@
@
@
@
@ |
@
@
কামারুজ্জামানের ফাঁসি,
শেখ হাসিনা ও পাকিস্তানের হালফিল রাজনীতি
@
প্রফেসর আবদুল মান্নান
@
পেশাগত কাজে দুদিনের
জন্য পাকিস্তানের পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে গিয়েছিলাম। শুক্রবার দেশে ফিরে
এসেছি । এটি আমার পঞ্চমবার লাহোরে যাওয়া। প্রতিবারই একধা মোগলদের রাজধানী
এই শহরটিতে কিছু না কিছু পরিবর্তন লক্ষ করি আর তার সব গুলিই নিরাপত্তা
সংক্রান্ত । তবে ২০১৩ সালে যখন শেষবার গিয়েছিলাম তখন সেখানে লোডশেডিং ছিল
দিনে বার ঘন্টা । এখন তা আট ঘন্টায় নেমে এসেছে । সামনে আরো বাড়বে বলে সকলে
জানালো । এবার মনে হলো শহরটি বেশ কিছুটা অবরুদ্ধ । প্রত্যেক বাড়ী, অফিস, শপিং
সেন্টার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা । এমন
কী লাহোরের বিখ্যাত শাহী বাদশাহী মসজীদ আর প্রখ্যাত সূফী দরবেশ দাতা
গাঞ্জবকসের মাজারের চারিদিক মেসিনগান তাক করা আধা সামরিক বাহিনী । সব
প্রতিষ্ঠানের সামনে ইস্পাতের নির্মিত বড় বড় ব্যারিকেড অথবা পাথরের সøাব আর
এতে পাহারা দিচ্ছে আধুনিক অস্ত্রধারী পাহারাদার । সরকারি অফিসগুলির চার ধারে
বালির বস্তার আড়ালে মেশিনগান নিয়ে বসে আছে পাঞ্জাব পুলিশ অথবা বিভিন্ন
ধরণের আধা সামরিক বাহিনী । মনে হলো রাস্তায় সাধারণ মানুষ আর অস্ত্রধারী
নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা সমানে সমান । আমার জন্য বেশ ভীতিকর পরিস্থিতি ।
দেশে এতদিন জামায়াত-বিএনপিfর পেট্রোল বোমার আতঙ্কে ছিলাম এখানে আতঙ্কটা
ভিন্ন । জঙ্গিবাদ পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ।
পাকিস্তানে যে কোন স্থাপনায় যে কোন সময় উগ্র জঙ্গিবাদীরা হামলা করে
জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে । পেশাওয়ারে সেনাবাহিনীর একটি স্কুলে
হামলা চালিয়ে কিছুদিন আগে জঙ্গি তালেবানরা নির্বিচারে ১৩২ জন স্কুলের
বাচ্চাদের হত্যা করেছে । এরপর নিয়মিত বিরতি দিয়ে বিভিন্ন শহরে জঙ্গিরা হানা
দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে । এই হত্যাকান্ড চালানোর জন্য তাদের সব চেয়ে
বেশী পছন্দ মসজিদে নামাজরত মুসল্লিরা অথবা কোনা জনবহুল আর ব্যস্ত এলাকা ।
এই সব দিক দিয়ে পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চল খাইবার-পাখতুন খাওয়া প্রদেশ সব
চেয়ে বেশী নাজুখ। এই প্রদেশে ইমরান খানের তেখরিকে-ইনসাফ ক্ষমতায় । ক্ষমতায়
যেতে তাকে সহায়তা দিয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী গুলো । একদা বিশ্বজয়ী
ক্রিকেটার ইমরান খানকে বর্তমানে পাকিস্তানি জঙ্গিদের বড় পৃষ্টপোষক হিসেবে
দেখা হয় । রাজনীতিতে আসার পর ইমরান খান সম্পূর্ণ একজন নষ্ট চরিত্রের মানুষ
। লাহোর এতদিন জঙ্গি হামলা হতে কিছুটা নিরাপদ ছিল । বর্তমানে তা আর বলা যাবে
না । এই শহরেও মাঝে মধ্যে কোন কোন নির্দিষ্ট এলাকায় জঙ্গিরা প্রাণঘাতি হামলা
করে । পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ প্রদেশ বেলুচিস্তান । সব
সময় উন্নয়ন বঞ্চিত । একেবারে একাত্তর পূর্ববর্তি বাংলাদেশের মতো । তারাও
মাঝে মধ্যে হুমকি দেয় এমনটি চলতে থাকলে তাদেরও বাংলাদেশের পথ ধরতে হবে ।
এখানে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বেশ সক্রিয় । তারা প্রদেশটির পূর্ণ
স্বাধীনতা চায়। সমস্যা হচ্ছে তাদেরতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো কোন নেতা
নেই । তাদের একজন বড় নেতা নওয়াব আখবার খান বুগতি পারভেজ মোর্শারফের সময় সেনা
বাহিনীর হাতে নিহত হয় বলে সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করে । প্রদেশটিতে গোত্র
সংষ্কৃতি চালু থাকার কারণে সুস্থ ধারার রাজনীতি চালু হতে পারে নি । এখানেও
