|
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি
পোষা প্রাণীর প্রতি
ভালোবাসা
পশু-পাখির প্রতি নম্রতা
প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত।
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নাম্বার আয়াতে বলেছেন , ‘আমি
আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি’।
শুধু মানুষ নয়, সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি রাসূলের ভালোবাসা ছিল সীমাহীন।
কারণ তিনি হলেন- রাহমাতুল্লিল আ’লামীন। পশু-পাখি প্রকৃতির অন্যতম উপাদান
এদের প্রতি ভালোবাসা রাখা এবং অধিকার রক্ষা করা নবীজীর শিক্ষা। মহানবী
মানুষকে ভালোবাসতেন । তিনি ভালোবাসতেন পশুপাখি। ভালোবাসতেন তরুলতা ও প্রকৃতি।
কেবল মানবজাতি নয়, জীবজন্তুর অধিকার রক্ষায়ও রাসুলুল্লাহ (সঃ) ছিলেন
সোচ্চার।
মানুষের পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত প্রাণী হচ্ছে কুকুর
। যদিও বিড়াল ছিল আমাদের নবীর প্রিয় পোষা প্রানী । নবীজী বিড়াল ভালবাসতেন ।
ইউরোপ-আমেরিকার সৌখিন নাগরিকরা ঘরে পোষা প্রাণী রাখেন। এখানকার সমাজে এটা
অতি সাধারণ একটা বিষয়। প্রাণীর প্রতি ভালবাসা থেকে অনেকে রাখেন। কেউ কেউ
প্রয়োজনের তাগিদেও রাখেন। অন্ধ লোকদের পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় কুকুর। এরা
এতোই ট্রেনিংপ্রাপ্ত যে বাসের নাম্বার, হাসপাতাল, সুপার মার্কেটের নাম
পর্যন্ত মুখস্ত। তারা সিগন্যাল মেনে রাস্তা পারাপার হয়।
পুলিশ বিভাগে যেসব কুকুর রাখা হয়,তারা আরও অগ্রসরমান। ড্রাগস, অস্ত্র, খুনি,
বা নানান ধরনের অপরাধীকে চিহ্নিত করতে এদের জুড়ি নেই। মাটির নীচে পুঁতে রাখা
ড্রাগস এরা সহজেই চিহ্নিত করে ফেলে। সেনবাহিনীতে এমন কিছু কুকুর রয়েছে যারা
অফিসার র্যাঙ্ক মর্যাদা পেয়ে থাকে। অসাধারণ তাদের প্রতিভা।
সন্তানাদি নেই, বিয়ে হয়নি এমন লোক ছাড়াও বৃদ্ধ লোকেরাও কুকুর বা বেড়াল
পোষেন। শুধু পোষাই নয়, এদের জন্য তাদের যথেষ্ট ভালবাসা রাখেন। মৃত্যুর
পূর্বে ধনসম্পত্তি ছেলে মেয়েকে না দিয়ে কুকুর-বেড়ালের নামে লিখে যাওয়ার
ঘটনাও শোনা যায়।
জাপানে পোষা কুকুর বিড়াল কে ফ্যামিলি মেম্বার বা পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখা
হয়ে থাকে। তাদের একটি নাম দেয়া হয় এবং সেই নামে ডাকলে সাড়াও দিয়ে থাকে।
নিদিষ্ট স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে থাকে । তাদের বীমা করা থাকে। পার্লার ,
ফুডশপ, হোটেল , হাসপাতাল সব-ই আছে তাদের জন্য।
তারপরও দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনা-ই । আর দুর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না
গত ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার স্থানীয় টোকিওর আকাবানে রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি
চৌরাস্তায় সন্ধ্যা ৭টায় রাস্তা পারাপারের সময় জনৈক ব্যক্তি বিশাল দেহের
ধবধবে সাদা (দূর থেকে শ্বেত ভল্লূক বলে ভ্রম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় ) তার
পোষা কুকুরসহ দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাটি ঘটে আমার চোখের সামনেই। মনিবের আশু
