|
||||||||||||||||||
|
পারবেন কী চট্টগ্রামের মানুষ যোগ্য মেয়র নির্বাচন করতে?
সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে
আগামী ২৮ তারিখ ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের সাথে চট্টগ্রামের প্রায় ১৯
লাখ ভোটার তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেখভাল করার জন্য একজন মেয়র এবং ৪১জন
পুরুষ কমিশনার ও ১৪ জন মহিলা কমিশনার নির্বাচিত করবেন । নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিরা পরের পাঁচ বছর তাদের দায়িত্ব পালন করবেন । চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার । দেশের আমদানি
রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশ এই চট্টগ্রাম হতে আসে । একদা চট্টগ্রাম একটি বর্ধিষ্ণু
শহর ছিল । আরব পর্তুগীজ আর ইউরোপিয় বণিকরা এই শহরে এসে তার সৌন্দর্যে এতই
অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে তাদের অনেকেই এই শহরে বিয়ে শাদি করে স্থায়ি ভাবে
বসবাসও শুরু করেছিলেন । সেটি ছিল চট্টগ্রামের সোনালি দিনের ইতিহাস । আমরা
যাদেও এই শহওে জন্ম, অর্ধশতক বছরের বেশী সময় ধরে এই শহরে বাস করছি তারা
সহজেই স্বীকার করবেন গত পঞ্চাশ বছরে এই শহরে একটি বর্ধিষ্ণু জনপদ হতে খুব
দ্রুত একটি বসবাসের অনুপযোগি শহরে পরিণত হয়েছে । এমনটি চলতে থাকলে কোন
একদিন এটি একটি পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে । একদা প্রাচ্যের রাণি হিসেবে
খ্যাত এই শহর এখন ময়লা আবর্জনার স্তুপ আর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শহর । শহরে
সম্ভবত মানুষের চেয়ে মশকের সংখ্যা কয়েকগুন বেশী । এই শহরের উন্নয়নের জন্য
কয়েকটি মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল কিন্তু এমন অপরিকল্পিত শহর এই অঞ্চলে আর
দ্বিতীয়টা খুঁজে পাওয়া যাবে না । এক সময় এই শহরে নুর আহম্মদ নামের একজন
উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তিন দশকের উপর চট্টগ্রাম পৌরসভার
নির্বাচিত মেয়র চেয়ারমেন ছিলেন । নামের সাথে চেয়ারমেন শব্দটি তাঁর অজান্তেই
যোগ হয়ে গেলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নুর আহম্মদ চেয়ারমেন । পৌরসভার চেয়ারমেন
হিসেবে তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তি ত’ল্য । তিনি বঙ্গিয় আইন পরিষদের চট্টগ্রাম
হতে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন । দেশ ভাগের পর হয়ে গেলেন পাকিস্তান গণপরিষদের
সদস্য । করাচি আর চট্টগ্রামের মধ্যে আসা যাওয়া অসুবিধা হচ্ছিল বলে তিনি
নিজেই এই পদ হতে ইস্তফা দিয়েছিলেন । ফজল করিমও একজন সফল চেয়ারমেন ছিলেন ।
যখনই সেনা বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে তখনই তারা পৌরসভায় একজন প্রশাষক নিয়োগ
করেছেন । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথম নির্বাচিত
চেয়্যারমেন হন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী । তার প্রতিদ্বন্ধি
ছিলেন বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিটি কর্পোরেশনে তাঁর
মনোনিত মেয়র মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন । নিজেকে তিনি গার্ডেন সিটির রূপকার
দাবি করতেন । কিন্তু শহরটিকে শ্রীহিন করার কাজটি তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন
অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন সার্কিট হাউজের সামনে একটি শিশু পার্ক নির্মান করে ।
