প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

@

বাঙালি একদিন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হবেন!

@


প্রফেসর আবদুল মান্নান

@

আগামী ৭ মে বৃটেনের ৫৬তম পার্লামেন্ট নির্বাচন । সরাসরি ভোটে ভোটাররা পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউজ অব কমনস এর ৬৫০ জন সদস্য নির্বাচন করবেন । বৃটেনের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে তেমন একটা আলোচনা হয় না । হলেও তা সিলেট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ কারণ ওই দেশে কয়েক লাখ বাঙালি বসবাস করলেও সিলেট জেলার বংশোদ্ভুত অধিবাসির সংখ্যা বেশী । পঞ্চাশ বছর আগেও এই দেশে বাঙালিরা পড়ালেখায় ব্যবসায় বাণিজ্যে বেশ পিছিয়ে ছিল । বেশীর ভাগ মানুষ অন্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকুরি করতেন । অনেকে কামলা খাটতেন । তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের বাঙালিরা কিছুটা ধীরে হলেও অনেকটা বদলে গেছেন । তারা এখন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক । বৃটেনের প্রায় নব্বই ভাগ ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টের মালিক বাংলাদেশী । ওই দেশের মানুষ এই সব রেষ্টুরেন্টকে eকারী শপe হিসেবে চেনে । সাধারণ কথায় মাছ ভাতের দোকান । সাথে সরাব খানা অবশ্যই থাকতে হবে । এখন অনেক পূর্ব ইউরোপীয় সেই সব দোকানে কাজ করে । বাঙালি ছাত্ররাও কাজ করতে পারে । ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কলেজের মালিক, শিক্ষকতা ও অন্যান্য পেশায়ও অনেকে আছেন । সে দেশে আওয়ামী লীগ বিএনপিও আছে আর আছে বেশ শক্তিশালী জামায়াত । আওয়ামী লীগ আর বিএনপি নিজেদের মধ্যে কোন্দল আর দলাদলিতে ব্যস্ত । বাংলাদেশের চেয়ে বৃটেনে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে জামায়াত বেশ সংগঠিত ও শক্তিশালী । অসংখ্য শিবির সদস্য বিলেতে পড়ালেখা করে জামায়াতের অর্থে যাদের বেশীর ভাগই আইন শাস্ত্রে। বছর কুড়ি পর বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে নিঃসন্দেহে জামায়াতী আইনজীবীর আর একই মতাদর্শের বিচারপতির সংখ্যা অন্য যে কোন দলের তুলনায় বেশী হবে । বর্তমানে বৃটেনে আবার প্রচুর বাংলাদেশী সে দেশের রাজনীতির সাথেও জড়িত । স্থানীয় সরকারে অনেক বাংলাদেশী কাউন্সিলর বা স্থানীয় মেয়র হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন । ১৯৯৭ সালে একবার সুযোগ এসেছিল পওলা মনজিলা উদ্দিন নামের একজন বাঙালির বৃটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচন করার । আসনটি পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যূষিত এলাকায় এবং এই এলাকায় ঐতিহাসিক ভাবে শ্রমিক দল (লেবার পার্টি) শক্তিশালী । পার্লামেন্ট সদস্য পিটার শোর অবসর নিলে তার স্থলে লেবার যাকেই মনোনয়ন দেবে ধরে নেয়া হয় তিনি নির্বাচনে জয়ী হবেন । সেই দেশে মনোনয়নের আগে দলের তালিকা ভfক্ত কাউন্সিলররা আবার ভোট দিয়ে প্রার্থী বাছাই করেন । সেই নির্বাচনের সময় আমার লন্ডনে অবস্থান করার কারণে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি দূর দেশের এক বাঙালি । মনে মনে বেশ উৎফুল্ল একটি ভাবের উদয় হলো । ভেতো বাঙালি একেবারে বিলেতের পার্লামেন্টে? চাট্টি খানা কথা নয় । আবার প্রায় আটশত কাউন্সিলরের মধ্যে পাঁচ শত জন বাঙালি । বাছাই পর্বের দিন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমাদের বেশ কিছু বঙ্গ ভ্রাতা প্রচার চালাচ্ছেন যেন পওলা কোন অবস্থাতেই জিততে না পারেন । আমার জন্যতো ভিরমী খাওয়ার মতো অবস্থা । আমার বন্ধুর কাছে আমাদের বাঙালি ভাইদের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে তার কারণ জানতে চাইলে সে জানালো পওলার বাড়ি রাজশাহীতে সেই কারণে এখানকার বাঙালিদের কাছে সে গ্রহণযোগ্য নয় । গ্রহণযোগ্য হতে হলে তাকে একটি বিশেষ জেলার মানুষ হতে হবে । দিন শেষে দেখা গেল বেচারা পওলা মনজিলা উদ্দিন কোন রকমে ৫০টির মতো ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়ছেন । মনোনয়ন পেয়েছে উনা কিং নামের একজন আফ্রো ক্যারিবিয়ান । যারা পওলাকে হারিয়েছেন তারা বিজয় উদযাপন করেছেন বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিতরণ করে । সাধে কী আর অক্সফোর্ড শিক্ষিত প-িত নিরোদ সি চৌধুরী বাঙালিকে eআত্মঘাতি বাঙালিf হিসেবে অবহিত করেছেন? পরে দল হতে পওলাকে হাউজ অব লর্ডস এর সদস্য করা হয়েছিল । হয়ে গেলেন ব্যারোনেস পওলা মনজিলা উদ্দিন । অনেক দিন পর সিলেটের রুশনারা আলী হাউজ অব কমনস এর সদস্য হয়েছিলেন । এই সব ব্যাপারে ভারতীয় বা পাকিস্তানিরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তববাদী । তাদের মধ্যে গোত্র সংষ্কৃতি চালু থাকলেও জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে তা কদাচিত ব্যবহৃত হয় । তারা সেখানে তাদের দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে পাল্টা পাল্টি শো ডাউন করেন না যেটি বাংলাদেশীদের পক্ষে স্বাভাবিক ঘটনা ।
এবার আসন্ন ৭ মেfর নির্বাচন কিছুটা হলেও বাংলাদেশে গুরুত্ব পেয়েছে মূলত দুটি কারণে । এই প্রথম বার ১২ জন বাঙালি বিভিন্ন দল হতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন । তারা প্রায় সকলেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয়ী হয়েছেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন । সকলেই যোগ্য প্রার্থী । আর দ্বিতীয় যে কারণে বাংলাদেশের মানুষ ও মিডিয়া কিছুটা হলেও এই নির্বাচনের খোঁজ খবর রাখছেন কারণ শ্রমিক দল হতে টিউলিপ সিদ্দিক নামের একজন তরুণী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন । অনেকে হয়তো টিউলিপকে চিনবেন না । টিউলিপের জন্ম, বেড়ে উঠা আর পড়া লেখা সব বৃটেনে । টিউলিপ ইংরেজি সাহিত্যে বিএ পাশ করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হতে । একই বিষয়ে এম এ পাশ করেছেন লন্ডনের প্রখ্যাত কিংস কলেজ হতে । দ্বিতীয় এম এ রাজনীতি বিজ্ঞানে একই কলেজ হতে । টিউলিপের মাfর যখন বিয়েই হয় নি তখন তিনি ও তার বড় বোন লন্ডনে অনেকটা শরণার্থী জীবন যাপন করেছেন কারণ তাঁদের পরিবারের সব সদস্যকে এই ঢাকায় একদল সেনা সদস্য হত্যা করেছিল, সেই ১৯৭৫ সালে । দুfবোন বিদেশে থাকাতে সেই যাত্রায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন । পাঠক, ঠিকই আঁচ করতে পেরেছেন এই দুই বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা । ওই শরনার্থী অবস্থায় লন্ডনে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণরত মেধাবী শফিক সিদ্দিকের সাথে শেখ রেহানার বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে রেদওয়ান সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক আর আজমিন সিদ্দিক। সেই টিউলিপ এখন হাউজ অব কমনস্ এর ফটকের কড়া নাড়ছেন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সেখানে প্রবেশ করবেন বলে । তবে কাজটি মোটেও সহজ নয় । তার প্রধান কারণ যে এলাকা হতে টিউলিপ প্রতিদ্বন্ধিতা করছে সেই হেমষ্টেড-কিলবার্ণ এলাকায় প্রধাণত ধনী বৃটিশরা বাস করেন যাদের বেশীর ভাগই রক্ষণশীল বা কনজারভেটিব দলকে সমর্থন করেন । টিউলিপ প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন লেবার দল হতে । বর্তমানে এই আসনে কমনস সভায় প্রতিনিধিত্ব করেন দুfবার অস্কার জয়ী বিখ্যাত অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন । তিনি আগাম ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন না । এটি বৃটিশ গণতন্ত্রের রেওয়াজ । কেউ আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে না চাইলে বেশ আগেই ঘোষণা দিয়ে দেন যাতে দল অন্য আর একজন প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করতে পারেন । এই আসনটি পেতে এবার রক্ষণশীল দলও বেশ মরিয়া ।
বৃটেনের পত্রিকাগুলি টিউলিপের প্রতিদ্বন্ধিতাকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে । ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকা টিউলিপের
প্রতিদ্বন্ধিতার খবর ও তার নির্বাচনি প্রচার বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে । ১৫ এপ্রিল আর একটি বহুল প্রচারিত ও
জনপ্রিয় পত্রিকা ইভনিং ষ্টান্ডার্ডে পাঠকপ্রিয় বিশ্লেষক রোসমন্ড আরউইন টিউলিপ সিদ্দিকের প্রার্থিতা, তার পূর্বের
ইতিহাস, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি নিয়ে বেশ দীর্ঘ এক বিশ্লেষণ ধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ
করেছেন । লিখেছে এলাকার অনেক নামকরা মানুষ টিউলিপের জন্য প্রচারে নেমেছেন । অনেকে টিউলিপকে
অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেছেন টিউলিপের মধ্যে তারা বৃটেনের ভবিষৎ প্রধানমন্ত্রী দেখতে পাচ্ছেন ।
আরউইন লিখেছেন টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা যিনি নিজে ১৯ বার হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে গিয়েছেন তাকে
দুটি উপদেশ দিয়েছেন । eত্যাগ হচ্ছে আমার (শেখ হাসিনা) প্রধান শিক্ষা । তুমি যদি জনগণের সেবক হও
তখন সম্পূর্ণ দেশটাই তোমার পরিবার।f টিউলিপ আরউইনকে বলেছেন তার খালা তাকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন
সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে এবং তুমি যদি তোমার দলের হুইপের সাথে কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করো তাহলে তা তাকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে হবে । কিন্তু এই সব খবর বাংলাদেশের মিডিয়ায় খুব বেশী গুরুত্ব পায় না । ডেইলি মেইল বলে একটি কানকথা আর স্ক্যান্ডাল নির্ভর পত্রিকা টিউলিপ সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য ছেপেছে । এটি হচ্ছেন একটি দুটাকার পত্রিকা । বিনা পয়সায়ও বিলি হয় । আজগুবি খবরে ঠাসা । সেই পত্রিকার খবর বাংলাদেশের দুfএকটি পত্রিকা বেশ খুশি মনে ছেপেছে । তাদের সহ্য হচ্ছে না বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন খোদ বৃটেনের পার্লামেন্টে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন । টিউলিপকে শুধু যে রক্ষণশীলদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাই নয় বিলেতের প্রবাসী জামায়াত-বিএনপিকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে । সেখানে তারা তার বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্লান্তিহীন ভাবে অপপ্রচারে নেমে পরেছে । বলছে টিউলিপ নাকি বাংলাদেশের রাশিয়া হতে অস্ত্র ক্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন । আমাদের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের সময় টিউলিপকে সাথে নিয়ে যান । টিউলিপ এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন তার খালার সাথে অনেক দিন তার দেখা হয়নি । তিনিই তাকে সাথে নিয়েছিলেন তার সাথে কিছু সময় কাটাবেন বলে । পুতিন, শেখ হাসিনা ও জয়ের সাথে তার একটা গ্রুপ ছবি আছে । সেটি বিএনপি-জামাতিরা দেখিয়ে বলছে যে টিউলিপ রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের অস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে জড়িত থাকতে পারে সে কী ভাবে কমনস সভার সদস্য হতে পারে? এই আহম্মকরা বুঝে না যে
রাশিয়ার সাথে অস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে টিউলিপের কোন ভূমিকা থাকতে পারে না । এই সব হচ্ছে দুই রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের বিষয় এখানে টিউলিপের ভূমিকার কোন সুযোগই নেই । আর দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে টিউলিপের নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ ভোটার সাদা চামড়ার । তারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না । তবে বাংলাদেশে রাজনীতির নামে পেট্রোল বোমা সংষ্কৃতির কথা তারা অনেকেই শুনেছে বা পত্রিকার পড়েছে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে বাঙালি ভোটারের সংখ্যা শতকরা ০.৯ ভাগ । আসলে জামায়াত বিএনপির এটি সহ্য হচ্ছে না তাদের এক বড় নেতা এই দেশে মাথায় আন্তর্জাতিক হুলিয়া নিয়ে যাযাবর জীবন যাপন করছেন আর বঙ্গবন্ধুর নাতনী কমনস্ সভায় ঢুকার জন্য দরজার কড়া নাড়ছেন । আর কাঁহাতক সহ্য করা যায় ? সব কিছুরতো একটা সীমা আছে । যুক্তরাষ্ট্রের সাদা বাড়ীতে যখন কালো প্রেসিডেন্ট প্রবেশ করতে পারে তা হলে বলাতো যায় না কোন একদিন বৃটেনে একজন বাঙালি সে দেশের প্রধান মন্ত্রীও হতে পারেন । রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই বলে একটা কথাতো চালু আছে । অনুজ প্রতিম বন্ধু শফিকের কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য শুভ কামনা ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । এপ্রিল ২১, ২০১৫

@

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]