অ্যাকিলিস
কমিউনিটি
ডেস্ক ।।
অ্যাকিলিস গ্রিক পুরাণের একটি চরিত্র। হোমারের ট্রয় যুদ্ধের পটভূমিকার
রচিত ইলিয়াড মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যাকিলিস উক্ত যুদ্ধের নায়ক
তথা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।
মনে করা হয়, ট্রয়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যোদ্ধৃবর্গের মধ্যে অ্যাকিলিস
ছিলেন সর্বাপেক্ষা সুদর্শন।
পরবর্তীকালে রচিত কিংবদন্তি (যার সূত্রপাত প্রথম খ্রিস্টাব্দে রচিত
স্ট্যাটিয়াসের একটি কবিতার মাধ্যমে) অনুসারে, গোড়ালি ছাড়া অ্যাকিলিসের
সমগ্র শরীর ছিল অপরাজেয়। গোড়ালির এই দুর্বলতা সত্ত্বেও এই কিংবদন্তিতে
অ্যাকিলিসকে অর্ধ-অবিনশ্বর বলে উল্লেখ করেছে। গোড়ালিতেই বিষাক্ত তির বিঁধে
অ্যাকিলিসের মৃত্যু ঘটে। এই কারণে "অ্যাকিলিস হিল" (বা, অ্যাকিলিসের গোড়ালি)
শব্দবন্ধটির দ্বারা কোনো ব্যক্তির প্রধান দুর্বলতাকে নির্দেশিত করার রীতি
প্রচলিত হয়।
অ্যাকিলিস ছিলেন নিম্ফ থেটিস ও মিরমিডন-রাজ পেলেউসের সন্তান। জিউস ও পসেইডন
দুজনেই থেটিসের পাণিপ্রার্থী ছিলেন। এই কারণে উভয়ের মধ্যে তীব্র
প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল। এদিকে ভবিষদ্বাণী করা হয়েছিল যে থেটিস এমন এক
সন্তানের জন্ম দেবেন যে তাঁর পিতার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিমান হবে।
অগ্নি-আনয়নকারী প্রমিথিউস এই ভবিষদ্বাণী সম্পর্কে জিউসে সতর্ক করে দিলে
উভয় দেবতাই থেটিসকে বিবাহ করার সংকল্প পরিত্যাগ করেন এবং পেলেউসের সঙ্গে
তাঁর বিবাহ দেন।
অধিকাংশ পুরাণকথার মতোই এই ঘটনাসমূহ অপর একটি উপকথায় ভিন্নভাবে বর্ণিত
হয়েছে: অ্যার্গোনটিকা (চার, ৭৬০) গ্রন্থে বলা হয়েছে, হেরা পরোক্ষভাবে
থেটিসের কৌমার্যব্রতকে জিউসের কামলোলুপতার সম্মুখে এনেছিলেন; কিন্তু থেটিস
হেরার বৈবাহিক বন্ধনটির প্রতি অত্যন্ত আনুগত্যপরায়ণা ছিলেন বলে, তিনি
ঠাণ্ডা মাথায় জিউসকে প্রত্যাখ্যান করেন।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে স্ট্যাটিয়াস রচিত অ্যাকিলেইড-এর অ্যাকিলেইস খণ্ডাংশ
থেকে জানা যায়, অ্যাকিলিসের জন্ম হলে সদ্যোজাতকে অবিনশ্বর করার মানসে
থেটিস তাকে স্টিক্স নদীতে একবার নিমজ্জিত করেন। কিন্তু গোড়ালির যে অংশ ধরে
থেটিস অ্যাকিলিসকে জলে ডুবিয়েছিলেন, সেই অংশটি জেয়ই থেকে যায়। (আরও
দেখুন: অ্যাকিলিস হিল, অ্যাকিলিস টেন্ডন) তবে অন্য কোনো সূত্র থেকে এই
কাহিনির সমর্থন পাওয়া যায়নি। এও পরিষ্কার নয় যে পূর্বে উক্ত ঘটনার
ব্যাখ্যানটি পরিচিত ছিল কিনা। অন্য একটি বিবরণী অনুসারে, থেটিস শিশু
অ্যাকিলিসের সারা শরীরে অ্যামব্রোজিয়া মাখিয়ে তাকে আগুনের উপর ধরেন, যাতে
