নির্বাচন হতে পারে । তবে সেই নির্বাচনে সেনা বাহিনীকে শক্ত
ভূমিকা রাখতে হবে । অধ্যাপক এমাজউদ্দিন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী । তিনি ভাল
করে জানেন নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন, সরকার নয় । নির্বাচন
কমিশন চাইলেই সেনা বাহিনীকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারে । ২০০১ সালের
নির্বাচনে সেনা বাহিনীকে যে ভাবে নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে তাকে কলঙ্কিত
করেছে তা কী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন ভুলে গেছেন? অথবা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের
আগে বেগম জিয়ার রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে দিয়ে সেনা অভ্যূত্থান
ঘটানোর চেষ্টা তাতো ভুলে যাওয়ার কথা নয় । আসলে নির্বাচন কমিশনকে যদি আরো
দায়িত্বশীল ও শক্তিশালী করার কথা অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলতেন তা হলে তাতে
জাতি অনেক উপকৃত হতো । রাজনৈতিক দলগুলি যদি দায়িত্বশীল না হয় তা হলে সেনা
বাহিনী দিয়ে কিছুই হবে না । আর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকুক বা অন্য
কেউ, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথাতো সংবিধানেই লেখা আছে ।
তার এই ফর্মূলা তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কেন বেগম
জিয়াকে বুঝান নি । নাকি কোন এক অদৃশ্য শক্তি এসে বেগম জিয়াকে ক্ষমতাসীন
করবেন এমন সুযোগের জন্য বিএনপি নেতা কর্মীদের মতো তিনিও অপেক্ষা করছিলেন ?
ডঃ এমাজউদ্দিনের ফর্মূলার রেশ না ফুরাতেই এলো বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব
ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ফর্মূলা । ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বেগম জিয়া ডাঃ
চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন । কিন্তু তার আচার আচরণ বেগম জিয়ার
আজ্ঞাবহ ভৃত্যের মতো না হওয়াতে তাকে এক কাপড়ে তিনি বঙ্গভবন হতে বিতাড়িত
করেছিলেন । ‘বিকল্পধারা’ নামের একটি নতুন দল করতে চাইলে বেগম জিয়ার পুত্র
তারেক রহমান তার পেটোয়া বাহিনী পাঠিয়ে সেই সভা ভন্ডুল করে তার উপর মোটর
সাইকেল তুলে দিয়েছিল । তাতেও তৃপ্ত না হয়ে তার বারিধারার বাড়ীতে আগুন দিয়ে
তাকে পুরিয়ে মারার চেষ্টা করা হয় । সেই বদরুদ্দোজা এখন তার হোন্ডা পার্টি
‘বিকল্প ধারা’ নিয়ে বেগম জিয়ার ২০ দলীয় জোটের অংশীদার । তিনিও অধ্যাপক
এমাজউদ্দিনের মতো একই কথা বলেছেন । তার উপর তিনি গত ৭ মার্চ তার ভাষায় সংকট
সমাধানের তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন । তার এই প্রস্তাবগুলি হলো প্রথমত
বর্তমান রাষ্ট্রপতির অধীনে একটি জাতীয় সরকার গঠন; যারা নবম জাতীয় সরকারে
সংসদ সদস্য ছিলেন তারা জাতীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারবেন কিন্তু আগামী
নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারবেন না । দ্বিতীয়ত সরকার প্রতিষ্ঠার পর প্রথম
কাজ হবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন । এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ
থাকবে । তৃতীয়ত এই নির্বাচন হতে হবে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে । এই শর্তগুলো
মেনে নিলে চলমান সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন । ডাঃ
চৌধুরী একজন বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন, এখনো আছেন তা বলা যাবে না । তার পিতা
জনাব কফিল উদ্দিন চৌধুরী একজন সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন । ১৯৫৪ সনের নির্বাচনে
যুক্তফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রী
সভায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন (আইন ও বিচার)। তার ছেলে একজন চিকিৎসক হিসেবে
যতটুকু সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে ততটুকু নন । তার এই যে ফর্মূলা তাতো বর্তমান
সংবিধানের অধীনে সম্ভব নয় কারণ বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ ।
এখানে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া সম্ভব নয়। বাতিল হওয়া
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অন্যতম দূর্বলতা ছিল প্রধান উপদেষ্টার হাতে
সব ক্ষমতা দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সেনা বাহিনীকে দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতির
অধীনে যার ফলে ১৯৯৬ সনে বেগম জিয়ার নির্দেশে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান
বিশ্বাস একটি সামরিক অভ্যূত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন । সেবার প্রধান
উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তড়িৎ হস্তক্ষেপে একটি বড় ধরণের সংকট
এড়ানো সম্ভব হয়েছিল । ডাঃ চৌধুরীর কাছে হঠাৎ নবম সংসদের কদর বেড়ে গেল ।
