প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

টোকিও শহীদ মিনার পুনঃস্থাপন, সাংবাদিক হিসেবে আমার কৈফিয়ত

 

 

১২ জুলাই ২০০৫ টোকিও তোশিমা সিটি মেয়র তাকানোর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং ২০০৬ জুলাই তৎকালীন জাপানের পরিবেশ মন্ত্রী এবং বর্তমান টোকিও গভর্নর কোইকে ইয়ুরিকো এবং বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মেজর ( অবসর প্রাপ্ত ) কামরুল ইসলাম কর্তৃক উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে টোকিও শহীদ মিনার হয়ে যায় জাপান প্রবাসীদের গর্ব করার অন্যতম একটি বিষয়। দল মত , ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা ও স্থানীয় প্রশাসন তোশিমা সিটি ও জনগনের আন্তরিক সহযোগিতা ও উদারতায় যে বাঙালী জাতীর অহংকার শহীদ মিনারটি জাপানের মাটিতে স্থাপিত হয়েছিল একথা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। শহীদ মিনারটি বাংলাদেশের বাহিরে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেয় । যার একজন সাক্ষী হিসেবে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি ।

যদিও শহীদ মিনার স্থাপনে কেহবা একক কৃতিত্বের দাবী করে নিজ অবুঝ সন্তানের স্বপ্নের বাস্তবায়ন বলে মনে করে থাকেন । আবার কেহবা শহীদ মিনার স্থাপনে এলাকা বাছাই নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তবে যে বা যিনি যাহাই দাবী বা স্থান নির্বাচনে আপত্তি করে থাকেন না কেন টোকিও তে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হউক এই ব্যাপারে কারোর কোন দ্বিমত ছিল না ।

জাপান প্রবাসী মাত্রই জানেন যে জাপানের মাটিতে ভিনদেশীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । তারপরও অনেকেই তা করে যাচ্ছেন । শুধু যে বাংলাদেশীরা-ই করেন তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন দেশের সরকার বিরোধী আন্দোলনে সহায়তাকারীরাও জাপানে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। এসব-ই হয়ে থাকে জাপান পুলিশ এর জ্ঞ্যতসারে , অথবা জাপান পুলিশ পরবর্তীতে নোট নিয়ে থাকে।

আমরা যারা জাপানে বসবাস করি তাদের অনেকেই জাপান পুলিশকে কিছুটা বোকা মনে করি। এটা যে কতো বড় ভুল তা কল্পনাতেও আসে না।

আমাদের মনে রাখা উচিত যে , তিন পুরুষের মধ্যে আইনের চোখে যদি কেহ অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি জাপান পুলিশ বিভাগে নিয়োগ পান না। সৎ চরিত্র , শিক্ষিত এবং চৌকস ব্যাক্তিরাই কেবল পুলিশে নিয়োগ পেয়ে থাকে। তাই জাপান পুলিশকে বোকা ভাববার অবকাশ নেই। প্রতিটি প্রবাসী নাগরিকের নাড়ি নক্ষত্রের খবর জাপান পুলিশের নখদর্পণে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয় না ইমেজ এর কারনে।

টোকিও শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে কারণে বা অকারণে আমরা তার অপব্যবহার করেছি এটা বললে কি ভুল হবে। নিছক ঘটনাকেও আমরা শহীদ মিনার কেন্দ্রিক করে ফেলেছি ।

অতি উৎসাহীরা আবার ‘ইকেবুকুরো নিশিগুচি কোয়েন’ এর নামও পাল্টিয়ে “শহীদ মিনার পার্ক” দিয়ে ফেলেছি । কেহবা তাতে ঘি ঢেলে মজা নিয়েছি । কিন্তু , একটিবারও কি ভেবেছি জাপানে নাগরিক অধিকার কতোটা শক্তিশালী । নারিতা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রানওয়েতে অবস্থিত বাড়িটি নাগরিক অধিকারের শক্তিমান উদাহরণ নয় কি ? আমরা অনেকে তা জানিও।

তোশিমা সিটির একজন নাগরিকও যদি এই নিয়ে প্রশাসনে কমপ্লেইন করে তাহলে কর্তৃপক্ষ তা ধাতব্যে নিয়ে থাকে। এমন কি তা বিদেশী নাগরিক হলেও। তাছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন এবং জাপান পুলিশ প্রতিটি ভাষার দোভাষী কিংবা তর্জমা করার ব্যাবস্থা রাখে । আর গো--গুল মামা তো রয়েছেই ।

স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় সন্ত্রাস হয়ে থাকলেও তার লেশ এসে পড়ে জাপানে এবং টোকিও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। নির্বাচনী সহিংসতা , যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী সহ সব ধরনের দাবী দাওয়া আদায়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে টোকিও শহীদ মিনার আদায়ের। এর সাথে সম্পৃক্ত আমি নিজেও ।এমন কি আয়োজকদের খাতায় নামও আছে।

আমরা মনে করি এইসব দাবী দাওয়া আদায়ে তোশিমা সিটি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে আদায় করে দিবে বা সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে । আর এই সব দাবী আদায়ে মানব বন্ধন বা প্রতিবাদ সভায় যে সব ছবি , শ্লোগান ব্যবহার করি তা জাপানী সমাজে কতোটা যুগপোযুগি তা ভেবে দেখি না।

দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন কারনে আমাদের অপছন্দের হতেই পারে। কিন্তু জাপানের কাছে ভিনদেশের দূতাবাস এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা বিধানের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া কূটনীতি বলতে একটা কথা আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাপানী কূটনীতির একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জাপানী কূটনীতি কে বলা হয় কূটনীতিদের কূটনীতি। ভদ্রতার খাতিরে মুখে কিছু না বললেও কাজে তা বুঝিয়ে দেয় ।

কথায় কথায় দুতাবাস বা রাষ্ট্রদূতকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বা প্রতিহত করার ঘোষণা স্থানীয় প্রশাসন ভালো চোখে দেখে না। তারা শুধু নোট নেয় ।

একুশের প্রভাত ফেরিতে বাংলাদেশ-জাপান ( দুতাবাস এবং স্থানীয় প্রশাসন ) যৌথ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনকালীন সময় এবং দিনব্যাপী নিরাপত্তা বিধানে পুলিশী পোশাকে যতোজন না দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে তার চেয়েও বেশী থাকে সাধারণ পোষাকে। রাষ্ট্রদূতের ছবি বিকৃত করে শহীদ মিনারে দাঁড়ানো প্রশাসন ভালো ভাবে নেয় না। ভালোভাবে নেয়না টোকিও বৈশাখী মেলায় রাষ্ট্রদূতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাকেও।

জাপানের সংস্কৃতিতে পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার কাজে কোন স্থাপনা অন্যত্র সরিয়ে নিলে সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর নিজ অর্থায়নে পুনঃস্থাপন চলমান রীতি। সেই মোতাবেক অন্যত্র সরিয়ে নেয়া তোশিমা সিটির ‘ইকেবুকুরো নিশিগুচি কোয়েন’ এ স্থাপিত শহীদ মিনারটি সংস্কার কাজ শেষে পুনঃস্থাপন সিটি কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত তা এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। যদিও উদ্যানটি ইতোমধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

অনেকেই ব্যাপারটিতে দূতাবাসের গাফিলতি বা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে। কেউবা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের উপর বর্তাচ্ছেন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালিখিও হচ্ছে।

সামনেই ২১শে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই , সাধারন প্রবাসীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এবার ফুল কোথায় দেয়া হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা । শহীদ মিনারটি আগের স্থানে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রবাসী সাংবাদিকদের বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন কেহবা।

শুধু প্রবাসী সাংবাদিকরা কেন আমাদের সবার ই উচিত টোকিও শহীদ মিনার আগের পূর্ব স্থানে পুনঃস্থাপন করার ক্ষেত্রে । এই ক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত সমন্বয় থাকতে হবে। যেমনটি প্রতিষ্ঠালগ্নে সম্ভব হয়েছিল।

বাংলাদেশ দুতাবাস , প্রবাসী সমাজ বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের ভুমিকা থাকতে হবে। প্রয়োজনে সম্মিলিত ভাবে তোশিমা সিটি অফিসে গিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে যে আমরা জাপানের আইন মেনে আমাদের কর্ম পরিচালনা সম্পন্ন করবো।

তাহলেই কেবল টোকিও শহীদ মিনার আগের পূর্ব স্থানে পুনঃস্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয়।

রাহমান মনি
সাপ্তাহিক, জাপান প্রতিনিধি

rahmanmoni@gmail.com

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]