প্রথম নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে ষোল হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন ।
পরের বার প্রায় একলক্ষ ভোটে । তৃতীয়বার বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে যার ফলে
মহিউদ্দিন চৌধুরী অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিজয়ী হন । চতুর্থবার
মহিউদ্দিনের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে কারণ তিনি এমন এক ব্যক্তির কাছে পরাজিত হন
যিনি আজীবন তার শিষ্য ছিলেন, আওয়ামী লীগ ঘরাণার মানুষ আর ওয়ার্ড কমিশনার
ছিলেন ১৭ বছর । সেই ব্যক্তি সদ্য সাবেক মেয়র মনজুর আলম, যাকে ২০১০ সালে
বিএনপি নিজস্ব কোন প্রার্থী না দিয়ে সর্বাত্মক সমর্থণ দেয় । সেবার
মহিউদ্দিন চৌধুরী তার শিষ্যের কাছে প্রায় এক লক্ষ ভোটে পরাজিত হন । এটি
অনেকের কাছেই অসম্ভব একটি অস্বাভাবিক ঘটনা কারণ মহিউদ্দিন চৌধুরী হচ্ছে
সত্যিকার অর্থে তৃণমূল হতে উঠে আসা একজন গনমানুষের নেতা যার মধ্যে
বঙ্গবন্ধুর সব গুনাবলিই বিদ্যমান ছিল । পূর্বে তার নির্বাচনি শ্লোগান ছিল
‘মানুষ মানুষের জন্য’ এবং তা এই শহরের প্রত্যেকটা মানুষই বিশ্বাস করতেন ।
যে কোন মানুষের বিপদে অন্য কাউকে পাওয়া না গেলেও মহিউদ্দিন চৌধুরী বিনা
দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পরতেন । তারপরও কেন ২০১০ সালের নির্বাচনে তার এই শোচনিয়
পরাজয়? যেহেতু আমি নিজে তার সাথে দীর্ঘ তিন দশকের উপর কাজ করেছি সে কারণেই
আমি পরবর্তি কালে তার পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে একটি ইংরেজি দৈনিকে এই
সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছিলাম এই পরাজয়ের পিছনে ছিল নির্বাচন পরিচালনায়
মারাত্মত কৌশলগত ভুল, তা সম্পূর্ণভাবে কিছু মধ্যমেধার চাটুকারদের নিয়ন্ত্রনে
চলে যাওয়া এবং তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া আর ঘনিষ্ঠজনদের দূরে ঠেলে দেয়া এবং
নতুন মিত্র যোগাড়ে তার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা । মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের
রাজনীতিতে একজন নক্ষত্র ছিলেন তার এই বিপর্যয় অনেককেই মারাত্মক ভাবে আহত
করেছিল । তিনি গত পাঁচ বছরে তার সেই ভুল ভ্রান্তি হতে কতটুকু শিক্ষা
নিয়েছেন জানিনা তবে এবার দল তাকে এই নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার আগেই তিনি
নিজেই নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করে বসেন । দেশের প্রধান দলের একজন পরীক্ষিত
নেতা হিসেবে এটি ছিল তার একটি ভুল চাল । প্রার্থীতা ঘোষণা করেই তিনি গেলেন
ওমরা করতে । যে দিন তিনি চট্টগ্রাম ফিরলেন সে দিন শোডাউনের নাম করে
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও আশে পাশের এলাকায় প্রায় আড়াই শত বাস ট্রাকে
‘সমর্থক’ সমেবত করে পুরো এলাকাটা অচল করে দিয়েছিলেন । ঘটনা চক্রে ওই দিন আমি
নিজে বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলাম ঢাকায় ফেরার জন্য । অনেক মানুষ এই
শোডাউনের কবলে পরে সেদিন ফ্লাইট মিস করেছেন এবং মহিউদ্দন চৌধুরীর তীব্র
সমালোচনা করেছেন । এবার দল হতে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ মহানগর
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসিরকে মনোনয়ন দিয়েছে । অন্যদিকে বিএনপি-
জামায়াত মনজুর আলমকে নিয়েই মাঠে নেমেছে ।
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ |