|
কিসমতের কিসমত ও আসন্ন
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন
প্রফেসর আবদুল মান্নান
১.
ঠিক করেছিলাম বাংলাদেশের ৪৫তম স্বাধীনতা দিবসটিতে কিছু অলস সময় কাটাবো । সে
মতে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম দিনের অর্ধেকটা কাবার করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে
পত্রিকা গুলির উপর চোখ বুলিয়ে আর এক পসলা দীর্ঘ তন্দ্রা। তারপর দুপুরের
খাবার এরপর দীর্ঘদিনের অভ্যাসের দিবা নিদ্রা। মাঝেমধ্যে ভারত অস্ট্রেলিয়ার
বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে ভারতকে বিধ্বস্থ করার দৃশ্য উপভোগ করা । মাঝ পথে বাধ
সাধলেন চট্টগ্রামের আমার অগ্রজ প্রতিম বন্ধু বখতিয়ার ভাই, মানে বখতিয়ার নূর
সিদ্দিকী । একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা । বেশ অনেক দিন ধরে শরীরটা ভাল যাচ্ছে
না বখতিয়ার ভাইয়ের। চট্টগ্রাম থেকে ফোন করে মাঝে মধ্যে আমার এই প্রিয় শহরের
রাজনীতির খবরা খবর দেন । আমার কাছে সব সময় মনে হয় চট্টগ্রামের রাজনীতি
জাতীয় রাজনীতির চেয়েও জঠিল । এই মুহূর্তে চট্টগ্রামের রাজনীতির গরম খবর
হচ্ছে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন । বেশ অনেক দিন ধরেই এই সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিল । সকলের আগে এই নির্বাচনে
নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন তিন তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মহানগর আওয়ামী
লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী । মহিউদ্দিন চৌধুরী হচ্ছেন এমন একজন
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি একেবারে তৃণমূল হতে উঠে এসেছেন । তুলনা করা হয়তো
ঠিক হবে না তারপরও বলতে হয় তিনি বঙ্গবন্ধুর সকল রাজনৈতিক গুনাবলি ধারণ
করেছিলেন । সত্যিকার অর্থে জনমানুষের নেতা । ১৯৯৪ সনে তিনি বেগম জিয়ার
অত্যন্ত ঘনিষ্টজন মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনকে ষোলহাজার ভোটে পরাজিত করে
মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন । ১৯৯৯ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে তিনি এক
অখ্যাত প্রতিদ্বন্ধী দিলীপ ভদ্রের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে এক তরফা ভাবে
বিজয় লাভ করেন । ২০০৫ সালেও তিনি মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনকে এক লক্ষ ভোটে
পরাজিত করেছিলেন । ২০১০ সালে তিনি এমন একজন ব্যক্তির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন
যিনি বড় জোর একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা রাখেন । বিজয়ী প্রার্থী
মনজুরুল আলম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শিষ্য ছিলেন এবং দীর্ঘ এগার বছর ওয়ার্ড
কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । মনজুরুল আলম আওয়ামী লীগের রাজনীতির
সাথেও জড়িত ছিলেন । বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে বিএনপি মনজুরুল
আলমকে জিতিয়ে এনেছিলেন । এই বিজয়ে মনজুরুল আলমের তেমন কোন কৃতিত্ব ছিল না ।
ছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীর কিছু কৌশলগত ভুল সিদ্ধান্ত আর তার চার পাশে থাকা
চাটুকারদের অবদান । এই বিষয়ে পরে লেখার ইচ্ছা রইলো । ফিরে আসি আমি বখতিয়ার
ভাই প্রসঙ্গে । তিনি বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন বঙ্গবন্ধুর খুনীর লাশ যেন
কিছুতেই বাংলাদেশে না আসে । প্রথমে বুঝতে পারিনা । তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর
খুনিদের একজন এবং জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত ঘাতক
ক্যাপ্টেন (অবঃ) কিসমত হাসেম বৃহষ্পতিবার ভোর ছয়টায় কানাডায় মৃত্যুবরণ
করেছেন । পঁচাত্তরের ঘাতকরা খোন্দকার মোশতাকের দৃষ্টিতে ছিল সূর্য্য সন্তান
। তাদের বিচার বন্ধ করার জন্য তিনি একটি ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন
যা জিয়া ক্ষমতা দখল করে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করে তাকে আইনে রূপ দিয়েছিলেন
। জিয়া এই সব ঘাতকদের পরবর্তিকালে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে উচ্চপদে
চাকুরি দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিলেন । বেগম জিয়া ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর
নির্বাচনে ঘাতকদের এক শীর্ষ নেতা কর্ণেল (অবঃ) আবদুর রশিদকে সংসদ নির্বাচনে
দাঁড় করিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়েছিলেন । তারও আগে জেনারেল এরশাদ কর্নেল
ফারুককে দেশে ফিরিয়ে এনে ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন
। পরে ফারুক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন । ফারুক-রশিদ দুজনই
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি । ফারুকের মৃত্যুদন্ড
ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে । বঙ্গবন্ধুর সকল খুনি বা তাদের আত্মীয় স্বজন হয়
সরাসরি বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন অথবা তাদের রাজনীতির সাথে
পরোক্ষ ভাবে নিজেদেও যুক্ত করেছেন । কিসমত হাসেমের ভাই শওকত হাসেম শকু
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের
কাউন্সিলর । ফ্রিডম পার্টির চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ফজলে খোদা তোতন বর্তমানে
বিএনপি’র মধ্যম সারির নেতা এবং পুলিশের খাতায় বড় মাপের পেট্রোল বোমার
কারিগর । তাকে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খুঁজছে । বখতিয়ার ভাই বেশ দৃঢ় ভাবে বললেন
হাসেমের মৃতদেহ যেন কিছুতেই বাংলাদেশে আনতে দেয়া না হয় । উত্তেজিত বখতিয়ার
ভাইকে বলি তার কোন সম্ভাবনা নেই কারণ গত বছর পাকিস্তানে চাকমা রাজা ত্রিদিব
রায়ের মৃত্যু হলে তার পরিবার তার মৃতদেহ বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনা করেছিল
কিন্তু জনরোষের ভয়ে মৃতদেহ পাকিস্তানেই সৎকার করা হয়। সত্তরের নির্বাচনে
জাতীয় পরিষদে যে দু‘জন সদস্য আওয়ামী লীগের বাইরে নির্বাচিত হয়েছিলেন তার
একজন ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজা ত্রিদিব রায় আর অন্যজন ময়মনসিংহের
নূরুল আমিন । মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দুজনই পাকিস্তান সামরিক জান্তাকে সমর্থন
করেছিলেন । যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে উভয়ই পাকিস্তানে পালিয়ে যান । নূরুল আমিন
পরে ভুট্টোর উপ-রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন । তার মৃত্যু হলে তাকে করাচিতে
জিন্নাহ্র সমাধি সৌধে দাফন করা হয় । রাজা ত্রিদিব রায় ভূট্টোর মন্ত্রী সভার
সদস্য হয়েছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষে জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশকে
সদস্যপদ না দেয়ার জন্য ওকালতি করে প্রথম দফায় চীনের সহায়তায় সফল হয়েছিলেন ।
তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসলে ভূট্টো সকল প্রটোকল ভঙ্গ করে তাকে বিমান বন্দরে
স্বাগত জানিয়েছিলেন । পরে তিনি বিদেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব
পালন করেন । তার স্ত্রী বিনীতা রায়কে জিয়া মন্ত্রী বানিয়েছিলেন । পত্রিকায়
খবর বেরিয়েছে কিসমত হাসেমকে শুক্রবার কানাডায় দাফন করা হয়েছে । নুরুল আমিন
বা রাজা ত্রিদিব রায়ের মতো কিসমতেরও কিসমত খারাপ নিজ দেশে তার নিজের জন্য
দু‘গজ জায়গা হলো না । অথচ এরশাদ পতনের আগ পর্যন্ত কিসমত নিয়মিত বাংলাদেশে
আসা যাওয়া করতেন ।
২.
যদিও দলের কিছু বাঘা বাঘা নেতা স্বীকার করতে চান না তথাপি বলতে হয় বিএনপি
নামক দলটি এখন চরম বেকায়দায় । এমনটি চলতে থাকলে হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যে
দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে । বড়জোর বাংলাদেশের নয়া মুসলীম লীগ হিসেবে টিকে থাকবে
। এটি রাজনীতির জন্য ভাল নয় কারণ একটি দেশে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করতে হলে
একাধিক সুস্থ ধারার রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে । বাংলাদেশে এই শূন্যতা
পূরণ করতে পারতো বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলি । কিন্তু তাদের তত্ত্ব সর্বস্ব
রাজনীতির কারণে এই বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলির আর কোন ভবিষ্যৎ নেই ।
বর্তমানে তাদেরও একমাত্র পুঁজি জামায়াত বিএনপি’র মতো কারণে অকারণে আওয়ামী
লীগ বিরোধিতা । কথায় কথায় তারা আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এবং শেখ হাসিনা আর
বেগম জিয়াকে এক পাল্লায় মাপেন । বিএনপি যদি আমলা আর ব্যবসায়ী নির্ভর
রাজনৈতিক দল না হয়ে রাজনৈতিক নেতা কর্মী নির্ভর দল হওয়ার চেষ্টা করতো এবং
জামায়াত হতে নিজেদের বিযুক্ত করতে পারতো তা হলে তাদের বাংলাদেশে একটি সুস্থ
ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা ছিল এবং সেই সম্ভাবনা এখনো আছে
