|   প্রথমপাতা  |  প্রকাশের তারিখঃ Sunday, January 26, 2025 17:00|

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি:                             

 

সততায় অনন্য এক জাপান

 

 

 

ইসলামে ঈমান এবং আমলের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ঈমান আনা ও ‘আমলে সালেহ করা ব্যতীত মুসলিম হওয়া যায় না’।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের ঈমানটা আছে। তবে, যতোটা না অন্তর দিয়ে তারচেয়েও বেশী মুখে মুখে। আর, আমল! তা যেনো কিতাবের কথা কিতাবেই শোভা পাওয়ার মতো।
আল্লাহতায়ালার সর্বাগ্রে বিচার্য বিষয় হচ্ছে, বান্দার আন্তরিকতা নিয়্যতের বিশুদ্ধতা, অর্থাৎ সততা। এর ভিত্তিতে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে পুরস্কৃত করবেন। অতএব বান্দাকে সদা-সর্বদা কথা-কাজে সততা, সত্যতা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে এবং মিথ্যার অভিশাপ, গ্লানি থেকে বাঁচাতে হবে।
‘সততা অমূল্য জিনিস। সব ধরনের লোকের কাছ থেকে এটি আশা করা যায় না।’
জাপানের মানুষই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মনমানুষিকতার।তাঁরাই বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ‘বস্তুটি’র লালন করছেন। তা হলো ‘সততা’।
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় প্রভাব ও জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণেই জাপানে সততাভিত্তিক একটা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেই সততার ছাপ স্পষ্ট। ফলাফল—দেশটিতে একটা সুন্দর ব্যবস্থার বিনির্মাণ।
প্রযুক্তির এ যুগে যে কারোরও জন্য মুঠোফোন হারিয়ে যাওয়াটা ভীষণ ঝামেলাকর। এতে মুঠোফোনের পাশাপাশি প্রায়শই ট্রাভেল কার্ড, আইডি কার্ড, ব্যাংক কার্ড খোয়া যায়। নিরন্তর ঝামেলার সৃষ্টি হয়। মুঠোফোন ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এই সমস্যার শেষ নেই।
বর্তমান বিশ্বে এমনও একটি দেশ আছে, যেখানে হারানো জিনিস ফেরত পাওয়ার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা আছে। দেশটি আর কোথাও নয়, এশিয়ার জাপান।
দেশটিতে ১২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বাস। রাজধানী টোকিওর মতো শহর যেখানে প্রায় দেড়কোটি (১,৪১,৯২,১৮৪ জন, অক্টোবর ’২৪)লোকের বসবাস। এমন জনবহুল নগরে বছরে লাখ লাখ জিনিস হারিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা।যায়ও।কিন্তু তার বড় একটা অংশ ফেরত পান মালিকেরা। বিষয়টি প্রমাণে ২০২৩ সালের একটা পরিসংখ্যান দেখা যাক। পুলিশের নথিতে সে বছর টোকিওতে ১০,২৩,৩২৬টি হারানো রিপোর্ট নথিভুক্ত হয়। তার মধ্যে ১,৪১,৫৯০টি ছিল মুঠোফোন বিষয়ক। তিন মাসের মধ্যে এই মুঠোফোনের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারের মতো মালিকদের হাতে তুলে দিয়েছে টোকিওর মেট্রোপলিটন পুলিশ। সংখ্যাটা হারিয়ে যাওয়া মোট সংখ্যার ৮৫% শতাংশ প্রায় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে, হারিয়ে যাওয়ার দিনই প্রিয় বস্তুটি হাতের মুঠোয় পেয়েছেন তাঁরা। চক্ষু চড়কগাছ হলেও তথ্যটি সত্য।