দুর্ঘটনার আঁচ করতে পেরে কুকুরটি মনিব এবং প্রাইভেট কার এর মাঝে পড়ে নিজেকে
আত্মবিসর্জন দেয় । উভয় পক্ষ পুলিশ কল করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন
পুলিশ চলে আসে । বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে ঘণ্টা খানেক লেগে যায়। সব
শেষে উভয় পক্ষ যার যার মতো চলে যায়। এর আগে সিটি অফিস এর গাড়ি এসে মৃতদেহ
নিয়ে যায়। বাকীটা হয়তো আইনের মাধ্যমে সমাহা হবে এই ভেবে আমিও আমার পথ ধরি ।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো।
কিন্তু না, সেখানেই শেষ হয়নি।
পরের দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ওই পথ ব্যবহার হয়নি ।
সোমবার যথারীতি কাজে যাওয়ার পথে স্বভাবতই চোখ চলে যায় দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে
।
দুর্ঘটনা কবলিত স্থানটির সামান্য অদূরে চৌরাস্তার এক কোনায় কিছু তাজা ফুল
এবং ৩ বোতল বিভিন্ন পানীয় পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা রয়েছে।জাপানে
কব্বরাস্থানে এর আগে বহুবার এমনটি দেখেছি । এছাড়াও মোটরযান দুর্ঘটনায় মৃত্যু
হলে নিকটজন তাঁর স্মৃতির প্রতি জানিয়ে মৃতের প্রিয় কিছু এলকোহল এবং ফুল রেখে
দেন এবং সময় সময় মাঝে মধ্যে বদল করে দেয়া হয়। আর শিশু বা নাবালক হলে ফুলের
সাথে তার পছন্দের খেলনা কিংবা অন্য কোন কোন জিনিস রেখে দেয়া হয় ।
কিন্তু এখানকার ঘটনায় তো কোন আদম সন্তান মারা যায়নি, মারা গেছে আদম
সন্তানের পোষা প্রানী তাও আবার কুকুর ।
কিন্তু , কুকুর , বিড়াল বা অন্য যেকোন পোষা প্রানীই হউক না কে তার প্রতি
ভালোবাসা জন্মাবে এটাই স্বাভাবিক । ১১ মার্চ ‘১১ ভয়াবহ ভুমিকম্পে জাপান
বিপর্যস্ত হয়ে টেলিফোন লাইন চালু হওয়ার পর সহকর্মীদের দেখেছি ফোন করে
প্রথমেই বাসার পোষা কুকুরটির খবর আগে নিয়েছে। কুকুরটিও মনিবের গলার স্বর
বুঝতে পেরে তার অবস্থানের কথা জানান দিয়েছে । উভয়ে আশ্বস্ত । অদ্ভুদ এক
বোঝাপড়া তাদের মধ্যে ।
কিন্তু সেটা তো জীবিতাবস্থার প্রেম । বিয়োগের পর কিছুদিন হয়তো মন খারাপ
থাকতে পারে। তাই বলে, এতোদিন এবং এভাবে ?
ভদ্রলোক এর সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম সে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে এখানে
আসেন, কিছুটা সময় কাটান, তার পোষা প্রাণীটির জন্য স্বর্গ কামনা করে
প্রার্থনা করেন । তার পছন্দের পানীয় কিনে রেখে যান, মলিন হয়ে যাওয়া ফুল গুলো
বদল করে নতুন ফুল রেখে যান। বাকী জীবনটা তিনি এভাবেই তার মৃত পোষা
প্রাণীটির প্রতি দায়িত্ব পালন করে যেতে চান।
যদিও ধর্মীয় চিন্তায় বা আমাদের সংস্কৃতিতে মৃত কুকুরের জন্য এমন দায়িত্ব
পালন অতি রঞ্জিত মনে হবে বা হতে পারে কিন্তু পোষা প্রাণীর প্রতি এমন ভালবাসা
সত্যিই বিরল এবং একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব । কারন , মানুষ যে আশরাফুল
মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা ,
তাই , সেরা কাজটি তো সৃষ্টির সেরা-রা ই করবে ।।
প্রবাসী
সংবাদকর্মী
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
আরও দেখুন.....
.
আরও দেখুন.....
