প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

জাপানে স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আমাদের শিক্ষনীয়

 

 

 

অক্টোবর মাস হলো খেলাধুলার জন্য জাপানে উত্তম মাস । এই জন্য অক্টোবর মাসকে জাপানে ক্রীড়ার মাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে । আমাদের দেশে অবশ্য ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ মাস ক্রীড়ার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া বিরাজমান থাকে । আর এই জন্য বাংলাদেশে ওই সময়টাতে স্কুলগুলোর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
জাপানে স্কুল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা , এলাকাভিত্তিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা , কোম্পানির কর্মচারীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সব-ই অক্টোবর মাসে হয়ে থাকে ।
যদিও বাংলাদেশ এবং জাপানের স্কুল গুলোর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে কিছু কিছু ইভেন্ট’র মিল রয়েছে তথাপি পদ্ধতিগতভাবে এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে অমিলই বেশী । আর এই কারনে জাপানের কাছ থেকে অনুকরনীয় অনেক কিছুই রয়েছে । যেটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনেক সহযোগিতা করবে ।
আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ এবং তাদের পোষ্য দলীয় বুদ্ধিজীবীদের ( বিবৃতিদানকারী ) একটি মুখস্ত বুলি হ’লো ‘নিজ থেকে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ । কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত । এই প্রচলিত প্রবাদটিকে মূলমন্ত্র রেখে সবাই সামনের দিকে এগিয়ে চলে ।
বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই নিজেকে জাহির করতে শিখানো শুরু করা হয় । সব ক্ষেত্রেই প্রায় একই অবস্থা । ক্রীড়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে ভুলটি করা হয় তা হ’লো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কিছু দিন আগে বাছাই পর্ব ( ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যেটা ‘হিট’ নামে অধিক প্রচলিত ) নামে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতাকে কিছু সংখ্যক প্রতিযোগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া । বাছাই পর্বে যাদের স্থান হয় না তারা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত দিনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে ।
কিন্তু, জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন শুধু শিক্ষার্থীই শুধু নয় স্কুল সংশ্লিষ্ট সকল ( শিক্ষক , অফিস স্টাফ , রন্ধন কাজে নিয়োজিত , মালি , গার্ড ) কে অংশগ্রহন করতে হয় ।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ঘনিয়ে আসলে প্রথমে যে কাজটি করা হয় তা হল , নিদিষ্ট দিনের কিছু আগে সমস্ত স্কুলের প্রতিটি ক্লাশের সব শিক্ষার্থীদের দুইটি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যা বিবেচনায় তিন এমনকি চারটি ভাগে ভাগ করা । সাধারণত রঙ এর নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়ে থাকে । যেমন সাদা দল, লাল দল ( সাধারনত এই দুইটি-ই ), নীল কিংবা সবুজ দল ।
দল ভাগ করার সময় সাধারনত ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর রেকর্ড লিপিবদ্ধ থাকে তার শ্রেণি শিক্ষকের কাছে । তাই বিভক্ত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না ।
এরপর চলে অনুশীলন । এই অনুশীলনেও শ্রেনি অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাধ্যতা মুলক অংশ নিতে হয় ।
জাপানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নির্ধারণ করা হয় । এতে করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ক্রীড়া দিনটি একটি উৎসবমুখর দিনে পরিনত হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গেরও উপভোগ করার সুযোগ ঘটে। উপস্থিত থাকেন স্থানীয় প্রশাসন কর্মকর্তাগন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ।
জাপানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে , প্রতিযোগিতা আরম্ভ হওয়ার আগে এবং প্রতিযোগিতা শেষে শরীর চর্চা করানো হয় । প্রতিটি প্রতিযোগী , শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট সকলকে, এমন কি উপস্থিত অভিভাবক এবং অতিথিবৃন্দও এই শরীরচর্চায় অংশ নিয়ে থাকেন ।
প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠান সূচিতেও ক্লাশভিত্তিক শারীরিক কসরত ইভেন্ট রাখা হয় । শারীরিক কসরতে জাপানী সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় ।