১৬ জানুয়ারি সাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়ার পথে আমার ব্যবহৃত iPhone 15 Pro Max মুঠোফোনটি অসাবধানতা বশত পকেট থেকে পড়ে যায়।কাজ থেকে ফিরে কোথাও না পেয়ে জাপান পুলিশের শরণাপন্ন হই ।
একজন সহৃদয় জাপানি মুঠোফোন পেয়ে পুলিশ বক্সে জমা দিয়ে যান। মুঠোফোন কেস-এর ভেতর একটি ক্রেডিট কার্ডও ছিল। মুঠোফোনটি লক করা ছিল না। তারপরও উনি তা পুলিশ বক্সে জমা দেন ।
কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ জানায়, হারিয়ে যাওয়া আমার মুঠোফোনটি পাওয়া গেছে। আমি যেন আমার আইডি কার্ড নিয়ে সিটি পুলিশ হেড অফিস থেকে তা সংগ্রহ করি।
১৭ জানুয়ারি যথা নিয়ম পালন শেষে মোবাইলটি সংগ্রহ করি।
পুলিশের ভাষ্যমতে ঠিক একইভাবে ২০২৪ সালে এক বছরে হারিয়ে যাওয়া ১ লাখ ৩০ হাজার মুঠোফোন (৮৩ শতাংশ) এবং ২ লাখ ৪০ হাজার ওয়ালেট (৬৫ শতাংশ) ফেরত পেয়েছেন এগুলোর মালিকেরা।
এটা তো গেলো হারানোর পর পুলিশ রিপোর্ট-এর উপর প্রাপ্ত দালিলিক হিসেব। এরপরও যে আরও অগুনিত হিসেব রয়েছে। জাপানের রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, শপিং সেন্টার এমনকি একটা পানশালায়ও যদি কেহ ভুলে কিংবা মাতাল হয়ে কিছু ফেলে রেখে যায়, পরবর্তীতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
২০ জানুয়ারি মুঠোফোন কোম্পানি SoftBank থেকে একটি চিঠি আসে। ১৭ জানুয়ারি জারিকৃত চিঠিটি সাপ্তাহিক ছুটিজনিত কারনে ২ দিন পর আমার হাতে এসে পৌঁছে। চিঠি’র ভাষা ছিল ‘সন্মানিত গ্রাহক, সব সময় আমাদের কোম্পানির মোবাইল ব্যবহার করার জন্য ধন্যবাদ। খুব সম্ভবত আপনার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি অসাবধানতাবশত হারিয়ে বা ভুল যায়গায় রেখেছেন। (---) নাম্বারের মুঠোফোনটি পাওয়া গেছে বলে জাপান পুলিশের তরফ থেকে মোবাইল কোম্পানিকে অবহিত করা হয়। দয়া করে আপনাকে উপরোল্লিখিত ঠিকানা থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
জাপানে এ ধরনের সততার ঘটনা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। বরং অনেকটাই স্বাভাবিক। জাপানি নাগরিকদের জন্য বিষয়টি এমন —আচ্ছা! (হারানো) জিনিসটি অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। বরং জাপানি সমাজে কারোর খোয়া যাওয়া জিনিস ফেরত না দেওয়াটাই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। এটাই জাপানি সততা ।
সততা বজায় রেখে জীবন যাপন করা কঠিন। তবুও যারা সাগর সমান দুঃখ ও পাহাড়সম বিপদের মধ্যে সততার পথে ছোটেন তারাই কামিয়াব। তাদের জন্য রবের পক্ষ থেকে খুলে যায় রহমতের দুয়ার। তারা দুনিয়াতে পেয়ে যান নগদ পুরস্কার।
দুনিয়াতেই আল্লাহ্‌ অনেক কিছুরই পুরষ্কার দিয়ে থাকেন । তাই বোধ হয় জাপানিরা সভ্য জাতী হিসেবে বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে ।
সততায় জাপানিরা বিশ্বে অনন্য এক উদাহরণ ।

rahmanmoni@gmail.com

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরও দেখুন.....

.

আরও দেখুন.....