প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

@

বেগম জিয়ার প্রত্যাশিত ঘরে ফেরা

@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

@

৯২ দিন দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানের পর অবশেষে বিএনপি চেয়ারর্পাসন বেগম জিয়া রোববার ঘরে ফিরলেন । আগের দিন রাতে একটি টিভি টকশোতে গিয়েছিলাম । শুরুতেই বললাম গত তিন মাসের মধ্যে আজই প্রথম একটি দিন যখন আশা করছি সব ভাল খবর থাকবে । কাল বেগম জিয়া তাঁর দূর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাবেন । এর আগে তিনি ৫৭ বার নানা অজুহাতে যান নি । তারপর সেখান হতে তিনি অফিসে স্বেচ্ছাবন্দি দশা ত্যাগ করে নিজ ঘরে ফিরবেন । তারপর কাল হতে আর হরতাল অবরোধ থাকছে না । বিএনপিfর কেন্দ্রিয় কার্যালয় আবার সচল হচ্ছে । ধরে নেয়া যেতে পারে কাল হতে আপাতত আর পেট্রোল বোমার আতঙ্ক থাকছে না । একাত্তরের ঘাতক জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশের রিভিউ পিটিশনের শুনানি হবে । এই ঘাতকের রিভিউ পিটিশনের নিষ্পত্তি সোমাবার চুড়ান্ত ভাবে হয়েছে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদলাত এই তার ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন । এত সব ভাল খবর দিয়ে অন্তত গত তিন মাস কোন অনুষ্ঠান শুরু বা শেষ হয় নি । সামাজিক যোগাযোগ ম্যধ্যমে বেগম জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে নানা মজার মজার মন্তব্য । একজন লিখেছেন eখালি হাতে ঘরে ফিরলেন বেগম জিয়াf । অন্যজনের মত বেগম জিয়া যখন ৯২ দিন আগে হঠাৎ করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য দেশ ব্যাপি অবরোধ ডেকেছিলেন তিনি বুঝতে পারেন নি দেশের মানুষতো বটেই তাঁর নিজ দলের লোকজনও তাঁকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন । চাঁদপুর হতে রতন মজুমদারের মন্তব্য e৫ এপ্রিলকে বিশ্ব ঘরে ফেরা দিবস ঘোষণা করা হোক e। কানাডা হতে এক প্রবাসি সাংবাদিকের মন্তব্য eপরাজিত সেনাপতির আদালতে আত্মসর্ম্পনের পর নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনf । যুক্তরাষ্ট্র প্রাবাসি আমার বন্ধু শহীদের মন্তব্য eবেগম জিয়াতো নিজ ঘরে ফিরলেন কিন্তু যাদের তিনি যমের ঘরে পাঠিয়েছেন তাদের কী হবেf? মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অঞ্জন রায় পেট্রোল বোমায় প্রায় সম্পূর্ণ দগ্ধ এক বালকের ছবি দিয়ে প্রশ্ন করেছেন eআজ সারা দিন সকল গণমাধ্যম কর্মী বেগম জিয়ার সাথে থেকে তাঁকে অনুসরণ করেছেন । তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন । কিন্তু যে বালকটি পেট্রাল বোমায় দগ্ধ হয়ে বার্ণ ইউনিটে কাতরাচ্ছে কfজন গণমাধ্যম কর্মী তার খোঁজ রাখেf ? আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান সব সময় আধ্যাত্মিক ভাষায় কথা বলেন । তিনি তার পত্রিকায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন eবেগম খালেদা জিয়া ঘরে ফিরেছেন, গণতন্ত্রও ফিরে আসুকf। বন্ধু সোহরাব আর দশজনের মতো গণতন্ত্র নিয়ে গত বছরের ৫ জানুয়ারির পর হতে বেশ উদ্বিগ্ন । কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে যখন ১৬২ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন তাকে এবং অন্যদের অত উদ্বিগ্ন হতে দেখেছি বলে মনে পরে না । বাস্তবে গণতন্ত্র কোথাও যায় নি । এখানেই ছিল । ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির খোড়া অজুহাতে নির্বাচনে না এসে তিনি তাকে কলুসিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন । সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের পর বেগম জিয়ার সে প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে ।
কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে দেখা হওয়া এক অপরিচিত জনের কথা লিখেছিলাম যিনি আমার কাছে এসে বলেছিলেন তিনি আমার টকশোগুলি দেখেন । বললেন তিনি একজন বোমাবাজ হতে চান । আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রই । হঠাৎ আমাকে অপ্রস্তুত করে ফুঁফিয়ে কেঁদে বললেন তার ছোট ভাইটি পেট্রোল বোমা দগ্ধ হয়ে মারা গেছে সেই কারণেই তিনি বোমাবাজ হতে চান এবং যারা এর জন্য দায়ি তাদের বোমা মারতে চান । বুঝতে পারি তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পরেছেন । ভদ্রলোক আমাকে রোববার রাতে ফোন করেছিলেন । পরিচয় দিয়ে বললেন তার মা আর ভাইয়ের স্ত্রী সেই যে প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর বেগম জিয়াকে অভিশাপ দিচ্ছেন তা এখনো তাদের থামানো যাচ্ছে না । তাকে বলি বেগম জিয়া যদি ভুল করে থাকেন তা হলে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁর বিচার হবে । অভিশাপ দেয়াটা ভাল নয় । মনে হলো না ভদ্রলোক আমার কথায় আস্বস্ত হলেন না। গণতন্ত্র আমরা সকলেই চাই । কিন্তু যে গণতন্ত্র পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ খুন করে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করে অথবা দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় সেই গণতন্ত্র আমরা চাই না । ফের যদি এমনি ঘটে তা হলে প্রত্যাশা করবো সরকার এবারের চেয়েও আরো কঠোর হস্তে তা দমন করবেন।
বেগম জিয়া খালি হাতে পরাজিত সৈনিকের মতো ঘরে ফিরেছেন ঠিক কিন্তু তিনি দেশ ও জনগণকে যে ধ্বংসযজ্ঞ উপহার দিয়ে গেছেন তার খেসারততো দেশের ষোল কোটি মানুষকে বহুদিন ধরে দিয়ে যেতে হবে । তাঁর অবরোধের নির্দেশের কারণে দেড় শতাধিক মানুষ নৃশংস ভাবে পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে মারা গেছেন । আর শfখানেক মানুষ চির দিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন । এই সব হতাহতের দায়তো তিনি এড়াতে পারেন না । তিনি আদালতে যাবেন বলে নিরাপত্তা চেয়েছেন । কিন্তু সারা দেশে যে গত ৯২ দিন ধরে প্রায় বারশত যান বাহন পুড়লো অথবা জনগনের উপর পেট্রোল বোমার আক্রমন চললো সেই সবের নিরাপত্তার বিঘœ কে ঘটালো সেই প্রশ্ন করলে বেগম জিয়া কী জনগনকে বেয়াদব ডাকবেন ? রোববার সিপিডি বেগম জিয়া আহুত ৮১ দিনের অবরোধ আর হরতালের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব দিয়েছে । তাদের হিসাব মতে এই ৮১ দিনে দেশের উৎপাদন ক্ষতি চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা যার মধ্যে তৈরী পোষাক শিল্পে আছে ১৩১৮ কোটি টাকা । তারা সর্বমোট ১১টি খাতের একটি চিত্র তুলে ধরেছে । জিডিপিতে এ ক্ষতির পরিমান দশমিক ৫৫ শতাংশ । এছাড়াও শিক্ষা খাতে যে ক্ষতি তা ভয়াবহ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষকের মতে এই অবরোধ আর হরতালের কারণে শিক্ষার্থীদের গড়ে দৈনিক চার কোটি শিক্ষা ঘন্টা নষ্ট হয়েছে । পনের লক্ষ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী বেগম জিয়ার অবরোধ আর হরতালের ফাঁদে পরে তাদের জীবন থেকে প্রায় তিন মাস মূল্যবান সময় হারিয়ে ফেলেছে । বিএনপিfর ষ্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মেজর (অবঃ) হাফিজ বিবিসি সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন fকোথাকার কী পরীক্ষা জাতি ্খন অন্য পরিক্ষায় নিমজ্জিত? আর এক সদস্য ডঃ ওসমান ফারুক যিনি কিনা এক সময় আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নিউ ইয়র্কে এক দলীয় সভায় বলেছেন eএই আন্দোলনে কত জন মারা গেল আর অর্থনীতির কত ক্ষতি হলো তা চিন্তা করার এখন সময় নেই (আগেতো ক্ষমতা দখল করি)f। ওয়ান ম্যান পার্টি ২০ দলের নেতা কর্ণেল (অবঃ) অলি বলেন পরীক্ষা দুfমাস পিছিয়ে দিলে এমন কিছু অসুবিধা হবে না । মেজর (অবঃ) আখতারুজ্জামান বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বললেন eপরীক্ষা একেবারে উঠিয়ে দেয়া হোকf । বোঝা গেল বিএনপিfর সকলেই এখন চরম রাজনৈতিক দেওলিয়াপনায় ভুগছেন ।
