@

[প্রথমপাতা]

@

@

রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

(কমিউনিটি ডেস্ক): ১৯৮৯ সালের কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে রোমানিয়ার জনগণ৷ ঐ বিপ্লবের প্রাক্কালে কমিউনিস্ট অপশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়েছিল সহস্রাধিক নিরস্ত্র মানুষ৷

২০ বছর আগের ২১ এবং ২২ ডিসেম্বর বুখারেস্টের উপকণ্ঠে রোমানীয় সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল ৪৮ জন বিক্ষোভকারী৷ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পুলিশি অ্যাকশনে আহত, গ্রেফতার এবং নির্যাতিত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ৷ এছাড়া পশ্চিমের শহর টিমিসোয়ারায় বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় নিহত হয় ১০০ জন এবং সেখানেও আহত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ৷ দেশজুড়ে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ২২ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন শাসক চসেস্কু৷

২৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনামলের অবসান

অবসান ঘটে ২৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনামলের৷ এর কয়েকদিন পর ২৫ ডিসেম্বর সংক্ষিপ্ত বিচারের পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কমিউনিস্ট নেতা নিকোলাই চসেস্কু এবং তাঁর স্ত্রী এলেনাকে৷ এছাড়া আরো কিছু কমিউনিস্ট নেতাকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ এক হিসাব অনুযায়ী, চসেস্কুর পতনের আগে ১৬২ জন এবং তাঁর পতনের পর আরো ৯৪২ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল এই বিপ্লবের সময়৷

প্রেক্ষাপট

রুমানিয়ান জনগন নানা কারনে কমিউনিষ্টদের উপর খুবই ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। এর একটি অন্যতম কারন ছিল পশ্চাৎপদ অর্থনীতি। জনগন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দারিদ্রপীড়িত অবস্থার কারনে সরকারের উপর খুবই ক্ষুব্ধ ছিল। এর উপর ছিল দেশের সর্বত্র পুলিশের উপস্থিতি। রোমানিয়া সেসময় ছিল একটি সম্পূর্ণ পুলিশি রাষ্ট্র।

ওয়ারশ জোটের অন্যতম দেশ হয়েও রোমানিয়ার নেতা চসেস্কু সোভিয়েতপন্থী না হয়ে বরং যুগস্লাভিয়ার সাবেক শাসক ব্রোজ টিটোর অনুসারী হয়ে ওঠেন। যখন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ নমনীতার কথা বলছেন তখন চসেস্কু কট্টরপন্থী কমিউনিস্ট হয়ে ওঠেন।

১৯৮৭ সালের ১৫ই নভেম্বর কমিউনিষ্ট বিরোধীরা সমাজতন্ত্রের পতনের ডাক দেন, যা শেষ পর্যন্ত সফল হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে গনতন্ত্রপন্থীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বের হন যাতে লেখা ছিল "আমরা চসেস্কুর বিরুদ্ধে সংস্কার চাই"।

১৯৮৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সরকার ভিন্নমতাবলম্বী হাংগেরীয়ান যাজক লাজলো টোকেসকে পদচ্যুত করে বহিস্কারের আদেশ দিলে টিমিসোয়ারাতে ব্যাপক অসোন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তা দাঙ্গায় পরিনত হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, শেষ পর্যন্ত যা চসেস্কুর পতনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

এখনও পূরণ হয়নি বিপ্লবীদের স্বপ্ন

২১ ডিসেম্বরের ঐ বিপ্লবের ২০ বছর পূর্তি উদযাপনে গঠিত পরিষদের নেতা টিওডর মারিজ বলেন, ''২০ বছর পেরিয়ে গেছে এবং এ সময়ে শাসকশ্রেণী ঐ বিপ্লবের প্রকৃত সত্য ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েছেন৷'' তিনি বলেন, ''ঐ ঘটনায় গণহত্যার যারা নির্দেশ দিয়েছিল আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ড চাই না, কিন্তু আমরা চাই তাদের যথাযথ বিচার করা হোক৷'' মারিজ বলেন, ''১৯৮৯ সালের বিপ্লবের সময় জনতা চেয়েছিল প্রকৃত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন৷ কিন্তু মানুষ সেসব কিছু না পেয়ে বেশ হতাশ হয়েছে এই দেখে যে, দেশের পরিস্থিতি কতটা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়েছে৷''

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাসেস্কুর শপথ গ্রহণ

এদিকে, দ্বিতীয় মেয়াদে রোমানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন ট্রায়ান বাসেস্কু৷ শপথ গ্রহণের পর অভিষেক বক্তৃতায় তিনি '৮৯ এর বিপ্লবের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ তিনি বলেন, ''তাঁদের আত্মত্যাগই বর্তমানের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভিত্তি৷'' তবে তিনি একইসাথে স্বীকার করেন যে, ''রোমানিয়ার সমাজ এখনও ঐ ঘটনার সকল তথ্য জানে না এবং দায়ী ব্যক্তিদেরও সবার শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি৷'' এছাড়া দারিদ্র্য পীড়িত বলকান রাষ্ট্রটির আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বাসেস্কু৷ বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার উপরে জোর দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ সূত্রঃ এই নিবন্ধের অংশ বিশেষ ডয়েচে ভেলে থেকে নেয়া।   

[প্রথমপাতা]

@