প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

জাপানীরা কর্মঠ হওয়ার হাতে খড়িটা পায় শিশু বয়স থেকেই

 

 

 

“আকাশ আমায় শিক্ষা দিল

উদার হতে ভাই রে,

কর্মী হবার মন্ত্র আমি

বায়ুর কাছে পাই রে”।

আমার মরহুম পিতা আলহাজ্ব ফজলুর রহমান পাঠ্য বইয়ের বাহিরেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ গুরুত্ব সহকারে আমাদের সব ভাইবোনদেরকে শিক্ষা দিতেন। তার মধ্যে ছোট বেলায় মুখস্ত করা (শুধু পড়া-ই নয়) কবি সুনির্মল বসু’র ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতাটির মর্মার্থ তখন না বুঝলেও জাপান আসার পর জাপানীদের কর্মস্পৃহা দেখে উপলব্দী করতে পারি।

দীর্ঘ দিন ধরে জাপানের প্রথম সারির একটি চেইন রেস্টুরেন্ট এর একটি শাখার প্রধান শেফ হিসেবে কাজ করে আসছি। দীর্ঘদিন টোকিওর অফিস পাড়ায় ছিল আমার কর্মস্থল। করোনার ছোবলে অফিসগুলোতে টেলিওয়ার্ক বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়ে আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যাবসাতেও। তাই আমাদের কর্মপ্রতিষ্ঠানের ৩২টি ব্রাঞ্চ একইদিনে সাটডাউন করতে হয়েছিল। যার মধ্যে আমার কর্মস্থলের শাখাটিও পড়ে যায়।

ব্রাঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে আমাকে বদলী করা হয় অন্য ব্রাঞ্চে এবং টোকিওর পার্শ্ববর্তী সাইতামা প্রিফেকচারের ওমিয়া এবং পরে কাওয়াগুচি নামক শহরে।

ওমিয়া এবং কাওয়াগুচিতে কাজ করতে গিয়া হয় নতুন অভিজ্ঞতা। অফিস পাড়ায় সাধারনত শনিবার এবং রোববার ছুটি থাকতো। কিন্তু ওমিয়াতে শনিবার এবং রবিবারও প্রায়শই কাজ করতে হয়।

সেখানে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাই শনি-রবিবার কর্মমুখী মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের সাথে করে নিয়ে আসেন এবং মা যতক্ষণ কাজ করেন সন্তানটিও সেখানে অবস্থান করে। কারন, শনি-রবিবার তাদের ডে-কেয়ার কিংবা প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকে এবং জাপান আইনে এই বয়সী বাচ্চাদেরকে একা বাসায় রাখতে নেই। কিন্তু মা কাজ করতে না পারলে জীবন যাপন কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে যে। এদের বয়স সাধারনত ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। সাথে থাকে দুপুরের জন্য লাঞ্চ প্যাকেট, একটি পানীয় বোতল, শিক্ষা উপকরণ এবং পছন্দের খেলার সামগ্রী। সাধারনত ড্রেসিং রুমে বসে তারা সময় কাটায়। তবে, পুরো দোকান জুড়েই তার অবাধ বিচরন থাকে। বিচরন থাকলেও বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায় না। কারন, ছোট বেলা থেকেই তারা অন্যকে বিরক্ত না করার শিক্ষাটি রপ্ত করে থাকে।

খাবারের দোকান হলেও রেস্টুরেন্ট থেকে কোনদিনই বিনা পেমেন্ট-এ এক গ্লাশ জুসও দিতে দেখিনি সন্তানকে। মা কাজ করার মধ্যেই শিশুটি তার সাথে করে আনা লাঞ্চ এর প্যাকেট দিয়ে দুপুরের আহার সেরে নেয়া, হোম ওয়ার্ক শেষ করে কিছুটা সময় খেলেও নেয়। কিন্তু তার আগে মায়ের সাথে মায়ের কাজে সহযোগিতা নিজ থেকেই করে।

অতোটুকুন বয়সে সব শিশুই ফ্লোর মুছা, টেবিল সেটিং, গ্লাশে পানি ভরা সবকিছুতেই মায়ের সাথে হাত লাগায় শিশুটি। মা কিন্তু শিশুটিকে কাজ করতে বলেন এমনটি নয়। আবার কাজে হাত লাগালে নিষেধও করেন না, বিরক্তি বোধও করেন না। বরং উৎসাহ দিয়ে থাকেন। বিরক্তি বোধ করেন না সহকর্মীদের কেহই। আর, আমি তো প্রশ্নই উঠেনা।

কারন, এমনিতেই শিশুদের আমি ভালোবাসি তাদের সাথে খেলা করি, ভাব করি, শিশুদের ভাষায় কথা বলি, আর, সব সময় কিছু না কিছু শিশুতোষ খাবার নিয়ে যাই। এবং শিশুরাও কেন জানি আমার সাথে মিশে যায়। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি যায়। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। সাধ্যমতো উত্তরও দিয়ে থাকি।

আমি অবাক হই তাদের কাজ দেখে। ছোট দু’টি হাতে কাজ করলেও অত্যন্ত নিখুঁতভাবেই কাজগুলি করে থাকে। কোনদিন একটি গ্লাশও হাত ফসকে পড়ে যেতে দেখিনি।

একদিন দেখি ছোট হাতে বড়দের টয়লেট পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। আর তা দেখেও মা বাধা না দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে তা করতে হবে।

আমি ভাবী একজন বাঙ্গালী মা হলেন কি করতেন?

সত্য কথা বলে আবার কারোর বিরাগভাজন হতে চাইনা। পাঠকরা-ই বুঝে নিন।

জাপানী শিশুরা এইভাবেই কাজের প্রতি আগহী হয়ে উঠে ছোটবেলা থেকেই। কাজকে তারা জীবনের ব্রত হিসেবে নেয়। শিশু বয়সেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদেরকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য ট্রেনিং দেয়ার নামে একদিন প্রতিষ্ঠানের পোশাকে কাজ করিয়ে একদিনের বেতন হিসেবে সন্মানীও দিয়ে থাকে। প্রখ্যাত ম্যাকডোনাল্ডস কোম্পানিও তা করে থাকে। জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষাকালীন পছন্দমাফিক প্রতিষ্ঠানে ৩দিন কাজ করা শিক্ষারই একটি অংশ।

কাজকে জাপানি ভাষায় শিগোতো বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের সব দেশেই শিশুরা বাবা-মায়ের অফিসে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করে, বিভিন্ন বায়না ধরে, এমন কি সাথে যেতেও চায়। কিন্তু, কোন জাপানী শিশুকে যদি বলা হয় বাবা-মা শিগোতো অর্থাৎ কাজে যাচ্ছে, তখন তাদের কোন আবদার-ই আর থাকেনা। এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা।

অর্থাৎ কাজের গুরুত্বটা বোধ হয় জাপানী শিশুরা শিশুকাল থেকেই অনুভব করতে শিখে। নিজেরা কাজ করতে শিখে। রপ্ত করতে শিখে।

তাই, জাপানী শিশুরা কর্মঠ হওয়ার হাতে খড়িটা পায় শিশু বয়স থেকে মায়ের হাত ধরে, বাতাসের কাছ থেকে নয় ।


rahmanmoni@gmail.com

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]