। তবে তার আগে তাদের ঠিক করতে হবে দল কে চালাবে । দল যদি একজন অর্বাচীন
তারেক রহমানের হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়া হয় তা হলে তার দলটি আগামীতে আরো বপদে
পরবে। বেগম জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তবে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা
আর বিচক্ষণতার ঘাটতি পর্বতসম । বর্তমানে তিনি তার পূত্রের হাতে একজন পুতুল
এবং রিমোট কন্ট্রোলে চালিত । তিনি প্রায় তিন মাস তার গুলশান কার্যালয়ে এক
অজ্ঞাত কারণে স্বেচ্ছায় অবরোধবাসিনী (অন্তঃপুরবাসিনী) হয়েছেন । আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে তিনি শহীদ মিনার অথবা
জাতীয় স্মৃতি সৌধে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না । এটি একটি শুধু অমার্জনীয়
অপরাধই নয় ভাষা শহীদ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি চরম
অবমাননার সমতূল্য । অথচ তিনি ও তার দল দাবি করেন তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা
জেনারেল জিয়া নাকি স্বাধীনতার ঘোষক ।
বেগম জিয়া গত জানুয়ারির ৩ তারিখ হতে তার গুলশান অফিসে অবরোধবাসিনী হয়েছেন ।
৫ তারিখ তিনি দলের এক নির্ধারিত মহাসমাবেশে বক্তৃতা দিতে যাওয়ার কথা ছিল ।
এই মহাসমাবেশ হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে এই আশংকায় কর্তৃপক্ষ
বিএনপিকে এই মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয় নি । তারপরও তিনি যাবেন সেই
মহাসমাবেশে যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না । অন্য উদ্দেশ্যে তিনি তার গুলশান অফিস
হতে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে বাধা দেয় । তাৎক্ষণিক তিনি
সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন দেশে অনির্দিষ্ঠ কালের জন্য অবরোধ চলবে । এরপর হতে
তিনি অবরোধবাসিনী । এর কয়েকদিন পর ঘোষিত হলো প্রতি সপ্তাহের কার্য দিবসে
দেশে হরতাল চলবে । অবরোধ বা হরতালে দেশের মানুষ কোন ধরণের সাড়া না দিলেও
জামায়াত-বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমার আঘাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে
নৃশংস ভাবে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় দেড় শত নিরীহ মানুষ যাদের অধিকাংশের সাথেই
রাজনীতির কোন সম্পর্ক ছিল না । দেশের বার্ণ ইউনিট গুলিতে কাতরাচ্ছে আরো
কয়েকশত মানুষ । এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার
দুটি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । ঢাকা সিটি
কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় আট বছর আগে । সর্বশেষ মেয়র ছিলেন
বিএনপি’র সাদেক হোসেন খোকা । এক-এগারর পর সব সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের
গ্রেফতার করা হলেও এক অজ্ঞাত কারণে সাদেক হোসেন খোকাকে রেহায় দেয়া হয় ।
জানা যায় তার সাথে এক-এগার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের
যোগাযোগ ছিল । তিনি প্রয়াত সায়ফুর রহমান, প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, লেঃ
জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান, বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) জেড এ খান, মেজর (অবঃ)
হাফিজউদ্দিন প্রমূখদের নিয়ে বেগম জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি গড়ার চেষ্টা
করেছিলেন যা অন্যান্যদের সমর্থন না পাওয়াতে ভেস্তে যায় । ঘোষিত মেয়র
নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কী না তা নিয়ে দলে নানা ধরণের সমীকরণ চলছে
। একদলের মতে এই সময় নির্বাচন দেয়াটা সরকারের বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান
আন্দোলন ভাঙ্গার একটি কৌশল । এই দল দুটি মনে করে তাদের নেত্রীর ডাকে দেশে
এখন একটি দারুণ আন্দোলন চলছে এবং সেই আন্দোলনে সরকার এখন তার অন্তিম সময়ের
কাছাকাছি চলে এসেছে । আর একটু ধাক্কা দিলে সরকার পড়ে যাবে এবং তাদের নেত্রী
ক্ষমতার মসনদে গিয়ে বসবেন । দলের ভিতরে আর একটি রাজনৈতিক ভাবে পরিপক্ক
গোষ্টি আছে যারা মনে করে ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে না যাওয়াটা
ছিল তাদের একটি আত্মঘাতী ভুল যার খেসারত দলকে এখন দিতে হচ্ছে । এর ফলে যেটি
হয়েছে দলের সিনিয়র নেতাদের বেগম জিয়ার পাশে আগের মতো তেমন একটা দেখা যায় না
। দলের অনেক নেতা কর্মী জেলে আছেন তা ঠিক আবার অনেকে দেশের বাইরেও নিরাপদে
অবস্থান করছেন । অন্যরা নিজ নিজ পেশায় ফিরে গেছেন । দল হিসেবে বিএনপি এখন