-
করোনায় জাপান - নাইট ক্লাব বন্ধ, স্কুল
কলেজ সব খোলা, করোনায় বাংলাদেশ- নাইট ক্লাব খোলা আর স্কুল কলেজ সব!!
-
আমাদের
ছেলেবেলা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম?
-
শিক্ষার্থী
ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
-
বাসায়
গৃহকর্মীর প্রতি মানবিক হওয়াটা জরুরী
-
বাংলাদেশীদের
জন্য মহিয়সী এক জাপানি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আমার অযোগ্যত
-
দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী জাপানী এক বস-এর গল্প
-
জগতখ্যাত
জাপানী সততা
-
জাপানে
সাকুরা উৎসব, করোনায় ভাটা
-
জাপানে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন মিডিয়ার ভূমিক
-
সাংবাদিকতায়
নিরপেক্ষতা বলতে স্থায়ী কিছু নেই
-
সব
ঘটনা-ই ‘নিউজ’ হওয়া উচিত নয়
-
প্রবাসে
করোনা হলে জানান দিন, লুকোবার কিছুই নাই, আপনার করণীয়টা পালন করুন
-
জাপানের
ওকিনাওয়ার মাটিতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা মুন্সিগঞ্জ এর জাকির খান
-
জাপানে
অব্যাহত জন্মহ্রাসের ভয়াবহ চিত্র
-
দৈনন্দিন
কর্ম কান্ডে একজন জাপানী মা
-
দেশী
স্টাইলে প্রবাসের রাজনীতি, সংশোধন হওয়া জরুরি
-
বাংলাদেশে
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ড. তপন পালের প্রক্ষেপণ সঠিক হতে যাচ্ছে
-
রেকর্ড
গড়ে ইতিহাসে স্থান নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে
শিনযো
-
শ্রদ্ধাঞ্জলি– স্মৃতির মনি কোঠায়
মুন্সিগঞ্জ এর ধোপা স্যার
-
জাপান
প্রবাস জীবনে আমার কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হ’বার
গল
-
প্রবাসীদের
জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিবন্ধন জরুরি কেন
-
প্রসংগ
- হলুদ সাংবাদিকতা, দুর্মুখদের শেষ অস্ত্র
-
জাপানকে জানার জ্ঞানকোষ হতে পারে ডঃ আশির আহমেদ এর ‘জাপান কাহিনি’
-
প্রসঙ্গ
জাপানে লকডাউন, বাস্তবতা
-
স্মৃতির
মণিকোঠায় সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদ ভাই
-
একজন
প্রবাসী মায়ের সফলতার গল্প
-
জাপান
প্রবাসী বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন সমূহের প্রতি বিশেষ অনুরোধ
-
টোকিও
শহীদ মিনার পুনঃস্থাপন, সাংবাদিক হিসেবে আমার কৈফিয়ত
-
জাপানে
সবচেয়ে বড় মসজিদ “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার
সহৃদয় সহযোগিতা
-
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি , টোকিও কত দূর?
-
জাপানে
বাংলাদেশী দক্ষ জনশক্তি রপ্তানীর দ্বার উন্মচিত
-
গণপিটুনি
অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত
-
জাপান
কাহিনী এবং একজন ডঃ আশির আহমেদ
-
জাপান
বিএনপি'র প্রতিবাদ প্রতিহতের অপচেষ্টা
-
নিয়ম
জেনেও না মানার প্রবনতা বন্ধ হওয়াটা জরুরী
-
জাপানে
বৈশাখী মেলা, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
-
উৎসব
মুখর পরিবেশে জাপানে শিক্ষা জীবন শুরু হয়
-
কোরিয়া
স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে "ওয়ান কোরিয়া" শ্লোগানে গ্লোবাল পিস কনভেনশন
২০১৯ অনুষ্ঠিত
-
জাপানে
আমার সেকাল – একাল
-
একজন
প্রবাসীর সুখ দুঃখ
-
বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ফুকুশিমা'তে বসতে যাচ্ছে টোকিও
অলিম্পিক – প্যারা অলিম্পিক ২০২০ এর আসর
-
একটি
কবরস্থান প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ
|