[প্রথমপাতা]
|
রাজিবের রক্ততো বৃথা যেতে পারে না
প্রফেসর আবদুর মান্নান
বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কিন্তু তার জন্মটা অন্য আর
দশটি রাজনৈতিক দলের মতো স্বাভাবিক ছিলনা । বঙ্গবন্ধুকে পঁচাত্তরের পনেরই
আগষ্ট হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক
হিসেবে ক্ষমতা দখল করে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সহায়তায় বিএনপি নামক এই
দলটি গঠন করেন । এটি অনেকটা চটজলদি ব্যবস্থা এবং এই পর্যন্ত বিএনপি সব
কিছুইতেই চটজলদি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সচেষ্ট থেকেছে । ১৯৮১ সনে জিয়ার
মৃত্যুর পর তার দলের নেতা কর্মীরা জিয়াকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক
হিসেবে উপস্থাপন করে । বলে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর জিয়া চট্টগ্রামের
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সাথে সাথেই বাংলাদেশে
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । অনেকটা বাঁশিতে ফু দিয়ে ফুটবল ম্যাচ শুরু
করার মতো । বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিএনপি আবার তাদের পূর্বের
অবস্থান হতে সরে গিয়ে বলে জিয়া ২৭ নয় ২৬ মার্চ এই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন
। তাদের এই সংশোধনীর কারণ ছিল আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা আছে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল ২৬ মার্চ । জিয়ার জীবদ্দশায় কখনো
তিনি নিজে দাবি করেন নি তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন । তিনি ২৭ তারিখ
বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন । তার আগে বঙ্গবন্ধুর
পক্ষে এই ঘোষণা একাধিক ব্যক্তি পাঠ করেছেন । জিয়ার মৃত্যুর পর হঠাৎ করে
জিয়াকে এই নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তোলার পিছনে একটি কারণই কাজ করেছে আর তা
হচ্ছে তাকে দ্রুত রাতারাতি জাতীয় নেতা বানানো । জিয়া নিজে ক্ষমতায় থাকার
সময় সংবিধান হতে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের জন্য’ শব্দ ক’টি
উঠিয়ে দিয়ে সেখানে প্রতিস্থাপন করেন ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক
যুদ্ধের’ লাইনটি । এই সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি বাঙালি ও বাংলাদেশের একাত্তর
পূর্ববর্তী সকল লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছিলেন এবং
তার স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠের সময় হতেই বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু করার
অপেচেষ্টা করেছেন।
জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন তার রাজনৈতিক দল বিএনপিকে দাঁড় করাতে হলে সেখানেও
একটি চটজলদি ব্যবস্থার প্রয়োজন । হাতের কাছে পাওয়া গেল একাত্তরের
যুদ্ধাপরাধীদের, যাদের মধ্যে যেমন ছিল শাহ আজিজ, মওলানা মান্নান অথবা আবদুল
আলিম তেমন ছিল অতি বামপন্থী মসিউর রহমান যাদু মিয়া । শাহ আজিজ
মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহুর্তে ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে জাতি সংঘে পাকিস্তানি
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং সাধারণ পরিষদের বক্তৃতায় পাকিস্তানের
পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছিলেন পাকিস্তান সেনা বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে
(বাংলাদেশে) কোন গণহত্যা করেনি । তারা শুধু তাদের কর্তব্য পালন করেছে,
দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে । বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে
১৯৭২ সালের দালাল আইনে গ্রেফতার করে । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জিয়া শাহ
আজিজকে জেল হতে মুক্ত করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাকে ১৯৭৯ সনের এপ্রিল মাসে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পদে
অধিষ্ট ছিলেন। একই সাথে তার মন্ত্রী সভায় ঠাঁই করে দেন মওলানা মান্নান আর
আবদুল আলিমের মতো চিহ্নিত ঘাতকদের । মওলানা মান্নান ডাঃ আলিম চৌধুরীকে