অনেকটা ছত্রভঙ্গ । একটি নির্বাচনে দল অংশগ্রহণ করলে দলের নেতা কর্মীরা
সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায় । গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না যাওয়াতে সেই সুযোগ
হতে তারা সম্পূর্ণ রূপে শুধু বঞ্চিতই হয়নি তাদের অনেক নেতা কর্মী এখন
জামায়াত-শিবিরের মতো সন্ত্রাসের পথ ধরেছে ।
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে হয়তো বিএনপি নামক দলটির
অস্থিত্বই হুমকীর সম্মুখীন হবে । ইতোমধ্যে বিএনপি ঘরাণার ছ’জন সুশীল
বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের
নেতৃত্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করেছেন এবং কয়েকটি দাবি
উত্থাপন করেছেন । তারা কী নিজের উদ্যোগে গিয়েছিলেন নাকি বেগম জিয়ার আর
তারেক রহমানের নির্দেশে গিয়েছেন তা পরিস্কার নয় । তাদের দলে বিএনপি’র কোন
সদস্য ছিল না । তাদের দাবির মধ্যে ছিল মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় কয়েকদিন
বাড়ানো, কোন প্রার্থী কারাগারে থাকলে তাকে জামিনে মুক্ত করা, আর কোন নেতা
কর্মী অথবা সমর্থককে গ্রেফতার না করা । প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন
নির্বাচন করতে চাইলে যে সময় দেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট । কোন প্রার্থী আদালত হতে
আইনের মাধ্যমে জামিন নিলে তাতে কারো কোন কিছু বলার থাকতে পারে না । তবে
কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকে তাকে গ্রেফতার করতে কোন
বাধা থাকা যেমন উচিৎ নয় ঠিক একই ভাবে কারো বিরুদ্ধে কোনা সুনির্দিষ্ট
অভিযোগ যদি না থাকে তা হলে তাকে আটক রাখাটাও ঠিক নয় । প্রতিনিধি দল আরো ছোট
খাট কিছু দাবি দাওয়া পেশ করে এসেছেন । সেগুলির যৌক্তিকতা থাকলে নিশ্চয়
নির্বাচন কমিশন তা বিবেচনা করবেন । শুক্রবার অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের নেতৃত্বে
আট জনের আর একটি সুশীল প্রতিনিধিদল বেগম জিয়ার সাথে দেখা করে এসে বলেছেন
নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য তিনি ও তারেক রহমানের গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া
গেছে । তবে তাদের কথায় পরিবেশ ভাল না থাকলে আর লেভেল প্লেইং ফিল্ড না থাকলে
তারা নির্বাচন বর্জনও করতে পারেন । নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একটি ভাল
সিদ্ধান্ত । সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জিতলেও বিএনপি‘র লাভ
আর হারলেও লাভ । অংশগ্রহণ করলে প্রথম লাভটি হবে তাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া
নেতা কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ । আর অংশগ্রহণে দ্বিতীয় লাভটি হচ্ছে বেগম
জিয়ার অপরিনামদর্শী অবরোধ আর হরতাল ডাকার ফলে দলটি যে রকম গর্তের মধ্যে
পরেছে সেখান হতে বের হয়ে আসারও একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে । নির্বাচনে যদি বিজয়
লাভ করে তাহলে এত পেট্রোল বোমা আর নরহত্যা সত্ত্বেও তাদের পিছনে এখনো যে
জনসমর্থন আছে তা তারা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারবে । আগামীতে তারা পেট্রোল
বোমা মার্ক নিয়ে নির্বাচনও করতে পারেন । যদি পরাজিত হয় এবং সেই পরাজয়ে
সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের কোন হাত থাকে তা হলে বলতে পারবে এই সরকার বা
নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও নিরাপদ নয় । স্বাভাবিক
নিয়মে পরাজিত হলে তখন দলের দূর্বল দিক গুলোর বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনের
জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে । তবে সমস্যা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া বা
তারেক রহমান এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের অবস্থান কেমন রাখবেন তা নিয়ে
। যেদিন সুশীল বুদ্ধিজীবীরা প্রথমবার বেগম জিয়ার সাথে দেখা করে সাংবাদিকদের
সাথে কথা বললেন ঠিক সেদিন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বরকত উল্লাহ বুলু
গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন এই নির্বাচন একটি তামাশা ছাড়া আর কিছু নয় ।
এখনো বুঝার চেষ্টা করছি বিএনপি নামক দলটি কে চালায় এবং আগামীতে তাদের
চিন্তা চেতনা আর কর্ম কেমন হবে ।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । মার্চ ২৮, ২০১৪
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|