[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ

 

 

কমিউনিটি ডেস্ক ||
চ্যালেঞ্জার ডিপ হচ্ছে এখন পর্যন্ত জরিপকৃত সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম স্থান। এর গভীরতা প্রায় ১১,০০০ মিটার (৩৬,০০০ ফুট)। প্রকৃত গভীরতা এর থেকে ১০০ মিটার কম-বেশি হতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত মারিয়ানা খাতের দক্ষিণ অংশে এর অবস্থান।

চ্যালেঞ্জার ডিপের সবচেয়ে কাছের স্থলভাগটির নাম ফাইস দ্বীপ। এটি চ্যালেঞ্জার ডিপ থেকে ২৮৯ কিলোমিটার (১৮০ মাইল) দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত। এছাড়াও রয়েছে গুয়াম, যার অবস্থান ৩০৬ কিলোমিটার (১৯০ মাইল) উত্তরপূর্বে। এই গভীরতম স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে ব্রিটিশ রয়াল নেভির জরিপ জাহাজ এইচএমএস চ্যালেঞ্জারের নামানুসারে। এই জাহাজের ১৮৭২-৭৬ সালের এক অভিযানেই সর্বপ্রথম এর গভীরতা পরিমাপ করা হয়।

চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা পরিমাপের ইতিহাসঃ


এইচএমএস চ্যালেঞ্জার অভিযান (ডিসেম্বর ১৮৭২ – মে ১৮৭৬) সর্বপ্রথম আজকের চ্যালেঞ্জার ডিপ নামের অংশটির গভীরতা পরিমাপ করে। এই পরিমাপ সর্বপ্রথম হয় ১৮৭৫ সালের ২৩ মার্চ, এবং দুটি ভিন্ন পরিমাপে প্রাপ্ত গভীরতা দাঁড়ায় ৪,৪৭৫ ফ্যাদম (৮,১৮৪ মিটার বা ২৬,৮৫০ ফুট)।

১৯১২ সালে প্রকাশিত স্যার জন মারের লিখিত ডেপথ্স অফ দ্য ওশান নামের এক বইতে তিনি চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা ৩১,৬১৪ ফুট (৯,৬৩৬ মিটার) হিসেবে প্রকাশ করেন। মারে চ্যালেঞ্জার অভিযানের সময় একজন বিজ্ঞানী হিসেবে ঐ জাহাজে ছিলেন।

১৯৫১ সালে, মূল অভিযানের প্রায় ৭৫ বছর পর, সম্পূর্ণ মারিয়ানা খাত এলাকা ব্রিটিশ রয়াল নেভির জাহাজ দ্বারা পরিমাপকৃত হয়। এই জাহাজের নামও ছিলো এইচএমএস চ্যালেঞ্জার, এবং এর ক্যাপ্টেন ছিলেন জর্জ স্টিফেন রিশি (পরবর্তীতে রিয়ার অ্যাডমিরাল রিশি)। এই জরিপে শব্দের প্রতিধ্বনি কাজে লাগিয়ে চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা পরিমাপ করা হয়, এবং ফলাফল আসে ৫,৯৬০ ফ্যাদম (১০,৯০০ মিটার বা ৩৫,৭৬১ ফুট)।

১৯৮৪ সালে এক জাপানি পরিমাপ জলযানের এক পরিমাপে চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা পাওয়া যায় ১০,৯২৪ মিটার (৩৫,৮৪০ ফুট)।

চ্যালেঞ্জারের ডিপের গভীরতা সবচেয়ে বেশিবার পরিমাপকৃত ফলাফল ১১,০৩৪ মিটার (৩৬,২০০ ফুট)। ২০০৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচ থেকে এর গভীরতা প্রায় ৬.৭৪ মাইল। চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতায় পানির চাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় প্রায় ১,০৯৯ গুণ বেশি; প্রায় ১১১ মেগা প্যাসকেল।

২০০৯ এর পহেলা জুন সিমরাড ইএম১২০ সোনার মাল্টিবীম বাথিমেট্রি সিস্টেম চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা ১০,৯৭১ মিটার (৩৫,৯৯৪ ফুট)পরিমাপ করে।