জঙ্গিরা বেশ শক্তভাবে আস্তানা গেড়েছে । আমদানি হয়েছে আই এস আর আল কায়েদা ।
পাকিস্তানের এই নাজুক দশার পিছনে আছে তাদের দীর্ঘ দিনের সেনা শাসন আর এই
অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা ।
আসলে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলি হতে শুরু করে পাকিস্তান আর আফ্রিকা মহাদেশে
বর্তমানে যে জঙ্গিবাদের উত্থান তার পিছনে একক অবদান যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত
পররাষ্ট্র নীতি আর তাদের সব অপকর্মে সৌদি আরবের মতো কট্টোর ওয়াহাবিবাদে
বিশ্বাসী রাজতনন্ত্রের অকুণ্ঠ সমর্থন ।
দেশ হতে যে দিন লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা হই সেদিন একাত্তরের ঘাতক জামায়াতের
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির প্রতিবাদে জামায়াত
শিবিরের হরতাল চলছে । যেহেতু তাদের হরতালের ডাকে এখন কেউ তেমন একটা সাড়া
দেয় না সেহেতু তারা তাদের এই সব নাশকতা নির্ভর কর্মসূচী ইদানিং পেট্রোল বোমা
মেরে অথবা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে । এই দিনেও
ব্যতিক্রম ছিল না । সকালের দিকে শিবিরের তষ্কররা সাভারে একটা যাত্রীবাহী
বাসে আগুন দিয়েছে । তবে সৌভাগ্যবশত তাতে সেদিন যাত্রীদের তেমন কোন একটা
ক্ষতি হয় নি । কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়াতে জামায়াতের বাইরে দেশের বেশ
কয়েকজন সুশীল ব্যক্তির দিলে বেশ চোট লেগেছে । তাদের একজন সাবেক সাংবাদিক
সাদেক খান । সাদেক খানের পিতা আবদুল জব্বার খান আইউব খানের জামানায়
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৬ষ্ট ষ্পিকার ছিলেন । ভাইদের মধ্যে এ জেড এম
ওবায়দুল্লাহ খান একজন আমলা কাম বড় মাপের কবি ছিলেন । এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে
তার কৃষিমন্ত্রী হয়েছিলেন । বেশ উদার মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন । আর এক
ভাই রাশেদ খান মেনন সব সময় বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । বর্তমানে
শেখ হাসিনা সরকারের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী । বড় ভাই প্রয়াত এনায়েত উল্লাহ
খানও বাম ধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । কট্টর মৌলবাদী বিরোধী ধ্যানধারণা
পোষণ করতেন যা তার সম্পাদিত পত্রিকা সাপ্তাহিক হলিডেতে প্রতিফলিত হতো ।
বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলেন । বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর জিয়ার সাথে গিয়ে
ভিড়েন এবং রাষ্ট্রদূত হন। ছোট ভাই শহিদুল হক খান বাদল । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন । বর্তমানে হলিডে পত্রিকা সম্পাদনা করেন ।
একবার সিনেমা বানাতে গিয়েছিলেন । সুবিধা হয় নি । সাদেক খানও ষাটের দশকে
বিশিষ্ট শিল্পী মুর্তজা বশিরকে নিয়ে eদূর হ্যায় সূখকা গাঁওf নামের একটা
সিনেমায় হাত দিয়েছিলেন । সেই প্রকল্পও মাঝপথে থেমে গিয়েছিল । মনন নামের আর
এক ভাই দীর্ঘদিন প্রবাসী । দেশের রাজনীতির সাথে তার তেমন কোন সম্পর্ক নেই ।
একাধিক বোনের মধ্যে বেগম সেলিমা রহমান বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক সঙ্গি । যৌবন
কালে সব ভাই বামধারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । ব্যতিক্রম হয়তো
ওবায়দুল্লাহ খান । সেই সাদেক খান যখন কামারুজ্জামানের ফাঁসির চূড়ান্ত আদেশ
হয়ে গেছে এবং তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার নাম করে সময় ক্ষেপণ
করছেন ঠিক তখন দুfটি টিভি চ্যানেলে গিয়ে সকলকে অবাক করে দিয়ে বললেন ৪৪ বছর
আগের এই সব ঘটনাকে ভুলে গিয়ে দেশ গড়ার জন্য সকলের সাথে মিলে মিশে কাজ করা
উচিৎ । তিনি বলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদি শাসনের অবসানের পর নেলসন
মেন্ডালার মতো eট্রুথ ও রিকন্সিলিয়েসনf এর মতো একটা ব্যবস্থা করে সকলকে
ক্ষমা করে দেয়া উচিৎ । অর্থ eভুলে যাও ও ক্ষমা করে দাওf । মানুষের বয়স হলে
শরীরে লবণের স্বল্পতা দেখা দেয় যার ফলে অনেকে প্রলাপ বকেন । মনে হচ্ছে
সাদেক খানও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । তিনি দাবি করেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেছিলেন যদিও তার সেই অংশগ্রহণ নিয়ে অনেক কথা শোনা যায় । তারপরও
বলি এটি চিন্তার বাইরে ছিলযে তার মতো একজন ব্যক্তি এই সময় এই ধরণের এমন
একটি প্রস্তাব প্রকাশ্যে দুfটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে উপস্থাপন করবেন । এর
জন্য জাতির কাছে সাদেক খানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ।
দ্বিতীয় জন গণস্বাস্থ্যের ডাঃ জাফরুল্লাহ । তিনি একেবারেই মুক্তিযুদ্ধের
ফসল । তার গণস্বাস্থ্য প্রকল্প আশি আর নব্বই এর দশকে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ
করেছিল । বর্তমানে বেগম জিয়ার একজন অঘোষিত উপদেষ্টা । ইতোঃপূর্বে তিনি
মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের সমালোচনা সমর্থন করে বিবৃতি দিয়ে আদালত
অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন । এখনো তা হতে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত হন নি ।
কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তিনিও বেশ দিলে চোট পেয়েছেন ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি ঘরাণার এক সংগঠনের এক সভায় বললেন
কামারুজ্জামানকে ফাঁসির রজ্জুতে বিশ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে তার মৃত্যু নিশ্চিত
করার জন্য সরকারের উচিৎ জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া । জানা মতে ডাঃ জাফরুল্লাহ
একজন চিকিৎসক । ফাঁসি বিষয়ে তিনি যে একজন বিশেষজ্ঞ তা জানা ছিল না । এই
দুfজন ছাড়াও কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে আরো যারা মর্মাহত হয়েছেন তাদের মধ্যে
আছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন,হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ, ইউরোপিয়ান
ইউনিয়ন, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আর তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট তাইপ এরডোগান।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ তাদের পূর্বের ধারাবাহিকতায় বলেছে
এই বিচারকার্য যথাযথ ভাবে হয় নি এবং তাতে আন্তর্জাতিক মানের অভাব ছিল । কী
ভাবে ছিল তা তারা বলে না । তারা এও ভুলে যায় বিশ্বে বর্তমানে সব চেয়ে বেশী
মানবাধিকার লংঘিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে । গড়ে বছরে পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়
। বর্ণবাদ এখন দেশটিতে দ্রুত মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে । দেশটি ফিরে যাচ্ছে
পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে । উত্তর আফ্রিকা হতে শুরু করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে
তারা তছনছ করে দিয়েছে । যুদ্ধবাজ হিলারি ক্লিন্টন আগামী নির্বাচনে
ডেমোক্রেটদের প্রার্থী। নির্বাচিত হলে অনেক দেশেরই খবর আছে । হিউম্যান
রাইট্স ওয়াচ তাদের নিজ দেশের মানবাধিকার নিয়ে চুপচাপ । আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইবুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জামায়াত বহির্বিশ্বে ২৫ মিলিয়ন ডলার