তাহলে দশম সংসদকে তিনি কী অস্বীকার করছেন ? ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায়
নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে? তিনি কী জানেন ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর
নির্বাচনে ১৬২ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন (৩০
জন মহিলা আসন ছাড়া) এবং ১৬টি সংসদীয় এলাকায় কোন সংসদ সদস্যও ছিল না ।
বিশ্বাস না হলে নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড দেখে নিতে পারেন । সংবিধানে
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারিত আছে । সেটি সংশোধন করতে পারে জাতীয় সংসদ । তা
যদি হয় তা হলে এই সংসদকেতো স্বীকৃতি দেয়া ছাড়া ডাঃ চৌধুরীর কোন বিকল্প নেই
। আর সংসদ যদি বৈধ হয়ে থাকে, যা অবশ্যই বৈধ তা হলে তার মেয়াদতো পাঁচ বছর,
যদি না সরকার কোন কারণে তার আগে তা ভেঙ্গে দেয় । আর তিনি যদি মনে করে থাকেন
যে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে জনগণ, সংসদ ও সরকারকে জিম্মি করে এই
সব উদ্ভট পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কাজ করবেন তা হলে তা খুব সুবিবেচনা প্রসূত
হবে বলে মনে হয় না । ডাঃ চৌধুরীদের উচিৎ এখন রাজনীতি হতে অবসর নিয়ে নিজের
আত্মজীবনী লেখা । তাতে জনগণ উপকৃত হবে ।
ব্যারিস্টার রফিকুল হক । দেশের মানুষ তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করে । অনেক সময়
উচিৎ কথা বলতে দ্বিধা করেন না । আবার মাঝে মধ্যে তাঁর কিছু বক্তব্য জনগণকে
বিভ্রান্ত করে । তিনি গত ৭ তারিখ বলেছেন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে একটি
‘হাঁ’ ‘না’ কিসিমের গণভোট হতে পারে । এমন একটি কান্ড জেনারেল জিয়া করেছিলেন
। তার আগে পাকিস্তানে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেনারেল আইউব খান করেছিলেন ।
এমন রেফারেন্ডাম সংবিধানের কোন ধারা বলে করা সম্ভব তা বলে দিলে ভাল হতো ।
জিয়ার পঞ্চম সংশোধনীতে রেফারেন্ডামের বিধান ছিল । দেশের সর্বোচ্চ আদালত
জিয়ার সামরিক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার পর এই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে এই
বিধান এখন সংবিধানে নেই । ব্যারিস্টার রফিকুল হক ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । এতে তাঁর
সম্মান বাড়েনি । একটি বিষয় পরিষ্কার যারা এই সব ফর্মূলা নিয়ে এখন হাজির
হচ্ছেন তারা কেউ কিন্তু পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের কথা বলছেন না । মনে হতে
পারে তাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে বেগম জিয়া ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারি
নির্বাচনে না গিয়ে যে ভুলটা করেছেন তাকে সেই ভুল হতে শিক্ষা না নিতে দিয়ে
সেখান হতে উদ্ধার করা ।
বেগম জিয়া বিনা কারণে টানা ৬৭ দিন নিজের অফিসে অবস্থান করার পর শুক্রবারে
সাংবাদিকদের সামনে তার বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছিলেন । মাঝখানে গত ১৯
জানুয়ারি একবার তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সাংবাদিকদেও সামনে হজির হয়েছিলেন
। দু’বারই সাথে দলের তেমন কোন সিনিয়র নেতা ছিলেন না । এবার সাংবাদিকদের
সামনে তিনি একটি বক্তব্য পড়ে শোনালেন । তার চিরাচরিত রেওয়াজ অনুযায়ী তিনি
সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জবাব দিলেন না । তবে উঠে যাওয়ার সময় তিনি একজন
সাংবাদিকের একটি প্রশ্নর একটি দায়সারা গোছের জবাব দিলেন । মানুষ প্রত্যাশা
করেছিল তিনি নতুন কিছু বলবেন । তাদের তিনি হতাশ করে সেই পুরানো মদ নতুন
বোতলে ঢাললেন । তার এই বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দিলে কোন অসুবিধা ছিল না ।
তিনি মানুষকে আরো একটু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করার অনুরোধ করলেন । অর্থাৎ
আরো কিছু মানুষ পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হতে হবে । অবশ্য তিনি বলেছেন আগামীতে
ক্ষমতায় গেলে ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন । এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি কোন রাজনৈতিক
ব্যক্তি করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য ।
স্যুটেড বুটেড ভদ্রলোকরা বেগম জিয়াকে পছন্দ করবেন, তার ছেলে তারেক রহমানকে
ছলে বলে কৌশলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার তেমন
কিছু নেই । কিন্তু এই স্যুটেড বুটেড ভদ্রলোকদের কোন ছেলে মেয়ে স্ত্রী ভাই
ব্রাদার পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যাবেন বা হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে
আর্ত চিৎকার করবেন না । বেগম জিয়ার অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ
বর্তমান সরকার করে দেবে কী না তা একান্তভাবে তাদের এক্তিয়ার ।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । মার্চ ১৪, ২০১৫
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|