[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর পর্যালোচনা

 

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান

ভারত হতে যখনই কোন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বাংলাদেশে সফরে আসেন তখন এদেশের সরকারতো বটেই সাধারণ মানুষেরও একধরণের প্রত্যাশা ও আমাবাদ সৃষ্টি হয়ে কারণ গত একচল্লিশ বছরে এই দুটি দেশের মধ্যে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ের মীমাংসা হলেও তার চাইতে অমীমাংসিত রয়ে গছে অনেক বেশী । এই অমীমাংসিত রয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ ভারতের আমলাদের সমস্যা সমাধানের একধরণের অনীহা এবং কখনো কখনো দিল্লি সরকারের বড় ভাই সূলভ আচরণ । বর্তমানে এই সবের সাথে যোগ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নানাধরণের দৃষ্টিকটু মাতব্বরি যার ফলে অনেক সময় সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও বেকায়দায় পড়েছে । তার সর্বশেষ উদহারণ তিস্তা পানি বন্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের অনিচ্ছা এবং ছিট মহল চুক্তি হওয়ার পরও তা বিনমিয় করতে দীর্ঘসূত্রিতা । আর যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার আর দিল্লিতে কংগ্রেস সরকার থাকে তখন এটি মনে করা হয়যে দুদেশের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে । এই ধারণা তেমন অমূলক নয় কারণ এর আগে দুদেশের মধে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে যার মধ্যে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, ভারতের বাজারে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের তৈরী পোষাক রপ্তানি চুক্তি, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতীয় পন্যপরিবহন চুক্তি অথবা সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি অন্যতম ।
সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে তিন দিনের এক সফর শেষে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন । বর্তমান সরকারের শেষ বছরে এসে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আগামী মার্চ মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে । রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রণব মুখার্জির প্রথম বিদেশ সফর এবং সেটি বাংলাদেশে । অগাষ্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি যাওয়ার কথা আছে । কয়েক মাস আগে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম জিয়া ভারতের রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে দিল্লি সফর করেছেন । সেই সফরকে নানা বিশ্লেষক নানা ভাবে ব্যখ্যা করেছেন । কেউ বলেছেন দিল্লি বেগম জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনাকে এই মেসেজ দিতে চেয়েছে তারা বেগম জিয়ার সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে প্রস্তুত যদি তিনি জামায়াতসহ অন্যান্য জঙ্গীবাদীদের সাথে বেগম জিয়া সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রস্তুত থাকেন । বেগম জিয়া সে মতে দিল্লিকে কথা দিয়েও এসেছিলেন কিন্তু দেশে ফেরার পর তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা বেগম জিয়াকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন জামায়াত আর জঙ্গীদের সাথে সম্পর্কতো বিএনপি’র রাজনৈতিক দর্শনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । সেখান হতে তো বের হওয়ার প্রশ্নই আসে না । বেগম জিয়া আবার তার পূর্বের অবস্থায় আপাততঃ ফিরে গেছেন ।
