(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি
প্রবাসীরা-ই প্রবাসে
প্রবাসীদের আপনজন, আত্মার আত্মীয়
প্রবাসীরা স্বজনহীন একাকীত্ব জীবন, প্রবাসে
কষ্ট ভরা জীবন, প্রবাসে টাকা আছে শান্তি নেই, কিংবা প্রবাসে কেউ কারো নয় এই
কথাগুলি কখনো বিশ্বাস করিনি, এখনো করিনা । দীর্ঘ এই প্রবাস জীবনে ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বরং প্রবাস জীবনেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব , আত্মার পরম
আত্মীয় গড়ে উঠে । একজনের বিপদে আরেকজন ঝাঁপিয়ে পড়েন। পূর্ব পরিচিত নন, নন
রক্তের সম্পর্কের কিংবা আত্মীয়তার সূত্রে আত্মীয়।
তারপরও কেন ঝাঁপিয়ে পড়েন ? আপন না হলে কি করতে পারেন ?
দেশে তো টাকা থাকলে ভালবাসা, বন্ধুত্ব, পরিবার, আপনজন ও প্রিয়জন সবাই খবর
নেয় । টাকা না থাকলে খবর নেয়া তো দূরের কথা, কেউ কাউকে চিনেও চিনে না।
প্রবাস জীবনেও দেশ থেকে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রবাসীদের কাছে
সবার দাবী থাকে এক ও অভিন্ন । আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ।
আজ শৈশব, কৈশোর এর সেই স্মৃতি বিজড়িত দেশ ছেড়ে, অনেকটা সময় পেছনে ফেলে
অনেক দূরে প্রবাসে এই আমি । জীবন চলার বাঁকে জন্ম দিয়েছি কত রূপকথা, ছোট
বড় গল্প আর নাটক। ছোট্ট একটা জীবনে কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছি !
প্রবাসে একে যে অপরের পরম আত্মীয় তা বুঝা যায় বিপদে পড়লে। প্রবাসে একজন যখন
অসুস্থ হন তখন আশপাশের সবাই, পরিচিতজনরা ঝাঁপিয়ে পড়েন । এ যেন তার নিজের
আপনজন আজ অসুস্থ । গাড়ি দিয়ে হাসপাতাল নেয়া আনা , বাজার করে দেয়া থেকে
প্রয়োজনীয় যাবতীয় সব কিছুই করে দিয়ে থাকেন নিজ তাগিদ থেকেই।
জাপান প্রবাস জীবনে যখন যে যেভাবে ডেকেছেন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সাড়া দিতে
। স্বজন ভেবেই এই চেষ্টা ।
ঠাণ্ডাজ্বর নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি টোকিওর একটি হাসপাতালে গেলাম। কর্তৃপক্ষ
করোনা টেস্ট করার অনুরোধ জানালেন। সম্মতি দিলাম। আরটিপিসিআর টেস্ট করা হলো।
পরের দিন সকালে ফোনে জানানো হলো যে, আমি করোনা পজিটিভ। আগামী ১০ দিন বাসা
থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হলো। স্বাস্থ্য বিভাগের পরবর্তী
নির্দেশনার জন্যও অপেক্ষা করতে বলা হলো।
খবরটি চাউর হওয়ার পর শুরু হয় শুভাকাঙ্ক্ষী,শুভানুধ্যায়ী,কলিগ,আত্মীয়স্বজন,
বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজনদের সকলেই খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন।
আমার বুড়িমা ১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী, ভাগ্নী যুথী এবং জাপানী বন্ধু কিশি,
ইনোউএ’র পাঠানো ফলাদি, বেলাল মামা কর্তৃক প্রয়োজনীয় বাজার করে দেয়া, পাশের
ফ্লাটের ঝুমুর- পাভেল দম্পতি, সুমা-মিলন দম্পতি, জুঁই -জালাল দম্পতি এবং
শিল্পী মামির হাতের রান্না, পপি বউদির ইচ্ছা প্রকাশ, স্থানীয় প্রশাসন
কর্তৃক খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের খোঁজ নেয়ায় কখনোই মনে হয়নি
যে প্রবাসজীবন স্বজনহীন, কষ্টে ভরা একাকীত্ব জীবন। মনে হয়েছে/হচ্ছে আমি
আমার পরিবার,আত্মীস্বজন,বন্ধুবান্ধব,প্রতিবেশী বেষ্টিত দেশেই অবস্থান করছি
।
পিতৃতুল্য বড় ভাই, বুড়িমা এবং দেশ থেকে প্রতিমুহূর্তে খোঁজ নেয়া, দিক
নির্দেশনা,ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে
সার্বক্ষণিক তদারকি, বিভিন্ন উপদেশ ১০ দিন ঘরে বসে থাকা একাকীত্বতাকে দূরে
রেখেছে ।
নাগরিকের প্রতি সরকারের দায়িত্ব বা নাগরিক অধিকার নিয়ে জাপানে অনেক সত্য
গল্প আছে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে অন্য যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে যা প্রায়
অবিশ্বাস্য।
আমার মতো একজন অভিবাসীর জন্য জাপান প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ,
স্বাস্থ্য পরামর্শ, খাদ্য সহায়তা প্রদান, অক্সিমিটার ও থার্মোমিটার প্রেরণ
সহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন দ্রুত আরোগ্য লাভে যে ভূমিকা রেখেছে তা বলার
অপেক্ষা রাখে না। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট
করতে চাইওনা।
এছাড়াও ইতোমধ্যে অনেকেই আমাকে ভালোবেসে -
ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জার, লাইন, ওয়াটস-আপ, ই-মেইল ও মোবাইলে ফোন করে কুশল জানতে
চেয়ে খোঁজ নিয়েছেন প্রথমেই সেই সকল শ্রদ্ধাভাজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করছি এবং আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে অফুরন্ত ভালোবাসা ও আন্তরিক অভিনন্দন
সহ লাল গোলাপের অনাবিল সু-গন্ধিত শুভেচ্ছা জানাচ্ছি কিছু ম্যাসেজ সত্যিই
অনেক আবেগের ভালোলাগার ছিলো। সাথে সাথে আপনাদের সকলের সুন্দর ভবিষ্যত এবং
দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনাদের এই অফুরন্ত নিরঙ্কুশ ও স্বাচ্ছন্দময়ী
ভালোবাসা আমার হৃদয়ের গভীরে অনাবিল স্থান হয়ে থাকবে। আপনাদেরকে স্মরণ
রাখবো আজীবন। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন এই প্রত্যাশা করছি!
পরম করুনাময় আল্লাহ’র পরেই আপনাদের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে গেলাম।
‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’।
আপনাদের-ই ভালোবাসায় সিক্ত
- রাহমান মনি ।।
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |