[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

আনবিক বোমা

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।

১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ অধ্যায়টি রচিত হয় জাপানের দুটি শহরের উপর আমেরিকার আনবিক বোমা নিক্ষেপের মধ্যে দিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের এক্সিকিউটিভ নির্দেশের ফলে আমেরিকা তার প্রথম আনবিক বোমা "লিটল বয়" জাপানের হিরোশিমা শহরের উপর নিক্ষেপ করে। এর তিনদিন পরে নিক্ষেপ করা হয় "ফ্যাটম্যান" নামক দ্বিতীয় আনবিক বোমাটি। এটি ফেলা হয় নাগাসাকি শহরের উপর।

বোমা নিক্ষেপের দুই থেকে চার মাসের মধ্যে বোমার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় মারা যান প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার লোক। আর নাগাসাকিতে মারা যান প্রায় ৮০ হাজার লোক।

নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আনবিক বোমা নিক্ষেপের ছয় দিন পর ১৫ই অগাষ্ট জাপান আত্মসমার্পনের কথা ঘোষনা করে। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ তারা সরকারি ভাবে অত্মসমার্পন করে।

আমেরিকার, বৃটেন ও কানাডার যৌথ সহায়তায় গোপন প্রজেক্ট টিউব এলয়েস ও চক রিভার ল্যাবরেটরিজের প্রণয়নকৃত নক্সায় ম্যানহাটন প্রজেক্টের অধীনে প্রথম আনবিক বোমাটি প্রস্তুত হয়। এই গবেষনা প্রজেক্টের নেতৃত্বে ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহেইমার এবং সামগ্রিক বিষয়টি দেখাশোনা করছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের জেনারেল লেজলি গ্রভস। হিরোশিমায় যে বোমটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল সেই লিটল বয় ছিল ইউরেনিয়াম-২৩৫, একটি বিরল আইসোটোপ যা টেনেসির অক রিজ ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়। আনবিক বোমাটির পরীক্ষা চালানো হয় ১৬ই জুলাই ১৯৪৫ সালের নিউমেক্সিকোর ট্রিনিটি সাইটে।

হিরোশিমাতে যে সময় আনবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয় সে সময় শহরটি শিল্প ও সামরিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ববহন করছিল। হিরোশিমার কাছেই বেশ কিছু সেনা ছাউনি ও পঞ্চম ডিভিশনের হেডকোয়ার্টার ছিল। শহরের মধ্যাঞ্চলে ছিল দালান ও হালকা ধরনের স্থাপনা। বাইরের দিকে ছিল ছোট ছোট কাঠের কারখানা ও জনবসতি। যুদ্ধের সময় হিরোশিমার জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৮১ হাজারে বৃদ্ধি পায়।


আনবিক বোমার পরে দ্রুত শহরটি খালি হয়ে যেতে থাকে। বোমা ছাড়াও এর অন্য একটি কারন সরকার কর্তৃক জনসাধারনকে শহর থেকে সরিয়ে নেয়া।

৬ই অগাষ্টের আনবিক বোমা নিক্ষেপের জন্য নির্বাচিত তিনটি শহরের একটি হচ্ছে হিরোশিমা। অন্য দুটি হচ্ছে কোকুরা ও নাগাসাকি। ৩৯৩ বোম্বার্ডমেন্ট স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত ছিল বি-২৯ এনোলা বে বিমানটি। যার চালক ও কমান্ডার ছিলেন ৫০৯তম কম্পোজিট গ্রুপ কমান্ডার কর্নেল পাউল টিব্বেটস। এনোলা গে উড্ডয়ন করে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় টিনিয়ান এয়ারবেস থেকে। জাপান পর্যন্ত উড়ে যাবার সময় হলো ছয় ঘন্টা।

পাইলট পাউল টিব্বেটস এর মায়ের নাম অনুসারে বিমানটির নাম দেয়া হয় এনোলা গে।

টিনিয়ান বেস থেকে উড়ে যখন টার্গেট অঞ্চলে পৌঁছায় তখন দৃষ্টিসীমা ছিল ৯ হাজার ৮৫৫ মিটার। বোমা নিক্ষেপের প্রায় একঘন্টা আগে জাপানের রাডার মার্কিন বিমানের আগমনী বার্তা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বিমান হামলার সতর্কবাণী রেডিওতে প্রচার করা হয়। হিরোশিমা সহ অনেক শহরে রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৮ টার দিকে হিরোশিমার রাডার অপারেটর মোট কয়টি আমেরিকান বিমান আসছে তা চিহ্নিত করেন। দেখা যায় বড়জোর তিনটি মার্কিন বিমান আসছে, কাজেই বিমান হামলার তেমন সম্ভাবনা নেই মনে করে বিমান হামলার সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়। এ দিকে জাপানী বিমানবাহিনীও তেল ও বিমান বাঁচাতে এই তিনটি মাত্র বিমানকে প্রতিহত করার চিন্তা বাদ দেয়।

হিরোশিমা সময় সকল ৮.১৫ মিনিটে পরিকল্পনা মাফিক ৬০ কিলোগ্রাম ওজনের ইউরেনিয়াম-২৩৫ সমৃদ্ধ লিটল বয় বিমান থেকে পড়ে। ৪৩ সেকেন্ড সময় নেয় শহরের ৫৮০ মিটার বা ১৯০০ ফুট উচ্চতায় আসতে। বোমা নিক্ষেপ করে ১১.৫ মাইল চলে আসার পর নিক্ষেপকারী বিমানটি বোমার শক ওয়েভ অনুভব করতে পারে।

সে সময় জোর বাতাস বইছিল, ফলে বোমাটি তার ঠিক লক্ষ্য আওই ব্রিজে পৌঁছাতে ব্যার্থ হয় এবং ২৪০ মিটার পাশে সরে গিয়ে শিমা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের উপর বিস্ফোরিত হয়। ১৩ কিলোটন টিএনটির সমপরিমান বিস্ফোরন ঘটে। প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। জাপানের প্রদত্ত হিসেবে মতে হিরোশিমার ৬৯% ভাগ দালান পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়।

সাথে সাথেই নিহত হয় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ, আরো ৭০ হাজার পরবর্তী কিছুদিনের মধ্যে মারা যান। হিরোশিমা শহরের ৯০% ডাক্তার, ৯৩% নার্স বোমায় নিহত হন।

১৯৫০ সালের মধ্যে আনবিক বোমায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লক্ষে। ক্যান্সার সহ নানান প্রতিক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপ করেই ক্ষান্ত হয়নি আমেরিকা। অগাষ্টের তৃতীয় সপ্তাহে তাদের আরো একটি আনবিক বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা ছিল। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আরো তিনটি বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা ছিল আমেরিকার। ম্যানহাটন প্রজেক্টের সেনা ডিরেক্টর লেজলি গ্রোভস জেনারেল জর্জ মার্শালকে একটি মেমোতে লেখেন, "পরবর্তী বোমা নিক্ষেপ করা হবে অগাষ্টের ১৭ কি ১৮ তারিখের পর।"

তবে জাপানী সম্প্রাট হিরোহিতোর দ্রুত সিদ্ধান্তের ফলে প্রান বাঁচে আরো লক্ষ লক্ষ লোকের। এই ইতিহাস আর যেন কোনদিন পৃথিবীর বুকে ফিরে না আসে। আর কোনদিন যেন পৃথিবীকে এমন দিন দেখতে না হয়।
 


 

 

>>বন্যপ্রাণী ঠেকাতে মরিচের গুঁড়ো

>>শেষ হলো প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বানানো জাহাজের অভিযান

>>গাছ চিন্তা করে, মনেও রাখে

>>বৃহত্তম তারার সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা

>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার পেছনে

>>ডিম নয়, বিজ্ঞান বলছে, 'সম্ভবত মুরগিই!’

>>সমুদ্রতলে মাছরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে

>>সবচাইতে শীতল বাদামী বামনের সন্ধান লাভ

>>রাশিয়ান কার্গো শিপ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে থামতে ব্যর্থ হল

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ

>>২০৫০ সাল নাগাদ এশিয়ার বেশিরভাগ নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাবে

>>সিঙ্গাপুরে প্রত্যেকের জন্য ইলেকট্রনিক মেইলবক্স

>>মিশরে ৩,৬০০ বছর আগের একটি শহরের সন্ধান লাভ 

>>আগুনের সঙ্গে বসবাস

>>বিজ্ঞানের অসহায়ত্ব ভুপাল দুর্ঘটনা

>>কুমিরের সাগর পাড়ি দেবার রহস্য 

>>ছাইমেঘ থেকে বিমান বাঁচানোর নতুন উপায়

>>ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস
>>নানা মারাত্মক রোগের কারণ প্রক্রিয়াজাত মাংস

>>মাদাগাস্কারের ছোট্ট ডুবুরি পাখি হারিয়ে গেল

>>হাবলের চোখে, গ্রহ খাদক নক্ষত্র

>>বিমান বিধ্বস্তের কাহিনী

>>ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে নতুন প্রজাতির জীব আবিষ্কার

>>ছাইমেঘের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রস্তুত

>>জোয়ান অব আর্ক
>>এশিয়ায় হুমকির মুখে পরিযায়ী পাখির দল

>>নেয়ানডার্থালরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ

>>ডেঙ্গু প্রতিরোধে জিনগত কারণ অনুসন্ধান

>>মেক্সিকো উপসাগরে ‘এক্সোন ভালডেজ’ ঘটতে আর কতো দেরী?

>>বোর্নিওতে নতুন প্রানের সন্ধান

>>প্রথমবারের মত পুরো মুখমন্ডলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন

>>আইসল্যান্ডে আরো বড় অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা বাড়ছে

>>আইসল্যান্ডেই এই, ইয়েলোস্টোন ফাটলে কি হবে?

>>আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে প্রভাবিত বিমান, আবহাওয়া, সূর্যাস্ত

>>বাংলা বছরের সূচনা

>>বিশ লাখ বছরের পুরনো কঙ্কাল থেকে বিবর্তন ধারার সন্ধান

>>শুকিয়ে যাচ্ছে আরল সাগর

>>জেব্রাফিশঃ হৃদযন্ত্রের টিস্যু নিজেই সারিয়ে তোলে
>>হাতি -ফোর হুইল ড্রাইভ

>>গ্রহাণুর ওপর নজর রাখবে নতুন ‘কমপ্যাক্ট’ স্যাটেলাইট

>>প্রবালেরা মারা যাচ্ছেঃ বিভিন্ন দেশে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়

>>মৌমাছির হুল ফোটানোয় অসুখ সারে!!

>>মায়া সভ্যতা

>>অ্যাকিলিস

>>২০১৪ সালে চালু হচ্ছে গ্যালিলিও

>>"সেটি" প্রকল্পের ৫০ বছর

>>প্রাচীন মানবের পূর্ণাঙ্গ জিন বিশ্লেষণ
>>ধ্বসে যেতে পারে পশ্চিম এন্টার্কটিকা

>>ঝড়ের সংখ্যা কমে বাড়তে পারে গতি

>>শিরাকাওয়া-গো এবং গোকাইয়ামা

>>পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ

>>সুপার ভলকেন

>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন

>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন

>>তিমি কাহিনী

>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত

>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিন

>>টর্নেড

>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

>>ভূপাল বিপর্যয়

>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল

>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!

>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]