সুশীল কুমার সিন্ধে এবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন । সফরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হয়েছে । প্রথমটা হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি বহিঃসমর্পণ চুক্তি এবং দ্বিতীয়টা দুই দেশের মধ্যে ভিসা সহজ করার ব্যাপারে চুক্তি । দুটি চুক্তির গুরুত্ব আবার দুরকম । বহিঃসমর্পণ চুক্তিটি আসলে বন্দী প্রত্যাপর্ণন চুক্তি । বাংলাদেশের সাথে এরকম চুক্তি আছে শুধু আর একটি দেশ, থাইল্যান্ডের । দুটি দেশের মধ্যে এরকম চুক্তি থাকলে একদেশ হতে কেউ অপরাধ করে অন্যদেশে পালিয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনা সহজ হয় । বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একজনকে থাইল্যান্ড হতে এইভাবে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছিল । এই ধরণের চুক্তিতে লাভবান হয় রাষ্ট্র বা সরকার । এটি জনগনের দৈনন্দিন জীবনে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনা । তারপরও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই চুক্তির আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে কারণ বাংলাদেশের তিন দিকে প্রায় চার হাজার একশত ছাপান্ন কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত আছে । কেউ অপরাধ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকরি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এই সীমান্ত পার হয়ে অন্য দেশে নিরাপদে চলে যেতে পারে, সেখানে বিয়ে সাদী করে দিব্বি ঘর সংসার করতে পারে এবং ব্যাবসাপাতিও শুরু করে দিতে পারে । বর্তমানে ভারতে অবস্থানকারী এই ধরণের বাংলাদেশী অপরাধীর সংখ্যা হাজারের উপরে এবং এদের বেশ কয়েকজন আছে এই দেশের তালিকায় যারা শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নীত। এরা সেদেশে অবস্থান করলেও এদেশে তারা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে অপারাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে । ধারণা করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু খুনের দ-প্রাপ্ত আসামাীদের কম পক্ষে দুজন ভারতে অবস্থান করছে । বাংলাদেশে ভারতের এই বিপুল সংখ্যক অপরাধী অবস্থান না করলেও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দী বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হেফাজতে আছে, যার মধ্যে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া অন্যতম । এর আগে ব্রাম্মণবাড়ীয়ায় ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহীমের সেকেন্ড ইন কমান্ড পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে । অবশ্য অনুপ চেটিয়াকে এই মুহুর্তে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না কারণ তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন । উচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
বহিঃসমর্পণ চুক্তির চাইতে সংশোধিত ভিসা ব্যবস্থা বিষয়ক চুক্তি সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে ভ্রমনকারীদের উপর অনেক বেশী প্রভাব ফেলবে । ভারত হতে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ভ্রমণকারীর সংখ্যা হাজারেরও কম । যে সব ভারতীয় বাংলাদেশে আসেন তারা মূলত আসেন ব্যাবসা, পেশাগত কাজে, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা এবং স্বল্প সংখ্যক পর্যটনের জন্য । আর বাংলাদেশে হতে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ভারতীয় ভিসা ইস্যু করা হয় এবং দৈনিক প্রকৃত ভ্রমণকারীর সংখ্যা আড়াই হাজারের কম হবে না । যেসব কারণে ভারতীয়রা বাংলাদেশে আসেন সে সব কারণ বাংলাদেশীদেরতো আছেই তার উপর আছে স্বাস্থ্য সেবা, উচ্চ শিক্ষা, সভা সেমিনার, গবেষণা, ধর্মীয় স্থান দর্শন ইত্যাদি । বর্তামান প্রজন্ম হয়তো জানেনা শুরুতে উভয় দেশের মানুষের যাতায়াতের জন্য কোন পাসপোর্ট ভিসা ছিলনা । দশটাকা দিলে ভ্রমনের জন্য একটা পারমিট পাওয়া যেত । এতে পোওয়াবরো হলো চোরাকারবারীদের । তারপর শুরু হলো শুধু ভারতে ভ্রমনের জন্য একটি পৃথক বিশেষ পাসপোর্ট । শুরতে বাংলাদেশীদের জন্য ভারত ভ্রমনের প্রধান আকর্ষণ ছিল আজমীর দর্শন আর ফিরতি পথে দিল্লি আগ্রায় দুদিন কাটানো । আসার পথে কোলকাতা হতে দুটি লুঙ্গি, একটি শাড়ী আর কিছু কসমেটিক, মানে টয়েলেট সাবান আর টুথপেস্ট নিয়ে আসা । এর বেশী আনলে