[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

বিমান বিধ্বস্তের কাহিনী

 

File:BashTuDHL757.png

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।

২২শে মে ভারতের ম্যাঙ্গালোরে একটি বিমান রানওয়ে ওভারশুট বা রানওয়ে অতিক্রম করে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬০ জনের মতন। তবে ভারত এর চাইতেও ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ১৯৯৬ সালে। ১২ই নভেম্বর এক দুর্ঘটনায় ৩৪৯ জনের প্রানহানি ঘটে।

২০০২ সালের ১লা জুলাই বাশকিরিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি টিউপোলোভ টিইউ-১৫৪ ও ডিএইচএলের বোয়িং ৭৫৭-২৩এপিএফ কার্গো বিমানের সংঘর্ষ নিহত হন ৭১ জন। ভারতের ঐ দুর্ঘটনার পেছনে ভূমিকা পালন করেছিল বিমানে টিকাস (TCAS) বা ট্রাফিক কোলিশন এভয়েডেন্স সিস্টেম না থাকা, দিল্লির সেকেলে রাডার ব্যবস্থা ইত্যাদি। বিমানের টিকাস একই উচ্চতায় বা বিপজ্জনক উচ্চতায় নিকটবর্তী কোন বিমানের অবস্থান থাকলে দুটি বিমানকেই সয়ংক্রিয় ভাবে দু'দিকে সরে যাবার নির্দেশনা প্রদান করে। ফলে যদি গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার বিমান দুটিকে সতর্ক বা কোন নির্দেশ দিতে ব্যার্থও হন, বিমান দুটি দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।

২০০২ সালের দুর্ঘটনাটির সময় দুটি বিমানেই টিকাস ছিল, তারা বিমান দুটিকে কার্যকর ভাবে নির্দেশও দিয়েছিল -কিন্তু তবু কেন দুর্ঘটনাটি ঘটল?

রাশিয়ার স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে স্পেন ভ্রমনের অয়োজনটি করা হয়েছিল। এর উদ্যোগতা ছিল স্থানীয় ইউনেস্কো। নির্ধারিত বিমানবন্দরটি তাদের ট্যুর গাইড ভুল করে ফেলে। পরবর্তীতে বাশকিরিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি ভাড়া করা হয়।

অপর দিকে ডিএইচএলের ফ্লাইট ৬১১ ইতালি থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের দিকে যাচ্ছিল।

দুটি বিমানই ফ্লাইট লেভেল ৩৬০ বা ৩৬ হাজার ফুট (১১ হাজার মিটার) এ অবস্থান করছিল। যদিও তারা জার্মানীর উপরে ছিল কিন্তু তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছিল সুইজারল্যান্ডের প্রাইভেট এয়ারস্পেস কনট্রোল কোম্পানী স্কাই গাইড থেকে। পিটার নেইলসন কন্ট্রোলের দায়িত্বে ছিলেন।

সেই রাতে স্বাভাবিক ভাবে দুটি কন্ট্রোল রাডারে দুজন নিয়ন্ত্রক থাকার কথা। কিন্তু ট্রাফিক সেদিন বেশি না থাকায়, অপর কন্ট্রোলার মাঝ রাতে গেলেন একটু বিশ্রাম করতে। কাজেই নেইলসনকে দুটি টেবিলে ছোটাছুটি করে নিয়ন্ত্রন করতে হচ্ছিল। এরমধ্যে একটি রাডারে মেইনটেইনেন্স কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে একটি রাডারে চিত্র তাৎক্ষনিক অবস্থানের না হয়ে দু'তিন মিনিট আগের অবস্থান দেখাচ্ছিল। এরমধ্যে নেইলসনের ডেস্কের ফোনও অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এত সমস্ত ঝামেলার মধ্যে এ দুটি বিমান যে ক্রমেই নিকটবর্তী হয়ে পড়ছে নেইলসন তা খেয়ালই করেনি। এই সময় আকস্মিক ট্রাফিকের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। নেইলসন খেই হারিরে ফেলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পান দুটি বিমান বিপজ্জনক দুরত্বের মধ্যে চলে এসেছে। সাথে সাথে তিনি বাশকিরিয়ান এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দিলেন "ডিসেন্ড ইমিডিয়েটলি" -এখনি কিছুটা নীচে নেমে আসুন।

ওদিকে বিমানগুলোর ভেতরে ছিল অন্য অবস্থা। রাশিয়ান বাশকিরিয়ান বিমানটিকে টিকাস ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছিল "এসেন্ড" বা উপরে ওঠার জন্য। টিকাস তার সামঞ্জস্য বিধান করে ডিএইচএলকে নির্দেশ দিয়েছিল নীচে নেমে আসার জন্য। ডিএইচএল ট্রাফিক কন্ট্রোলারের নিকট থেকে কিছু শোনেনি কারন নেইলসন তাদেরকে কোন নির্দেশ দেননি। ফলে ডিএইচএল টিকাসের কথামত নীচে নেমে আসল। বাশকিরিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলট বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। টিকাস বলছে উপরে উঠতে কন্ট্রোলার বলছেন নীচে নামতে। শেষে তিনি ট্রাফিক কন্ট্রোলারের নির্দেশই পালন করাটা সঙ্গত মনে করলেন। উল্লেখ্য, এরকম বিভ্রান্তির ক্ষেত্রে কি নিয়ম অনুসরন করা হবে সে নিয়ে কোন সর্বজনগ্রাহ্য কোন নিয়ম নেই।