তার দেহের সমস্ত নশ্বর অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু পেলেউস তাকে বাধা দিলে,
ক্রুদ্ধ থেটিস পিতা ও পুত্র উভয়কেই পরিত্যাগ করে চলে যান।
যদিও স্ট্যাটিয়াসের আগে কেউই অ্যাকিলিসের এই অজেয়ত্বের কাহিনি শোনাননি।
অপরপক্ষে, হোমার ইলিয়াড মহাকাব্যে অ্যাকিলিসের আহত হওয়ার যে বর্ণনা
নিয়েছেন, তা এইরূপ: একবিংশতি পর্বে পেলাগনের পুত্র পিয়োনিয়ান যোদ্ধা
অ্যাসটারোপায়ুস স্ক্যামান্ডার নদীর তীরে অ্যাকিলিসকে যুদ্ধে আহ্বান করেন।
তিনি যুগপৎ দুটি বর্শা নিক্ষেপ করেন, যার একটি অ্যাকিলিসের কনুই ছুঁয়ে যায়
ও "ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে"।
এছাড়াও মহাকাব্য চক্রের যেসকল খণ্ডকাব্যে অ্যাকিলিসের মৃত্যুবৃত্তান্ত
পাওয়া যায় সেগুলি হল: সাইপ্রিয়া (লেখক অজ্ঞাত), আর্কটিনাস অফ মিলেটাস
রচিত আইথিওপিস ও ইলিউ পারসিস এবং লেচে অফ মিটিলেন রচিত লিটল ইলিয়াড। তবে
তাঁর সাধারণ অজেয়ত্ব বা তাঁর বিখ্যাত দুর্বলতার (গোড়ালি) উল্লেখ কোথাও
পাওয়া যায় না; পরবর্তীকালের কলস-চিত্রকলায় অ্যাকিলিসের যে মৃত্যুদৃশ্য
অঙ্কিত হয়, সেখানে দেখানো হয় এক (বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক) তির দেহে
বিঁধে তাঁর মৃত্যু হচ্ছে।
পেলেউস পেলিয়ন পর্বত-নিবাসী সেন্ট্যুর চিরনের হাতে অ্যাকিলিসের লালনপালনের
ভার অর্পণ করেছিলেন।
ট্রয়যুদ্ধে অ্যাকিলিসঃ
ইলিয়াড মহাকাব্যের প্রথম পংক্তিদুটি নিম্নরূপ:
গাও, দেবী, পেলিউস-তনয় অ্যাকিলিসের দুর্বার ক্রোধের গাথা
যে অভিশপ্ত ক্রোধ সহস্রাধিক এচিয়নের দুঃখের নিমিত্ত হয়।
অ্যাকিলিস ছিলেন একমাত্র নশ্বর যিনি দুর্বার ক্রোধ অনুভব করতেন। কখনও কখনও
তাঁর ক্রোধ ছিল অস্থিরমতি, কিন্তু অন্যান্য সময় তা সহজে জুড়াতে চাইত না।
যুদ্ধের ঘটনাবলির দ্বারা অ্যাকিলিসের মানবীকরণ আখ্যায়িকার একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু।
টেলিফাস
ট্রয়যুদ্ধের পথে যাত্রা করে একবার পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই গ্রিকদের থামতে
হয় রাজা টেলিফাস শাসিত রাজ্য মাইসিয়ায়। ফলে উভয়পক্ষে যুদ্ধ হয় এবং এই
যুদ্ধে টেলিফাস অ্যাকিলিসের হাতে জখম হন। বহু চেষ্টাতেও তাঁর জখম না সারলে
রাজা ওরাকল বা ভবিষ্যদ্বক্তার শরণাপন্ন হন। ভবিষ্যদ্বক্তা বলেন, "যে আঘাত
করেছে, সেই আঘাত সারাবে"। ভবিষ্যদ্বক্তার কথা শুনে রাজা টেলিফাস আর্গোয়
উপস্থিত হন। সেখানে অ্যাকিলিস এই শর্তে রাজাকে সারিয়ে তোলেন যে তিনি
ট্রয়ের পথে তাঁদের পথপ্রদর্শক হবেন।
টেলিফাস সম্পর্কে ইউরিপিডস রচিত একটি হারানো নাটক সম্পর্কিত কয়েকটি বর্ণনা
থেকে জানা যায়, টেলিফাস ভিখারির ছদ্মবেশে অলিসে উপস্থিত হন এবং
অ্যাকিলিসের কাছে প্রার্থনা করেন তাঁর ক্ষত নিরাময় করার জন্য। অ্যাকিলিস
