[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

ধর্ম রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের নির্বাচন

 

প্রফেসর আবদুল মান্নান

বাংলাদেশকে যখন হেফাজত নামক হঠাৎ উদয় হওয়া চরম ধর্মান্ধ কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক দলটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিবর্তন করার জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছে ঠিক সেই সময় তালেবানদের আঁতুড় ঘর পাকিস্তানে সে দেশের আগামী মাসের ১১ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । পাকিস্তানে প্রথম যুগান্তকারি ঘটনাটি ঘটেছিল গত মাসে যখন পাকিস্তানের পঁয়ষট্টি বছরের ইতিহাসে একটি নির্বাচিত সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করলো যদিও তা নির্বিঘেœ ছিল না । এর মধ্যে দেশটির নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলনীকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার পদ হতে সরে যেতে হয়েছে । পরের জন রাজা পারভেজ আসরাফও কিছু দিন টালামাটাল অবস্থায় ছিলেন । পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারি যিনি আন্তর্জাতিক ভাবে একজন চরম দূর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত । পাকিস্তান বিশ্বে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত । ১৯৪৭ সনে ইসলামের দোহায় দিয়ে দেশটি যাত্রা শুরু করেছিল এবং এই দীর্ঘ সময়ে দেশটি ক্রমাগত সার্বিক অর্থে পিছনের দিকে হেঁটেছে । যে ইসলামের নামে দেশটির যাত্রা সেই ইসলামের নামেই দেশটিতে এই দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশী সময় ধরে মানুষ হত্যা হয়েছে । বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল সেই এক বাংলাদেশেই তারা আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লক্ষ মানুষকে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দোসররা ইসলামের নামে হত্যা করেছে । পাকিস্তান বর্তমানে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির একটি কারখানা হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত । মসজিদের ভিতর নামাজরত অবস্থায় একদল মুসলমান নামধারি সন্ত্রাসি আর একদল মুসলমানকে হত্যা করা নিত্য নৈমিত্তক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই হত্যাকা-ের প্রত্যেকটিই ঘটানো হয় পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে । পাকিস্তান আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবান আর আল কায়দা গোষ্টি নিয়মিত আত্মঘাতি বোমা বিষ্ফরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করছে । আশির দশকে এই আল কায়দার সৃষ্টি পিছনে সক্রিয় মদদ ছিল আমেরিকার সিআইএ ও পাকিস্তানের গোয়ন্দো সংস্থা আইএসআই’র । তারা তালেবান নামক প্রায় নব্বই হাজার সদস্য বিশিষ্ট এই সন্ত্রাসি গোষ্ঠি সৃষ্টি করেছিল এই বিশ্বাসে যে তাদের মাধ্যমে আফগানিস্তান হতে সোভিয়েত দখলদার বাহিনীকে উৎখাত করতে পারবে । এই কাজে তখন তাদের রাষ্ট্রিয় ভাবে সহায়তা করেছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হক । এই এক জিয়াউল হক পাকিস্তানকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন । তিনি মনে করতেন তিনি যতসব রাষ্ট্র ও মানবতা বিধ্বংসী কাজ কারবার করেন তা সবই করছেন ইসলামের খেদমতের জন্য । পরবর্তি কালে এই তালেবানের গর্ভেই জন্ম হয়েছে আল-কায়েদা নামক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্টি যারা যুক্তারাষ্ট্র পর্যন্ত গিয়ে ভয়াবহ সব সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রর সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টন এক টিভি সাক্ষাৎকারে পরবর্তি সময়ে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তালেবান সৃষ্টির সহায়তা করা ছিল একটি ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত । আফগানিস্তান হতে সোভিয়েত ইউনিয়ন চলে যাওয়ার পর তালেবানরা ১৯৯৬ সনে আফগান্তিানের শাসন ভার দখল করে এবং ২০০১ সন পর্যন্ত দেশটি শাসনের নামে এক অন্ধকার যুগে নিয়ে যায় যা বাংলাদেশে করবে বলে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলাম স্বপ্ন দেখছে এবং সম্প্রতি হেফাজত মাঠে নামার পর তাদের সেই স্বপ্ন আরো কিছুটা হলেও জোড়ালো হয়েছে ।
