|
যখন চিকিৎসা ব্যবস্থাই অসুস্থ!
সাথী আক্তার
আজকাল সঠিক
চিকিৎসা পেয়ে বেঁচে থাকার থেকে অসুস্থ বা আহত হয়ে মারা যাওয়া অনেক সহজ।
কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এইতাই চরম সত্য কথা। তার প্রমাণ আরও একবার পাওয়া
গেল, সেদিন ছিল পহেলা ফেব্রুয়ারি আমরা কয়েক জন
বান্ধবী মিলে গিয়াছিলাম
নামীদামী এক সরকারি হাসপাতালে যেখানে আমাদের এক বড় আপুর মায়ের অপারেশান ছিল।
সেখানে যা দেখলাম আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম, ১জন গর্ভবতী মা ভর্তি
হয়েছেন প্রায় ৩ দিন আগে তার ৫ মাস এর বাচ্চা পেটের মধ্যেই মারা গেছে ৩ দিন
আগে আর উনি এখনও ওই মৃত বাচ্চা পেটে নিয়ে আছে, তাকে বলা হয়েছে অপারেশান করা
হবে কিন্তু কখন সেই সময় দেওয়া হয়নি। আমি এই টাই ভাবলাম বাচ্চাটা তো মারা
গেছে এখন সঠিক সময় অপারেশান না হলে এই মাও না মারা যায়। হয়ত ওনারা গরিব কোন
পরিবার এর মানুষ, কিন্তু একটি বার ভাবেন তো যদি ওইখানে আমদের মা, বোন কেউ
হত তবে আপনি কি করতেন। এই হল আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেখানে আমাদের
বাঁচার নিশ্চয়তা না থাকলেও মারা যাওর নিশ্চয়তা কিছুটা হলেও আছে তাই নয় কি?
আমাদের পাবলিক সেক্টরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে মূলত গ্রামগঞ্জ ও শহরের অসহায় দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের
মানুষ। কিন্তু এসব চিকিৎসা কেন্দ্রের অবস্থা বেশ নাজুক, দুর্বল ও ভঙ্গুর।
এগুলোর অবকাঠামো গত সুযোগ-সুবিধা, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ, ওষুধ,
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীর অভাবের কারণে যুগ যুগ ধরে মৌলিক
স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। স্বাস্থ্যসেবা
প্রতিষ্ঠান গুলোতে চিকিৎসকের পদ আছে, নিয়োগ নেই; আবার নিয়োগ থাকলেও বেশির
ভাগই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত। যাঁরা উপস্থিত থাকেন, তাঁরাও রোগীদের
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান নন। বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, 'দুপুর ২টা-আড়াইটার মধ্যে হাসপাতাল ছাড়েন
ডাক্তাররা, পরদিন সকাল ৮টা-সাড়ে ৮টায় ফেরেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই
হাসপাতাল গুলো চিকিৎসক শূন্য থাকে। এই সময় ইন্টার্ন ও অনারারি চিকিৎসকদের
হেফাজতে থাকে রোগীরা। অনেকে জানেও না যে শিক্ষানবিশরা প্রেসক্রিপশন দিতে
পারেন না। অথচ অসহায় রোগীদের দিনের ১৮ ঘণ্টাই তাঁদের মুখাপেক্ষী হতে হয়।
কর্ম ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও
বিধিবিধান সংবলিত একটি নীতিমালা থাকা জরুরি। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও দেশে একটি
যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি করা গেলনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বারবার বলে আসছে,
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু কবে
নাগাদ যে এই 'চূড়ান্ত স্বাস্থ্যনীতি' আলোর মুখ দেখবে, এর উত্তর আমরা সাধারণ
মানুষ প্রতিনিয়তই খুঁজে বেড়াচ্ছি।
রোগ নিয়ে আজকাল চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও এক বিড়ম্বনা। কারণ একটাই- রোগ সাধারণ
হোক কিংবা জটিল, রোগীকে একগাদা ওষুধও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে দেবেন চিকিৎসক।
এ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এই
প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গেই রোগী দেখেন অনেক চিকিৎসক,
তবে তাঁদের সংখ্যা নিতান্তই কম। অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীলতা ও জীবাণু
কালচারের ফলাফলের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা হয় কত জনকে? বেশির ভাগ মানুষই এসব
পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই অহরহ অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে, কি বলব যেখানে পরীক্ষা
করা দরকার সেখানে করা হয়না আর আজে বাজে সব পরীক্ষা করা হয়। উন্নত দেশ গুলোতে
চিকিৎসক এর কাজ ওষুধ এর জেনেরিক প্রেসক্রিপশন এ লেখা, বাকি কোন ব্রান্ড এর
ওষুধ খাবে, কখন খাবে, কিভাবে খাবে রোগীর সাথে এই সব বিষয়ে কথা বলেন
ফার্মাসিস্ট। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এগুলো বাস্তবায়ন হয়নি, যদিও অনেক
হাসপাতালে এখন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট আছে যেমনঃ স্কয়ারহাসপাতাল, অ্যাপোলো
হাসপাতাল এবং নতুন হয়ছে গাস্ট্রলিভার হাসপাতাল হয়ত সেদিন আর দেরি নেই যে
দিন আমাদের দেশেও হসপিটাল ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসি হবে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে চলছে অহরহ
নৈরাজ্য। কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে বিচ্ছিন্ন ভাবে নানা কর্মকাণ্ড
বাড়লেও মৌলিক কোনো অগ্রগতি এখন ও হয়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম, শুধু এই
বলে পার পাওয়া যাবেনা। সরকারের সদিচ্ছা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সততা ও নিষ্ঠার
অভাব ও এজন্য দায়ী।
সাথী আক্তার
শিক্ষার্থী
শেষ বর্ষ, ফার্মাসি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|