চিকিৎসাবিদ্যায় নিজের অজ্ঞতার কথা বলে তাঁকে সহায়তা করতে অস্বীকার করেন।
তখন টেলিফাস অরেস্টেসকে পণবন্দী করেন। তার মুক্তির বিনিময়ে তিনি দাবি করেন
নিজের ক্ষত নিরাময়ে অ্যাকিলিসের সাহায্য। ওডিসিয়াস মতপ্রকাশ করেন, যেহেতু
বর্শার ফলায় ওই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তাই নিশ্চয়ই বর্শাই তা নিরাময় করতে
পারবে। বর্শার কয়েকটি টুকরো ক্ষতস্থানের উপর বুলিয়ে দেওয়া হলে টেলিফাস
আরোগ্য লাভ করেন।
ট্রলিয়াস
মহাকাব্য চক্রের যে গ্রন্থে অ্যাকিলিসের মহাক্রোধ বিবরণীর পূর্বের ঘটনা
বর্ণিত হয়েছে, সেটি হল সাইপ্রিয়া। এই গ্রন্থ অনুসারে, অ্যাকিয়ানরা ঘরে
ফিরতে চাইলে অ্যাকিলিস তাদের সংযত করেন। পরে তিনি ইনিসের পশুর দলকে আক্রমণ
করেন, প্রতিবেশী শহরগুলিতে লুণ্ঠন চালান ও ট্রলিয়াসকে হত্যা করেন।
ডেয়ার্স ফ্রিজিয়াস-এ বর্ণিত অ্যাকাউন্ট অফ দ্য ডেস্ট্রাকশন অফ ট্রয় নামক
একটি লাতিন সারাংশের মাধ্যমে অ্যাকিলিসের কাহিনি মধ্যযুগীয় ইউরোপে পরিচিত
হয়ে ওঠে। এই কাহিনি অনুসারে, ট্রলিয়াস ছিলেন এক ট্রোজান রাজপুত্র। তিনি
ছিলেন রাজা প্রিয়াম (অন্যমতে, অ্যাপোলো) ও হেক্যুবার সর্বকণিষ্ঠ বৈধ
সন্তান। বয়সে তরুণ হলেও ট্রলিয়াস ছিলেন প্রধান যোদ্ধাদের অন্যতম।
ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ট্রয়ের নিয়তির সঙ্গে ট্রলিয়াসের নিয়তি অঙ্গাঙ্গী
জড়িয়ে ছিল। তাই অপহরণের একটি প্রচেষ্টার পর থেকে তাঁকে লুকিয়ে রাখা হয়।
অ্যাকিলিস ট্রলিয়াস ও তাঁর ভগিনী পলিজেনা উভয়ের সৌন্দর্যেই বিমোহিত
হয়েছিলেন। কামলালসায় জর্জরিত হয়ে তিনি তরুণ ট্রলিয়াসকেই কামনা করে বসেন।
কিন্তু ট্রলিয়াস অ্যাকিলিসের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করলে
অ্যাপোলোর মন্দিরে (ওম্ফ্যালোজ) বেদীর উপর তাঁর শিরোশ্চেদ করা হয়। এই
কাহিনির পরবর্তীকালীন পাঠান্তরে বর্ণিত হয়েছে, অতিভাবাবেগে আচ্ছন্ন
প্রণয়ালিঙ্গনে অ্যাকিলিস ভুলবশত ট্রলিয়াসকে হত্যা করেছিলেন। এই পাঠ
অনুসারে, অ্যাকিলিসের মৃত্যু উক্ত অপবিত্রকরণের শাস্তিস্বরূপ নেমে এসেছিল।প্রাচীন
লেখকদের রচনায় ট্রলিয়াস ছিলেন সেই মৃত শিশুসন্তানদের উপমা, যাদের মৃত্যুতে
তাদের পিতামাতারা শোকাচ্ছন্ন হতেন। প্রথম ভ্যাটিকান পুরাণবিদের মতে যদি
ট্রলিয়াস বয়ঃপ্রাপ্তি অবধি বেঁচে থাকতেন, তবে ট্রয় অপরাজেয় হত।
ইলিয়াড মহাকাব্যে
হোমারের ইলিয়াড ট্রয়যুদ্ধে অ্যাকিলিস কী করেছিলেন তার সর্বাপেক্ষা
জনপ্রিয় উপাখ্যান। এই হোমারীয় মহাকাব্যে ট্রয়যুদ্ধের মাত্র কয়েক
সপ্তাহের বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে; এখানে অ্যাকিলিসের মৃত্যুর বর্ণনাও দেওয়া
হয়নি। অ্যাকিয়ান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি অ্যাগামেনন কর্তৃক অপমানিত হয়ে
