[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

File:Aeroflot Ilyushin Il-76TD at Zurich Airport in May 1985.jpg

 

(কমিউনিটি ডেস্ক): সময়টা ছিল ১৯৯৬ এর নভেম্বরের ১২ তারিখ। সম্ভাবনার হিসেবে যা ঘটার সম্ভাবনা ছিল দশকোটি ভাগের একভাগের একভাগ এ দিন সেই প্রায় অসম্ভব ঘটনাটিই ঘটেছিল। ভারতের আকাশে দুটি বিমানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঐদিন ৩৪৯ জন প্রান হারান। মধ্যাকাশে দুটি বিমানের সংঘর্ষের ইতিহাসে এটিকে অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলা হয়।

নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর থেকে ২৮৯ জন যাত্রী নিয়ে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসভিএ ৭৬৩ এর একটি বোয়িং ৭৪৭ সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টার দিকে টেকঅফ করে। সাউদিয়ার যাত্রীদের মধ্যে ২১৫ জন ভারতীয়, নয় নেপালী, তিন পাকিস্তানী, দুই মার্কিন ও বাংলাদেশ, বৃটেন এবং সৌদি আরবের একজন করে যাত্রী ছিল।

অপর দিকে কাজাকস্তান থেকে কাজাকস্তান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কেজেডকে ১৯০৭ এর একটি রিকিটি বিমান নয়াদিল্লি অভিমুখে আসছিল। যাত্রীদের অধীকাংশই রাশিয়ান বংশোদ্ভুত কাজাক যারা ভারতে মূলত বানিজ্যের সন্ধানে আসছিল। তেরজন ব্যাবসায়ী ছিল এই ফ্লাইটে। এই ফ্লাইটে ৬০ জন যাত্রী ছিল।

নয়াদিল্লি বিমানবন্দরের আকাশে সেসময় ইউনি ডিরেকশনাল বা দ্বিমুখী বিমানপথ না হয়ে একমুখী ছিল। দ্বিমুখী বিমানপথ হলে একটি বেরিয়ে যাবার জন্য, অপরটি বিমানবন্দরে আসার জন্য নিরাপদে ব্যাবহার করা যেত। কিন্তু সে সময় একটি পথ রিজার্ভ করা ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর ব্যাবহারের জন্য। ফলে অন্যসব বিমানগুলোকে ঝুঁকি নিয়ে একটি পথেই আসা যাওয়া করতে হতো। তার উপর ঐ সময় দিল্লি বিমানবন্দরে কোন এসএসভিআর বা সেকেন্ডারী সার্ভেল্যান্স রাডার যা বিমানগুলোর উচ্চতা পরিমাপ করে তা ছিলনা। ফলে কোন বিমান কত উঁচু দিয়ে যাচ্ছে তা নির্ণয় করার একমাত্র হাতিয়ার ছিল বিমানের পাইলটের দেয়া তথ্য।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্বে ছিলেন ১০ বছরের অভিজ্ঞ ভি কে দত্ত। তিনি সাউদিয়ার প্লেনটি যখন ১০,০০০ ফুট তখন বিমানটির নির্দেশনার দায়িত্ব নিলেন। ভি কে দত্ত সাউদিয়াকে বল্লেন যেন সে ফ্লাইট লেভেল ১৪০ বা ১৪,০০০ ফুট এ অবস্থান করে। কাজাকস্তান এয়ারলাইন্স দিল্লির আকাশে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি কাজাক এয়ারলাইন্সকে ১৫,০০০ ফুট উচ্চতা বরাদ্দ করেন। ফলে দুটো বিমানের মধ্যে ব্যাবধান রইল ১০০০ ফুটের মত। বিমান চালনার আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে এই ব্যাবধান নিরাপদ।

