[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিনী

 

(কমিউনিটি ডেস্ক): বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার একটি ঘটনা হলো আলোহা ফ্লাইট ২৪৩। যাত্রীবাহী একটি বিমানের ছাদ হঠাৎ মাঝ আকাশে ভেঙে গেল। যাত্রীরা তখন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি। এমন অবস্থায় খুব কম সংখ্যক লোকই বেঁচে ফেরবার সপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু পাইলটের দক্ষতা আর ভাগ্যের জোর দুটোর গুনেই বোধহয় সেদিন যাত্রীরা ফিরে পেয়েছিলেন জীবন। তবে এই দুর্ঘটনা এভিয়েশন ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। কর্তব্যে অবহেলা আর মেইনটেনেন্স ক্রুদের গাফিলতি সেদিন সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, বিমানটির যাত্রীদের ঠেলে দিয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে।

আলোহার বিমানগুলো হাওয়াইয়ের ছোট ছোট দ্বীপগুলোর মধ্যে সারাদিন ধরে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। অল্প সময়ের পথ তাই একই বিমান বারবার ব্যাবহার করা চলে দিব্যি। আর এসব বিমানের প্রাত্যাহিক যাত্রীদের কাছে এই ভ্রমনটি ঠিক বিমান ভ্রমন না হয়ে বাসে ওঠার মতনই অনেকটা।

দিনটি ছিল ১৯৮৮ সালের এপ্রিলের ২৮। দুপুর একটার দিকে আলোহা ২৪৩ এর একটি বোয়িং ৭৩৭, ৯০ জন যাত্রী নিয়ে হাওয়াইয়ের দক্ষিনে হিলো থেকে হনলুলু যাচ্ছিল।

হঠাৎ মাঝ আকাশে সমুদ্রের উপর বিমানের ছাদের দিকে কিসের যেন একটা শব্দ, তারপরই যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ককপিটের পেছন থেকে ডানা অব্দি প্রায় ৩৫ স্কয়ার মিটার এলাকায় বিমানের ছাদ নেই। শুধু ছাদ নেই বল্লে কম বলা হবে। দু'পাশের দেয়ালও নেই। কেবল মেঝেটিই আছে। বিমানটি সে সময় ২৪,০০০ ফুট বা ৭৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে যাচ্ছে।

বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন রবার্ট শর্নসথেইমার ও ফার্ট অফিসার মিমি থম্পকিন্স কয়েক মুহুর্ত প্রায় বুঝতেই পারেননি যে কি হয়েছে। পরে পেছনে তাকিয়ে দেখেন সেখানে রয়েছে নীল আকাশ। দেখেই তাদের রক্ত হিম হবার যোগাড়। পিছনে যাত্রীদের কি পরিনতি তা নির্ণয় করাও সম্ভব ছিলনা তাদের পক্ষে। এমনকি বিমানবালাদের সংগে যোগাযোগও তারা করতে পারছিলেনা।

তীব্র বাতাসের ঝাপটায় পাইলটদের কথা বলা বা কন্ট্রোল টাওয়ারের কথা শোনা খুবই কষ্টকর ছিল। কিন্তু তবুও কোন মতে তারা বিমানের ডিসট্রেস কল বা বিপদ বার্তা পাঠালেন।

 

এরকম একটি বিমান আকাশে ভেসে থাকা একরকম অসম্ভব ব্যাপার। তবু কোন মতে বিমানটি টিকে রইল।

 

একটা সময় বিমানের যাত্রীরা বুঝতেও পারছিলেননা যে বিমানের পাইলট বেঁচে আছেন কি না। তবে যখন বিমানটি মোটামুটি উড়ছিল তখন সময় ধারনা করেছিলেন, পাইলট অন্ততঃ বেঁচে আছেন।

৭৩০০ মিটার উঁচুতে অক্সিজেন খুবই পাতলা, কাজেই যাত্রীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন রবার্ট চটজলদি বিমানকে ১২০০ মিটার/মিনিট এ নীচের দিকের আপেক্ষাকৃত ঘন অক্সিজেন এলাকায় নামিয়ে আনলেন।

 

সে সময় তাদের সবচাইতে নিকটবর্তী বিমান বন্দর হলো কাহালু। কাহালু বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কন্ট্রোলার বিপদ বার্তা পেয়ে তাকে জরুরী অবতরনের জন্য রানওয়ে ০২ বরাদ্দ করলেন। কিন্তু কাহালু বিমানবন্দরের বিপদ হলো এখানে অবতরনের সময় ৩০০০ ফুট উঁচু দুটি আগ্নেয় পাহাড়ের ফাঁক গলে ধীরে ধীরে নেমে আসতে হয়। কিন্তু সাগর সান্নিধ্যে এই ঝঁকির মধ্যে রয়েছে অপ্রত্যাশিত বাতাসের ঝাপটার ভয়। স্বাভাবিক অবস্থাতেই এখানে অবতরন বেশ জটিল একটি বিষয় আর এ রকম ভাঙা বিমান নিয়ে সেখানে অবতরন করতে যাওয়া এক রকম মৃত্যুপরোয়ানার মতই। কিন্তু ফ্লাইট ২৪৩ এর পাইলটদের এছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিলনা।

ছাদ বিহীন বিমান যে কোন সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। তাই এটাকে যত দ্রুত অবতরন করানো যায়, বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ততই বেশী।

এভাবে সাগরের উপর দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ উদয় হলো বহু প্রতিক্ষিত কাহালুবিমানবন্দর। কিন্তু ইতিমধ্যেই বিমানটি বেঁকে যেতে শুরু করেছে। অর্থাৎ বিমানটি বেঁকে যাছে পিছনের দিকে। অবতরনের ঘোষনাটিও যাত্রীদের কেবিনে দিতে পারছেননা পাইলট। কারন, কেবিনের সাথে পাইলটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এভাবে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতে একসময় বিমানটি জরুরী অবতরন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেলা ১.৫৮ তে নিরাপদে অবতরন করতে সক্ষম হলো। পাইলটের দক্ষতায় বেঁচে গেলেন বিমানের সকল যাত্রী। বিমানটি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন আলোহার সবচাইতে অভিজ্ঞ বিমানবালা ক্লারাবেল। তারা লাশ আর কোনদিন পাওয়া যায়নি। তিনিই এই দুর্ঘটনার একমাত্র নিহত ব্যক্তি।

তদন্তে দেখা যায়, সাগরের লবনাক্ত বাষ্পতে বিমানটির ভেঙে যাওয়া অংশগুলোতে অপেক্ষাকৃত দ্রুত মরচে ধরেছিল। উড্ডয়ন পূর্ব ও অন্যান্য রুটিন পরীক্ষার সময় অবহেলা করে যথাযথ ভাবে বিমানের রিবেট বা সংযোগকারী স্ক্রু পরীক্ষা করা হয়নি। সেখানে অতি ক্ষুদ্র ফাটল তৈরি হয়েছিল। আর ঘন ঘন ওঠানামার ফলে বিমানের দেয়ালে ক্রমশঃ অসমচাপের প্রভাবে ফাটলগুলো দ্রুতই বেড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ঐ দিন ফাটল বেড়ে তা ভেঙে যায়। তবে যাত্রীদের সৌভাগ্যক্রমে বিমানটি রক্ষা পেয়েছিল।

 

 

 

>>টর্নেডো

>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

>>ভূপাল বিপর্যয়

>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল

>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!

>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]