অ্যাকিলিসের যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কাহিনির মাধ্যমে এর সূত্রপাত।
অ্যাগামেনন ক্রিসেইস নামের একটি মেয়েকে ক্রীতদাসী করে রেখেছিলেন। মেয়েটির
বাবা ক্রিসেস ছিলেন অ্যাপোলোর পুরোহিত। তিনি অ্যাগামেননের কাছে নিজ কন্যাকে
ভিক্ষা চাইলে, অ্যাগামেনন তাকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন। এতে অ্যাপোলো
ক্রুদ্ধ হয়ে গ্রিকদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করেন। ভবিষ্যদ্বক্তা ক্যালকাস
এই দুর্বিপাকের কারণ সঠিকভাবে অনুধাবন করেন। কিন্তু যতক্ষণ না অ্যাকিলিস
তাঁকে নিরাপত্তা দেন, ততক্ষণ তিনি মুখ খোলেন না। অ্যাকিলিসের কাছ থেকে
নিরাপত্তা পেয়ে ক্যালকাস ঘোষণা করেন যে ক্রিসেইসকে তার পিতার কাছে ফেরত
পাঠাতে হবে। অ্যাগামেনন রাজি হন। কিন্তু বদলে আদেশ করেন, অ্যাকিলিসের
যুদ্ধোপহার ব্রিসেইসকে ক্রিসেইসের বদলে তাঁর কাছে পাঠাতে হবে। এতে
অসম্মানিত হয়ে (কারণ, পরে অ্যাকিলিস জানিয়েছিলেন যে তিনি ব্রিসেইসকে
ভালবাসেন)এবং থেটিসের প্ররোচনায় অ্যাকিলিস যুদ্ধ করতে বা তাঁর সেনাদের
অন্যান্য গ্রিক সেনাদের সঙ্গে পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন।
যুদ্ধ গ্রিকদের বিপক্ষে চলে গেলে, নেস্টর ঘোষণা করেন যে ট্রোজানরা যুদ্ধে
জয়লাভ করতে চলেছে। কারণ অ্যাগামেনন অ্যাকিলিসকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছেন। তিনি
বলেন যে অ্যাগামেননের উচিৎ অ্যাকিলিসকে শান্ত করে ফিরিয়ে আনা। অ্যাগামেনন
রাজি হন। তিনি ওডিসিয়াস ও অন্য দুই গ্রিক প্রধানকে ব্রিসেইস ও অন্যান্য
উপহার অ্যাকিলিসের কাছে পাঠান। কিন্তু অ্যাকিলিস প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি
জানান গ্রিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করা উচিৎ, যেমনটি তিনি করার পরিকল্পনা
করছেন।
যদিও এরপরই যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার জন্য হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের আশায়
অ্যাকিলিস তাঁর জননী থেটিসের কাছে প্রার্থনা জানান যে তিনি যেন জিউসের কাছে
আবেদন করে ট্রোজানদের দ্বারা গ্রিকদের হঠিয়ে দেন।
হেক্টরের নেতৃত্বে ট্রোজানরা সত্যসত্যই গ্রিক বাহিনীকে হঠিয়ে সৈকত পর্যন্ত
নিয়ে আসে। সেখানে তাঁরা গ্রিক জাহাজগুলি লুণ্ঠন করেন। ধ্বংসের মুখোমুখি
গ্রিক বাহিনীকে রক্ষার জন্য মিরমিডন বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে আসেন
প্যাট্রোক্ল্যাশ। অ্যাকিলিস কিন্তু তাঁবুতেই রয়ে যান। প্যাট্রোক্ল্যাশ
ট্রোজানদের সৈকত থেকে হঠিয়ে দিতে সমর্থ হন। কিন্তু ট্রয় নগরীকে যথার্থভাবে
জয় করার আগেই হেক্টরের হাতে তিনি নিগত হন।
হেক্টর বধ