ভি কে দত্ত কাজাক এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দিলেন তার নীচে সাউদিয়ার বিমানটি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজাক ক্রুদের বোঝার অনেক ভুল ছিল। প্রথমতঃ কাজাক এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন বা কোপাইলট কেউই ইংরেজী জানতেননা। বিমানের রেডিও অপারেটর ইংরেজীকে অনুবাদ করে দিতেন। এভাবেই চলছিল কাজাক এয়ারলাইন্স। বিমানের রেডিও অপারেটর কন্ট্রোলটাওয়ারকে বললেন "ডিসেন্ড ফ্লাইট লেভেল ওয়ান ফাইভ জিরো কপি"। ফলে কন্ট্রোলটাওয়ার নিশ্চিত হলেন কাজাক এয়ারলাইন্স তার নির্দেশ যথাযথ ভাবে শুনেছে। কিন্তু আসলে রেডিও অপারেটর এই উচ্চতার বিষয়টি বিমানের ক্যাপ্টেনকে জানাননি বা জানাতে ভুলে গেলেন।

রেডিও অপারেটর উচ্চতার বিষয়টি ক্যাপটেনকে ঠিকমত না জানানোর ফলে কাজাক এয়ারলাইন্স তাদের নির্ধারিত উচ্চতার নীচে নেমে আসতে লাগল ঠিক যেখান দিয়ে সাউদিয়ার বিমানটি আসছে। উর্ধাকাশে ঐদিন ছিল ঘন মেঘ ফলে কেউ কারো অবস্থান চোখেও দেখতে পায়নি। ঘটনার মাত্র সাত সেকেন্ড পূর্বে কাজাক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইঞ্জিয়ার উচ্চতার বিষয়টি ধরে ফেলেন আর সাথে সাথেই বিমানকে নির্ধারিত ফ্লাইট লেভেলে নিয়ে যাবার জন্য সকল ইঞ্জিনে ফুল পাওয়ার প্রয়োগ করতে উদ্যত হন। দ্বিধান্বিত কাজাক ক্যাপ্টেন থামিয়ে দেন তাদের। কি করনীয় তা স্থির করতে গিয়ে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে যান। পরিশেষে দুর্ঘটনার মাত্র ২ সেকেন্ড পূর্বে সাউদিয়া তার নজরে আসে। তিনি চিৎকার করে বিমানকে টেনে উর্ধমুখী করার নির্দেশ দেন। যদি তিনি শেষ মুহুর্তে এই নির্দেশটি না দিতেন, তাহলে বিমানটি সাউদিয়ার নীচ দিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারত।

কাজাক এয়ারলাইন্স সাউদিয়ার ডানা ও মধ্যভাগে সরাসরি আঘাত করে। ফলে মাঝ আকাশেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সাউদিয়া। কাজাক এয়ারলাইন্সের অংশ বিশেষ ভেঙে গেলেও নিয়ন্ত্রনহীনভাবে আরো কয়েক মুহুর্ত সে আকাশে টিকে ছিল। এরপর সেটিও বিধ্বস্ত হয়। কয়েক মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় ৩৪৯টি প্রান।

দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। এখন বিমানে পাইলটকে ইংরেজী জানা বাধ্যতামূলক। দিল্লি বিমানবন্দরের এখন দুটি বিমানপথ। সেখানে এখন সেকেন্ডারী সার্ভেইলেন্স রাডারও স্থাপিত হয়েছে। টিকাস বা ট্রাফিক কোয়ালিশন এভয়েডেন্স সিসটেম যা দুটি বিমান খুব নিকটবর্তী হয়ে গেলে উভয় বিমানকেই তা সতর্ক করে দিয়ে সয়ংক্রিয় ভাবে দিক নির্দেশনা দেয় এমন যন্ত্রের ব্যাবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নয়াদিল্লির ফ্লাইট গুলোতে। পরিস্থিতি পাল্টেছে কিন্তু তা এসেছে ৩৪৯ তাজা প্রানের বিনিময়ে। এই দুর্ঘটনায় জয়নুল আবেদীন নামে এক বাংলাদেশী ব্যাবসায়ীরও নিহত হন।

 

 

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]