মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত
(কমিউনিটি ডেস্ক): মে ১৮, ১৯৮০, আধুনিক পৃথিবী এই দিন দেখেছিল আগ্নেয়গিরির
বিরল আর ভয়ঙ্কর এক রূপ। মাউন্ট সেন্ট হেলেন তার অগ্নুৎপাত দিয়ে পৃথিবীর
মানুষকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল, ঠাঁই করে নিয়েছে সে ইতিহাসের পাতায়। সেন্ট
হেলেনের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্য মানুষ আজও ভোলেনি। আধুনিক ভলকানোলজির সূচনা
ঘটেছিল এখান থেকেই।
সময়টা ছিল ১৯৮০ সালের মার্চ। ভূতত্ববিদরা মার্চের ২৮ তারিখ হঠাৎ সেন্ট
হেলেনের পায়ের নীচে ভূমিকম্প সনাক্ত করলেন। এই ভূমিকম্পের ধারা চলতে থাকল
পরের কয়েকমাস ধরে। সে সময় ছোটবড় মিলিয়ে মোট ভূমিকম্পের সংখ্যা মোটামুটি দশ
হাজারের মত হবে।
সারা আমেরিকায় সেন্ট হেলেনের সম্ভাব্য উদ্গীরনের কথা ছড়িয়ে পড়ল। উৎসাহী
আমেরিকান পর্যটকরা সব জড় হলেন সেন্ট হেলেনের কাছে। মিডিয়া ছেয়ে ফেলল
হেলেনের কভারেজ করতে গিয়ে। সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত হলো সবচাইতে বেশী মিডিয়া
কভার পাওয়া অগ্নুৎপাত।
আমেরিকার সৌন্দর্য্যের প্রতীক সেন্ট হেলেন ১২৩ বছর পরে ঘুম থেকে জেগে উঠছে।
কারো উৎসাহের কমতি নেই। হেলেন শেষবার উদ্গীরন ঘটিয়েছিল ১৮৫৭ সালে।
বৈজ্ঞানিকরা আশেপাশে সব ক্যাম্প বসালেন। এদিকে পাহাড়ের অভ্যান্তরের ম্যাগমা
বিভিন্ন ফাঁক ফোকর গলিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল। কিন্তু, সোজা পথে বের হতে
না পেরে উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে জমা হতে লাগল। বৈজ্ঞানিকরা দেখলেন পাহাড়ের
একপাশ ফুলে উঠে ক্রিপ্টোডোম তৈরি করেছে। লাভা ডোম সব সময় তৈরি হয় পাহাড়ের
চুড়ায়। হেলেনের তৈরি হলো পাশ দিয়ে। প্রতিদিন পাহাড়ের গায়ের স্ফীতি বৃদ্ধি
পেতে থাকল। একেক দিন ৬ ফুট করে বাড়ল স্ফীতি। বৈজ্ঞানিকরা বুঝলেন বিপদ হতে
আর বেশী বাকী নেই।
মার্চ ৩১। সেন্ট হেলেন তার চুড়ো থেকে ধোঁয়া উদ্গীরন শুরু করল। সারা ষ্টেট
জুড়ে সতর্কতা জারী করা হলো। ২০ মাইল ব্যাসের মধ্যে সর্ব সাধারনের অনুপ্রবেশ
নিষিদ্ধ করা হলো। মানুষ ব্যাপক আশা নিয়ে অপেক্ষায় রইল কবে হেলেন তার সেই
চমৎকার বিপর্যয়টি ঘটাবে।
এভাবে দিনের পর দিন কাটল, সপ্তাহও কেটে গেল। আর নতুন কিছু ঘটল না। এভাবেই
মাসও কেটে গেল। আস্তে আস্তে মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়তে লাগল। মিডিয়া হতে ধীরে
ধীরে হারিয়ে যেতে থাকল সেন্ট হেলেনের কাহিনী।
মাস দুয়েক সব চুপচাপ কাটলো। ভূতত্ববিদদের অনেকেই ততদিনে নিরুৎসাহিত হয়ে চলে
গেছেন। ৩০ বছর বয়স্ক ডেভিড জনষ্টনের মত অতি উৎসাহীদের মত কেউ কেউ রয়ে গেছেন।
কারন আগ্নেয়গিরি বলে কথা। এর উদ্গীরন কালও হতে পারে আবার এক বছর পরও হতে
পারে।
ডেভিড জনষ্টন সেন্ট হেলেনের অবস্থা নির্ণয় করে বলেছিলেন হেলের উদ্গীরন
পার্শ্বমুখী হতে পারে। কিন্তু, এ ধরনের ঘটনা আগে কোনদিন ঘটেনি তাই অন্যান্য
বিজ্ঞানীদের এই তত্ব বিশ্বাস করার কোন কারন ছিলনা। সময়ের উপর হাল ছ্ড়ে সবাই
বসে রইলেন।
মে ১৮, ১৯৮০ সকাল ৮টা ৩২ মিনিট ১১ সেকেন্ড। মাউন্ট হেলেন ৫.২ মাত্রার একটি
