[প্রথমপাতা]
|
সাভার ট্র্যাজেডি সকলের চোখ খুলে দিক
প্রফেসর আবদুল মান্নান
এই লেখাটি যখন ছাপা হবে তখন হয়তো সাভারের মর্মষ্পর্শি ও হৃদয় বিদারক ঘটনার
উত্তাপ কিছুটা হলেও স্থিমিত হয়ে আসবে । তবে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর
সকল মহল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য যেভাবে জানবাজি রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম
করেছেন তাদের অবদান এই জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে । পূর্বের ধারাবাহিকতায়
ঘটনা নিয়ে বেফাঁস কথা ও নোংরা রাজনীতিও কম হয়নি । প্রথম দিন বিরোধী দলীয়
নেত্রী বেগম জিয়ার সাথে অকুস্থলে গিয়েছিলেন ব্যরিস্টার মওদুদ । গিয়েই তিনি
তার স্বভাব চরিত ভঙ্গিতে বললেন ‘সরকার সেনা বাহিনীকে ঠিক মতো কাজে লাগাচ্ছে
না ’। দলের নেতা হান্নান শাহ কম যান কিসে ? তিনি বললেন ‘ভাগ্যিস আমরা হরতাল
ডেকেছিলাম, না হয় আরো অনেক বেশী মানুষ হতাহত হতে পারতো’। সাথে যোগ করলেন
‘আল্লাহ সরকারের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছেন । সরকার পরিকল্পনা করেছিল
হেফাজতের ৫ তারিখের অবরোধ ঠেকাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ব্যবহার করবে সে
পরিকল্পনা তিনি নস্যাৎ করে দিয়েছেন’ । ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী একসময়ের
রাষ্ট্রপতি । এখন একটি ক্ষুদ্র দলের বড় নেতা । কিছু না বললে নয় । তিন বাণি
দিলেন ‘তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল না করলে এমন হতো না’। ডঃ কামাল
হোসেন একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি । তিনি জানিয়ে দিলেন ‘রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা
পাগলদের হাতে চলে গেছে’ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তুমুল জনপ্রিয় সহকর্মী
তার নিত্য দিনের টকশোতে জানিয়ে দিলেন ‘সরকার পাগল আর মাতাল দিয়ে দেশ
চালাচ্ছে’। হেফাজতের মাওলানা রুহি জানিয়ে দিলেন ’সরকার আল্লাহ্র বিরুদ্ধে
যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারই পরিনামে এই গজব ’। তবে সব চেয়ে বড় বোমাটি ফাটালেন
আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং এক কালের ডাকসাইটে আমলা ডঃ মহিউদ্দিন খান
আলমগীর । তিনি বললেন আসলে ঘটনার দিন হরতাল ওয়ালারা রানা প্লাজার স্তম্ভ ধরে
ধাক্কা ধাক্কি করার ফলে ভবনটা ধসে পরলো । ভাগ্যিস তার সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমগুলি দেখার বা পড়ার সময় নেই । থাকলে আমি নিশ্চিত তিনি মানে সম্মানে
দেশ ত্যাগ করতেন । বিএনপি’র খোন্দাকার ঘোষণা করলেন ’ঝাঁকুনি দিয়ে ভবন নয়
সরকারকে সরানো হবে ’।
শিল্পকারখানায় দূর্ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয় । বিশ্বে এমন কোন নজির নেই যেখানে
বড় বড় দূর্ঘটনা ছাড়া শিল্পোন্নয়ন হয়েছে । যে দেশ আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের
দেশে শিল্পকারখানায় দূর্ঘটনা ঘটলে মানবাধিকার গেল গেল বলে এত হৈ চৈ ফেলে
দেয় সেই যুক্তরাষ্ট্রে উনবিংশ এবং বিংশ শতকের গোড়ার দিকে অজস্র শিল্প
দূর্ঘটনা ঘটেছে । সেই দেশের কয়লা খনিতে ভুমি ধসে শ্রমিকের মৃত্যুতো একটি
নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । একই চিত্র ইংল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য
দেশেও । শিল্প বিপ্লবের পর যখন ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারে বস্ত্র কারখানা
গড়ে উঠে তখন কাজের শিফ্ট ছিল নুন্যতম পক্ষে বার ঘন্টা । শ্রমিকদের জন্য
অনেক মালিক থাকার ব্যবস্থা করেছিল । কিন্তু ব্যবস্থা ছিল দুজন শ্রমিকের
জন্য একটা খাট । একজন কারখানায় কাজ করবে অন্যজন ওই খাট ব্যবহার করবে । ১৯১১
সালে নিউ ইয়র্কের ট্রাইএঙ্গেল সার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরিতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৪৬
জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল । একটি কারখানায় যখনই কোন দূর্ঘটনা হয় তখনই সেই
দূর্ঘটনার জন্য সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানার মালিকদের সকলে একক ভাবে দায়ি করেন
। এটি অবশ্যই ঠিক একটি কারখানায় শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া এবং
ভালমন্দ দেখার প্রাথমিক দায়িত্ব মালিকদের । বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পের
বয়স বড়জোর তিন দশক । সঠিক অর্থে একে পূর্ণাঙ্গ শিল্পও বলা যায় না । এটি
সংযোজন নির্ভর শিল্প । অর্থাৎ পোষাক হিসেবে যা রপ্তানি হয় তার প্রায়
সম্পূর্ণ কাঁচামালই আমদানী করতে হয় । দেশে তা শুধু সংযোজন করা হয় । মূল্য
সংযোজন ১০% এর বেশী নয় । এই শিল্প এই দেশে গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত
ভাবে, যত্রতত্র । সারা দেশে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার
তৈরী পোষাক কারখানা আছে । এই শিল্পে চল্লিশ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করে যার
৯০% নারী । এই খাত হতে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি ডলার (২৪ বিলিয়ন
ডলার) আয় করে । বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোষাক
প্রস্তুতকারি দেশ। কিন্তু এই পর্যন্ত কোন সরকারই এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটির
জন্য কার্যকর কোন নীতিমালা তৈরি করেনি । এই শিল্পের যারা মালিক তাদের আছে
বিজেএমইএ’র মতো একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন যারা প্রয়োজনে সরকারকে নাকে
দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারে । শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই । যারা নিজেদেরকে
শ্রমিকদের প্রতিনিধি মনে করেন তারা নিজেদের স্বার্থের বাইরে কদাচ যেতে
পারেন ।
যে সাড়ে চার হাজার পোষাক প্রস্তুতকারি কারখানা আছে এই কারখানা গুলি যেসব
ভবনে গড়ে উঠেছে তাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায় । প্রথমতঃ এই গুলির একটি
উল্লেখযোগ্য সংখ্যার অবস্থান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে । সেখানে কখনো
সাভারের মতো দূর্ঘটনা ঘটে না কারণ সেখানে দেশী এবং বিদেশী যারাই বিনিয়োগ
করেন তাদের ভবন তৈরী করার সময় একটি নির্দিষ্ট গুনগত মান বজায় রাখতে হয় ।
কারখানায় অনেকগুলি করণিয় (পড়সঢ়ষরধহপব) পালন করতে হয় । দ্বিতীয়তঃ