একাত্তর সালে ঘাতক আলবদরদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন । আবদুল আলিম তার নিজ
জেলায় জয়পুরহাটে কসাই হিসেবে পরিচিত । বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বিচার চলছে । এই জিয়াই একাত্তরের
ঘাতকদের সিপাহীসালার জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে
বাংলাদেশে আসতে দিয়ে চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেন । সেই গোলাম আযম
পরবর্তীকালে জামায়াতের আমির মনোনীত হন । জিয়া এই সব কাজই করেছিলেন একটি
চটজলদি ব্যবস্থায় তার রাজনৈতিক দলটিকে দাঁড় করানোর জন্য । জিয়ার প্রবর্তিত
চটজলদি ব্যবস্থা তার দলে একটি আদর্শ হিসেবে সব সময় সমাদৃত । একেবারেই
নির্মোহ ভাবে বলতে হলে বলতে হয় জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা আর বাংলাদেশের রাজনীতির যা ক্ষতি করেছেন অন্য কোন ব্যক্তি, দল বা
গোষ্ঠী তা করেনি ।
বর্তমানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবিতে একটি অভূতপূর্ব গণজাগরণ ও
আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে । এই আন্দোলনটির অনেক গুলি বৈশিষ্ট্য আছে যার মধ্যে
অন্যতম হচ্ছে এটি কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের ব্যানারে শুরু হয়নি । গত ৫
ফেব্রুয়ারী যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কাদের মোল্লাকে একাত্তরে
হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধের দায়ে দোষী পাওয়া সত্ত্বেও মৃতুদ-ে
দ-িত না করে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করেন তখন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে
বিশ্বাসী একদল তরুণ সংক্ষুব্দ হয়ে তাদের ব্লগ, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিবাদী মানব বন্ধন করার জন্য জাতীয়
জাদুঘরের সামনে সমবেত হতে তাদের বন্ধুদের আহ্বান জানায় । তারা এটা চিন্তা
করতে পারেনি তাদের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে লক্ষ বাঙালি
সম্পৃক্ত হবেন । বর্তমানে দেশেতো বটেই আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে একাত্তরের
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এই স্বত:স্ফুর্ত গণজাগরণ বেশ গুরুত্ব দিয়ে
প্রকাশিত হচ্ছে । দেশের মানুষ দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর এই ঘাতকদের বিচারের জন্য
অপেক্ষা করেছে এবং খুশি হয়েছিল যখন তারা দেখেছে দেরীতে হলেও ২০১০ সালে
বর্তমান সরকার এই ঘাতকদের বিচার শুরু করেছে । এটাও সত্য, বিচার এই সরকারের
আমলে না হলে অন্য কোন সরকার ক্ষমতায় এসে তা করবে না । আর বিচারের রায় যখন
প্রত্যাশিত হয়নি তখন সাধারণ মানুষতো তাতে সংক্ষুব্দ হয়ে প্রতিবাদ করবেই ।
তবে যারা এই প্রতিবাদের প্রথম ডাক দিয়েছিল তারা কখনো চিন্তা করেনি তাদের এই
প্রতিবাদ এই ভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠবে । সব কিছু এত দ্রুত ঘটে যাওয়াতে সব
চেয়ে বেশী হতভম্ব হয়েছে বিএনপি এবং তাদের আজন্ম মিত্র একাত্তরের ঘাতক দল
জামায়াত । তারাও বুঝতে পারেনি দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের ভিতরে দীর্ঘ
বিয়াল্লিশ বছর ধরে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণা ও ক্ষোভ ধরে
রেখেছিল । প্রথম সুযোগেই তা তারা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি । অনেকটা সুপ্ত
আগ্নেয়গিরি জ্বলে উঠার মতো । জামায়াতের হতভম্ব হওয়ার কারণ একটু বেশী ।
প্রথম তারা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর হতে সব সময় ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেছে অথবা
থাকার চেষ্টা করেছে । তাদের দলের এবং শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সরকারের
মন্ত্রী হয়েছেন । এই দীর্ঘ সময়ে অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় তারা
সম্পদের পাহাড় গড়েছে । সরকারের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের এখনো একটি
বেশ বড় ধরণের উপস্থিতি বিদ্যমান । ছাত্র শিবির নামে নাৎসি জার্মানির
হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো একটি কিলিং স্কোয়াড আছে । স্বল্পতম সময়ের