সীমান্তে দশ-বিশ টাকা ঘুষ দিতে হতো । বাংলাদেশের ঘুষখোররা আবার দশ-বিশ টাকা সন্তুষ্ট না । একশত টাকার কম হলে নির্ঘাত একটি লুঙ্গি অথবা একটা সাবান দিয়ে দিতে হতো । এখন এই সবের কিছুই আর আমাদের ভারত হতে আনতে হয় না বরং আমার অনেক বন্ধু বান্ধব বাংলাদেশে আসার আগেই বলে রাখে সে যাওয়ার সময় কয়টা শাড়ী আর নক্সা করা আড়ং বা ‘দেশী দশ’ হতে কোর্তা কাপড় নিয়ে যাবে । এখন এদেশের মানুষ ভারতে যায় প্রধানতঃ স্বাস্থ্য সেবা নিতে এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার কাজে । এই দুটি কাজের জন্য আমাদের আরো অনেক বছর ভারতে যেতে হবে । পর্যটন ও আজমীর দর্শনতো আছেই । প্রতিজন ভারত যাত্রী যদি গড়ে পাঁচশত ডলার থাকা খাওয়া আর ভ্রমনের জন্য সেদেশে খরচ করে তাহলে বাংলাদেশ হতে মাসে সাড়ে বাড় লক্ষ ডলার ভারতের অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে । এটি বৈধ পথের একটি আনুমানিক হিসেব । অবৈধ পথে এই অংক কয়েকগুন বেশী । এই অবস্থায় বাংলাদেশে ভারতের ভিসা ব্যবস্থা অনেক বেশী দক্ষ, উদার এবং সহজলভ্য হওয়া উচিৎ ছিল যা হয়নি । আমি এর আগে একাধিকবার লিখেছি একজন বাংলাদেশের নাগরিকের ভারতীয় ভিসা পেতে যত ঝামেলা পেতে হয় বিশ্বের অন্য কোন দেশে ভিসা পেতে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না । একজন ভারতীয় বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে চাইলে তার ট্রাভেল এজেন্ট তার ভিসা করে দিতে পারে । বাংলাদেশে তা অকল্পণীয় । আগে যে কোন একজনকে ভারতীয় ভিসা অফিস হতে আমার পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য লিখিত অনুমোদন দিলে সেই কাজটি সে করতে পারতো । এখন পাসপের্টার মালিককে নিজে যেতে হবে ।
একবার একটি জাতীয় দৈনিকে ভারতীয় ভিসা বিষয়ক জটিলতা নিয়ে এটি দীর্ঘ কলাম লিখেছিলাম । লিখেছিলাম আমার পাসপোর্টে যদি যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের পাঁচ বছর মেয়াদী ভিসা থাকেত পারে তাহলে দীর্ঘ মেয়াধী ভারতীয় ভিসা থাকতে আপত্তি কেন ? তখন ভারতীয় ভিসা প্রার্থীদের লোটা কম্বল নিয়ে গুলশানের ভারতীয় ভিসা অফিসের সামনে রাস্তার ফুটপাতে রাত্রি যাপন করতে হতো । অনেক সময় ভিসা অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ ছিল দুর্বিনীত । মনে হতো তারা বাংলাদেশীদের ভিসা দিয়ে তারা এক প্রকারের কৃপা করছে । যেদিন আমার এই লেখা প্রকাশিত হয় সেদিন রাতে তৎকালীন বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তির সাথে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা । পরিচয় হতেই তিনি জানালেন আমার লেখা তিনি পড়েছেন এবং তারা চেষ্টা করছেন ভিসা প্রদানের ব্যাপারটা কী ভাবে আরো সহজ করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে । এর কিছুদিন পর অনলাইনে ভিসা আবেদন পদ্ধতি চালু হয়েছিল । এতে নিশ্চয় ভিসা প্রার্থীদের অনেক ঝামেলা কমেছে । সিন্ধের সফরের সময় ভারতের সাথে সই হওয়া ‘সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা’ (আরটিএ) চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, গবেষক, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসা ভিসা প্রভৃতির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে । কোন কোন ক্ষেত্রে একবছর পর্যন্ত মাল্টিপেল ভিসা দেওয়া যাবে । সাংবাদিকদের এই সুযোগ গ্রহণ করতে হলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে । এই নতুন ব্যবস্থা নিশ্চয় আগের তুলনায় কিছুটা হলেও উন্নত তবে তা যথেষ্ট নয় । কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকা আয়োজিত একটি গোল টেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণের সাথে দু’দেশের বিরাজমান নানামূখী সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল । প্রায় প্রত্যেক আলোচকই এই ভিসা বিষয়ক জটিলতা নিয়ে কথা বললেন । তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন অচিরেই সমস্যার কিছু সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন । পাঁচ বছর মেয়াদী ভিসার কথা আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি । সেদিনও বলেছিলাম । তেমন একটা কাজ হয়নি । তাকে এও বলেছি আমি দিল্লিতে অবস্থিত সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় যোগ দিতে গেল দিল্লি বিমান বন্দরে কী ভাবে আমাকে ইমিগ্রেশনের হাতে নাজেহাল হতে হয়েছিল । পঙ্কজ শরণ দূঃখ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছিলেন এটি নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত । তবে এই ধরণের আচরণ বন্ধ করার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি । আমার পেশায় নিয়োজিত ভারত ভ্রমণকারীরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যান এবং তাও স্বল্প সমেয়র নোটিশে। তাদের বেলায় এই ভিসা ইস্যু বিষয়টা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার দাবি রাখে । ক’দিন আগে ভারতের একজন সিনিয়র অধ্যাপক হায়দ্রাবাদ হতে বংলাদেশে এসেছিলেন । আসার আগে তিনি আমাকে জানান তার ট্রাভেল এজেন্ট তার ভিসার জন্য দিল্লিতে আমাদের ভিসা অফিসে আবেদন করবেন । একটু সময় লাগতে পারে । সম্ভব হলে আমি যেন এই ব্যাপরে একটু সহায়তা করি । আমি সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে আমাদের দূতাবাসের প্রেস মিনিষ্টার অনুজপ্রতিম এনাম চৌধুরীকে ফোন করি । এনাম শুধু একদিনেই ভিসার ব্যবস্থা করেনি সে আরো বলেছে এরপর অধ্যাপক মহোদয় যেন সরাসরি ঢাকা আসার প্রস্তুতি নিয়ে দিল্লিতে আসেন এবং দিনে দিনে ভিসা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করেন । এটাইতো দুটি বন্ধু প্রতিম দেশের মাঝে উন্নত সেবার নমুনা হওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে সম্পর্কের কথা উঠলেই সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিবর্ষণ এবং বাংলাদেশী হত্যার কথা অবশ্যই উঠে আসে । ভারত হতে আসা সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির কথা দিয়ে যান এমনটি আর ঘটবেনা । তারপরও ঘটে কারণ মনে হয় বিএসএফ তাদের কথা শুনে না । দূঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক সময় বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী মিনিষ্টার বিএসএফ’র পক্ষ নিয়ে কথা বলেন । তারা এর বেশীর ভাগ দায় দায়িত্ব চাপান বাংলাদেশী চোরাচালানীদের উপর । সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ প্রধান নপরাজিৎ মুখার্জিও অধীনে এই রাজ্যের পুলিশ সুপাররা সীমান্তে বিএসএফ’র বেআইনী কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তার কাছে দাখিল করেছেন যা তিনি রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেন । সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিএসএফ মোটা অর্থের বিনিময়ে সীমান্তে মানুষ, বেআইনী অস্ত্র, মাদক, গবাদি পশু ইত্যাদি পাচার উৎসাহিত করে । এই অর্থের ভাগ নিয়ে যখন তাদের নিজেদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন প্রাণ দিতে হয় বাংলাদেশের মানুষকে । এই ঘটনা সব চাইতে বেশী ঘটে রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ সীমান্তে । এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে সীমান্তে কখনো বিএসএফ’র মানুষ হত্যা বন্ধ হবে না । আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশের কৌশলগত কারণে যতনা বাংলাদেশের প্রয়োজন ভারতের সহায়তা তার চাইতে বেশী প্রয়োজন ভারতের বাংলাদেশকে । এক চট্টগ্রাম সমূদ্র বন্দর ভারতকে ট্রানজিটের জন্য ব্যবহার করেত দিলে পূরো উত্তর পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যেতে পারে । বাংলাদেশের বর্তমান সরাকারের আমলে যদি দু’দেশের সম্পর্কের একটি আমূল পরিবর্তন না হয় তাহলে সব চাইতে বেশী ক্ষতি ভারতের।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফেব্রুয়ারী ১, ২০১৩

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