ব্যয় করেছে যা এখন প্রমাণিত । যুক্তরাজ্যের লবিষ্ট ব্যারিষ্টার টবি
ক্যাডমেনকে নিয়োগ দিয়েছে যাতে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের এই
ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পারেন । তিনি এই বিচার কাজ বন্ধ করার
জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আরব দেশ গুলি চষে ফেলেছেন । কয়েক সপ্তাহ
আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমার একটা লেখা ছাপা
হয়েছিল । সেখানে আমি টবি ক্যাডমেনের বিষয়টা উল্লেখ করেছিলাম । বলেছিলাম
জামায়াত একজন জাঁদরেল ইহুদি লবিষ্ট নিয়োগ করেছে । ক্যাডমেন সেই পত্রিকার
সম্পাদককে চিঠি লিখে তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন তিনি ইহুদি নন । জন্মগত
ভাবে একজন খ্রিষ্টান তবে নিজে একজন নাস্তিক এবং তিনি জামায়াতের পক্ষে লবি
করে বেরাচ্ছেন তা সত্য নয়। তিনি ন্যায় বিচারের পক্ষে কথা বলছেন মাত্র । আর
ধর্মবিশ্বাসের সাথে তার পেশার কোন সম্পর্ক নেই । এরপর তার চিঠির সূত্র ধরে
আমি একটা সেই পত্রিকায় কলাম লিখে প্রমাণ দিয়ে বলেছিলাম তিনি কখন কোথায় কোন
পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কোথায় মতিউর রহমান নিযামীর ছেলে নাকিবুর
রহমানকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন মাবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
ট্রাইবুন্যালের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য। আমার এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর
তিনি এগার পৃষ্টার এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে ইনিয়ে বিনিয়ে তার পক্ষে সাফাই
গাওয়ার চেষ্টা করেছেন । জামায়াত যে শুধু বহির্বিশ্বে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে
প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিশাল পরিমাণের অর্থ ব্যয় করছে তাই নয়, দেশের ভিতরেও
তারা বিপুল পরিমাণের অর্থ ব্যয় করছে যার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণের অর্থ
বিভিন্ন মিডিয়া, সাংবাদিক ও সুশীলদের পকেটে গিয়েছে । তার একটা তালিকা আমার
কাছে ছিল কিন্তু তার সত্যতার প্রমাণ হাতে ছিল না বলে তা প্রকাশ করা হতে
বিরত থেকেছি ।
কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান জামায়াত ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন
করেছিল । কামারুজ্জামানের ব্যাপারে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া চোখে পরে নি । আমি
লাহোরের বুদ্ধিজীবী সমাজের বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ করে মনে হয়েছে এই
ব্যাপারে তাদের তেমন কিছু জানা নেই তবে তা যদি হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশ
একটা ভাল কাজ করছে । এই কাজের জন্য তাদের কয়েকজন শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ
জানায় এবং বলে পাকিস্তানের দূর্ভাগ্য শেখ হাসিনার মতো একজন সাহসী
প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশে নেই । তাদের বলি শেখ হাসিনা শুধু সাহসী নন
দুঃসাহসীও বটে । তিনি এই যুদ্ধাপরাধীদেও ফাঁসিতে না ঝোলানোর জন্য অনেক বড়
বড় মানুষের কাছ হতে টেলিফোন পেয়েছেন যা তিনি উপেক্ষা করার সাহস দেখিয়েছেন।
পাকিস্তানের সেই বুদ্ধিজীবীরা আরো জানান পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার জন্য
কিছুটা হলেও জামায়াত দায়ী কারণ তারা হচ্ছে সকল ধরণের জঙ্গিবাদের আঁতুরঘর ।
করাচিতে জামায়াত বেশ ভাল অবস্থানে আছে কারণ সেখানে বিহারি মোহাজের বেশী ।
