প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

মেয়ের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বাপ-মেয়ের সাইকেল ট্যুর

 

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। নভেম্বর ১০, ২০১৫ ।।

"আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়েটা যেন ভাবতে পারে সে কিছু একটা অর্জন করলো এবং আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে" -এই চিন্তা থেকে পিতা মেয়েকে নিয়ে জাপানের বিভিন্ন স্থান সাইকেলে করে ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। মেয়েটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তার সহপাঠিদের হিংস্র উৎপীড়নের শিকার হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

সমাজকল্যান কর্মী শিগেও ওনদা (৫১)'র বড় মেয়ে হারুনে (১৬), টোকিওর ইতাবাসি ওয়ার্ডে তাদের বাস। গত ৭ বছর ধরে প্রতি গ্রীষ্মে বাপ-মেয়ে ভ্রমণে বের হচ্ছেন।

যেসব স্থান তারা ঘুরে দেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে নোতো উপদ্বীপ ও হোক্কাইদো, এ পর্যন্ত তারা ৩,৫০০ কিলোমিটার পথ সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন। পরবর্তীতে কন্যা স্কুলে ফিরে যায় এবং পুনরায় ৯০০ কিলোমিটার সাইকেল ভ্রমন করেন।

পিতার বিশ্বাস ছিলো এ ভাবে স্কুল থেকে দূরে থাকার সময়ে তার কন্যার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।

হারুনে'র পিতামাতার মধ্যে ১০ বছর আগেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু হারুনে সেই থেকে পিতার কাছেই থাকছে।

প্রাথমিক স্কুলে ঢোকার পর হারুনে'কে নিদারুন ভাবে পীড়ন করা হয়, তাকে মারধোর করা হয়, সহপাঠিরা তাকে উপহাস করতো। হারুনে তৃতীয় গ্রেডের শরৎকাল থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, সুতরাং শিগেও কাজ থেকে ছুটি নেন এবং মেয়েকে শেখানোর জন্যে কিছু বইপত্র সংগ্রহ করেন।

প্রথমে হারুনে'কে ভীতই মনে হতো, সে খালি ভাবতো অন্যরা তার সম্পর্কে কী ভাবছে। শিগেও বাইসাইকেল ট্রিপের আয়োজন করে ফেলেন, পিতার প্রত্যাশা মেয়ে বুঝতে পারবে জীবনে স্কুলে যাওয়া ছাড়াও অনেক কিছু সে করতে পারে।

২০০৮ সালের অগাষ্ট থেকে তারা সাইকেল ভ্রমণ শুরু করেন। সে সময়ে নোতো উপদ্বীপকে একবার চক্কর দিয়ে ফেলেন।

হারুনে জানায় সে এখনো মনে করতে পারে যখন খাড়া একটি ঢালের উপর থাকা লাইটহাউজে উঠতে কতটা শক্তি ব্যয় করেছিলো এবং অবশেষে ওঠার পর তার কী রকম গর্ব হয়েছিলো। পথে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে আলাপ হওয়ার কথাও তার মনে আছে, অনেকে তাদের হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফেরত দিয়ে যান কিম্বা কেউ কেউ তাদের কাছে উপহার পাঠান।

"আমার নিজের ক্ষমতার উপর নিজের কোনো আত্মবিশ্বাস ছিলো না" হারুনে তার প্রথম ভ্রমণ সম্পর্কে বলে "সুতরাং আমি ভাবছিলাম, এত দূর আমি কি যেতে পারবো?"

টোকিওতে ফিরে যাওয়ার পর হারুনে লাইব্রেরি থেকে বাইসাইকেলের টিপস এর উপর বইপত্র সংগ্রহ করে এবং পিতাকে সুধোয় "আমরা এরপর কোথায় যাচ্ছি?"

শিমোকিতা উপদ্বীপ, কিই উপদ্বীপ সহ অন্যান্য স্থানে গ্রীষ্মে যাওয়াটা এখন তাদের দু'জনের একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

যখনই বাপ-মেয়ে সাইক্লিং ট্যুরে যান তারা ফিরে এসে ছোট একটি স্ক্র্যাপবুক তৈরি করে সমস্ত ফটো তাতে রেখে দেন। প্রতি বছর নতুন করে একটি বই তৈরি হচ্ছে -এগুলো বাপ-মেয়ের অমূল্য সম্পদ।

হারুনে আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়নি। কিন্তু তার পিতা তার জন্যে হাতে তৈরি একটি গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট দিয়েছেন!

"সাইক্লিং আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, যদি চেষ্টা করি আমি যে কোনো কিছুই করতে পারবো" হারুনে বলেন।

"আমার পড়াশোনাই হোক কিম্বা সাইক্লিং, বাবা সব সময়েই আমার পাশে ছিলো। অবশেষে আমি আমার অতীত থেকে মুক্ত হতে পেরেছি"।

হারুনে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

শিগেও ইতিমধ্যেই কন্যার স্কুলের ৫০ জন সহপাঠিকে সংগে নিয়ে টোকিও থেকে নাগানো প্রিফেকচারের লেক সুওয়া হয়ে সাইতামা ও গুনমা পর্যন্ত সাইকেলে করে ঘুরে এসেছেন।

হাইস্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হারুনে। এখন তাকে ঘিরে অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব, সে এখন অ‌্যানিমে ক্লাবের সদস্য, আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা দেবে।

"যদি এই সাইক্লিং ট্রিপে না যেতাম, তবে আমার কী হতো কে জানে" হারুনে বলে।

হাসতে হাসতে পিতা জবাব দেন "হু, সামনের বছর সাইকেল ট্রিপে যাওয়ার মতো আমার গায়ে এখনো যথেষ্ট শক্তি আছে"। ইয়োমিউরি শিমবুন। 

 


WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]