অ্যাকিলিস নেস্টরের পুত্র অ্যান্টিলোকাসের নিকট হতে প্যাট্রোক্ল্যাসের
মৃত্যুসংবাদ পেলেন। ঘণিষ্ঠ সহচরের মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়লেন তিনি।
তাঁর সম্মানে আয়োজন করলেন একাধিক অন্ত্যেষ্টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার। মা
থেটিস শোকার্ত অ্যাকিলিককে সান্ত্বনা দিতে এলেন। তিনি হেফাস্টাসকে বলে একটি
বর্ম নির্মাণ করালেন। কারণ অ্যাকিলিসের যে বর্মটি পরে প্যাট্রোক্ল্যাস
যুদ্ধে গিয়েছিলেন, সেটি হেক্টর নিয়ে যান। এই নতুন বর্মের অংশ ছিল
অ্যাকিলিসের ঢাল, যেটির সুন্দর ও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন কবি।
প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুতে ক্রোধান্বিত অ্যাকিলিস মন পরিবর্তন করেন এবং
যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্রোধের বশে তিনি অনেককে হত্যা করেন এবং
হেক্টরকে খুঁজতে থাকেন। এমনকি অ্যাকিলিস নদীদেবতা স্ক্যামান্ডারের সঙ্গেও
যুদ্ধে লিপ্ত হন। স্ক্যামান্ডার ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কারণ অ্যাকিলিস নরহত্যা
করে মৃতদেহ দিয়ে নদীপথ রুদ্ধ করে দিচ্ছিলেন। স্ক্যামান্ডার অ্যাকিলিসকে
ডুবিয়ে দিতে গেলে হেরা ও হেফাস্টাস তাঁকে বাধা দেন। জিউস স্বয়ং
অ্যাকিলিসের ক্রোধে বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং দেবতাদের পাঠিয়ে তাঁকে শান্ত
করার চেষ্টা করেন, যাতে তিনি ট্রয় নগরীকে আক্রমণ না করে বসেন। কারণ, ট্রয়
ধ্বংসের উপযুক্ত সময় তখনও আসেনি। অবশেষে অ্যাকিলিস তাঁর শিকারের সন্ধান
পান। অ্যাথেনা তিন বার হেক্টরের প্রিয় ভাই ডেইফোবাসের ছদ্মবেশে হেক্টরকে
অ্যাকিলিসের সঙ্গে সম্মুখসমরে যেতে নিষেধ করেন। অ্যাকিলিস ট্রয়ের
প্রাচীরের চারিধারে তিন বার হেক্টরকে ধাওয়া করেন। অবশেষে অ্যাকিলিসের
রণকৌশলটি ধরতে পেরে হেক্টর বুঝে যান যে মৃত্যু অনিবার্য। তিনি নিজের
নিয়তিকে মেনে নেন। সম্মুখ সমরে এসে কেবল একটি তরবারি নিয়ে অ্যাকিলিসকে
আক্রমণ করেন তিনি। অ্যাকিলিস হেক্টরের ঘাড়ে একটিমাত্র আঘাত করে তাঁকে বধ
করেন এবং নিজের প্রতিশোধ তোলেন। তারপর হেক্টরের দেহ নিজের রথের সঙ্গে বেঁধে
নয় দিন ধরে যুদ্ধক্ষেত্রময় তা হেঁচড়ে নিয়ে বেড়ান।
দেবতা হার্মিসের সহযোগিতায় হেক্টরের পিতা প্রিয়াম অ্যাকিলিসের তাঁবুতে
গিয়ে অ্যাকিলিসকে অনুরোধ করেন হেক্টরের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে দিতে।
ইলিয়াড-এর সর্বশেষ স্তবকে বর্ণিত হয়েছে হেক্টরের শেষকৃত্যের বর্ণনা। যার
পর ট্রয়ের পতন ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র।
পেন্থেসিলিয়া
প্রিয়ামের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর অ্যাকিলিস আমাজনীয় যুদ্ধনায়িকা