ইসলাম পাকিস্তানর রাজনীতিতে সব সময় খুবই জোড়ালো ভুমিকা পালন করেছে । মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান সৃষ্টির জিগির তুলেছিলেন মুসলামাসদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করবেন বলে । জিন্নাহ নিজে ছিলেন ইসমাইলি সম্প্রদায় ভুক্ত যাদেরকে পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ মুসলমানই বলে মনে করে না । জিন্নাহ্্র স্ত্রী রতনবাই ছিলেন একজন পার্সি, অর্থাৎ অগ্নি উপাসক । তার প্রথম স্ত্রী গুজরাটি এমবাই (ঊসনধর) অল্প বয়সে মারা যান । ১৯৪৭ সনে জিন্নাহার সখের পাকিস্তান সৃষ্টি হলে সেই পাকিস্তানে জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ ছাড়া পরিবারের আর কেউই হিযরত করেন নি । জিন্নার দ্বিতীয় স্ত্রী রতনবাই বোম্বাই’র বিখ্যাত তাজ হোটেলে শেষের দিনগুলি একাকি কাটিয়ে সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন । ইসলামের নামেই জিন্নাহ আর মুসলিম লীগ উপমহাদেশকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন । ১৯৪৭ সনের পর হতেই পাকিস্তান কোন অর্থেই একটি জাতি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেনি । এই দীর্ঘ সময়ে দেশটি শাসিত হয়েছে সামরিক শাসক অথবা অর্ধশিক্ষত গোঁড়া মোল্লাদের দ্বারা । সেই পাকিস্তানে অনেক ঝুট ঝামেলার পরও যখন একটি নির্বাচিত সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করে তা আন্তর্জাতিক মহল একটি বড় ধরেন খবর বৈকি এবং তা প্রশংসিতও হয়েছে ।
২০১৩ সনে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে পাকিস্তানের দুটি সংবাদ সেই দেশেতো বটেই এই অঞ্চলের সকল দেশেই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে । প্রথমটি হচ্ছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এই প্রথম বারের মতো ঘোষণা করছে আসন্ন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবে না । শুধু ধর্ম নয় কমিশন আরো ঘোষণা করেছে কোন রাজনৈতিক দল যদি গোত্র (ংবপঃ), লিঙ্গ (মবহফবৎ) অথবা কোন নৃতাত্বিক জাতিগোষ্ঠিকে নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করে সেই দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতার অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হবে । নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত । নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের ধর্মব্যবসায়ী দলগুলি বেজায় ক্ষুব্দ । পাকিস্তান জামিয়াতে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আবদুল গফুর হায়দারি কমিশনের এই ঘোষণার তিব্র নিন্দা করে বলেছেন “পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল ইসলামের নামে । সেই পাকিস্তানে কেমন করে ইসলামের নামে ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়?’ তার মতে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য । জামিয়াত ও জামায়াতে ইসলাম সহ অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ি দলগুলি এই সিদ্ধন্তের প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে । তাদের মতে পাকিস্তান একটি ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র এবং নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পাকিস্তান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিনত হবে যা হবে দেশটির সংবিধানের পরিপন্থি । কোন অবস্থাতেই এটি হতে দেয়া যাবে না । পাকিস্তানের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলি কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে । তাদের মতে পাকিস্তানে মুসলমান ছাড়াও হিন্দু ও খৃষ্টানরাও বাস করে । সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানরা যদি ধর্মকে নির্বাচনি প্রচার ব্যবহার করে তা হলে অন্য ধর্মাবলম্বিদের জন্য তা প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করবে । ইতোমধ্যে পাকিস্তানের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলি প্রািতবাদ সভাও করেছে এবং বলেছে তারা গণতন্ত্র চায় না তারা শুধু মাত্র ইসলাম চায় ।
পাকিস্তানের ইতিহাসে যত রকমের অপকর্ম হয়েছে তা সব সময় হয়েছে ইসলামের নামে । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাঙালিরা যখনই তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছে তখনই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি এই বলে তা দমন করার চেষ্ঠা করেছে যে এই দাবি মানা হলে ইসলাম বিপন্ন হবে । ‘ইসলামা খতরেমে হ্যায়’ ছিল তাদের একটা মুখস্ত বুলি । বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের সময় তারা বলল এই আন্দোলনের পিছনে হিন্দু ভারতের অর্থ আর ইন্দন কাজ করছে । তারা মুসলমানদের ভাষা উর্দুর বদলে হিন্দুদের ভাষা বাংলা চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখানেও পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি হিন্দু ভারতের ষড়যন্ত্র অবিস্কার করতে বিন্দু মাত্র দেরী করেনি । জামায়াতে ইসলাম তাদের সাথে যোগ হওয়াতে তাদের আরো সুবিধা হলো । জামায়াত বললো পাকিস্তান না থাকলে ইসলাম থাকবে না । ইসলামের হেফাজতের জন্যই পাকিস্তানকে হেফাজত করতে হবে । সীমান্ত প্রদেশ ও বালুচিস্তানে যেহেতু জনগনের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা খুবই কম সেহেতু সেখানে রাজনীতিতে ধর্মকে খুব সহজেই ব্যবাহার করা যায় । এই দুটি প্রদেশে একাধিক বার ইসলাম পন্থি দলগুলি সরকার গঠন করেছে তবে মজায় ব্যপার হচ্ছে এই ইসলাম পন্থি দলগুলির মধ্যে জামায়াতে ইসলাম ছিল না কারণ পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ এই দলটিকে প্রকৃত অর্থে ইসলামি দল মনে করে না । তার কখনো মোট ভোটের দুই শতাংশের বেশী পায়নি । ২০০৮ সনের নির্বাচন তার বয়কট করেছিল ।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনো আবার ইসলাম ফিরে আসবে তা ধারণা করা হয়নি । কিন্তু জাতির দূর্ভাগ্য একাত্তরের ১৫ই অগাষ্টের পর সামরিক শাসক জিয়ার হাত ধরে তা বহাল তবিয়তে ফিরে এসেছে । তিনি ইসলামকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন । নিষিদ্ধ ঘোষিত একত্তরের যুদ্ধপরাধিদের দল জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন । সংবিধান হতে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিদায় করেছেন । তার উত্তরসূরী জেনারেল এরশাদ এসে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছেন । এই গুলি সবই ছিল রাজনৈতিক ফায়াদ লুটার ফন্দি ফিকির । জিয়ার স্ত্রী বেগম জিয়া রাজনীতিতে এসে আরো একধাপ উপরে উঠে নির্বাচনের সময় বললেন আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে সব মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলু ধ্বনি হবে । দেলোয়ার হোসেন সাঈদী আর একধাপ উপড়ে উঠে নির্বাচনে সময় তার এলাকায় ভোটারদের কাছে বেহশতের টিকেট বিলি করা শুরু করলেন । আর আওয়ামী লীগও বসে থাকবে কেন? তারাও শ্লোগন তুলল ‘লাইলাহা ইল্লালাহ নৌকার মালিক তুই আল্লাহ ।’ মার্কসবাদিরা সোজাসুজি এই সব না গিয়ে মাথায় কিস্তি টুপি লাগিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা নেমে পরলেন । আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষও ধর্মকে রাজিনীতি বা নির্বাচনে ব্যবাহার করাতে কম যায় না । বিজেপি তাদের নির্বাচনি প্রচারতো শুরুই করে রথযাত্রা দিয়ে । অনেকে কোন এক সাধু বাবার দরবারে গিয়ে নারিকেল ভাঙ্গেন । কেউ কেউ আবার তিরুপাতি মন্দির অথবা আজমিড়ে খাজা বাবা দরগাহে ছুটেন । এই যখন উপমহাদেশের রাজনীতির অবস্থা তখন পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে একটি বিপ্লবি সিদ্ধান্তই বলতে হবে । এই কাজে যদি তারা সফল হয় তা হলে বুঝতে হবে পাকিস্তান একটি জাতি রাষ্ট্র হওয়ার দিকে প্রথম পদক্ষেপটি নিল । তবে তাকে যেতে হবে অনেক দূর।