নোটিশে তারা সশস্ত্র হয়ে যেকারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, হত্যা, অগ্নিসংযোগ,
ভাঙচুর করতে পারে । পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সেই অস্ত্র দিয়ে পুলিশকে
বেধড়ক পেটাতে পারে । তাদের আবার বিচার করে কে? বর্তমান সরকার কিছু গা ঝাড়া
দিয়ে যখন সত্যি সত্যি তাদের বিচার শুরুই করলো তখনো তারা মনে করেছে পুরো
বিষয়টা লোক দেখানো । বিচারে প্রথমে যখন বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ- দেওয়া
হলো তখন বলা হলো বাচ্চু রাজাকারের সাথে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই ।
কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের আট চল্লিশ ঘন্টা আগে পুলিশ প্রশাসন যখন দিনের
ব্যস্ততম সময়ে মতিঝিলে প্রকাশ্যে জামায়াত শিবিরের কয়েক হাজার সশস্ত্র
ক্যাডারের সমাবেশ করতে দিল তখন তারা তা সরকারের দুর্বলতা হিসেবে ধরে নিল ।
সেই সমাবেশে জামায়াত নেতারা হুঙ্কার ছাড়লেন তাদের নেতাদের কিছু হলে দেশে
গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে । জামায়াতের মতো একটি স্বাধীনতা বিরোধী দল একটি
স্বাধীন দেশে রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবে তা এক
কথায় অকল্পনীয় । তা তারা করেছে কারণ তাদের পিছনে মদদ দাতা হিসেবে আছে
বিএনপি । মধ্য রাতের টকশোতে তথাকথিত সুশীল সমাজের দু’একজন প্রতিনিধি বললেন
সরকার চাইলে গৃহযুদ্ধ হবে । একজন ব্যাবসায়ী নেতা বললেন শাহবাগে যা হচ্ছে তা
শ্রেফ বেআইনী । একজন সাংবাদিক যিনি রাতের টকশোতে সব কিছুতেই গরুর রচনা
লেখার মতো আওয়ামী লীগ আবিষ্কার করেন তিনি জানালেন নির্বাচন কমিশনে একটি
নিবন্ধিত দলকে সরকার যদি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হতে বঞ্চিত করে তা হলে
গৃহযুদ্ধ হতেই পারে । তিনি আবার আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ আসলেই দাঁতমুখ খিঁচিয়ে
কথা বলতে পছন্দ করেন । যেদিন কাদের মোল্লার রায় ঘোষিত হলো সেদিন জামায়াত
শিবির সারা দেশে যে তা-ব সৃষ্টি করলো সে সম্পর্কে টকশো ওয়ালারা তেমন একটা
কিছুই বললেন না । তবে জামায়াত শিবিরের তা-ব সৃষ্টিটা ছিল অনেকটা লোক দেখানো
কারণ যার দ- হওয়া উচিৎ ছিল ফাঁসি সে কিনা দ-িত হলো যাবজ্জীবন কারাদ-ে ।
কাদের মোল্লা তার আনন্দটা ধরে রাখতে পারেননি । তিনি রায় ঘোষণার পর
বিচারকদের এক প্রস্ত গালাগাল করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বিজয়ের চিহ্ন
দেখিয়ে গাড়ীতে উঠলেন ।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে সারা দেশের মানুষ যখন
ঐক্যবদ্ধ, যখন শাহবাগ স্কয়ারের উত্থাপ সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে তখন প্রতিদিন
বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনকে কটাক্ষ করে নানা ধরণের
বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে । এই নেতৃবৃন্দের মাঝে আছেন
স্বনাম খ্যাত ব্যারিস্টার মওদুদ, এম কে আনোয়ার, ডঃ খোন্দকার মোর্শারফ
হোসেন, চীফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক, মির্জা আব্বাস, দলের ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর প্রমূখরা । তাদের কেউ বলছেন এটি সরকারের
সাজানো নাটক, আবার কারো কারো মতে তাদের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে
ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা । কেউ কেউ
এই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদীর পদধ্বনি আবিষ্কার করেছেন । মির্জা ফখরুল ইসলাম
আবার এক কাটি সরেস । তিনি জেল হতে বের হয়ে প্রথা অনুযায়ী জিয়ার কবর জেয়ারত
করে দেশবাসীকে জানালেন শাহবাগে যা হচ্ছে তা তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে
হচ্ছে! ব্যতিক্রম ছিলেন সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল (অবঃ)
মাহবুব-উর-রহমান । তিনি প্রথম দিকে শাহবাগের এই প্রজন্মের আন্দোলনটিকে
স্বীকার করে নিলেও তিনিও এখন সেখানে নাটক আবিষ্কার করছেন । হয়তো তিনি এক
এগারোর পরবর্তীকালে ফিরে গিয়েছিলেন যখন তাকে সংস্কারবাদী হিসেবে চিহ্নিত