পেন্থেসিলিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন। প্রথমে পেন্থেসিলিয়ার রূপে
মুগ্ধ অ্যাকিলিস তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাননি। পরে তিনি বুঝতে পারেন
পেন্থেসিলিয়ার রণকৌশল তাঁর অপেক্ষাও উন্নত এবং তাঁর প্রতি আকর্ষণ
অ্যাকিলিসের কাছে মারাত্মক হতে পারে। এই কারণে তিনি যুদ্ধ করেন ও
পেন্থেসিলিয়াকে হত্যা করেন। কিন্তু এমন সুন্দরী নারীকে হত্যা করে তিনি
শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং বিলাপ করতে থাকেন। এতে থেরসিটাস নামে এক কুখ্যাত
গ্রিক উপহাসকারী হেসে তাঁকে উপহাস করলে তার মুখে এক ঘুষি মেরে অ্যাকিলিস
থেরসিটাসকে হত্যা করেন।
মেমন, এবং অ্যাকিলিসের পতন
প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুর পর, অ্যাকিলিসের নিকটতম সহচর হন নেস্টরের পুত্র
অ্যান্টিলোকাস। ইথিওপিয়ার রাজা মেমন অ্যান্টিলোকাসকে বধ করলে আর একবার
ক্রোধের বশে প্রতিশোধকল্পে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হন অ্যাকিলিস।
অ্যান্টিলোকাসকে নিয়ে অ্যাকিলিস-মেমন যুদ্ধ ছিল প্যাট্রোক্ল্যাসকে নিয়ে
অ্যাকিলিস-হেক্টর যুদ্ধেরই অনুরূপ। কেবল হেক্টর মেমনের মতো দেবীপুত্র ছিলেন
না।
অনেক হোমার-বিশেষজ্ঞের মতে, এই পর্বটি ইলিয়াড মহাকাব্যে প্যাট্রোক্ল্যাসের
মৃত্যু ও তারপর অ্যাকিলিসের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বিস্তারিত বর্ণনাকে
অনুপ্রাণিত করে। এই পর্বটিই পরে মহাকাব্য চক্রের ইথিওপিস গ্রন্থের ভিত্তি
রচনা করে, যা ইলিয়াড-এর পর সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে রচিত হয়।
বর্তমানে এই গ্রন্থটি হারিয়ে গেছে। কেবলমাত্র পরবর্তীকালের লেখকদের রচনা
থেকে উদ্ধার করা এই গ্রন্থের বিভিন্ন উল্লেখ থেকে এর কথা জানা যায়।
মৃত্যুকালে হেক্টর যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেন, সেই অনুযায়ী প্যারিসের তীরের
আঘাতে (স্ট্যাটিয়াসের মতে গোড়ালিতে) অ্যাকিলিসের মৃত্যু হয়। কাহিনির কোনো
কোনো পাঠ অনুসারে অ্যাপোলো এই তিরটিকে পরিচালনা করেছিলেন। এই দুই পাঠেই
লক্ষ্যনীয়ভাবে হত্যাকারীকে বীরের সম্মান দিতে অস্বীকার করেছে। সাধারণভাবেও
মনে করা হয়, প্যারিস ছিলেন ভিতু এবং অ্যাকিলিস যুদ্ধভূমিতে অপরাজেয়ই থেকে
যান। তাঁর দেহাবশেষ প্যাট্রোক্ল্যাসের দেহাবশেষের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
আয়োজিত হয় অন্ত্যেষ্টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। হারিয়ে যাওয়া
ট্রয়যুদ্ধকেন্দ্রিক মহাকাব্য আর্কটিনাস অফ মিলেটাস-এর মতে, মৃত্যুর পর
অ্যাকিলিস ড্যানিউব নদীর মোহনায় লিউক দ্বীপে বাস করতে থাকেন (নিচে দেখুন)।
অ্যাকিলিসের মৃত্যুসম্বন্ধিত অন্য একটি কাহিনি অনুসারে, তিনি ট্রয়ের