বর্তমান বিশ্বে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে । এই সব দেশের মধ্যে মিশর, তিউনিশিয়া ও তুরস্ক উল্লেখযোগ্য । ভারতের জামায়তে ইসলামও ধর্মনিরপেক্ষতাকে তাদের রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে মেনে নিয়েছে । মিশরে এখন মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় । ইসলামকে জঙ্গিবাদে দিক্ষীত করার পিছনে সব চেয়ে বেশী অবদান এই ব্রাদারহুডের । এরাই জামায়াতের আদি গুরু । সেই ব্রাদারহুড মিশরে এবং তিউনিশিয়ায় ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে পঞ্চাশের দশকের ব্রাদারহুড আর একবিংশ দশকের ব্রাদারহুড এক নয় । তুরষ্কে এরদোগানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি রাজনৈতিক দর্শন ছিল অনেকটা বাংলাদেশের জামায়াত আর হেফাজতের সংমিশ্রন । ক্ষমতায় গিয়ে তারা ঘোষণা দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে কারণ সাংবিধানিক ভাবে তুরস্কে কোন ধর্মীয় মৌলবাদি দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে পারে না । এমনটি হলে সে দেশে সেনা বাহিনী ক্ষমতা দখল করতে পারে । আলজেরিয়ায়ও একই ব্যবস্থা । পৃথিবী বদলে যাচ্ছে দ্রুত । বাংলাদেশে বদলাচ্ছেনা জামায়াতের মতো কিছু রাজনৈতিক দল । তাদের সাথে এখন যোগ হয়েছে আর একটি মধ্যযুগীয় দল হেফাজত পার্টি। অনেকের ধারণা এই হেফাজত হতেই হয়তো একদিন উঠে আসবে দক্ষীন পূর্ব এশিয়ার প্রথম ওসামা বিন লাদেন । সরকার এদের সাথে একটা আপোস রফা করার খুব চেষ্টা করছে । তেমন কোন লাভ হবে মনে হয় না । বিন লাদেনের সাথেও প্রথম দিকে এমন আপোস করার চেষ্টা করা হয়েছিল । ধর্মভীরুদের সাথে কথা বলা যায় ধর্মৌন্মদদের সাথে নয় । তাদের অভিধানে যুক্তি শব্দটি নেই ।
পাকিস্তানে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দ্বিতীয় যে সংবাদটি বেশ তোলপাড় হচ্ছে তার জন্মদাতা পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোর্শারফ । নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে দীর্ঘ প্রবাস জীবন ত্যাগ করে দেশে ফিরেছিলেন । মনোনয়ন পত্রও জমা দিয়েছিলেন । সব গুলি বাতিল হয়ে গেছে । শুধু তাই নয়, দেশটির উচ্চ আদালত তাকে সন্ত্রাস সৃষ্টির এক মামলায় গ্রেফতারের হুকুম দিয়েছে । ক্ষমতায় থাকতে তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপিতি সহ ষটজন বিচারপতিকে আচক করেছেলেন । তিনি এখন পুলিশ সদরদপ্তরে বন্দি । তার বিরুদ্ধে সে দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগও আনা হতে পারে । কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না । একসময় পারভেজ মোর্শারফ নিজেকে পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা ভাবতেন । নিজেকে আজীবন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিন্তা করতেন । আইনের বেড়াজালে এখন আটকে গেছেন । রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখনো পাকিস্তানকে একটি এডহক রাষ্ট্র হিসেবে চিন্তা করেন । পাকিস্তানের সামনে এখন একটা সুযোগ এসেছে একটি নতুন পথের সন্ধান করার । তারা সেই সুযোগ গ্রহণ করনে কিনা এখন তা দেখার অপেক্ষায় ।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এপ্রিল ২০, ২০১৩

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