করে দলের নেতা কর্মীরা চরমভাবে লাঞ্চিত করেছিল ।
তবে সব চাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের এই অবিষ্মরণীয় জাগরণকে
কেন্দ্র করে আবার বিএনপি নেতৃবৃন্দ একটি চটজলদি গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন
দেখছেন । তারা প্রজন্মের প্রতিনিধিদের আহ্বান করেছেন তাদের দাবির সাথে যেন
তারা তত্ত্বাবায়ক সরকার দাবি, পদ্মাসেতু দূর্নীতি, ইলিয়াস আলী গুম, হলমার্ক
কেলেঙ্কারি, বেগম জিয়া ও তার পুত্রদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি মামলা, সীমান্ত
হত্যা ইত্যাদি জুড়ে দিয়ে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ।
বিএনপি-জামায়াত জোট বহুদিন দিন ধরে একটি গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখছেন ।
চেষ্টাও কম করছেন না । তবে তাদের এই সব প্রচেষ্টা অনেকটা গণতা-বে রূপ নেওয়া
ছাড়া আর কোন ফল বয়ে আনে নি । কারণ তারা তাদের দাবির সাথে কখনো জনগণকে সাথে
নিতে পারেনি । আর বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ঘাঁড়ে যতদিন জামায়াত সোয়াড় হয়ে
আছে ততদিন তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে তাদের পক্ষে আর বেশী দূর যাওয়া সম্ভব নয় ।
আর বিএনপি’র বুঝা উচিত ফরমায়েশ দিয়ে কোন আন্দোলন করা যায় না । গণ
সম্পৃক্ততা ও স্বতঃষ্ফূর্ততা না থাকলে গণঅভ্যুত্থান দূরে থাক কোন আন্দোলনই
সৃষ্টি করা সম্ভব নয় । আজ বিএনপিকে বুঝতে হবে জামায়াত এখন আর কোন রাজনৈতিক
দল নয় । এটি দ্রুত একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী সংগঠন হয়ে উঠছে । অনেকের প্রশ্ন
এখন সময় হয়েছে বিএনপি কী এখন জামায়াতের পথ ধরবে নাকি তাদেরকে তালাক দিয়ে
সত্যিকার অর্থে একটি রাজনৈতিক দল হওয়ার চেষ্টা করবে? তবে সার্বিক পরিস্থিতি
বিশ্লেষণ করলে এটি মনে হওয়ার কোন কারণ নেই বিএনপি তাদের পূর্বেও অবস্থান
হতে একপাও সরবে । শুক্রবার বিকেলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম ঘোষণা করেছেন বর্তমানে আঠার দলের ঐক্য আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক
বেশী অটুট । এর অর্থ তারা জামায়াতকে তাদের ঘাঁড় হতে নামাচ্ছে না । তার এই
বক্তব্যেও কয়েক ঘন্টা পর প্রজন্ম চত্বর হতে ফেরার পথে নির্মম ভাবে খুন হলেন
ব্লগার রাজিব । ধারণা করা হচ্ছে এই খুনের সাথে সরাসরি দায়ি জামায়াত শিবির ।
বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে । দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে
সরকার বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা দেখার জন্য ।
ইতোমধ্যে সরকার আন্তার্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে যে সব দুর্বলতা আছে তা
দূর করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে । জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য জাতি
এখন ঐক্যবদ্ধ । সরকার এই ব্যপারে তাদের সহায়তা করার জন্য বিরোধ দলকে আহ্বান
জানিয়েছে । বিরোধী দল এই কাজে তাদের সহায়তা করবে তা বিশ্বাস করার কোন কারণ
নেই । সরকার যদি পুরোপুরি ভাবে ১৯৭২ সানের সংবিধানে ফিরে যায় তাহলে
জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলি এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে । জাতি দীর্ঘ
বিয়াল্লিশ বছর ধরে অপেক্ষা করেছে বাংলদেশে যে আদর্শ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল সেই
আদর্শে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশায় । বর্তমান অবস্থায় সেটি হওয়ার একটি সম্ভাবনা
দেখা দিয়েছে । আর সেই পথটি দেখিয়ে দিয়েছে একাত্তর পরবর্তি প্রজন্ম। সরকারের
জন্য এটি একটি সূবর্ণ সুযোগ । এই সুযোগ সরকার কী ভাবে কাজে লাগায় তা দেখার
জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। সরকার তাদের কাছে প্রত্যাশিত কাজ করুক আর বিএনপি
তার মিত্ররা গণঅভ্যূত্থানের অপেক্ষায় থাকুক। নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা
রাজিবের রক্ততো বৃথা যেতে পারে না।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৩
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|