১৯৬০ সালের ২৩শে জানুয়ারী ইতালিতে নির্মিত বাথিস্ক্যাফি ট্রিএসটি নামে একটি সাবমার্সেবল (পানির নীচে চলতে সক্ষম এমন বিশেষ যান) মার্কিন নৌবাহিনীর উদ্যোগে জ্যাকুয়েস পিকার্ড ও ইউএসএন লেঃ ডন ওয়ালস চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা পরিমাপ করেন। প্রায় পাঁচ ঘন্টা স্থায়ী এই অভিযানে তারা মাত্র কুড়ি মিনিটের মত সমুদ্রতলদেশে থাকতে সক্ষম হন। সমুদ্রতলদেশে গিয়ে পানির প্রবল চাপে তাদের যানের কাঁচে ফাটলের সৃষ্টি হয় তা ছাড়া তাদের যানের কারনে সমুদ্রতলার ধুলামাটি উড়তে শুরু করলে দৃষ্টিসীমা শুন্যে নেমে আসলে তাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন করতে হয়। ফিরতে তাদের সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। এসময় তারা গভীরতা হিসেব করেন ১০,৯১৬ মিটার (৩৫,৮১৪ ফুট)।

২৪শে মার্চ ১৯৯৫ জাপানি রোবোটিক নৌযান কেইকো মনুষ্যবিহীন যানের গভীরতার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। এটা চ্যালেঞ্জার ডিপের প্রায় তলায় পৌঁছুতে সক্ষম হয়। জাপান মেরিন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি সেন্টার নির্মিত কেইকো ৬০০০ মিটার (২০,০০ ফুট) এর অধীক গভীরতায় যেতে সক্ষম হওয়া হাতে গোনা কয়েকটি অনুসন্ধানী যানের একটি। কেইকো চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা ১০,৯১১ মিটার (৩৫,৭৯৭ ফুট) রেকর্ড করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইন্সটিটিউশন ২০০৯ সালের ৩১শে মে দুর নিয়ন্ত্রিত নেরিয়াসকে চ্যালেঞ্জার ডিপে প্রেরন করে। নেরিয়াস কেইকোর মত ক্যাবল দ্বারা চালিত বা নিয়ন্ত্রিত নয়। বরং সমুদ্রের উপরে আরেকটি জাহাজ হতে একে নিয়ন্ত্রন করা হয়। এর উদ্ভাবক ও প্রজেক্ট ম্যানেজার এন্ডি বোওয়ান বলেন "সমুদ্রাভিযানে এর মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা ঘটলো।"

নেরিয়াস ১০ ঘন্টারও বেশি সময় থেকে চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরতা পরিমাপ করে ১০,৯০২ মিটার (৩৫,৭৬৮ ফুট)। এ ছাড়াও সে সরাসরি ভিডিও চিত্র ও তথ্য প্রেরন করে এর মাদারশিপ আরভি কিলো মোনাতে যেটা সমুদ্র পৃষ্ঠহতে একে নিয়ন্ত্রন করছিল।

চ্যালেঞ্জার ডিপের তলদেশ হতে কেইকো ১০,৯০০ মিটার (৩৬,০০০ ফুট) গভীরে সরল ও ক্ষুদ্র জীবিত বস্তুর সন্ধান পায়। একই ধরনের অনুজীবের সন্ধান পাওয়া যায় ৭০০০ মিটার গভীরতাতেও।

প্রাপ্ত বেশির ভাগ অনুজীবই সরল প্রকৃতির। নরম খোলসে ঢাকা ফোরামিনিফেরা (৪৩২ ধরনের প্রজাতির, ন্যশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের তথ্য অন্যযায়ী), এ ছাড়াও আরো চার প্রজাতির জটিল গঠনের প্রানী। এখানে প্রাপ্ত নমুনা সমুহের মধ্যে ৮৫ ভাগই জৈবিক। নরম খোলস যুক্ত অ্যালোগ্রোমিডস যা গভীর সমুদ্রের ক্ষেত্র কিছুটা অস্বাভাবিক। সাধারন ভাবে গভীর সমুদ্রে ফোরামিনিফেরার অস্তিত্ব থাকে ৫ থেকে ২০ শতাংশ। তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
 

 

 

>>সুপার ভলকেন

>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন

>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন

>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার পেছন

>>তিমি কাহিনী

>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত

>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিন

>>টর্নেড

>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

>>ভূপাল বিপর্যয়

>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল

>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!

>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]