এরফলে যা ঘটলো, দুটি বিমানই নীচে নেমে আসল। শেষ মূহুর্তে উভয় পাইলট তাদের মৃত্যুর পূর্বক্ষনটি দেখতে পেলেন। ডিএইচএল বাশকিরিয়ান এয়ারলাইন্সের মাঝ বরাবর কেটে দিল, আর নিজের লেজ খসে পড়ল সংঘর্ষে। রাশিয়ান বিমানটি সাথে সাথেই মাঝ আকাশে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। নিয়ন্ত্রনহীন ডিএইচএল টিকে ছিল আরো কয়েক মিনিট। তারপর সেও বিধ্বস্ত হলো।

কিন্তু কার দোষে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা? কিয়দংশে হয়ত পিটার নেইলসনকে দায়ি করা চলে। কিন্তু তারও ক্ষমতা ছিল সীমিত। তার রাডার ঠিকমত কাজ করছিলনা, দুজনের কাজ সে একা করছিল, তার ফোন অকার্যকর ছিল। টিকাস তার দায়িত্ব পালন করেছে কিন্তু তবু দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার রেশ এত সহজেই কাটল না। ভিতালি কালোয়েভ, পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি দুর্ঘটনায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারান। সব হারিয়ে তিনি উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ালেন কিছুদিন। হন্যে হয়ে খুঁজলেন পিটার নেইলসনকে।

২০০৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী সকালে নেইলসনের জুরিখস্থ লতেনের বাসার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। নেইলসন দরজা খুলতেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভিতালি কালোয়েভ। উপুর্যপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করলেন নেইলসনকে।

২০০৫ সালে কালোয়েভকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু ২০০৭ এর নভেম্বরের ৮ তারিখ কালোয়েভকে মুক্তি দেয়া হয়, কারন তিনি পুরোপুরি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন।

এই দুঃখজনক দুর্ঘটনার কিছু দিন আগে টিকাস২ নামের একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কেউ যদি টিকাসের নির্দেশ উপেক্ষা করে তবে রিভার্সাল সিস্টেম চালু হবে। অর্থাৎ, অপর বিমানটি বিপরীত নির্দেশনা পাবে। এক্ষেত্রে সেরকমটা হলে, রাশিয়ান বিমানটি যেহেতু টিকাস উপেক্ষা করে নীচে নামছে, ডিএইচএল উপরে ওঠার নির্দেশ পেত।

এই দুর্ঘটনার পরে যে সব সুপারিশ গুলো করা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল, যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও টিকাসের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় নিয়মের সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

 

 

 

>>ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে নতুন প্রজাতির জীব আবিষ্কার

>>ছাইমেঘের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রস্তুত

>>জোয়ান অব আর্ক
>>এশিয়ায় হুমকির মুখে পরিযায়ী পাখির দল

>>নেয়ানডার্থালরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ

>>ডেঙ্গু প্রতিরোধে জিনগত কারণ অনুসন্ধান

>>মেক্সিকো উপসাগরে ‘এক্সোন ভালডেজ’ ঘটতে আর কতো দেরী?

>>বোর্নিওতে নতুন প্রানের সন্ধান

>>প্রথমবারের মত পুরো মুখমন্ডলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন

>>আইসল্যান্ডে আরো বড় অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা বাড়ছে

>>আইসল্যান্ডেই এই, ইয়েলোস্টোন ফাটলে কি হবে?

>>আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে প্রভাবিত বিমান, আবহাওয়া, সূর্যাস্ত

>>বাংলা বছরের সূচনা

>>বিশ লাখ বছরের পুরনো কঙ্কাল থেকে বিবর্তন ধারার সন্ধান

>>শুকিয়ে যাচ্ছে আরল সাগর

>>জেব্রাফিশঃ হৃদযন্ত্রের টিস্যু নিজেই সারিয়ে তোলে
>>হাতি -ফোর হুইল ড্রাইভ

>>গ্রহাণুর ওপর নজর রাখবে নতুন ‘কমপ্যাক্ট’ স্যাটেলাইট

>>প্রবালেরা মারা যাচ্ছেঃ বিভিন্ন দেশে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়

>>মৌমাছির হুল ফোটানোয় অসুখ সারে!!

>>মায়া সভ্যতা

>>অ্যাকিলিস

>>২০১৪ সালে চালু হচ্ছে গ্যালিলিও

>>"সেটি" প্রকল্পের ৫০ বছর

>>প্রাচীন মানবের পূর্ণাঙ্গ জিন বিশ্লেষণ
>>ধ্বসে যেতে পারে পশ্চিম এন্টার্কটিকা

>>ঝড়ের সংখ্যা কমে বাড়তে পারে গতি

>>শিরাকাওয়া-গো এবং গোকাইয়ামা

>>পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ

>>সুপার ভলকেন

>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন

>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন

>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার পেছন

>>তিমি কাহিনী

>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত

>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিন

>>টর্নেড

>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

>>ভূপাল বিপর্যয়

>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল

>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!

>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]