ক্রীড়া দিবসের শুরুতে বিভিন্ন দল গুলি তাদের দলের পক্ষে বিভিন্ন ভালো দিক তুলে ধরে তাদের পক্ষ সমর্থন আদায়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । এসময় সকল দলই তাদের সর্বোচ্চটি দিয়ে প্রিয় দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এরপর আবার এক দল অন্যদলের সাফল্য কামনা করে উৎসাহ মূলক বিভিন্ন অভিব্যাক্তি ব্যক্ত করে ।
উদ্ভোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে দলনেতারা প্রধান শিক্ষকের কাছে সুষ্ঠু ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতির শপথ করেন ।
অনুষ্ঠান সূচিতে অভিভাবকদের জন্য , অতিথিদের জন্য, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং আগামীর শিক্ষার্থীদের জন্য ইভেন্ট রাখা হয় ।
জাপানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফলাফল নির্ধারণ হয় নাম্বার দিয়ে এবং এই নাম্বার দেয়া প্রতিযোগীদের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দলগতভাবে । সবাই অধীর আগ্রহে থাকে দলের অবস্থান নিয়ে । টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে প্রতিটি প্রতিযোগিতা শেষে । তাই নিজ প্রতিযোগিতা শেষে দলের অন্যান্য প্রতিযোগীদের উৎসাহ প্রদানে সবাই মিলে মেতে উঠে । আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন কারীরা এককভাবে লাভবান হওয়ায় কোন প্রতিযোগীকে অন্যকে উৎসাহিত করতে দেখা যায়না একান্ত ব্যক্তি সম্পর্ক ছাড়া ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্যাক্তিগতভাবে কোন পুরস্কার দেয়া হয় না । কেবল মাত্র চ্যাম্পিয়ন এবং রানার আপ দলকে একটি করে ট্রফি দেয়া হয় । এই ট্রফি পরবর্তী বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের সময় প্রধান শিক্ষকের নিকট ফেরত দেওয়া হয় ।
জাপানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল জানানোর আগে প্রতিটি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় । সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে । যদিও প্রতিটি ইভেন্ট শেষে ফলাফল টানিয়ে দেয়া হয় তথাপি প্রতিযোগিতার শেষ ফলাফল ইচ্ছাকৃত করে অপেক্ষায় রাখা হয় ।
বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিতির সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য হারে হ্রাস পায় । যার অন্যতম কারন , ব্যক্তিগত পুরস্কার পাওয়া না পাওয়া এবং ফলাফল পূর্ব নির্ধারন হয়ে যাওয়া । তাই শেষ পর্যন্ত থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে শিক্ষার্থীরা । আমাদের সময় এমনও দেখেছি, অনেক সময় পুরস্কার প্রাপ্ত বিজয়ী পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকে ।
দলগতভাবে পুরস্কার দেওয়াতে একদিকে যেমন বিদ্যালয়গুলোর আর্থিক ব্যয় হ্রাস সম্ভব হয় তেমনি অপরদিকে প্রতিযোগীরাও দলের প্রতি তাদের সর্বোচ্চটি দেয়ার চেষ্টা করে থাকে । আর এইভাবে জাপানী শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সমষ্টিগত থেকে সব কিছুর মোকাবেলা করে দল , স্কুল সর্বোপরি দেশকে ভালবাসতে শিখে ।
আমাদের মধ্যে আছে আবেগ , নেই বিবেক । উপস্থিতি থাকলেও দায়বদ্ধতা থাকেনা । আছে বক্তৃতার ফুলঝুরি , নেই বাস্তবায়নের চিহ্ন । আমরা মুখে যা-ই বলি না কেন কাজে তার প্রমান রাখি না । ক্ষমতার বাহিরে থেকে যা কিছু উপলব্দি করি , ক্ষমতায় গেলে তা বেমালুম ভুলে যাই । আবার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যা বলি, ক্ষমতা হারানোর পর তার উল্টোটা করি ।
আমরা শুনি কম , বলি বেশী । ছোট বেলা থেকেই আমাদের পারিপার্শ্বিকতা সেইভাবে আমাদের গড়ে উঠায় সহায়তা করে থাকে ।
জাপানী বিদ্যালয়গুলো থেকে অনুস্মরণ করার অনেক কিছু রয়েছে ।
জাপানে কোমলমতি শিশুদের প্রথমে একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে অর্থাৎ দলগতভাবে বড় হওয়ার শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা হয় । নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলে দিতে হয় না । এমনিতেই তা হয়ে যায় ।
আর আমাদের দেশে কোমলমতি শিশুদের ছোটবেলা থেকে নিজে নিজে বড় হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলা হয় কিন্তু সেভাবে গড়ে তোলা হয় না । তারা স্বার্থপর হওয়ার শিক্ষা পায় কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়ার শিক্ষা পায় না । তাই , নিজে পেতে চায় কিন্তু দিতে চায় না ।
আসুন , আমরা জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ভালো দিকগুলি গ্রহন করে নিজেদের খারাপ দিকগুলি বর্জন করার চেষ্টা করি ।


rahmanmoni@gmail.com

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]