মোহাজেরদের এমকিউএম নামের একটি রাজনৈতিক দল আছে । পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে
তাদের অবস্থান তৃতীয় । নিয়ন্ত্রণ করে লন্ডন হতে আলতাফ হোসেন নামের একজন বড়
মাপের সমাজবিরোধী দুষ্কৃতকারি । তার নামে পাকিস্তান ও লন্ডনে মানি লন্ডারিং
ও মানুষ হত্যার একাধিক মামলা আছে । দুfদশকেরও বেশী সময় ধরে তিনি সেখান হতে
পাকিস্তানে তার দল পরিচালনা করছেন। গ্রেফতারের পর তিনি বর্তমানে জামিনে
আছেন । গত বুধবার লন্ডন পুলিশ তাকে পুনরায় আটক করে পাঁচ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ
করেছে । মধ্য জুলাই পর্যন্ত তার বৃটেন ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ।
এতে শুধু এমকিউএমই নয় জামায়াতও বিপদে পরেছে কারণ এমকিউএম আর জামায়াত হরিহর
আত্মা যেমনি বাংলাদেশে বিএনপি ও জামায়াত । তবে লাহোরের বেশ কয়েকজন রাজনীতি
সচেতন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আমাকে জানালেন এমকিউএম এর এই সুসম্পর্ক শুধু
নেতা পর্যায়ে, কর্মী পর্যায়ে নয় । অনেকটা বাংলাদেশে বিএনপি আর জামায়াতের
সম্পর্কের মতো । লন্ডন প্রবাসী বিএনপিfর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমানে
আলতাফ হোসেনের মতো রিমোট কন্ট্রোলে বিএনপিকে পরিচালনা করেন যার ফলে দলটির
বারটা বেজেছে । তারেক রহমানের উপরও ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করেছে । এখন
দেখতে হবে এই দুজনের ভাগ্যে আগামীতে কী অপেক্ষা করছে ।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতির মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে এখনো সেখানে
সাধারণ মানুষ মনে করে তাদের দেশের সব সমস্যা সেনাবাহিনী সমাধান করে দেবে ।
তারা বুঝতে পারে না পাকিস্তানের সব সমস্যার মূল কারণ রাজনীতিতে যখন তখন
সেনা বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ । বেশ কিছু রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করেন
তাদের দেশে এই অসুস্থ ধারার নষ্ট রাজনীতি চলতে থাকলে দেশটির অখন্ডতা বজায়
রাখা কঠিন হয়ে পরবে । তবে আশার কথা হচ্ছে সেই দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের
মধ্যে এইসব ব্যাপারে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষণীয় । তারা চেষ্টা করছে আধুনিক
শিক্ষায় শিক্ষিত হতে । বেশ কয়েকজন জানালো খাইবার পাকতুন খাওয়ায় এই যে
জঙ্গিবাদের রমরমা অবস্থা কারণ এই সব অঞ্চলে স্কুল কলেজ প্রায় নেই বললেই চলে
। আছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অসংখ্য মাদ্রাসা যেখানে মূলতঃ অন্যেও
প্রতি হিংসা আর বিদ্বেষই শিক্ষা দেয়া হয় । এই অবস্থাতো বাংলাদেশেও বেশ
প্রকট ভাবে লক্ষণীয় । বর্তমান ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটি স্বীকার করতে
হবে কোন একটি অঞ্চলে একটি দেশ ভাল থাকলে হবে না । এক রাষ্ট্রের নষ্ট
রাজনীতি অঞ্চলের অপরাপর দেশের উপর পরতে বাধ্য । এবার লাহোওে গিয়ে আবারো মনে
হলো বাংলাদেশ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সব দিক দিয়ে ভাল আছে । অখন্ড
পাকিস্তানের ২৪ বছরে কোন বাঙালি পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমে সুযোগ পায় নি । আজ
বাংলাদেশে সফররত সেই পাকিস্তানকে প্রথম একদিনের ম্যাচে ৭৯ রানে হারোলো ।
দিনটি ছিল মুজিব নগর দিবস । বাংলাদেশের টাইগারদের টুপি খোল অভিবাদন ।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । এপ্রিল ১৭, ২০১৫
@
@
@
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
@
[প্রথমপাতা] |
@
@
@
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|