মাঝারি আকারের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল। আর সাথে সাথেই ধ্বসে পড়ল লাভা ডোমের
দেয়াল যা হেলেনের পাশে ধীরে ধীরে বাড়ছিল। পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসের এটিই
ছিল সবচাইতে বড় ভূমিধ্বস। প্রচান্ড চাপে ক্ষিপ্র গতিতে বিপুল ম্যাগমা উড়িয়ে
দিল পাহাড়ের উপরের ভাগ ও পাশের পুরোটা। মুহুর্তে আস্ত পাহাড় প্রায় অর্ধেক
হয়ে গেল। ডেভিড জনষ্টন যেমন বলেছিলেন, তেমন করেই পার্শ্বমুখী ৯০০ ডিগ্রি
তাপমাত্রার লাভাশ্রোত আর পাইরোক্লাস্টিক ফ্লো ছুটলো পাহাড়ি বনাঞ্চল দিয়ে।
হাজার হাজার গাছপালা মুহুর্তেই ঢাকা পড়ল ছাইয়ের তলায়। ডেভিড জনষ্টন সাত-আট
মাইল দূরে রোজকার মত দিন শুরু করতে গিয়ে দেখলেন কিভাবে ধ্বসে পড়ছে হেলেন।
কিন্তু তিনি পালানোর সময়্টুকুও পেলেননা।
পাশের স্পিরিট লেক ভরে গেল গাছের গুড়ি, ছাই আর ধ্বংসস্তুপে। মাত্র কয়েক
সেকেন্ডে পুরো এলাকার চেহারা পাল্টে গেল। ছাই আর ধোঁয়া বাতাসের
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রবেশ করল। সূর্য্য ঢাকা পড়ল আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে।
ওয়াশিংটন ষ্টেটে সকাল বেলায় রাত নেমে আসল।
পৃথিবী যেমন আগে এমন পার্শ্ব উদ্গীরন দেখেনি, তেমনি দেখেনি এমন বড় ভূমিধ্বস।
৫৭ জন প্রান হারাল এই অগ্নুৎপাতে।
হেলেনের অগ্নুৎপাত খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। কালের বিবর্তনে আবার সবকিছু
স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু সেন্ট হেলেন আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে মানুষকে আবার
নতুন করে ভাবিয়েছে। বিজ্ঞানীরা নতুন ভাবে ভূতত্বের অজানা বিষয়গুলো নিয়ে
গবেষনা করেছেন। মানুষ দেখেছে, বিউটিফুল ডিসাস্টারের রূপ। পৃথিবীর ইতিহাসে
অগ্নুৎপাত নিয়ে কথা বলতে গেলে উঠে আসবে হেলেনের নাম। হেলেন এক ভয়ঙ্কর রূপের
নাম।
>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিনী
>>টর্নেডো
>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল
সর্বোচ্চ হুমকির মুখে
>>ভূপাল বিপর্যয়
>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল
>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!
>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ
মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ
>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের
সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা
>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া
>>কিং
কোবরা
>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক
>>রোমানিয়ায়
কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর
>>ঐতিহাসিক
নগরী কামাকুরা
>>গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নের রহস্য
>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস
>>ফ্রিক
ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি
>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ
>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুকু
[প্রথমপাতা] |