বেগম জিয়া তথা বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে । সে এক ভয়াবহ যুদ্ধ । তার আগে তাদের এই যুদ্ধে জামায়াতের সাথে সামিল করেছিলেন মধ্যযুগীয় একটি ধর্মান্ধ গোষ্টি হেফাজতকে যারা ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে জিম্মি করে তাকে আগুন দিয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন । তখনো সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে তা ভন্ডুল হয়ে যায় । সেই নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের তা-বে ১৭জন পুলিশ, ২ জন বিজিবি সদস্য ও ২ জন সেনাবাহিনীর সদস্য সহ দেশে প্রায় ২০০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে । ৪০০০ গাছ ধ্বংস করা হয়। রেল ষ্টেশন, সেতু, অসংখ্য সরকারি অফিসে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে । মনে হচ্ছিল একাত্তরের একটি নতুন সংষ্করণ । এবার পরিকল্পরা বাস্তবায়নে ইয়াহিয়া-টিক্কার স্থলে বেগম জিয়া । একজন মহিলা যে এত নিষ্ঠুর হতে পারেন তা আগে জানা ছিল না । কিন্তু এত ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পরও তাঁর বিন্দু মাত্র কোন অনুশোচনা দেখা যায় নি । সেই বেগম জিয়া আবার একই খেলায় মেতেছিলেন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি । সঙ্গে তার ল-ন প্রবাসি, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক অবার্চিন বড় ছেলে তারিক রহমান । যাকে দূর্ভাগ্যবশত বিএনপিfর অনেক বাঘা বাঘা নেতা আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন । তেমনটি যদি হয় তা হলে তারেক হবে হাইতির শাসন কর্তা পাপা ডকের (ফ্রাঁসোয়া ডুবালিয়ার) মতো একজন প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট।
বেগম জিয়াতো ঘরে ফিরলেন । বড় প্রশ্ন এরপর কী হবে ? দুটি সম্ভাবনা আছে । একটি বিএনপি নামক দলটির অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা । আর অন্যটি হবে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দলকে নতুন জীবন দান করার চেষ্টা করা । জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে বিএনপিfর কোন ক্ষতি নেই কারণ জামায়াত চিরদিন বিএনপিকেই সমর্থন দিয়ে যাবে । দুই দলের আদর্শগত তেমন কোন ভিন্নতা নেই, একবারেই হরিহর আত্মা । দুই দলই বাংলাদেশেকে একটি মিনি পাকিস্তানে পরিণত করতে চায় । তবে ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম । দুই দল মিলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের চাষ করতে পারে । এখানে সরকারের দৃঢ় ও কঠোর অবস্থান নিতে হবে । বেগম জিয়া যে আদালতে আত্মসর্ম্পন করে ঘরে ফিরলেন অনেকের মতে তাতে সরকারের হাত ছিল । তা যদি হয় তাহলে বিএনপিfর উচিৎ সরকারকে ধন্যবাদ দেয়া কারণ বেগম জিয়া আর তারেক রহমানের কারনে দলটি যে রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে পরেছিল সেখান হতে উঠে আসার উপায় তাদের জানা ছিল না । হয়তো সরকার এই পরিস্থিতি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার হস্ত প্রসারিত করেছে । তা যদি হয় eতত্ত্বাবধায়ক সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারf চিৎকার না করে বিএনপি ২০১৯ সনের নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে । দেশে গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য একাধিক সুস্থ ধারার রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন । বিএনপি তেমন একটি দল হতে পারে । সেটি হতে গেলে তাদেও কিছু মিমাংসিত জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে । তবে সব কথার শেষ কথা বিগত এক বছরের বেশী সময় ধরে দেশে যে ধ্বংস যজ্ঞ চলেছে, যে প্রাণ হানি হয়েছে তার যথপোযুক্ত বিচার হতে হবে এবং বেগম জিয়া এই সময়ে যত পাপ করেছেন তার জন্য জাতির কাছে তাঁর ক্ষমা চাউয়া উচিৎ । নতুবা দেশের শত শত মানুষ তাঁকে চিরদিন অভিশাপই দিতে থাকবেন ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এপ্রিল ৬, ২০১৫

@

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]