রাজকুমারী পলিজেনার প্রেমে মজেন। অ্যাকিলিস প্রিয়ামের কাছে পলিজেনার
পাণিগ্রহণের অনুমতিও চান। প্রিয়াম রাজি হয়ে যান। কারণ তাঁক কাছে এই
বিবাহের অর্থ ছিল যুদ্ধের অন্ত ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বীরের সঙ্গে আত্মীয়তা
স্থাপন। তিনি গোপনে অ্যাকিলিস ও পলিজেনার বিবাহের আয়োজন করেন। এদিকে
অ্যাকিলিস প্যারিসের ভগিনীকে বিবাহ করলে তাকেও হেলেনের উপর থেকে দাবি
প্রত্যাহার করতে হবে, এজন্য প্যারিস ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে দিব্য তিরের
সাহায্যে অ্যাকিলিসকে হত্যা করেন।
পরে ফিলোকটেটস হেরাক্লেসের বিশাল ধনুকের সাহায্যে প্যারিসকে হত্যা করেছিলেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
>>২০১৪ সালে চালু হচ্ছে গ্যালিলিও
>>"সেটি" প্রকল্পের ৫০ বছর
>>প্রাচীন মানবের পূর্ণাঙ্গ জিন বিশ্লেষণ
>>ধ্বসে যেতে পারে পশ্চিম এন্টার্কটিকা
>>ঝড়ের সংখ্যা কমে বাড়তে পারে গতি
>>শিরাকাওয়া-গো এবং গোকাইয়ামা
>>পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ
>>সুপার ভলকেনো
>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন
>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি,
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন
>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার
পেছন
>>তিমি কাহিনী
>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত
>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিনী
>>টর্নেডো
>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল
সর্বোচ্চ হুমকির মুখে
>>ভূপাল বিপর্যয়
>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল
>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!
>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ
মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ
>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের
সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা
>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া
>>কিং
কোবরা
>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক
>>রোমানিয়ায়
কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর
>>ঐতিহাসিক
নগরী কামাকুরা
>>গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নের রহস্য
>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস
>>ফ্রিক
ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি
>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ
>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুকু
[প্রথমপাতা] |