প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত কারখানার সংখ্যা কয়েকগুন বেশী । এগুলির
বেশ কিছু অত্যন্ত আধুনিক মান সম্মত যেগুলি প্রকৃত অর্থেই আন্তর্জাতিক মানের
। আর অনেকগুলি আছে যেগুলির মানের বিন্দু মাত্র বালাই নেই । কিছু নিজেদের
ভবনে আর বাকিরা ভাড়া করা ভবনে । কারখানা যেখানেই প্রতিষ্ঠিত হোক উদ্যোক্তা
চাইবেন কত কম খরচে তার রপ্তানি যোগ্য পোষাক প্রস্তুত করা যায় কারণ বিদেশি
ক্রেতারা বাংলাদেশে আসার একমাত্র কারণ এখানে সব চেয়ে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়
। উদাহরণ স্বরূপ যেখানে শ্রীলংকায় একজন শ্রমিককে ঘন্টায় ৪৫ সেন্ট মজুরী
দিতে হয় সেখানে বাংলাদেশে দিতে হয় ২৫ হতে ২৭ সেন্ট । এই মজুরী চীনে ৫০
সেন্ট আর পাকিস্তানে ৫৫ হতে ৬০ সেন্ট । ভারতে ঘন্টায় সত্তর সেন্টের নীচে
কোন শ্রমিক পাওয়া যায় না । বাংলাদেশে একজন তৈরী পোষাক শ্রমিক মাসে গড়ে
সর্বনি¤œ ৩৫ ডলার আর সর্বোচ্চ ৭০ হতে ৮০ ডলার পর্যন্ত মজুরী পায় । এর ফলে
ক্রেতারা বাংলাদেশে ছুঠে আসে । অনেকে মনে করেন তারা বুঝি আমাদের কৃপা করছেন
। মোটেও তা নয় । বাংলাদেশে তারা আসেন বা আসতে বাধ্য হন কারণ এখানে শ্রমিক
শোষণ খুবই সহজ । অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশ হতে একটি সাধারণ জামা
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল মার্ট, জে সি পেনি, ম্যাসি বা গ্যাপ এদেশ হতে ক্রয় করে
সাড়ে তিন থেকে সাড়ে পাঁচ ডলার দামে। পরিবহন খরচ তাদের (ঋৎবব ড়হ ইড়ধৎফ) ।
সেই জামা নিউ ইয়র্কে বিক্রি হয় প্রতিটি কম পক্ষে চল্লিশ ডলারে । প্রথম দু
কী তিন সপ্তাহে প্রতিটি জামায় তাদের মুনাফা হয় গড়ে ৩০% । তার পরের সপ্তাহে
তা ২০% হতে ২৫% ডিসকাউন্টে বিক্রি হয় । ইউরোপে ডলারের পরিবর্তে পাউন্ড অথবা
ইউরো পড়তে হবে । এই আমদানীকারকরা যদি তাদের মুনাফার হার একটু কম নিতে রাজি
হতেন তা হলে হয়তো বাংলাদেশের শ্রমিকরা একটু বেশী মজুরী পেত এবং
প্রস্তুতকারিরাও তাদের কারখানার কর্ম পরিবেশ কিছুটা হলেও উন্নিত করার
চেষ্টা করতো । একজন উদ্যোক্তার সব সময় প্রবনতা থাকে সে কী ভাবে কম খরচে
পন্য উৎপাদন করে তা বেশী দামে বিক্রি করতে পারে । এই যে সাভারের রানা
প্লাজায় যে পাঁচ জন উদ্যোক্তার কারখানা ধসে এত শ্রমিকের প্রাণহানি হলো
তারাও একই কাজ করেছে । তারা মনে করেছে এক দিন কারখানা বন্ধ থাকলে তাদের
ক্ষতি । আর তাদের সহায়তা করেছে ভবনের মালিক । সাভার বা সাভারের মতো
দূর্ঘটনা যখনই ঘটেছে প্রত্যেকটি দূর্ঘটনার পিছনে অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠির
অবদান ছিল। আমদানীকারকরা কী কম দায়ি ? তারা যদি অতি মুনাফার পরিমানটা একটু
কমাতে রাজি হতো তা হলেতো পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হতো ।
যুক্তরাষ্ট্রের নানা সংগঠন হুমকী দিচ্ছে বাংলাদেশ হতে পোষাক আমদানী বন্ধ
করতে হবে । তা হলে তারা কোথায় যাবে? অন্য দেশে গেলেতো তাদের বেশী দামে এই
পন্য কিনতে হবে । তাহলে তারা এই মূল্যটা কেন বাংলাদেশে দিতে কুন্ঠিত ? ২০০৫
সালে যখন গার্মেন্টস শিল্পের কোটা পদ্ধতি উঠে গেল তখন মঙ্গোলিয়ার সর্বমোট
কুড়িটির মতো তৈরী পোষাক প্রস্তুতকারী কারখানা রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেল ।
বেকার হয়ে গেল প্রায় কুড়ি হাজার শ্রমিক । এর ফলে সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি হলো । অনেক নারী পতিতা বৃত্তিকে বেছে নিল । এই সব কারখানার মালিক
ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলি । তারা রাতারাতি কারখানায় তালা
লাগিয়ে চলে গেল চীনে । বাংলাদেশ হতে পোষাক আমদানী বন্ধ হলে যে ভয়াবহ
সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তা তো চিন্তা করে দেখতে হবে । সাভার দূর্ঘটনার
জন্য ভবনের মালিক বা সরকার (ভবনটি তৈরী হয়েছিল সাবেক জোট সরকারের আমলে) কেউ
তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না । ভবন তৈরীর সময় তা সরকারের পক্ষে রাজউকের
তদারকি করার কথা । তারা কী তা করেছিল ? একটি ভবন যখন ভাড়া নিতে যায় তখন কেউ
সেই ভবনের নক্সা বা অনুমোদেনের কাগজপত্র দেখতে যায় না । যেই ভবনে একটি
নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ কাজ বা বসবাস করে তার যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমোদন আছে
কী না তা দেখে ভবন ভাড়া নেয়ার একটি আইনতো সরকার করতে পারে । একজন কারখানার
মালিক যে যত বড় মুনাফাখোরই হোক না কেন সে কখনো চাইবে না যে কোন কারণে তার
কারখানা বন্ধ হোক । পারলে সে সারা বছর কারখানা খোলা রাখে । সুতরাং ভবন ধসলে
আর শত শত শ্রমিকের প্রাণ হানি হলে নিশ্চয় কারখানা মালিকের বড় ধরণের
দায়-দায়িত্ব আছে কিন্তু তার চেয়েও বড় দায়-দায়িত্বতো ভবন মালিকের আর রাজউকের
মতো সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির । রোববার রানা প্লাজার মলিক সোহেল
রানাকে বেনাপোল সীমান্ত হতে আটক করা হয়েছে । দেশের মানুষ আশা করে রানাকে
তার প্রাপ্য শাস্তিটুকু দেয়া হবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর খবরদারি করার জন্য যেমন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশন আছে তেমনিভাবে গার্মেন্টস এর মতো এত বিশাল শিল্পের জন্য একটি
নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অবশ্যই প্রয়োজন, যেমন ভাবে প্রয়োজন এই শিল্পের জন্য একটি
সুষ্ঠু নীতিমালা । তা না হলে সাভারের মতো দেশ কাঁপানো ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর
আমরা হা হুতাশ করতেই থাকবো । সব শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ
হাসিনার কাছে একটি বিনীত আর্জি । মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি একাই পাহাড় ঠেলছেন
এবং আপনার চার পাশে ঘিরে আছে কিছু অযোগ্যের দল । তা যদি নাই হবে তাহলে যখন
সাভারে মাতম চলছে তখন কী ভাবে দুযোর্গ ও ত্রান মন্ত্রী বেশ নিশ্চিন্তে তাঁর
নির্বাচনী এলাকায় হাওয়া খেয়ে বেড়ান ? এমন হাওয়া খাওয়া মন্ত্রী বা ব্যক্তি
আরো আছেন । আপনি হয়তো ঠের পাচ্ছেন না তারা আপনার সব কষ্টার্জিত অর্জনকে
নর্দমায় ঢেলে দিচ্ছে । আর্জিটা হচ্ছে দেখবেন নাকি একবার কারা কারা আপনাকে
পুঁজি করে হাওয়া খাচ্ছে ?
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । এপ্রিল ২৮, ২০১৩
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|